এই যাপিত জীবন, কবিতার ভেতর দিয়ে ভেসে-ওঠা আমাদের ক্ষয়ে-যাওয়া এই জীবন, এক আশ্চর্য ম্যাজিক; কবি এই জীবনেরই ম্যাজিশিয়্যান, — আমরা যাকে দেখতে পাবো গান গাইতে, নৃত্যপরায়ণ রক্তের গান। কালিকাপ্রসাদের পথে যেতে যেতে অভ্যস্ত মুহূর্তগুলি ভ্রাম্যমাণ ঘোড়ায় চড়িয়ে আমাদের নিয়ে যায় ফুলে ও বিভ্রমে, ‘দুর্গপ্রাচীরে লেখা শোকলিপিগুলা পড়তে বারবার’। যেখানে সন্ধ্যা আসে, ভেঙে পড়ে শরীর। এর পর, প্রেগ্ন্যান্ট পোজ নিয়ে ভোর আসে সকালের ট্রেনে। আর আমরা গাইতে থাকি —
প্লুতস্বর, আরো অনাকাঙ্ক্ষিত হলে
তোমারে ফেলে চলে যাবো পথের ধারে
সন্ধ্যাবেলা, ঝিঁঝিদের আর্তনাদে, নিরব
অন্ধকারের ডানায় তোমারে উড়ে চলে যেতে দেখে
ফিরে যাবো; ঘরে বসে, টেবিল চেয়ারকে বলবো
‘ক্ষমা করো, এই প্রবঞ্চনা, ভারবাহী মহিষের’
কবিতা ব্যাপারটায়, বিশেষ করে ইমরুল হাসানের কবিতায়, এক এমনই নিরবচ্ছিন্ন শব্দাবয়ব দাঁড়াতে দেখব, যেখানে জীবন গাইছে এক অনন্য গান, আলাদা চিত্রকল্পে। স্মৃতির ও বর্তমানের মাঠ থেকে তৃণ, ঘাস ও গোধূলি কুড়িয়ে এনে ইমরুল হাসান শূন্যতাশাসিত শহরায়তন পূর্ণ করে তুলছেন একের পরে একেকটা কাব্যপুস্তিকায়, কাব্যগ্রন্থে। তার কবিতাবইগুলি দিয়ে এই দিনদুনিয়া আরেকটু রঙিন হচ্ছে, এবং হচ্ছে যেখানে-যেমন-দরকার বর্ণনাতীতও।
‘কালিকাপ্রসাদে গেলে আমি যা যা দেখতে পাবো’ বইটি নির্মিত হয়েছে কবিরই অভিপ্রেত তিনটি পৃথক ভাগে, সেই তিনভাগেরই শিরোনাম আলাদা আলাদা : ‘ঋতুচিহ্নগুলি’, ‘তোমার শহরে’, ‘হাঙরের দাঁতের নিচে’ — ব্যতিক্রমহীনভাবে এই তিনভাগে একজন কবির নবলব্ধ স্বর খুঁজে পাওয়া যায়। কবিতাগুলিকে মনে হবে প্রতিমুহূর্তের, দৈনন্দিন, আটপৌরে মুখবুলিতে লেখা। তা সত্ত্বেও ধ্রুপদী একটা আন্ডারটোন ইমরুল হাসানের কবিতায় যেন ধরতে পারা যায়।
এই তিনটা ভাগ ছাড়াও বইয়ের ৪১ থেকে ৭১ সংখ্যক পৃষ্ঠাব্যাপী বিভাগশীর্ষ ছাড়া আরও ছাব্বিশটা কবিতা পাওয়া যায়, ধারণা করি এই ভাগের কবিতাগুলিই ‘কালিকাপ্রসাদ’ অংশের কবিতাগুচ্ছ, তুলনামূলক স্বচ্ছ কল্পনাচিত্র এই ভাগেই বেশি পাওয়া গেল যেহেতু এবং বইয়ের নামকবিতাটিও উপবিভাগশীর্ষফলকহীন এই শেষভাগেই রয়েছে।
এই বইটা নতুন কবিতার অনুরাগী পাঠকদের ভালো লাগবে। এর পয়লা ছাপাকাল ২০০৫। আবার ছাপা হয় ২০১৪ সনে। এইখানে আবার-ছাপা-হওয়া কালিকাপ্রসাদ হাতে নিয়ে কথাগুলো বলা হলো। বইটা ছাপিয়েছিল ‘জনান্তিক’, ঢাকা থেকে।
লেখা : আলফ্রেড আমিন
… …
- যেভাবে হয়ে ওঠে ‘এসো আমার শহরে’ || শিবু কুমার শীল - March 6, 2025
- Basudeb Dasgupta’s ‘Randhanshala’ The Cooking Place translated by Sourav Roy - March 4, 2025
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
COMMENTS