মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস আড়িয়াল খাঁ || আনম্য ফারহান

মাসরুর আরেফিনের উপন্যাস আড়িয়াল খাঁ || আনম্য ফারহান

স্পুকি ফিকশনে খুব সরস কোনো হিউমার না হইলে সেইটা অতি-সিরিয়াসনেসের জন্য লিড হারায়। আড়িয়াল খাঁ  ও মাসরুর আরেফিন এই পর্বে নিজেদেরকে সেই বাঁধনে যারপরনাই বাঁধাইতে আয়োজন করছেন। কিন্তু অমোঘ সত্যের মত ‘এ বাঁধন ছেড়ে যেও না’ বলাই হয় বাঁধন টুট যায়ে গা হবে বইলা।

উপন্যাসটির থিয়েট্রিক্যল ডার্ক কমেডি জিনিসটা ফর্ম হিসেবে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে ঘটছে বেশি। মোট বইয়ের পঁচিশ শতাংশ সেইটুকু। ৪২ পৃষ্ঠা জুইড়া। এইখানে ঝুলছে। মানে বাঁধন টুট গ্যায়া। ফ্ল্যাশব্যাক ছিল অনেক। ওই পর্বটুকু এত লেয়ারড হইছে যে — এসিমেট্রিরও সুতা আর থাকে নাই। অর্থাৎ এসিমেট্রি দ্বারা ভারাক্রান্ত কিছুটা। সিমেট্রি ও এসিমেট্রি যুগপৎ — এভাবে দেখলে হয় আর কি।

এডভেঞ্চার ও মৃত্যুভয় — যেমন আশেক নবি হযরত মুহম্মদ (স.) বোরাকে কইরা গেছিলেন সাত আসমান ভেদ কইরা মহামহিমের দিদার লাভ করতে; ওইখানে একটা তটস্থতা যেমন ছিল, তেমনই তার এস্থেটিকসে খুব বেশি ক্যারেক্টার ফ্ল্যাশব্যাকে আসতে থাকলে তা রিলিভেন্সির অধিক কোনো অবশ্যম্ভাবিতায় পতিত হয়। এবসার্ডিটি বলতে ইচ্ছা করে, কিন্তু এবসার্ডিটি তো না; অ্যাবস্ট্রাকশন বলা যায় কিছুটা। বরং — তা যদি নাজিল হইতে থাকা সিদ্ধান্ত ও অনুসিদ্ধান্তের মধ্যে থাকে, তাহলে আঁটায় ভালো। তা ছিলও কিছুটা। কিন্তু ওই যে, লিখিত ফর্ম হিসেবে ইয়েটা, মানে লবণটা একটু বেশি হইছে।

(*লেখকের পূর্বতন উপন্যাস ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’-এ যখন প্রোটাগনিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড দেখতে বাইর হন —  ওইখানেও থিয়েট্রিক্যল ওই স্পুকি কমেডিটা ভালো ব্যাপার ছিল আর ওসিপ মান্দেলেস্তামের বাড়ি-কাম-জাদুঘরের ওইখানটার পর্বটায়ও; কিন্তু এই যেমন বললাম ‘লবণ’ একটু বেশি হইছে; এরকম হইছে। এইটা কি এখন দৃশ্যমাধ্যমের এভেইলেবিলিটির জন্য অক্ষরে পড়ার প্রতি চাপ বা যথেষ্ট কল্পনা না করতে চাওয়ার কালেক্টিভ রিডিং কনশাসনেস? ফ্রম রিডার্স পারস্পেক্টিভ? তা তো লেখকের জন্যও। একই দৃশ্যমাধ্যমের চাপ তো তারও। তারই ফলাফল কি এই মিডিয়ামের এলিমেন্টের আধিক্য? আমি শিওর না।)

ক্রাফট হিসেবে আড়িয়াল খাঁ  এবং মাসরুর আরেফিন, দু’জনেই রেটরিক। একটা নতুন গদ্যভাষা প্রতিষ্ঠা পাইল। সেইজন্য তাঁদের দু’জনকেই সাধুবাদ। সমাপিকা ক্রিয়ার রিপিটেশন/ ধ্বনির ব্যবহার রিপিটেডলি যুক্ত কইরা শব্দ যেগুলা তৈরি হইছে — তা বিহ্বল অবস্থার লেখ্যরূপী ইমেজ। সুন্দর। তৃতীয় পুরুষের ন্যারেশনে নৈর্ব্যক্তিক থাকতে পারার বাইরেও নৈরাজ্যের সুবিধাটা নেয়ার প্রতি আমারও পক্ষপাত আছে। তা ফিকশনকে নাগালের মধ্যে রাখে/ আবার যত্রতত্র বাইরেও যাইতে দেয়। ওইটা আর কি; ওই পাল্লাগুলা চালু থাকতে পারে।(বাক্যের কমপ্লেক্স স্ট্রাকচার এবং দীর্ঘ বাক্য কম হওয়া নিশ্চয়ই রিডেবিলিটির কথা ভাইবা হয় নাই। যদি হয়, তাহলে তা কোনো কাজের কথা না)

ভাষার যেই গভীর শক্তি মেটাফর বাহিত — তা লেখকদের ব্যবহার করতে দেখতে আনন্দ লাগে। অবভিয়াসলি তা আখ্যানেরও শক্তি। মিথেরও শক্তি সেইহেতু। সুতরাং?

“বিষ্ণুর বিল্লি ব্রহমমারে কইল মেঁয়াও।”
হা হা। (এই হা হা উপন্যাসের এই অংশে দেওয়া প্রলেতারিয়েতের “হা-হা” নয়। এইটা আমার হা হা!)

পলিটিক্যলি, আড়িয়াল খাঁর ন্যারেটিভ মিডল ক্লাসের সেন্টার ও তার পেরিফেরির — এই পাটাতনে। এইটা পরীক্ষিত কার্ড। এই কার্ড খেলাটা খুবই যুক্তিযুক্ত হইছে। বরং যেইটা পয়েন্ট, তা হইল — ক্লাস কনশাসনেস এফোর্ড করতে পারা। আড়িয়াল খাঁ  ক্লাস কনশাসনেস এফোর্ড করতে পারে। কিন্তু, রেবেলিয়াস হয় না। সেক্ষেত্রে প্রোটাগনিস্টের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা ও ধূর্ততা খুবই ওয়ার্কেবল।

আড়িয়াল খাঁ  পড়তে গিয়া আমার স্মরণে আসছে শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮), সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১) ও আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩) এর সাহিত্যগুণের কথা। তাঁদের সাহিত্যের কথাও। এই উল্লেখই আপাতত এই পরিসরে কবুল করা গেল। পরে অন্য পরিসরে সুযোগ হইলে অন্যান্য কথা বললে বললাম — এ-রকম।

প্রোটাগনিস্টের লস্ট ড্রিম, একইসঙ্গে তার ‘চিরকালের বন্ধু’ ঈমান দাসেরও লস্ট ড্রিম; যেহেতু ‘চিরকালের বন্ধু’/ তাদের প্রমিসড ল্যান্ড ‘তেগুচিগালপা’ পৌঁছানোর শপথই একটা কার্যকারণ। কিসের? ওই যে — ‘এ বাঁধন ছেড়ে যেও না — অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’-এর মতো অনুরোধ, আশায় ভরা। নদীতে তারা-ঝিকমিক আলোর দেখা না পাইয়া গুপ্তধনও না পাওয়া জাহেদ — মহাজীবনের এইসব মিলায়ে কনফিডেন্টই হয় বিপরীতে।

১৬/০৭/২০২৩


আনম্য ফারহান রচনারাশি
গানপারে মাসরুর আরেফিন

COMMENTS

error: