হ্যাপি বার্থডে, মেকার! || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

হ্যাপি বার্থডে, মেকার! || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

শুভ জন্মদিন, মাস্টার মেকার সত্যজিৎ রায়!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্র সিনেমা ছাড়া শিল্পকলার সব শাখাতেই ক্ল্যাসিক তৈরি করে গেছেন। বাংলা সিনেমায় তার কাজটি যিনি করেছেন, বিশ্বদরবারে বাংলা সিনেমার পরিচয় করিয়েছেন, তিনি সত্যজিৎ রায়।

বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করা অবস্থাতেই তিনি ফিল্ম সোসাইটি গড়ে তুলে বিভিন্ন সিনেমা দেখা শুরু করেন। ডি সিকা-র ‘বাইসাইকেল থিভস’ সিনেমা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন জীবনে সিনেমা বানালে এমন সিনেমাই বানাবেন। এর মধ্যে কলকাতায় জ্যঁ রেনোয়ার কাজ দেখার সৌভাগ্য হয় তার। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করার সুবাদে সেই সময়ে তার ইংল্যান্ডে প্রমোশন ট্রান্সফার হয়। সেখানে দেখা হয় জগদ্বিখ্যাত সব সিনেমা।

এর মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট আসে বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীকে ‘আম আঁটির ভেঁপু’ নামে স্কেচ করার! সেবারই প্রথম পড়েন ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি। স্কেচ করতে গিয়ে প্রেমে পড়ে যান এই গ্রামের এই অনিন্দ্য সুন্দর গল্পটির! এটিকেই তার প্রথম সিনেমা তৈরির গল্প হিসেবে বেছে নিলেন।

হ্যাঁ! সত্যজিৎ রায় টাকার অভাবে একসাথে শেষ করতে পারেননি সেই সিনেমার শ্যুটিং। বউয়ের গহনা বেচে সর্বস্বান্ত হয়েও তাকে কয়েক বছর ঝুলিয়ে রাখতে হয়েছে সিনেমার কাজ! থেমে যাবার অবস্থায় কলকাতা রাজ্য সরকারকে কোনোমতে রাজি করিয়ে শেষ করেন পথের পাঁচালীর শ্যুটিং!

সিনেমা মুক্তির ইমিডিয়েট পরে বাঙালিদর্শকপ্রিয় হয়নি সিনেমাটি। পরে বিদেশে পথের পাঁচালীর সুনাম ছড়ানো শুরু করলে বাংলাতেও চলচ্চিত্রটি সর্বসাধারণের স্বীকৃতি পায়। সত্যজিৎ বুঝে গেলেন তার বাকি জীবনে আরো অনেক গল্প বলা আছে আর মিডিয়ামটা হবে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের সিনেমাই!

ছেড়ে দিলেন অ্যাজেন্সির চাকুরি! আর এভাবেই আমরা পেয়ে গেলাম বাংলা সিনেমা ইতিহাসের এক প্রবাদপুরুষকে, যাকে তার সিনেমাজীবনের জন্য দেয়া হয় অস্কারের বিশেষ সম্মাননা; যে-সম্মাননা তার আগে পেয়েছেন চার্লি চ্যাপলিন, তিনি তা পেলেন শেষ বয়সে এসে।


কাজী ইব্রাহিম পিয়াস রচনারাশি

COMMENTS

error: