ঋতি রিসেন্টলি-রিলিজড সংখ্যায় লেখা নাই একটাও

ঋতি রিসেন্টলি-রিলিজড সংখ্যায় লেখা নাই একটাও

জোয়ারি দিনগুলায় লিটলম্যাগাজিনের নানা কাণ্ডকারখানা আমরা ক্লিয়ার্লি খিয়াল করে এসেছি, কাজেই, শিরোনামে লেখা-নাই-একটাও বর্গের ছোটকাগজি গিমিক দেখে অ্যাট-অল ভড়কাবেন না। দ্য ট্রুথ ইজ আউট দ্যেয়ার।  সত্য জানতে চাইলে তো সত্যান্বেষী হতে হবে আপনারে, একেবারেই মিনিম্যালি, এই কাহিনিটা তো পড়তে হবে, অ্যাট-লিস্ট। পড়তে হবে, এমনও নয়; অ্যাট-লিস্ট, গ্য-থ্রু করবেন তো!

সুবিমল মিশ্র দেহ রাখবার দিনের মাগ্রিবের আজানের বাদে এবং এশার মাঝখানকার সন্ধ্যায় একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়া ভাবতেসিলাম লোকটা ম্যাগাজিনের সঙ্গেই জীবনঘনিষ্ঠ রয়ে দেহ রাখলেন। উনি লিটলম্যাগাজিন, অ্যান্টি-এস্ট্যাব্লিশমেন্ট, প্রতিষ্ঠানবিরোধী, আইকনোক্ল্যাস্ট ইত্যাদি চিহ্নিত রইতে পারলেন আগাগোড়া। পারলেন কী? বিতর্ক কল করা যায় ফেসবুকে। ‘এককালে একাট্টা লিটলম্যাগকর্মী’ চিহ্নে একটা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নমার্কা সাংস্কৃতিক ভাব বজায় রেখে বর্তমানে দৈনিকদর্শনে দিব্যদার্শনিকদের মতামতটা জানা যাবে।

অ্যানিওয়ে। যে-পত্রিকাটা হাতে নিয়া আট ফেব্রুয়ারি দ্বিসহস্রতেইশের বাদমাগ্রিব সন্ধ্যায় তামিশকিরের ভঙ্গিমায় ফেসবুক স্ক্রল করতেসিলাম সেইটার নাম ঋতি। এর সম্পাদক ফজলুররহমান বাবুল। পত্রিকাটা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সিলেট শহর থেকে গেল শতকের নব্বইয়ের দশকের মাঝপর্যায় থেকে বেরিয়ে অ্যালাইভ রাখতে পারসে নিজেরে ‘কবির নিশান ও কবিতার প্রগতি’ লিখে মাস্টহেডের শীর্ষে। কেবল এই কারণেই নয় যে একটানা প্রায় তিন/আড়াই ডিকেড ধরে একটা কাগজ করে যাচ্ছেন সম্পাদক, বরং এর ভিতরকার কন্টেন্ট, বরং এর কন্টেন্ট ডেভেলপার তথা কাগজটার পাতভুক্ত অথারসার্কেল, বরং এর সম্পাদকীয় অভিপ্রায় এবং এর লেখক ও লেখাপত্রাদি নির্বাচনের তরিকা স্বচ্ছকারী ইন্ডেক্স, মুদ্রণমাধুর্য ও মর্মগত মর্যাদাব্যঞ্জক ফর্ম্যাটিং ইত্যাদি ইন্ডিকেটরের যে-কোনোটায় বাংলাভাষা ব্যবসায়ীরা তারিফ করতেই পারেন ঋতিসম্পাদকেরে। এক্ষেত্রে এডিটর একটু উইক বোধহয়, পাব্লিক রিলেশনে তেমন দড়তা নাই, তিনদশকে একটাও পুরস্কার তো দূর প্রশংসাটাও বগলদাবায় পিঠ ফিরায়া থাকেন। কমিউনিকেশন অ্যাডভাইজিং অ্যাজেন্সির দুয়ারে গেলে রেজাল্ট আসবে।

অ্যানিওয়ে। এইটা কাগজটার নয় নাম্বার সংখ্যা। আগে যে-সংখ্যাগুলা বাইরইসে সেইগুলাও সুবিমল মিশ্র প্রয়াণের এই দিনগত সন্ধ্যায় ইয়াদ করা যায়। কিন্তু সংগতি হচ্ছে না আপাতত। সময় একটা ফ্যাক্টর। তবে এই সংখ্যাটা হাতে নিয়াও বুঝতে না পারার কথা না আগের সংখ্যাগুলার স্ট্যান্ডার্ড কেমন ছিল। তদুপরি, তাছাড়া, ঋতি  প্রত্যেকটা সংখ্যায় ইমিডিয়েইট আগের সংখ্যাটার ইন্ডেক্স ছাপানো হয়, যা থেকে যে-কেউ বোধ পাবেন পত্রিকাটা আর-যা-হোক অপরিকল্পনাজাত হুটহাট প্রকাশের ঘাট নয়।

ঋতি  এই সংখ্যায় লেখা  নাই একটাও, — সম্পাদক ফজলুররহমান বাবুল বলতেসিলেন সুবিমল মিশ্র প্রয়াণের সন্ধ্যায় এই রিপোর্টারের লগে কনভার্সেশনের সময়,  — যা আছে তা হচ্ছে লেখালেখি নিয়া সাতাশজন কবিসাহিত্যিকের খোলামেলা আলাপ; অন্যান্য সংখ্যাগুলায় যেমন কবিতা থাকে, এবং গল্প ও প্রবন্ধ ইত্যাদি, এই সংখ্যায় সেই-অর্থে লেখা  নাই, আছে লেখকদের যার যার লেখালেখির উদ্দেশ্য ও পটভূমি/পরিপ্রেক্ষিতের খোঁজতালাশ, কিছুটা দার্শনিক জমিজিরাতের হদিস; এ-ই তো! — সম্পাদকের সকৌতুক বক্তব্যটুকুর ভিতর পত্রিকাটার কারেন্ট ইশ্যুর কন্টেন্ট সম্পর্কে একটা আইডিয়া পাওয়া যায়। আচ্ছা, ভালো কথা, না-বললে তো ভুল বুঝবেন, সম্পাদকের লগে এই রিপোর্টারের সাক্ষাৎকালে ব্যক্ত কথাগুলো হবার সময়টায় হাসিহাসি ছিল উনার মুখ ও সমগ্র দেহমণ্ডল। বলতে হয় বলেই বলতেসি এমন নয়, ঋতিসম্পাদক ফজলুররহমান বাবুল অত্যন্ত বন্ধুবৎসল, অমায়িক অথচ ক্রোধ প্রকাশ করতে পারেন জায়গামতো, থোতাবাজ না তবে স্পষ্টভাষী, প্রুফখুঁতখুঁতা আর ফর্ম্যাটিংফ্রিক একটা মানুষ। লোক্যাল ছাপাছাপির অ্যারিনায় অনেকেই উনারে অ্যাডোর ও সমীহ করেন বর্ণিত বৈশিষ্ট্যগুলার কারণেই। ডেফিনিটলি। কিন্তু, থোড়া আউর কুচ, নব্বইয়ের দশকে লেখালেখি শুরু করা বাংলাদেশি কবিদের ভিতরে অত্যন্ত অরিজিন্যাল টোন, মার্ক মাই ওয়ার্ডস, মনে করি আমি ফজলুররহমান বাবুলকে।

এই সংখ্যায় কী-আছে না-আছে এ-ব্যাপারে একবাক্যে এডিটর যা বলসেন তা প্যারাফ্রেইজাকারে এই কাহিনিতে এরই মধ্যে প্রতিবেদিত উপরের অনুচ্ছেদে। কেন লিখি, কেন লেখালেখির প্রতিপাদ্য পত্রিকার প্রচ্ছদেই দৃষ্ট, প্রশ্নটার মুখামুখি হয়া আত্মজৈবনিক নোকতার মতো করে রেস্পন্স করসেন অনেকেই — দীপংকর রায়, হাফিজ রশিদ খান, শিমুল মাহমুদ, কামাল রাহমান, আহমদ মিনহাজ, জিললুর রহমান, মুজিব মেহদী, শিবলী মোকতাদির, মারুফুল আলম, জফির সেতু, মোস্তাক আহমাদ দীন, হোসনে আরা কামালী, তৈমুর খান, হেনরী স্বপন, ফকির ইলিয়াস, জাহেদ আহমদ, আতাউর রহমান মিলাদ, জওয়াহের হোসেন, নাজমুল হক নাজু, সুমন বনিক, আবিদ ফায়সাল, আমিনা শেলী, শ্রীদাম কুমার, অনন্ত নিগার, কল্পোত্তম, আলফ্রেড আমিন, সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়। সাতাশজন কুল্লে, কাউন্ট করলে, একটা কাউন্ট মিসিং তবু। বলতেসি।

দ্বিসহস্রতেইশের বাংলাদেশে লেখালেখি কীসের তরে, কেন — হুদাই লিটফেস্টাইতে? — এই প্রশ্নটা মাথার ভিতরে ক্যাঁড়াপোকার মতো ক্যাড়ক্যাড়ায়া যাবে এই ইশ্যুটা হাতে নিয়া আপনারও। সম্পাদকের মুখবন্ধনী ‘লিখনামৃতম্’ গদ্যটা কাউন্ট করতেই হবে, কেন লিখি  শিকোয়ায় এডিটর বেশ অ্যানালিটিক্যাল থাকতে পারসেন বলেই নয়, এই গদ্যে কবি ফজলুররহমান বাবুলের জওয়াবটাও যতই তিনি চুপাইবার চেষ্টা চালান না কেন পড়া যায়।

দ্য ট্রুথ ইজ, গোটা আঠাইশটা আত্মজৈবনিক সুলুকতল্লাশি লিখনকাহিনি ঋতি  রিসেন্ট সংখ্যায় অ্যাভেইল করা যাবে। বেশি খর্চা না, মাত্র ১০০ বাংলা টাকায়। ডিসেম্বর ২০২২ অব্দে, — যে-বছর বড়সড় বন্যাটা হয় সিলেট সহ দেশের বড় অংশে এবং বন্যার হোতা নিয়া আলাপ তুলতে দেখা যায় না কাউরে, যে-বছর পদ্মাসেতু উদ্বোধন করা হয়, যে-বছর ডলারঘাটতি নিয়া নানাবিধ শঙ্কায় নাস্তানাবুদ হয় পিপলস রিপাব্লিক, যে-বছর বাচ্চাদের ইশকুলের টেক্সটবুক সম্পাদনায় মুহাম্মদ জাফর ইকবাল গং গাফিলতির জন্যে এক্সপোজড হয়াও উন্নয়নের উকালতি দিয়া পার পাইতে চায়, যে-বছর শত শত সাইজমতো সচিবের লেখা কবিতার ও বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ও উদাহরণীয় গণতন্ত্রের প্রশংসার ও নয়া মডেলের উন্নয়নের আবিষ্কর্তা জননেতা শেখ হাসিনার বই সরকারি ক্রয়তালিকায় রাখতে যেয়ে কেউ ধরা না-খাইলেও বেচারা অ্যাডিশন্যাল সেক্রেটারি নবীরুল ইসলাম বুলবুল উনতিরিশটা কাব্যবইসমেত প্রকাশ্য দিবালোকে ধরা খায়, যে-বছর বাংলা অ্যাকাডেমিতে জেমকন গ্রুপের লিটফেস্ট আয়োজন করা নিয়া অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং কাজী আনিস আহমেদ গংদের পাল্টাপাল্টি ইন্টার্ভিয়্যু পড়ে বেশকিছু গোমর ফাঁস হয় এইসব করাকরির, যে-বছর উন্নয়নের দেশজোড়া সাক্সেস সেলিব্রেইট করতে জেলায় জেলায় সাহিত্যমেলায় ডিসিদের কাব্যডম্বরু শুনে পুণ্যার্জনের সুযোগ পায় নানা সাইজের জেলাওয়ারি নিভৃতচারী নিম্রা কবিরা, — এই পত্রিকাটা পাব্লিশ হইসে সেই বছরে। একটানা আঠাইশটা রচনা পাতের উপর পরপর পাবার শেষে একপৃষ্ঠায় একটা সাহিত্যপত্রিকার পূর্ণপৃষ্ঠা অ্যাডভার্ট, অন্য দুইপৃষ্ঠায় কালো মুজিবকোটপরা চাইর আওয়ামী লীগ লোক্যাল নেতার শুভকামনা।

যারা কাগজটা পাইতে চান বা কাগজটায় লেখার ব্যাপারে একটু খোঁজপাত্তা লাগাইতে চান তাদেরে যার যার কাছাকাছি বিরল বইদোকানগুলায় সার্চ করতে বলি। লিটলম্যাগ টাইপের কাগজগুলার স্বীকৃত দুরাবস্থা এ-ই যে এইগুলা মার্কেটে অ্যাভেইলেবল নয় দেশজোড়া, স্থানে স্থানে পাওয়া যায় স্থানে স্থানে নয়, রাখতেও গররাজি ইদানীং ‘অভিজাত’ বইদোকানগুলায়। ইন দ্যাট কেইস, সংযোগ নিতান্ত জরুরি হলে, এডিটরের লগে সংযোগের যে-অ্যাড্রেস পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে মেনশন করা আছে সেইটা আমরা মাথায় রাখতে পারি —

ঋতি। নবম সংখ্যা। পৌষ ১৪২৯। ডিসেম্বর ২০২২। সম্পাদক : ফজলুররহমান বাবুল, উত্তর মিরেরচর, বিশ্বনাথ ৩১৩০, সিলেট, বাংলাদেশ। দূরভাষ : +৮৮০ ১৭১১ ৩৩৭ ০০৯; ইমেইল : frbabul@gmail.com

মোহাম্মদ জায়েদ আলী কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকাটার আয়োজনানুগ প্রচ্ছদ করসেন নাজমুল হক নাজু। ছাপাকানন, মাছুদিঘির পাড়, তালতলা, সিলেট ৩১০০ থেকে সাড়ে-চারফর্মা আশিগ্র্যাম অফসেটে মুদ্রিত শোভন এই রিডিং-কন্টেন্টটার কম্পোজ স্যুপার্ভাইজ করসেন হাফিজুর রহমান।

সুবিমল মিশ্র প্রয়াণের সন্ধ্যায় একটা ম্যাগাজিন ও একজন সম্পাদকের সঙ্গে হ্যান্ডশেইক করতে পেরে বেশ ভাল্লাগতেসিলো, অস্বীকার না করি।

মিল্টন মৃধা 


গানপারে লিটলম্যাগ নিয়া লেখারাশি

COMMENTS

error: