গাইগোরুর হাম্বা আর হাঁসের প্যাঁকপ্যাঁকে ভরে আছে বাড়ি। তিনটি গোরু, পাঁচটি হাঁস নিয়া আমাদের সংসার ভরে থাকে শব্দে সারাদিন। গাইটা বাচ্চা বিয়োবে আবার এই ডিসেম্বরে, সে-রকমই কথা। বছরবিয়োনি লক্ষ্মী গাই, বিক্রির সময় এর আগের সংসারপ্রধান বলে দিয়েছিলেন। কথাটা মিথ্যে নয়। ষাঁড় আছে দুটো, এর মধ্যে একটা একেবারেই এঁড়ে বাছুর, এবার একটা বকনা বাছুর চাই। একটা, যেটা তাগড়া দশাসই হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে, সারাদিন বাঁধা থাকে তার ঘরের ভেতরে খুঁটির সঙ্গে। এটাকে সামলানো যায় না বাইরে বের করলে, তাই গৃহান্তরীণ রাখতে হয়। এর শিংজোড়া হয়েছে দেখার মতো, চোখাচাখা খাপেখাপ মাপের, লড়াইপ্রিয় ষাঁড়সংগ্রাহকদের কাছে এইকিসিম শিঙের আদুরে নাম ‘হাতিয়ার’। জবর লড়িয়ে হয় এইধারা হাতিয়ারওয়ালা ষাঁড়গুলো, কয়েকজন সম্ভাব্য ক্রেতা ষাঁড় দেখতে এসে এমন কথাবার্তা ঘুরিয়েফিরিয়ে বলতেসেন ইদানীং। বছর দুইও হয়নি, কিন্তু দেখতে দেখায় গামা-পালোয়ানের মতন কিংবা ডাম্বেলভাঁজা দামাল ব্যায়ামবীর যেন। এতই দুরন্ত হয়েছে, এতই দুর্ধর্ষ। মিশমিশে কালো গতরবরন, অন্ধকারেও ঝলমলিয়ে উঠবে এমন অভ্রঝলক ঠিকরোয় এর ত্বক থেকে, সম্মোহনীয় কৃষ্ণকায়া ষাঁড়। ছোটটা লায়েক হয়ে ওঠেনি এখনো, অর্জুনগাছের কাণ্ডের রঙ, দুর্দান্ত পুরুষ্টু তার গা-গতর। গর্ভে বাচ্চা নিয়ে এদের মা খুব গম্ভীর হাঁটাচলা করে, আর থেকে থেকে ধীর-মন্থর গলায় নিঃশ্বাস ফেলে শুধু।
হাঁসের আগমনও বেশিদিন হয়নি, ইতিউতি হেল্কিদুল্কি হেঁটেচলে তাদের নয়া রাজপাট চিনে উঠছে সবে। বেশ দীর্ঘদিন হাঁসবিহীন ছিল আমাদের সংসার। শেষে এই সেদিন আনিয়েছি এদেরকে, আমার এক সহকর্মীর সৌজন্য স্মরণ করছি এ-বাবতে, আনিয়েছি দূরদেশ বড়লেখা থেকে। দেশি হাঁস খুঁজছিলাম, দুর্লভপ্রায় দেশিজাতের মিষ্টিপানা পালক-পাখনার টুকটুকে টেপিহাঁস, না-পেয়ে অগত্যা খাঁকি-ক্যাম্পবেল। ডিম পাড়া শুরু করবে অঘ্রান মাস থেকে, এ-রকমই বলেছে বিক্রেতা। ডিম পাড়ুক না-পাড়ুক, প্যাঁকপ্যাঁক ডাকলেই হলো। সুন্দর এদের ডাক, খুঁটে খুঁটে খাওয়ার শব্দ, গুগ্লিশামুককেঁচোর খোঁজে কাদা ঘাঁটা সারাদিন চঞ্চু ঢুকিয়ে অল্পজল জংলা জায়গায়। পাঁচটারই গায়ের রং খাঁকি, ছিটাছিটা চোখের নকশা সারাগায়ে এবং ধূসর ঔদাস্যলেপ্টানো শরীর, পাঁচটাই গায়েগতরে একরকম দেখতে।
এবার দুটো দেশি মুর্গি দরকার। খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। ভালো জাতের দেশি মুর্গি চাই। তেজালো ও তুখোড়। ফার্মের ঝিমানো মাংসল মৃগীরোগী মুর্গি নয়। এইসব পোষা প্রাণিতে ভরে উঠবে সংসার, শব্দশৌর্যে ভরভরন্ত থাকবে ঘরদোর, তবেই শান্তি বেঁচে থাকার।
— জাহেদ আহমদ / এপ্রিল ১৪, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ
COMMENTS