প্রিয় যন্ত্র, প্রথম যন্ত্র :: সাইদুস সালেহীন সুমন

প্রিয় যন্ত্র, প্রথম যন্ত্র :: সাইদুস সালেহীন সুমন

[বহু বছর ধরে বেজগিটার বাজিয়ে চলেছেন তিনি। কিংবদন্তিপ্রায় খ্যাতি পেয়েছেন বেইজিস্ট হিশেবে। দেশের নামজাদা ব্যান্ড অনেকের সঙ্গেই দীর্ঘদিন বাজিয়ে একসময় নিজের ব্যান্ড গড়েন, আবির্ভূত হন কমপ্লিট মিউজিশিয়্যান হিশেবে, জয় করেন শ্রোতার মন। নতুন আবির্ভাবে কেবল বাদক হিশেবেই সীমায়িত থাকে না তার পরিচিতি, তিনি একাধারে বেইজিস্ট-লিরিসিস্ট এবং পূর্ণাঙ্গ সংগীতপরিচালক হিশেবে নিজের ইমপ্রিন্ট পাকাপোক্ত করেন ব্যান্ডসমুজদার শ্রোতার হৃদয়ে। ‘বেজবাবা’ নামে একডাকে খ্যাত এই শিল্পী নিজের বিশেষ গায়কী ও ভোক্যাল দিয়ে একটা আলাদা শ্রোতাগোষ্ঠীই তৈরি করে নেন। পরবর্তীকালে এইধারা গান ও টিউনের উল্লেখযোগ্য কন্টিন্যুয়েশন লক্ষ করা যায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসিনে।

‘সুমন ও অর্থহীন’ ব্যান্ডের দলপ্রধান ও উদ্যোক্তা সাইদুস সালেহীন সুমন। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের  দশকের শুরু থেকেই গিটার হাতে নেন। বাকি দিনগুলো পরিশ্রমের, প্রেমের এবং পরিণয়ের ও পরিণতি অর্জনেরও বটে। এইখানে পত্রস্থ রচনাটি লিখেছেন কাজী উচ্ছল। অনুসৃতি নিবন্ধ এটি; ডিক্টেশন/শ্রুতিলিখন প্রক্রিয়ায় সুমনের জবানিতেই লিখিত রচনা। ‘আনন্দভুবন’ ১৯৯৮ থেকে এটি রিপাব্লিশ হচ্ছে এখানে। এর উৎসপত্রিকার তথ্য : বর্ষ ৩ সংখ্যা ৬; ১ অগাস্ট ১৯৯৮, ১৭ শ্রাবণ ১৪০৫। দুই দশক আগেকার রচনা হলেও সংগীতক্ষেত্রে একজন বাদ্যযন্ত্রী মিউজিশিয়্যানের গোড়ার দিককার প্রবণতা, যান্ত্রিক যাতনা ও জোশ, আর পাওয়া যায় তার ফর্ম্যাটিভ ইয়ার্স। ‘গানপার’ থেকে এই ধরনের রচনা আমরা ধারাবাহিক ছাপানো অব্যাহত রাখতে চাই, বিশেষ ও বিশদ বিস্তারে আমরা চাই আনকোরা বাদ্যযন্ত্রশিল্পীর বাজনাপ্রেম ও বাজনাসাধনা গানপারে ছেপে যেতে। — গানপার]

’৯১ সালের দিকে আমি বাজাই আমার প্রথম গিটার। ‘ফিলিংস’-এর বাবুর কাছ থেকে পেয়েছিলাম বহু-হাত-ফেরত গিটারটি, বেইজিস্ট হলে সম্ভবত আপনিও এটি বাজিয়েছেন। গিটারটা আমি ‘রকস্ট্র্যাটা’-র প্র্যাক্টিসরুমে দেখেছি, ‘রকব্রিগেড’-এর শিশিরের কাছে দেখেছি। প্রত্যেকেই গিটারটি নিজের ইচ্ছেমতো রঙ করার ফলে বেচারার নামটা আর জানতে পারিনি। সেটা অবশ্য আমার তখন কেনাও হয়নি।

কিনলাম কালো ইয়ামাহা একটা ’৯২ সালে ‘প্রমিথিউস’-এর বেইজিস্ট বুলবুলের কাছ থেকে। বেশ কিছুদিন বাজিয়েছিলাম সেটা। তখনই কিনেছিলাম নাম-না-জানা সেই গিটারটা; কিছুদিন পর সেটা বিক্রিও করে দেই। ’৯৩-তে ‘জলি রজার্স’-এর রেজা আমেরিকা থেকে একটি কর্ট ৫-স্ট্রিং বেজ্ নিয়ে আসে; তার কাছ থেকে কিনে নেই আমি। বাংলাদেশে সেই প্রথম ৫-স্ট্রিং বেজ্।

এরও কিছুদিন পরে গেলাম সিঙ্গাপুরে, সেখান থেকে কিনলাম আইবানেজ সাউন্ডব্লাস্টার এফবি-১৫০০, দাম পড়েছিল সাতচল্লিশ হাজার টাকা। বছরখানেক বাজালাম কর্ট আর আইবানেজ দুটোই; তারপর মিউজিক ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটোই বিক্রি করে দিলাম। এ-অবস্থায় প্র্যাক্টিস চালিয়ে গেলাম রাশেদ নামে এক স্টুডেন্টের আইবানেজ এসআর-১০০০ দিয়ে। ’৯৭-এর অক্টোবর পর্যন্ত মোটামুটি ওটাই বাজালাম, তারপর সিঙ্গাপুরে পেয়ে গেলাম আমার আল্টিমেট গিটার। আসলে পেনাল্টিমেট গিটার বলা উচিত।

সেই বছরেরই অক্টোবরে পেলাম গ্লোরিয়া মডেলের কাস্টম-মেইড টোবিয়াস। এই টোবিয়াস নিজের হাতে তৈরি করেন মাইকেল টি নামের এক ভদ্রলোক, যিনি আগে ছিলেন গিবসন-এর ডিজাইনার। তখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ওই গিটার ছিল মাত্র ৪৬টি, ভাবতেও ভালো লাগে এর মধ্যে একটা আমার। কপালের জোরে গিটারটা পেয়েছিলাম সেল্-এর ডিস্কাউন্টে।

আমার একটা ইক্যুয়ালাইজার সহ সেমিঅ্যাকোয়েস্টিক গিটারও আছে, যেটা অ্যাকোয়েস্টিক হিশেবেই ব্যবহার করি। প্রোসেসরের ক্ষেত্রে কর্গ এ-৫ প্রোসেসর ব্যবহার করতাম, গেল চুরি হয়ে। তিন বছর পর সেটা আবার উদ্ধার করলাম ঠিকই, কিন্তু এক বন্ধু বাজাতে নিয়ে নষ্ট করে ফেলল। এখন ব্যবহার করি এআরটি র‍্যাক মাউন্ট প্রোসেসর, আর বিবিই ডিআই বক্স। ভালো অ্যাম্প আমি কখনোই পাইনি। আগে আম্মার এনে দেয়া রোল্যান্ড কিউব-৪০, পরে টিএনটি-১১৫ ব্যবহার করেছি; — ভালো অ্যাম্প কিনতে পারিনি।

লেখা : কাজী উচ্ছল

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you