[ওয়ারফেজ নিয়ে একে একে তিন-তিনটে দশক পার করেছেন টিপু। যদিও সংগীতলিপ্ত তিনি এরও আগে থেকে, বেশকিছু দলের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে তাকে স্টেজে-অ্যালবামে বাজাতে, যেমন উইনিং ব্যান্ডে টিপুর রয়েছে একটা উল্লেখযোগ্য কন্ট্রিবিউশন। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকে এ-যাবৎ বাংলাদেশের ব্যান্ডসিনে, দেশের অডিয়োইন্ডাস্ট্রিতে, একাগ্রচিত্তে যে-কয়জন মিউজিশিয়্যান লগ্ন রয়েছেন শ্রমে এবং প্রেমে — টিপু তাদের একজন।
গোলকিপারের যা কাজ বা দায়িত্ব ফুটবলখেলায়, একজন ড্রামারের দায়িত্ব বা কাজ ঠিক তা-ই একটা ব্যান্ডে — এমন একটা কথা সর্বজনবিদিত। ওয়ারফেজের জন্মলগ্ন থেকেই টিপু লিড দিয়ে চলেছেন ব্যান্ডটিকে। এরই মধ্যে বেরিয়েছে সাতটিরও অধিক স্টুডিয়োঅ্যালবাম। বহুবার ব্যান্ডের লাইনাপে রদবদল সত্ত্বেও ওয়ারফেজ এখনও প্রথম বছরের মতো সক্রিয় সমুজ্জ্বল মঞ্চে এবং অ্যালবামে, — কেবল এই নিরঙ্কুশ নেতৃত্বগুণে। এবং শুধু দলের একক সংকলন নয়, ওয়ারফেজজের অনেক গান ছড়িয়ে আছে মিক্সড অডিয়োঅ্যান্থোলোজিগুলোতে।
১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যান্ড গঠনের পাক্কা সাত বছর বাদে, ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে, বেরোয় তাদের পয়লা অ্যালবাম। সেল্ফ-টাইট্যল্ড। এরপরে ‘অবাক ভালোবাসা’, তারপর ক্রমান্বয়ে — ‘জীবনধারা’, ‘অসামাজিক’, ‘আলো’, ‘মহারাজ’, ‘পথচলা’, ‘সত্য’ প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ পর্যন্ত। অন্তর্বর্তী তিনদশকসীমায় দেশে এবং দুনিয়ার বিভিন্ন শহরে ওয়ারফেজ স্টেজশো করেছে অসংখ্য। রজতজয়ন্তী সেলিব্রেশন্যাল শো সফলভাবে সম্পন্ন করার পাঁচবছরের মাথায় ২০১৫ সনে তারা ব্যান্ডের তিনদশক পূর্তির উৎসব করেছে ফের বড়সড় মঞ্চে গেয়ে-বাজিয়ে এবং নতুন-পুরনো ওয়ারফেজকুশলীদের সবাইকে নিয়ে এই রিয়্যুনিয়ন স্টেজশো বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতেতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
আর এই সবকিছুই প্রমাণ করে ব্যান্ড হিশেবে ওয়ারফেজের সংগীতদায়বোধের। এবং এই সমস্তকিছুর নেপথ্যে যে-ব্যক্তিটা হাল ধরে রেখেছেন নাবিকের ন্যায় একাগ্র, অবিচল, তিনি টিপু। ওয়ারফেজের লিডার, ড্রামার এবং অবশ্যই ড্রিমার শেখ মনিরুল আলম টিপু। জনপ্রিয় অসংখ্য কম্পোজিশনের মধ্যে এমন কয়েকটা নাম্বারের উল্লেখ বাদ যাবে না, যেমন — জননী, একটি ছেলে, অবাক ভালোবাসা, ধূপছায়া, স্বাধিকার, অসামাজিক, মনে পড়ে, আলো, যত দূরে, বেওয়ারিশ … প্রভৃতি এবং আরও অন্তত ডজনখানেক।
এই রচনায় আমরা টিপুর ক্যারিয়ারগোড়ায় ইন্সট্রুমেন্টপ্রেম ও পর্যুদস্ততার গল্প শুনব। গত শতকের আশির দশকে একজন ড্রামারকে কেমন স্ট্রাগল করতে হতো শুধু পছন্দের বাদ্যযন্ত্র নাগালে পেতে, এই জিনিশটা জানা যায় এই চিলতে রচনায়। এইটা আমরা নিয়েছি গোলাম ফারুক সম্পাদিত বহুআগে-বন্ধ-হয়ে-যাওয়া পাক্ষিক আনন্দভুবন ৩ অগাস্ট ১৯৯৮ তৃতীয় বর্ষ ষষ্ট সংখ্যা থেকে। পত্রিকার অভ্যন্তরভাগে মিউজিকম্যাগ হিশেবে যেইটা ‘সারেগারে’ শিরোনামে বেরোত, সেই অংশের ২ বর্ষ ৬ সংখ্যা থেকে রচনাটা চয়িত। ‘যন্তরমন্তর’ শীর্ষক বিশেষ আয়োজনে লেখাটি ইন্টার্ভিয়্যুয়ের ভিত্তিতে অনুলিখন করেছেন কাজী উচ্ছল। — গানপার]
————————————————————————
যন্তরমন্তর
লেখা : কাজী উচ্ছল
প্রথম প্রকাশ : ৩ অগাস্ট ১৯৯৮ ।। ১৭ শ্রাবণ ১৪০৫
প্রকাশস্থান : আনন্দভুবন সারেগারে
পুনর্প্রকাশ ও ভূমিকা : গানপার ২০১৭
————————————————————————-
ছোটবেলায় বাজাতাম তবলা, ড্রামে হাত দেই ’৮২ সালে। তখন আমার কোনো ড্রামস্ ছিল না। যে-ব্যান্ডে ছিলাম সে-ব্যান্ডের ড্রামস্ বাজাতাম — সেগুলো ছিল দেশী — … অ্যান্ড কোং, সুরশ্রী — এদের ড্রামস্।
তখন স্টেজশোতে ড্রামস্ ভাড়া করা হতো। প্রধান ভরসা ছিল ফেরদৌস ওয়াহিদের প্রতিষ্ঠানের নীল পার্ল ড্রামস্। যখন ‘ওয়ারফেজ’ গঠন করলাম তখন আমার কোনো ড্রামস্ ছিল না। প্র্যাক্টিসের জন্যে ছাত্রদের যে-ড্রামস্ রেফার করতাম সেগুলোও ছিল দেশী কিংবা ইন্ডিয়ান বাপ্পি’জ্ ড্রামস্। এভাবেই চলল অনেকদিন।
’৮৮-’৯০ সালের দিকে আশিকুজ্জামান টুলু (আর্ক), তিথী (ফেইথ), কল্লোল (ক্রস রোডস) — এরা বাণিজ্যিকভাবে ড্রামস্ ভাড়া দিতে শুরু করে। এর মধ্যে ছিল টামা রকস্টার ডিএক্স, টামা স্যুইংস্টার ইত্যাদি। ‘ওয়েভস্’ ব্যান্ডের ছিল টামা সুপারস্টার, সেটা তাদের কাছ থেকে ‘মাইলস’ আর মাইলসের কাছ থেকে শামীম কিনে নেয় এবং ভাড়াও দিতে শুরু করে। এরাই সে-সময় ছিল ভালো ড্রামসের উৎস।
উইনিং-এ থাকার সময় বাজাতাম ব্যান্ডের টামা স্যুইংস্টার। ’৯৫-এ ব্যান্ডের সাথে দুবাই ট্যুর করার সময় কিনে আনি পার্ল এক্সপার্ট প্রো।
ড্রামস্ এমনই ইন্সট্রুমেন্ট যে বাসায় প্র্যাক্টিস করার কোনো উপায় নেই, রীতিমতো সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব কারণেই এখনো আমার নিজস্ব ড্রামস্ নেই। আগে খাটে বসে শূন্যে ড্রামস্ কল্পনা করে প্র্যাক্টিস করতাম, তাতে অবশ্য কোনো সাহায্য হতো না। এখন সাউন্ডপ্রুফ ঘরে ড্রামপ্যাডে প্র্যাক্টিস করতে পারছি।
’৯৫-এর শেষের দিকে প্রোফেশন্যালি মিউজিক করতে শুরু করার আগে একটা রিদম প্রোগ্র্যামার জরুরি হয়ে পড়ায় একটা আর-৮ মার্ক-প্রো কিনি। স্টিকের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি লুডভিগ আর ডিন মার্কেলের স্টিক, সাইজ্ ৫-এ আর ৫-বি। অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টের ক্ষেত্রে যেমন ওয়ার্ল্ডক্লাস ইক্যুইপমেন্ট পাওয়া যায় তেমনটা ড্রামসের ক্ষেত্রে ঘটেনি মোটেই। ২৪ পিস, ৩৬ পিস কম্বিনেশন বাজাবার কথা ভাবাই যায় না।
- প্রিয় যন্ত্র, প্রথম যন্ত্র :: এহসান এলাহী ফান্টি - February 17, 2018
- প্রিয় যন্ত্র, প্রথম যন্ত্র :: হামিন আহমেদ - February 6, 2018
- প্রিয় যন্ত্র, প্রথম যন্ত্র :: আইয়ুব বাচ্চু - January 12, 2018
COMMENTS