ও মা! তোর চরণে কি ফুল দিলে পূজা হবে বল্!
রক্তজবা অঞ্জলি মোর হলো যে বিফল।।
বিশ্বে যাহা আছে মা গো,
তাতেও পূজা হবেনাকো;
তাই তো দুঃখে নয়নে মোর শুধুই আসে জল।।
মনের কোণে অর্ঘ্য রচি আঁধার ঘরে একা;
ডাকলে তোরে সকল ভুলে দিবি না তুই দেখা?
তখন কি মা দুঃখহরা
শেষ হবে না অশ্রুধারা?
কি ফুলে তোর পূজা হবে বল্ —
কেন করিস ছল।।
২.
এবার নবীন মন্ত্রে হবে জননী তোর উদ্বোধন।
নিত্যা হয়ে রইবি ঘরে, হবে না তোর বিসর্জন।।
সকল জাতির পুরুষ নারীর প্রাণ
সেই হবে তোর পূজাবেদী
মা তোর পীঠস্থান;
সেথা শক্তি দিয়ে ভক্তি দিয়ে পাতবো মা তোর সিংহাসন।।
সেথা রইবেনাকো ছোঁয়াছুঁয়ি উচ্চ-নিচের ভেদ,
সবাই মিলে উচ্চারিব মাতৃনামের বেদ।
মোরা এক-জননীর সন্তান সব, জানি,
ভাঙব দেয়াল ভুলব হানাহানি;
দীনদরিদ্র রইবে না কেউ, সমান হবে সর্বজন।
বিশ্ব হবে মহাভারত, নিত্যপ্রেমের বৃন্দাবন।।
৩.
অনাদি কাল হতে অনন্ত লোক
গাহে তোমারি জয়।
আকাশ-বাতাস রবি-গ্রহ তারা-চাঁদ,
হে প্রেমময়,
গাহে তোমারি জয়।।
সমুদ্রকল্লোল, নির্ঝরকলতান —
হে বিরাট, তোমারি উদার জয়গান;
ধ্যানগম্ভীর কত-শত হিমালয়
তোমারি জয় —
গাহে তোমারি জয়।।
তব নামের বীণা বাজায় বনের পল্লব
জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব।।
আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায়
তব জয়গান বাজে অপরূপ মহিমায়,
কোটি যুগ-যুগান্ত সৃষ্টি-প্রলয়
তোমারি জয় —
গাহে তোমারি জয়।।
৪.
ওগো মা গো আজো
বেঁচে আছি তোরই প্রসাদ পেয়ে।
দয়াময়ী অন্নপূর্ণা
তোরই অন্ন খেয়ে॥
কবে কখন খেলার ছলে,
ডেকেছিলাম শ্যামা ব’লে;
সেই পুণ্যে ধন্য আমি
আজ তোরই নাম গেয়ে॥
পাপী হয়েও পাই আমি তাই, যখন যাহা চাই।
দুঃখে-শোকে বিপদ-ঝড়ে,
বাঁচাস্ মা তুই বক্ষে ধ’রে;
দয়াময়ী নাই কেহ মা,
ভবানী তোর চেয়ে॥
৫.
জাগো যোগমায়া জাগো মৃন্ময়ী চিন্ময়ী রূপে জাগো,
তব কনিষ্ঠা কন্যা ধরণী কাঁদে আর ডাকে মা গো।।
বরষ বরষ বৃথা কেঁদে যাই
বৃথাই মা তোর আগমনী গাই
সেই কবে মা আসিলি ত্রেতায় আর আসিলি না গো।।
কোটি নয়নের নীলপদ্ম মা ছিঁড়িয়া দিলাম চরণে তোর,
জাগিলিনে তুই, এলিনে ধরায় মা কবে হয় হেন কঠোর।
দশ ভুজে দশ গ্রহরণ ধরি’
আয় মা দশ দিক আলো করি’
দশ হাতে আন্ কল্যাণ ভরি’ নিশীথ-শেষে ঊষা গো।।
- মায়ের চরণে একগোছা গান :: কাজী নজরুল ইসলাম - September 29, 2017
COMMENTS