কামারগাঁও, নারকিলা, ছিকাডুপি, বল্লভপুর, উজানগাঁও ও জাহানপুর নামের কতিপয় গ্রাম যেমন পাঠকের কাছে চিরচেনা মনে হবে তেমনি কালু মিয়া, মজর আলী, ছিরুক মিয়া, আবদুল খালেক, আবদুর রহিম প্রমুখের নাম আরও চেনা মনে হবে — এ তো আমাদেরই গ্রাম, আমাদেরই প্রতিবেশী।
এই গ্রাম আর গ্রামের মানুষগুলো মুক্তিযু্দ্ধের সময় তাদের চৌর্যবৃত্তি বাদ দিয়ে সঙ্গী হয়েছিলেন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যে-মানুষগুলো হাওড়ে নৌকার হাল ধরে যুদ্ধে শামিল হয়েছিলেন, তাদের জন্যই আবার স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে যায়! মিনা বেগম, সমুত্রা বিবিদের সম্ভ্রম হারানোর কাহিনি পড়ে পাঠকমাত্রই সংক্ষুব্ধ হবেন।
লেখক যেহেতু একজন সাংবাদিক তাই অন্ত্যজদের নিকট শ্রুত কাহিনি পরবর্তীকালে পেশাগত দক্ষতায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্রসচেক করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের অবস্থান জাস্টিফাই করেছেন। তারপরও সাক্ষীদের অনাগ্রহ বা অন্যায় দাবির কারণে সেই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি আদায় না করতে পারাটা কষ্টদায়ক।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চোরেরগাঁওয়ের লোকজনের ঠায়ঠিকানা এবং স্বীকৃতি পাওয়া কেন নানা জটিলতার আবর্তে কঠিন হয়ে যায় সে-বিষয়ে লেখকের সত্যানুসন্ধান থেকে পাঠক উত্তর পেয়ে যান, আশাহত হন। তারপরও ছিরুক মিয়া, রজব আলী, আবদুস সাত্তারদের নাম সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় দেখাটা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক।
কোনো-এক সময় ভোটার তালিকায় পেশা ‘চুরি’ উল্লেখ করে আলোচনায় আসা সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার চোরাপল্লির বাসিন্দাদের দেশপ্রেমের অজানা কাহিনি পাঠকদের সামনে নিয়ে আসার জন্য লেখককে অভিনন্দন। শ্রমসাধ্য এই কাজটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য সংযোজন।
ধ্রুব এষের প্রচ্ছদ মানানসই। তবে, ফন্টসাইজ আরেকটু বড় এবং লাইনস্পেস আরেকটু বেশি হলে সব-বয়সী পাঠকদের জন্য বইপাঠ আরামদায়ক হতো। আশা করি আগামী সংস্করণে প্রকাশক সেদিকে নজর দিবেন। বইটির বহুল প্রচার ও পাঠকপ্রিয়তা কামনা করছি।
১৯৭১ : চোরেরগাঁওয়ের অশ্রুত আখ্যান
লেখক : শামস শামীম
প্রকাশক : নাগরী ।। প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ।। মুদ্রিত মূল্য : ২২০ টাকা
… …
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS