ক্ল্যাসি থেকে ক্ষ্যাত || আহমদ মিনহাজ

ক্ল্যাসি থেকে ক্ষ্যাত || আহমদ মিনহাজ

কোনো কোনো গান থাকে যাকে নতুন সাজে দেখতে ইচ্ছে করে না। প্রথম সাজে যে দিব্যি শ্রীময়ী তাকে নতুন করে সাজানো মনে হয় জরুরি নয়। পুরোনো সাজে সে পরিপূর্ণ। তাকে নতুন অলংকার পরানো, তার সৌন্দর্যে বাড়তি পূর্ণতা দানের চেষ্টাকে অশ্লীল লাগে তখন। গেল শতকে আটের দশকে নির্মিত ঘুড্ডি ছবির ঘুম ঘুম ঘুম চোখে দেয় চুম সেরকম একটা গান। কোক স্টুডিও বাংলা তাকে নতুন সাজে হাজির না করলেও পারতেন।

ঘুড্ডি সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীর যত্ন করে বানানো একটা ছবি। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক দশকের মাথায় যেসব টক্সিক অভিজ্ঞতা জাতিকে সইতে হয়েছিল তার মধ্যে বসে ছবিটি বানিয়েছিলেন জাকী। স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের চাপ যে-বিকলনকে অকাট্য করে তাকে ফ্রেমে রাখলেও এর থেকে বেরিয়ে আসার গল্পটি সেখানে বলা হয়েছিল। ঘুড্ডি হচ্ছে যুদ্ধফেরত এক গেরিলাকে ঘিরে সক্রিয় নাগরিকজনের গল্প। নিগূঢ় প্রণয় ও মনোবিকলনের গল্প। অবদমিত যৌনবাসনার গল্প। ছোট-ছোট চাপা অনুভূতিকে দেহকোষে ‍শুষে নেওয়া ও অবদমনের গল্প। চলতে থাকা এইসব গল্পের মিছিলে শরিক ছবির মুখ্য চরিত্ররা সেখানে অস্তিত্বিক নিরালম্বতায় দ্রবীভূত হয়। সব ছেড়েছুড়ে অন্য কোথাও পালিয়ে যাওয়ার হারিয়ে যাওয়ার গূঢ়ৈষা তাদেরকে তাড়া করে ফেরে। ছবিতে ব্যবহৃত গানগুলোর দেহে সেটা বোধ করি ইতিহাস হয়ে আছে।

দ্বিতীয় মহাসমর পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ও টানাপোড়েন, দুই পরাশক্তির মাঝে চাগিয়ে ওঠা শীতল অবরোধের জেরবার বিশ্বে সত্তা, অস্তিত্ব ও শূন্যতার যেসব ঘূর্ণি সেকালের সিনেভাষায় আবেদন রাখছিল, তার ঝটকা থেকে সদ্য স্বাধীন দেশের নগরমধ্যবিত্তের রেহাই মিলেনি। আলমগীর কবির যেমন এই বিমারে ভয়ানক আক্রান্ত ছিলেন। রাজনৈতিক দায়বোধের জায়গা থেকে ছবি বানালেও কবিরের ছবি আখেরে সেই রাজনীতিটা করে উঠতে পারে না। একে মোকাবিলার রাস্তাও কি খুঁজে পায় সে? রাজনীতিটা বরং গুম হয় বায়বীয় নিরালম্বতায়। ব্যক্তি সেখানে উঠে দাঁড়ানোর অস্ফুট আবেগে মাতোয়ারা হলেও তার কোনো অবলম্বন থাকে না। প্রতিকূল স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে। নির্জন দ্বীপে নির্বাসিত অদিম মানব করে তাকে। খোয়াবঘোর আচ্ছন্নতা তার আর কাটতেই চায় না সেখানে! বোহেমিয়ান রোমান্টিসিজম-এ নিজেকে রিক্ত করে সে। সিনেমার পর্দায় আলমগীর কবিরের বোনা গল্পগুলো কার্যত বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনীতিসচেতন সত্তায় সক্রিয় ভাবালুতার স্মারক ভাবা যায়। ওটা তাকে দিবাস্বাপ্নিক থেকে ফতুর খোয়াববিক্রেতায় সত্তার অবচয় ঘটাতে মজবুর রাখে। জাকীর ঘুড্ডিকে এদিক থেকে যদি ভাবি তাহলে আলমগীর কবিরের ছবির সঙ্গে খানিক হলেও সদৃশ মানতে হয়।

ঘুড্ডি ছবি হিসেবে কতটা উত্তীর্ণ সেটা অবশ্য পৃথক আলোচনার বিষয়। আপাতত এটুকু স্মরণ রাখা কাফি, ঢাকাই মূলধারার ছবির সঙ্গে প্রগাঢ় সখ্য না থাকলেও নিখাদ আর্টহাউজ ছবি ওটা ছিল না। অন্য পন্থায়, বলা ভালো প্রচলিত ঢাকাই ছবির ফ্রেমে নিজেকে আপাদমস্তক জিম্মি না করে কিছুটা ঘুরপথে বাণিজ্যসফল ছবিই বানাতে চেয়েছিলেন জাকী। সময়ের সঙ্গে কাল্ট ক্লাসিক-এ পরিণত ছবিটির সম্পদ যদি বলি তবে সেটা হচ্ছে তার সংলাপ ও গান। একে পূর্ণতা দিয়েছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফা ও নায়লা আজাদ নূপুরের মতো অভিনয়শিল্পী। আসাদ ও সুবর্ণা ইদানীং কালেভদ্রে অভিনয় করলেও একটা লম্বা সময় ধরে নাটক ও সিনেমায় দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন। অভিনয় ও সাহসী মডেলিংয়ে আবেদন জাগানো নূপুর কেন জানি পরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন! শাহাদত চৌধুরী সম্পাদিত আনন্দ বিচিত্রায় তাঁর বোল্ড পোজ, শরীরীভাষায় সরব আবেদন এখনো স্মৃতিতে অটুট দেখতে পাচ্ছি। দেশের নাটক ও সিনেমার বাইরে হলিউডের দু-চারটা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন একসময়। অধ্যাপনাও বোধহয় করেছেন কিছুদিন। তারপর কোথায় হারিয়ে গেলেন জানি না! নূপুরের অন্তরালে গমন সেই পটপরিবর্তনের সাক্ষ্য বহন করে যার চাপে দেশের মধ্যবিত্ত নগরসংস্কৃতি পুরোদস্তুর বৈশ্বিক হয়ে ওঠার আগে মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল।

এটুকু মনে আছে, ঘুড্ডি সুবর্ণা ও নূপুরের প্রথম ছবি হলেও একে লাকী ও হ্যাপী আখন্দের ছবি বলাটাই অধিক যুক্তিসংগত। ছবিটির সংগীত আয়োজনের ভার দুই ভাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা ছবিটি তখন দর্শক টানতে পারেনি কিন্তু গানগুলো নাগরিক শ্রোতার কানে ভীষণভাবে জায়গা করে নিয়েছিল। কে বাঁশি বাজায় রে বা আবার এল  যে সন্ধ্যা নিয়ে বলার কিছু নেই। বাংলা ব্যান্ড সংগীতের যে-পথযাত্রা এখনাবধি সচল তার প্রতি পরতে হ্যাপী-লাকীর এক্সপেরিমেন্টাল মিউজিক শানমানগুণে নিখাদ নাগরিক ছিল। আবুল হাসানের কবিতায় সহজাত বিষাদের একটা আভাস তাঁদের গানের দেহে পথ করে নিয়েছিল। তার সঙ্গে স্প্যানিশ ফ্লেভার, কোথাও পালিয়ে যাওয়া হারিয়ে যাওয়ার বোহেমিয়ান টান, ঠিক বিবাগী নয় তবে তার কাছাকাছি একটা কিছুর দিকে ঝোঁক, বাংলা গানে দুজনের এমনধারা অনুপ্রবেশ পুরোদস্তুর নিরীক্ষাপ্রবণ নতুনত্বের দিশারী ছিল। ঘুড্ডি ছবিতে আবহটিকে ব্যবহার করতে জাকী তাই একটুও ইতস্তত বোধ করেননি। সময়ের বিচারে ঘুড্ডি বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী ছবি ছিল, এখনো তাই।

গৌতম চট্টোপাধ্যায় যে-কাজটি সত্তরে বসে ওপার বাংলায় সারছিলেন, হ্যাপী ও লাকী বাংলাদেশে বসে একে নিজের মতো করে বদলে নিয়েছিলেন। বলা হয়তো যায়, বাংলা গানের পেলব দেহে পাশ্চাত্য সুর ও বাদনপ্রণালীকে চুপিসারে চালান করার ক্ষণে গানের কথা ও ভাবব্যঞ্জনায় আনমনা হাওয়া আর বাস্তুহারা বিষাদ তাঁরা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছিলেন। স্বদেশ ও সময়ে যাপন করা বা না করার দ্বিধা থেকে যে-বায়বীয়তা জন্ম নেয় তার চাপ গানে উগড়ে দিয়েছিলেন গৌতম। তাঁকে গাইতে শুনছি : ‘ঠিক কী যে চাই, খুঁজে বেড়াই/কূলকিনারা ভেবে না পাই/কী করি বলো না/হা-হুতাশ গেল না!’ গৌতমের এই দ্বিধাটানকে লাকী ও হ্যাপী ব্যক্তির একাকীত্ব ভারাতুর বোহেমিয়ান চাপল্যে পালটে দিয়েছিলেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের শব্দ ধার করে বলা যেতে পারে, লোনলি-লগ্নে নিজেকে গুম করার বাসনা যেখানে গোপন থাকেনি। ঘুড্ডি ছবির প্রতিটা গানে এর ছাপ স্পষ্ট। ঘুম ঘুম চোখে গানটিকে যেখানে বিশিষ্ট মানা যেতে পারে।

কোক স্টুডিওর পরিবেশনায় গানটি শোনার ক্ষণে শাহনাজ রহমতুল্লাকে বারবার মনে পড়ছিল। গানটির দেহে ঘুমন্ত যৌনগূঢ়ৈষাকে সবাক করতে তিনি যেভাবে গেয়েছিলেন, তার সঙ্গে সুবর্ণার চোখ আর দেহভঙ্গির রসায়ন, অকাট্য এই ভিজ্যুয়াল কেমিস্ট্রিকে স্মৃতি থেকে হঠানো সম্ভব নয়। ফায়রুজ নাজিফা ভালো গান করেন। তাঁর মতো করে ভালো গেয়েছেনও, কিন্তু শাহনাজের পর এই গানটি যারা গাইতে আসবেন তাদের বোধহয় একবার ভাবা উচিত। তাঁর স্বকীয়তা এই গানের প্রতি অঙ্গে এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে এর আবেদনকে অন্য শিল্পীর পক্ষে ধারণ ও অতিক্রম এককথায় দুরূহ। কোনো কোনো গান, তার সাংগীতিক আয়োজনে এতদূর অনন্যমাত্রিক ও মৌলিক হয়ে ওঠে, শিল্পী তাকে এতটাই একলার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেন, সেখানে নতুন করে গহনা পরানোর যুক্তি থাকে না।

কোক স্টুডিওর গবেষণার ঘাটতি এই গানের ক্ষেত্রে পীড়াদায়ক লেগেছে। জ্যাজের সংযোজন  ঘটতেই পারে কিন্তু আদি গানে শাহনাজ রহমতুল্লা যেখান থেকে গানটিকে রিলেট করেছিলেন, তার ধারেকাছেও ফায়রুজ যেতে পারেননি। গানের মধ্যে সেই গভীরতাটি নিখোঁজ, লাকী যেটা ঘটিয়েছিলেন সুরে আর শাহনাজ ও সুবর্ণা মিলে দিয়েছিলেন পারফেক্ট ল্যান্ডিং

তাই বলছিলাম, গানটিকে অর্ণব এড়িয়ে গেলে ভালো করতেন। সিনেমাটিক জেশ্চারকে মাথায় নিয়ে শাহনাজ রহমতুল্লা ওটা গেয়েছেন। জাকী এবং গানের আসল কাণ্ডারি লাকী শাহনাজকে মোক্ষম উপায়ে ব্যবহার গিয়েছেন সেখানে। গানটাকে অন্য আঙ্গিকে গাওয়ার মধ্যে যারপরনাই সেই ইতিহাসটি মিসিং থাকার সম্ভাবনা প্রকট হয়, যার সঙ্গে নিখাদ নাগরিক যৌনগূঢ়ৈষা আর স্বপ্নগ্রস্ত বাস্তবতায় সত্তার হারিয়ে যাওয়া ও নিজেকে খুঁইয়ে বসার সংযোগ নিবিড়। ঘুড্ডির গান কেবল গান নয়! এর সঙ্গে প্রগ্রেসিভ এক বাংলাদেশে গজিয়ে ওঠা নগরমধ্যবিত্তের ক্রম অবক্ষয় আর অবচয়ের ইতিহাস বিজড়িত। কোক স্টুডিওর কারণে ঘুড্ডির ছবিতে লাকীর মাস্টারস্ট্রোক শুনতে আসা শ্রোতারা যে-কারণে আসলি হীরে চিনতে ভুল করেননি। মন্তব্যের পর মন্তব্যে প্রথমাকে তারা কুর্নিশ ঠুকেছেন সাড়ম্বর। নিরীক্ষায় দোষ ধরার কারণ নেই, ওটা উপকারী, ক্ষেত্রবিশেষ জরুরি, তবে সকল গানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কিছু গান থাকে, থেকে যাবেই, একে তার আদি রূপে বহাল থাকতে দেওয়াই পুণ্য। ঘুম ঘুম চোখে সেরকম একখানা গান বটে!

দর্শককে বোকা ভাবা উচিত নয়। তারা নিজের মতো করে গানে বহমান ইতিহাসকে অনুভব করতে জানে। অজস্র মন্তব্যের মধ্যে কোনো কোনো শ্রোতা এই প্রশ্নটি রেখেছেন দেখলাম : ‘ভাবতেই অবাক লাগে এতো classy জাতি থেকে আমরা কীভাবে এতো ক্ষ্যাত হয়ে গেলাম?’ আপাত সরল জিজ্ঞাসার মাঝে বিরাট বিতর্কের খোরাক দপদপ করছে। আমরা সত্যি কোনোদিন classy ছিলাম কি-না এটা যেমন ভাবার, classy-র সংজ্ঞা নিয়ে তর্ক চলতে পারে বেদম। তথাপি, এ নিয়ে সংশয় সামান্য, সুবর্ণা বা নূপুর ওই সময় পর্দায় ভালগার না হয়েও যতটা আবেদন জাগাতে পেরেছিলেন, এখন যদি তাঁদের এই বোল্ডনেসকে শিক্ষিত নাগরিক মধ্যবিত্তের নিজেকে যুগবিশ্বের অনুগামী করে তোলার আকাঙ্ক্ষা বলে গণ্য করি, সেক্ষেত্রে একই কাণ্ড একালে ঘটানো সম্ভব বলে মনে হয় না। দেশটি ইতোমধ্যে আমূল বদলে গেছে। শ্রোতাদের আপাত সরল সোজাসাপটা মন্তব্যে বদলে যাওয়ার খতরনাক বিমার কিন্তু গোপন থাকেনি। প্রাগ্রসর মধ্যবিত্তের ক্রমঅবক্ষয়ের স্মারক হিসেবে ঘুড্ডিকে যে-কারণে আগামীতে স্মরণ করবেন অনেকে। ঘুম ঘুম চোখে গানটি সেখানে শ্রোতাকে সমানে চমক দিয়ে যাবে।

লাকী আখন্দ এ-গানের কারিগর হতে পারেন। কাওসার আহমেদ হতে পারেন গীতিকার। তা-সত্ত্বেও গানটি একান্ত শাহনাজ রহমতুল্লার গান। সুবর্ণা মুস্তাফা ও সালাউদ্দিন জাকীর গান। লোনলি-লগ্ন যাপনের প্রগাঢ় আবেশ সে ধারণ করেছিল। একে এভাবে হত্যা না করে অনেক কিছু করার ক্ষমতা কোক স্টুডিও বাংলার রয়েছে মনে করি। সেই স্বাক্ষর দুই সিজন জুড়ে পরিবেশিত একাধিক গানের পরিবেশনায় তারা কিন্তু রেখেছেন। কোকের ব্যানারে গান পরিবেশনের ধাঁচ, তার বিশ্বজনীন ফরমেট, নেপথ্যে সক্রিয় কমার্স, এসব নিয়ে শ্রোতা হিসেবে আমার আপত্তির কিছু নেই, তবে গানের ভাবসম্পদ ও পয়দা হওয়ার ইতিহাসকে ঝোঁক কিংবা উত্তেজনার বশে বিবেচনায় না নেওয়াটা আখেরে শ্রোতাকে বোকা ভাবার শামিল হয়ে দাঁড়ায়। অর্ণবকে মেধাবী ও বিবেচক বলেই জানি। তাঁর মতো শিল্পী ওই পথে নাই-বা হাঁটলেন।

প্রাসঙ্গিক গানের লিঙ্কগুলো
ঘুম ঘুম চোখে চুম : শাহনাজ রহমতুল্লাহ : ছায়াছবি ঘুড্ডি
কে বাঁশি বাজায় রে : হ্যাপী আখন্দ : ছায়াছবি ঘুড্ডি
আবার এল যে সন্ধ্যা : হ্যাপী আখন্দ : ছায়াছবি ঘুড্ডি
ঘুম ঘুম চোখে চুম : কোক স্টুডিয়ো সিজন ২ : ফাইরুজ নাজিফা X শুভেন্দু দাস শুভ
ঘুড্ডি : সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী ১৯৮০


আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: