সংস্কৃতির অভিনয়

সংস্কৃতির অভিনয়

সকাল। ১৬ ডিসেম্বর। ২০১৩। পৌষের দুই কি তিন নম্বর দিন। শীত।
ভুক্তি, বিজয়দিবসের, দিনলিপি ২০১৩।

লেপতলাকার ওম। জানালা-গলানো রোদ লেপগাত্রে লেগে এতক্ষণে লেপ অনেকটা গাভির ওলানের উষ্ণতা ধারণ করেছে যেন। শরীর সেঁকে নিচ্ছি সেই কুসুম-উষ্ণ ওলানের ওমে।

বাইরে তো রোদ, তবে সেটা আদৌ কড়া নয়, কচমা রোদ। কচি আমপাতা বা থানকুনিপাতার ন্যায় পেলব রোদ। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে রোদ্দুর ও গাছের পাতার গা-ঘষাঘষি খেলা। সেইসঙ্গে হাওয়া। শীতের হাওয়া। হাওয়ায় হিম।

আমলকির বন নাই। থাকলে বেশ হতো। শীতের হাওয়ায় লাগত নাচন আমলকির ওই বনে বনে। রবীন্দ্রনাথ শীত নিয়ে খুব বেশি তো লেখেন নাই গান, অন্তত বর্ষার তুলনায় এক্কেরে কড়ে-গণনীয় সেইসব শীতগান। গীতবিতান অবশ্য গীতবিতানই, শীতবিতান তো রবীন্দ্রনাথ বলছেনও না। তা, ঠিক আছে। যে-কয়টা লিখেছেন, শীতভিত্তিক, সুন্দর। শীত সবচেয়ে সুন্দর জীবনানন্দে। যদিও ওইগুলা গান নয়, কবিতা, কারে কহে কবিতা বা গান কহে কারে, না-জেনে না-বুঝেই বলছি কথাগুলা।

বাড়িনিকটস্থ পল্লিবিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে কী-যেন অনুষ্ঠান হচ্ছে। মনে হয় বিজয়দিবস উদযাপন। মাইকের আওয়াজ আসছে। অতিনাটুয়া আবৃত্তিকারদের ঢঙে কে-যেন গমকে গমকে কেঁদে কেঁদে ফের রেগে রেগে কী-সব উঁচা গলায় চিল্লায়া যাচ্ছে। ঘোষক শুরুতে বলে দিয়েছেন অবশ্য এইটার নাম কবিতা আবৃত্তি। না-বললেও হতো, কেননা যা-কিছু কানে কিম্ভূত গজবের মতো শোনায় তা-কিছুরই নাম কবিতা বা কবিতা-আবৃত্তি। দিজ ইজ দ্য রয়েল বেঙ্গল পোয়েট্রি। রিসাইট্যাল। হাজার বছরের, তা-আর বলতে!

আগে একসময় প্রত্যেকটা পাড়ায় অনুষ্ঠান হতো। আমরা লাফায়া লাফায়া হাঁটতাম এ-জাতীয় দিবস-উদযাপনমূলক অনুষ্ঠান এলে। সেই দিন আর নাই গো ভাই। এখন অনুষ্ঠান হয় টেলিভিশনচ্যানেলগুলায়। বাস্তবে সংস্কৃতিচর্চানুশীলন নাই, আছে অভিনয়, চ্যানেলে সম্প্রচারের জন্য ধারণকৃত। সংস্কৃতি আছে না মরেছে জানি না, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো তুমি কীভাবে ডিফাইন করছ তার ওপর নির্ভরিছে, তবে সংস্কৃতির অভিনয় আছে এইটা বিলক্ষণ জানি।

জাহেদ আহমদ ২০১৩

COMMENTS

error: