সানিয়া রুশদীর উপন্যাস হসপিটাল || আনম্য ফারহান

সানিয়া রুশদীর উপন্যাস হসপিটাল || আনম্য ফারহান

মনোলগ ধরনের উপন্যাস পড়ার একটা ইন্টেন্স আরাম আছে, কর্তার আসনে বইসা টোটাল জিনিসটার মধ্যে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দেখা যায়। ইমেজ, সাউন্ড (অবশ্যই সাইলেন্সও সাউন্ডের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত) — এইগুলা ছাড়াও ডাউন দ্য সারফেস— হওয়ানা-হওয়ার প্রসেসটা পাওয়া যায়।

হসপিটাল উপন্যাসে যেই গ্র্যান্ড একটা সিম্বলিক রিপ্রেজেন্টেশন করা হইছে একটা ড্রয়িংয়ের — গোটা উপন্যাসে চরিত্রগতভাবে ওইটাই রিভিল হইছে। সম্পর্কগতভাবেও। একটু ইমোশনাল জিনিসটা। প্রচ্ছদের এই ছবিটা ঔপন্যাসিকের নিজেরই করা। উপন্যাসের শেষেও এই জিনিসটা দ্বারাই তা স্যান্ডউইচডও হয়। মানুষ যা-ই করে — তা তার মনোজগৎ ও তার ভাষারই ফ্র্যাঞ্চাইজি আসলে। পুরা উপন্যাসে সবকিছু তাই একদম সূত্রে সূত্রে গাঁথা।

বাংলা ভাষায় বিদেশি সব স্থান-কাল-পাত্রদেরকে পড়ার একটা মজা আছে। মাইগ্রেটেড বাঙালিদের যেহেতু ভাষার সুবিধাটা আছে, তাই মজাটা হয়। যেইটা অনুবাদ সাহিত্যে একপ্রকার অনুপস্থিত থাকে। হসপিটাল উপন্যাসের লেখিকা সানিয়া রুশদী মাইগ্রেটেড অস্ট্রেলিয়ান আর উপন্যাসের পটভূমি ও ব্যাপ্তিও তা-ই। সেইজন্য এই ধরনের উপন্যাস পড়ার একটা বাড়তি সুবিধা হইতেছে “অজানাকে জানার আকর্ষণ” গোচরীভূত হওয়া। বিষয়গত বৈচিত্র্য ছাড়াও বিল্ট-ইন সুবিধার কথা বলতেছি।

এস্টাবলিশমেন্ট এবং দৃশ্যগত অর্ডারকে (বিন্যাস) প্রশ্ন করতে পারার গুণে গুণান্বিত এই উপন্যাসকে চিরায়ত এবম্বিধ গুণসম্পন্ন ভাবলে ভুল হবে। কারণ, এইটা একই সঙ্গে সুনির্দিষ্ট সমাধানও বাতলায়। মানসিক অসুস্থতার বিভিন্ন ধাপে করণীয় সম্পর্কে একটা অভিজ্ঞতা লব্ধ হয়। হোপলেসনেস থেকে হোপ, ধার্মিকতার প্রশান্তি, নেচার নামক গ্র্যান্ডের সঙ্গে সম্মিলন, নতুন নতুন কমন গ্রাউন্ডওয়ালা বিচিত্র সব ক্যারেক্টারের সাথে সম্পর্ক ও তার ধরন, পরিবার নামক চেনা সম্পর্কের শৃঙ্খল — এসবই শেষমেশ একটা “ঘর” হইতে বাহির হওয়ার কথা বলে। অর্থাৎ মুক্তি। এই আপাত মুক্তিই কখনো কখনো খুব জরুরি। চিন্তাগুলা নিয়া, অস্পষ্টতাগুলা নিয়া গোছানোর কাজ করার জন্য। কিন্তু সিস্টেম ওইটা প্রায়ই না-বোঝার জায়গায় রয়ে যায়।

বইটার ইংরেজি অনুবাদ হইছে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রকাশিতও হইছে ইতিমধ্যে। ওইখানকার হেলথকেয়ার সিস্টেমের জন্য তা ভূমিকা রাখবে আশা করি। আর বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য এ ধরনের সিচুয়েশন সামলানোর এবং একটা অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করার কাজ তো করবেই। সেই আশাবাদ থাকল।

আমার একটা জিনিস খুবই ভালো লাগছে হসপিটাল উপন্যাসের। ওই যে, সানিয়ার ব্যক্ত করতে চাওয়া থিসিস ও অ্যান্টি-থিসিস প্রকাশিত হয় হয় কইরাও হইতে পারতেছে না যে, ওইটা। অনেকটা মিস্ট্রি ধাঁচের। অপ্রকাশিত ভাব — তার একটা ভাষা — টেন্ডস টু মেক আ স্টোরি — এইটা। স্পষ্টতই ব্যাপারটা ভাষার মধ্যেই থাকতে চায়, কিন্তু সবই যে ভাষা-ই নয়—মানে সম্ভবও না — এইটা একটা ঘটনা ঘটছে উপন্যাসটাতে। তুলনায় অ্যান্টি-থিসিসগুলা অ্যাজ ইউজুয়াল সাইকোঅ্যানালিসিস হইছে। সেইটা এ ধরনের উপন্যাস পড়ার জন্য পাঠকের পক্ষে রিলিভেন্ট থাকে। তা খারাপ না।

আর এমনিই বলি, স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতার যেই প্যাঁচ, ইউনিকনেসের জন্য আধুনিক মানুষের যেই চেতনিক ও অবচেতনিক লিপ্সা, কোনো একটা ট্রমা থেকে ব্যক্তির বিকাশ — এইগুলা ওই ল্যাটিচুড আর লংগিচুডের মধ্যকার সম্পর্ক আসলে। অর্থাৎ, সমাজ বা পরিবার এইগুলা থ্রো করে। তার কন্ট্রাস্টের মাধ্যমে। এখানে ব্যক্তির স্থিতি ও উল্লম্ফন এত বেশি ট্রাবলড যে, কোনো কোনো বিশেষ অবস্থায় সে ছুটি নেয়ার বা কোনো সেফ-হাউসে নিজের আনন্দ বা দুঃখ উদযাপনের ব্যবস্থাই কইরা উঠতে পারে না। ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড সিস্টেম সভ্যতার এই পর্বে ওইটারেও ইন্ডাস্ট্রি কইরা ফেলছে।

অন অ্যা টেকনিক্যল নোট, স্পেসিফিক মোটর ফাংশন বা নিউরোট্রান্সমিটার (ব্রেইন কেমিক্যল/নিউরো কেমিক্যল/স্নায়বিক যোগাযোগের রাসায়নিক) রিলিজকে হল্ট করানোর ঔষধগুলা প্রায়ই ব্যবহৃত হয় এমপিরিক্যল ওয়েতে। রেস্টলেসনেস থামাইতে কখনও কখনও এইগুলার কোনো কোনোটা দরকারিও বটে। কিন্তু সেইগুলার প্রয়োগ প্রায়শই স্পেশালটি চয়েস বহির্ভূত। উপরন্তু এই মেডিকেশনগুলার টলারিবিলিটি খুবই ন্যারো। উইথড্রয়াল সিনড্রোমও টেরিফিক লেভেলের। এবং ঔষধ গ্রহনজনিত দীর্ঘমেয়াদী নানারকম শারীরিক ও মানসিক জটিলতার উদ্ভব হয়। অ্যাপিয়ারেন্স পাল্টায়ে যায়। মানুষটাই যেন আর মানুষটা থাকে না। নিকটস্থ মানুষজনের দিলে অত্যধিক রহম না থাকলে এবং টলারেন্স ওই পর্যায়ের না হইলে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা ও ইনক্লুসিভ ইনসাইট ছাড়া ব্যক্তির পক্ষে তা সামাল দেওয়া খুবই কঠিন। ‘প্রায় অসম্ভব’ শব্দ দুইটা বলতে পারলে ভালো হইত। কিন্তু ব্যক্তি নিজেও নিজেকে কম সাহায্য করে না। ওইটা সিগনিফিকেন্ট।


কম্বাইন্ড ট্রিটমেন্ট স্ট্র্যাটেজি উইথ কাউন্সেলিং এন্ড নেসেসারি টার্গেটেড মেডিকেশনের আলাপটা হইতে পারে সিস্টেম, ইন্ডাস্ট্রি বা সভ্যতার জন্য দরকারি আলাপ। বিচিত্র এই উপন্যাস থিওরেটিক্যলি এবং ক্লিনিক্যলি একটা ডায়াগনস্টিক স্পেসিমেন হইল বাংলা ভাষায়। ইংরেজিতেও অবশ্য। আবার এইটা অত্যন্ত সাবলীল ও পরিশীলিত উপন্যাস তো বটেই।

২২/০৭/২০২৩


 

যারা ‘হসপিটাল’ উপন্যাসটি (Bangla, original edition) সংগ্রহ করতে আগ্রহী তাদের জন্যে :
বই : হসপিটাল
লেখক : সানিয়া রুশদী
প্রকাশক : বহিঃপ্রকাশ
সাল : ২০১৯
বাঁধাই : হার্ডবাইন্ড
পৃষ্ঠাসংখ্যা : ১৫৫
দাম : ৫০০ টাকা + (কুরিয়ার খরচ ঢাকায় ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে ৭০ টাকা)
এখানে অর্ডার করুন : বহিঃপ্রকাশ বুকস
(https://www.facebook.com/BohiprokashBooks)

(উপন্যাসটি কোনো বইয়ের দোকান, অনলাইন বুকশপ বা বইমেলায় বিক্রি হবে না। আগ্রহীরা বহিঃপ্রকাশের উপরে দেওয়া নির্দিষ্ট লিংক থেকেই শুধু বইটি কিনতে পারবেন।)


COMMENTS

error: