মানুষ তো সমাপ্ত নয়। সে তো হয়ে-বয়ে যায় নি, সে যেটুকু হয়েছে সে তো অতি অল্পই। তার না হওয়াও যে অনন্ত।
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সমর সেন স্মারক বক্তৃতা ২০১৪ উপলক্ষে প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষ একটি লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল ‘হওয়ার দুঃখ’। এটি ২০১৭-তে লিখিত রূপে প্রকাশিত হয় অনুষ্টুপ থেকে। বক্তৃতাটি এতই সুপাঠ্য যে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। বইপত্র ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে হাতের কাছে পেলাম বইটা আর এক লহমায় পড়ে ফেলা গেল।
পুরো লেখাটি এতটাই দার্শনিকতায় পূর্ণ যে পড়তে পড়তেই ভাবনাকুহক জন্ম নেয় মনের ভেতর। এ-লেখা মূলত রবীন্দ্রনাথের ‘হওয়া’ আর ‘দুঃখ’ — এই দুই ভাবনার উপর ভর করে লিখিত হয়েছে। মাননীয় শঙ্খ ঘোষ অসাধারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তার ‘হওয়ার দুঃখ’-কে মিলিয়ে নিয়েছেন ঠাকুরের এই শব্দবোধের সাথে।
এখানে সমর সেনের ভাবনায় রাশিয়ার সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর যে ‘নতুন মানুষের’ ভাবনা গড়ে উঠেছিল সে-সম্পর্কে দু চার কথা আছে শুরুতে। রাশিয়ার তৎকালীন সমাজে যে নতুন মানুষের কথা বলা হচ্ছিল সে-মানুষকে সমর সেন ক্রিটিক্যালি দেখতে চেয়েছেন তার ভাবনায়, লেখায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন কিছু যা ‘নতুন মানুষ’ এই ভাবনাটাকে পুনর্মূল্যায়িত করে।
তিরিশের দশকের মধ্যভাগে সিডনিতে বিয়েট্রিস ওয়েব একটি বই প্রকাশ করেন যার নাম ছিল, Soviet Communism: A new Civilization? যে-বইটির দ্বিতীয় সংস্করণে প্রশ্নবোধক চিহ্নটি বর্জিত হয়। এই যে প্রশ্নচিহ্নটি ঝেড়ে ফেলে ‘নতুন সভ্যতার’ নিশ্চয়তা তারা দিয়েছিলেন এতে বোঝা যায় স্তালিনযুগের কথা লেখক ভুলে গিয়েছিলেন। সমর সেন এ-রকমই বলছেন। এই নতুন মানুষ, নতুন সভ্যতা এসবের মাঝে মানুষের হয়ে ওঠার দার্শনিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এই ছোট্ট পুস্তক।
শঙ্খ ঘোষকে সেলাম তার এই অনন্য লেখাটির জন্য। পাঠক একবেলা পড়ে দেখতে পারেন যদি হাতের কাছে থাকে তো। শুকরিয়া।
- মধ্যনগরে বঙ্গাব্দবরণ ১৪৩২ || বিমান তালুকদার - April 18, 2025
- অতি সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট || হুমায়ূন আকাশ - April 17, 2025
- গাজায় মৃত শিশুর ভর্ৎসনা || মোহাম্মদ জায়েদ আলী - April 12, 2025
COMMENTS