কবিতার দশক, বিজ্ঞানের দশক

কবিতার দশক, বিজ্ঞানের দশক

কবিতার পাঠকের কাছে দশক জন্মতারিখের অধিক তাৎপর্য বহন করে না। এলিয়ট-পাউন্ডরা দুইয়ের দশকে কিতাব বের করে জগৎ মাতিয়ে দিলেন, কিন্তু ‘ওয়েস্ট ল্যান্ড’ কি ১৯২২-এ হুট করে বিশ্বে নাজিল হয়েছিল? প্রথম মহাসমর সাঙ্গ হওয়ার সাথে তাল দিয়ে মিল-কারখানা ও সমরাস্ত্রে ভরপুর নতুন যুগের বিকাশ ছাড়া এই ভাষাপৃথিবী সম্ভব ছিল না। বিজ্ঞানের ভাষায় পালাবদল এল বিংশ শতকের প্রথম দশকে আর সেই চাপ সইতে না পেরে বেচারা এলিয়টের নিষ্ক্রমণ ঘটে গিয়েছিল গির্জার চৌকাঠে। বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতার জয়রথ তাঁকে গীতার শ্লোকে গমন করতে বাধ্য করেছিল আর কালনাগিনীকে তিনি পড়তে বাধ্য হলেন ঋষি-উচ্চারিত মন্ত্রে :— ‘Time the destroyer is time the preserver.’ ঠিক যেমন ম্যানহাটন প্রজেক্টর অধীনে অ্যাটমবোমার রূপকার ওপেনহাইমার হিরোশিমা ও নাগসাকি শহরে পারমাণবিক বিস্ফোরণের খবর শুনে স্থানুবৎ হয়ে পড়েছিলেন, অতঃপর সময় তাঁকে গীতার শ্লোক আওড়াতে বাধ্য করেছিল! হতবিহ্বল বিজ্ঞানী সেদিন উক্তি করেছিলেন, ‘এখন আমিই মৃত্যু, — পৃথ্বিসংহারী’;— ‘Now I am become death, the destroyer of worlds.’ ওপেনহাইমারের উচ্চারণে নিহিত ছিল কী কারণে পঞ্চাশ থেকে পরবর্তী তিন দশকে দেশবিদেশ সর্বত্র কবিতার জগতে গ্লানি, অবসাদ, অবিশ্বাস, নৈরাশ্য আর আত্মকামী নির্বেদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক অনুধ্যানে নির্গমন নেওয়ার ক্ষুধা ক্রমশ দুর্বার হয়ে উঠবে।

আহমদ মিনহাজ


রিলেটেড রচনারা
নব্বইয়ের কবি, নব্বইয়ের কবিতা
আশির দশকের কবি, আশির দশকের কবিতা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: