মেরাগোটা। আজ সকালে বন্যার পানিতে রাস্তা দিয়ে ভেসে এল বাসার ফটকে। মনে পড়ল, শৈশবে এর সঙ্গে ছিল আমাদের গভীর মিতালি।
মেরাগোটার গাছ মধ্যম আকৃতির পর্ণমোচী বৃক্ষ, বাকল ফ্যাকাশে ধূসর। ফল গোলাকার, রেশমি রোমশ থেকে রোমশবিহীন, লাল আভাযুক্ত সবুজ। বীজ কালো, মসৃণ।
একসময় গ্রামের শিশুদের কাছে মেরাগোটার ছিল বিশেষ কদর। এর ছিল বহুবিধ ব্যবহার। গোলাকার ফল দিয়ে সহজেই চমৎকার লাটিম তৈরি করা যায়। একটি শক্ত কাঠি এফোঁড়-ওফোঁড় করে ঢুকিয়ে দিলেই হলো, তৈরি হয়ে গেল লাটিম!
আমার দুই কন্যা ধ্রুপদী-বর্ণমালাকে লাটিম বানিয়ে দেয়ার পর তো ওরা বিস্ময়ে থ। আজ দিনভর বাসায় লাটিম খেলা চলছে।
ছেলেবেলায় আমরা মার্বেলের বিকল্প হিসেবেও এটি ব্যবহার করতাম। এছাড়া এর বীজও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলার উপকরণ। প্রথমে ফল মাটি চাপা দিয়ে কয়েক দিন রেখে দেয়া হতো। ফল পচে গেলে বীজ বের করে ধুয়ে পরিষ্কার করা হতো। কালো কুচকুচে বীজগুলো তখন পরিণত হতো মূল্যবান উপাদানে। তাছাড়া শিশুদের রান্নাবান্না খেলায় এই ফল একটি বহুল ব্যবহৃত সবজি। গ্রামে এখনকার বাচ্চারা এর ব্যবহার জানে কি না জানি না।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই এই গাছ পাওয়া যায়। তবে জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে বলে হাওরাঞ্চলে এটি খুব ভালোভাবে অভিযোজিত। হাওরের কান্দায়, নদীর পাড়ে, গ্রামের ঝোপঝাড়ে এটি প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। বেড়ে ওঠে অবহেলায়, অনাদরে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর রয়েছে হরেক রকম নাম, যেমন : পিটালি, ভাতাম, ভেটুল, লাডুম, লাটিম, লাট্টু, পানিগামভার, মেরা, গোটাগামার, পিটাগোলা, পিঠাপুর, মেদ্দা প্রভৃতি। ইংরেজিতে বলে False White Teak.
প্রজাতিটি Euphorbiaceae পরিবারের সদস্য। বৈজ্ঞানিক নাম Trewia nudiflora L. ফুল ও ফল ধারণের সময় ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট। বীজের সাহয্যে বংশ বিস্তার করে।
শিশুতোষ ব্যবহার ছাড়াও শীতলতাদায়ী এবং টনিকরূপে এই ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার আছে। এছাড়া মূল স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী এবং পাকস্থলী সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময় করে। মূলের ক্বাথ বাতের ব্যথা দূর করে। তরুণ কাণ্ড দ্বারা পুলটিস তৈরি করে আঘাতজনিত স্ফীতি ও পেটফাঁপা রোগে ব্যবহার করা হয়। কাষ্ঠ নিম্নমানের। প্যাকিং বাকশো ও জ্বালানি কাঠ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত।
জুলাই ২০১৬
- শিশুসাহিত্যচর্চায় রায় ফ্যামিলি - October 22, 2025
- একটি ইতিহাসের অটোবায়োগ্রাফি - October 21, 2025
- কিনব্রিজ সংলগ্ন কোজাগরী মিউজিক নাইট - October 17, 2025
COMMENTS