জোলি স্পিকিং

জোলি স্পিকিং

যা-কিছু তোমার জীবন সংহার করে না, তা-সমস্ত তোমার জীবনটাকে মজবুত করার জন্য দরকার। কথাটা পুরনো প্রবাদে আছে। এই প্রবাদে আমি বিশ্বাস করি। জীবনসংহারক নয় এমন সমস্ত অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে আবশ্যক। ভালো হোক মন্দ হোক সমস্ত অভিজ্ঞতা আমরা যা হতে চাই এবং যেমন দেখতে চাই নিজের জীবনটাকে, সেই গন্তব্যে নিয়া যায়। বালামুসিবত মুকাবিলা করার মধ্য দিয়াই আমরা জীবনের শক্তি ও পরিপক্বতা হাসিল করি।

যেখানেই যাই আমি, গিয়া দাঁড়াই জানালায় এবং অন্তর্গত জোরের সঙ্গে ভাবি হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনোখানে।

বৈচিত্র্যই আমাদের হিম্মতের জায়গা। আমাদের জিন্দেগিটা সাংঘাতিক একঘেয়ে, ম্যাড়মেড়ে আর নিরর্থ হতো যদি আমরা সবাই হতাম বৈচিত্র্য অভিন্ন, অবিকল একই কিসিমের বেবাককিছু হলে এই জীবন হতো দুর্বহ বোঁচকার মতো।

যখনই জীবন আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়, কাজবাজ অথবা আনন্দ সকলকিছু শূন্য মনে হয় পণ্ড মনে হয়, আমি পৃথিবীর একটা ম্যাপ বাইর করে চোখের সামনে নিয়া তাকায়া থাকি। নিমগ্ন চক্ষে তাকায়া থাকি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আমার মনে এই বোধ আবার না ফেরে যে জীবন একটা ব্যাপক অভিযান, অ্যাডভেঞ্চার, অনেককিছুই জীবনে এখনও করবার বাকি, বিপুলা এই ভুবনের কতকিছুই আমার হয় নাই দেখা এখনও।

আমি অদম্য, দুর্দমনীয়, কিন্তু হঠকারী বিদ্রোহী নই আমি।

যে বয়সে পিচ্চি মেয়েরা ব্যালেনর্তকী হবার খোয়াব দেখে সেই বয়সে আমি চেয়েছি ভ্যাম্পায়ার হতে।

সত্যি কথাটা হচ্ছে এ-ই যে আমি চাই বেঁচে থাকতে। এবং চাই মুক্তডানা স্বাধীন বোধ করতে। এই জিনিশগুলা আমি যদি ফিল্ করতে না পারি তয় নিজেরে একটা অ্যানিম্যাল মনে হতে থাকে এবং মনে হয় যেন রয়েছি চিড়িয়াখানার খাঁচায় আর্ত পশুর মতো বন্দী। চিড়িয়াখাঁচায় খোশহাল থাকবার চেয়ে শ্রেয় মৃত্যুই বরং। এবং এইটা আমার কাছে সরল সত্য। মনে হয় না যে এই সত্যটা আমার ক্ষেত্রেই শুধু সত্য, মনে হয় এইটা মানুষজন্মেরই সাধারণ সত্য।

আমি যদি নিজমনে একা হাবাগোবাই থাকি, কার তাতে কি? আমারে নিয়া কে কি ভাবে এ নিয়া আমি ভাবি না।

চুটিয়ে ভুল করো আপত্তি নাই, কিন্তু তার আগে নিশ্চিত করো যে তুমি নিজে যা চাও তা-ই তুমি করছ। ভুলভ্রান্তি এবং স্বেচ্ছাকর্ম হচ্ছে সেই দুই জরুরি শর্ত যা ব্যক্তি হিশেবে তোমারে বানায়া তোলে।

যে কুঠুরিতে বেড়ে উঠেছ তুমি, সেইখান থেকে বেরোতে না পারো যদি তয় বুঝবে না দুনিয়াটা সাইজে কত বিশাল।

চোখের সামনে হোক বা আড়ালের বোধগম্য উদাহরণ ও দৃষ্টান্তগুলো দিয়া আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি এবং চেষ্টা করি নিজেরে সচেতন রাখতে এবং থাকি দায়িত্ববান।

আমার ভুরুর আশেপাশে বেশকিছু বলিরেখা আজকাল চোখে পড়ছে যখনই আয়নায় দাঁড়াচ্ছি, কেননা আমি তাকিয়ে দেখার কাজে হেলা করি না কখনো এবং তাকিয়ে দেখতে বেজায় সুখ পাই আমি।

চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ

… …

বিদিতা গোমেজ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you