দশকভিত্তিক অর্জন ও স্বকীয়তা :   বাংলাদেশের কবিতার আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা || আহমদ মিনহাজ

দশকভিত্তিক অর্জন ও স্বকীয়তা : বাংলাদেশের কবিতার আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতা || আহমদ মিনহাজ

পূর্ব পরিচ্ছেদ / লোক দশকতামামি ৩ : বাংলাদেশের কবিতার নতুন অর্থস্তর নিষ্কাশন ও নবায়ন

মনে প্রশ্নের ঠেলাঠেলি অগত্যা থামানো যাচ্ছে না! নব্বইপূর্ব দশকগুলো কেন বা কোন অর্থে গতানুগতিক? কবিতায় ব্যবহৃত ভাষার কারণে কি গতানুগতিক? দেশকালচেতনার ভ্রান্ত পঠনের কারণে গতানুগতিক? অর্থস্তরে নতুনত্ব সঞ্চার করতে না পারার দোষে গতানুগতিক? তাহলে কি ধরে নেবো বিগত কালপর্বে যেসব কবি নিজ সময়কে কেন্দ্র করে কবিতায় পঙক্তি জুড়ে গেলেন তাঁরা শিকড়বিচ্ছিন্ন স্রোত অথবা পশ্চিম গোলার্ধে বহমান ভাষা-প্রকরণ ও কাব্যবোধের গোলাম? তাঁদের কাব্য রচনার প্রবণতায় নতুন বাঁক কি সত্যি অনুপস্থিত, এবং যেটি নব্বইয়ে এসে হঠাৎ ঘটতে শুরু করে বলে ‘লোক’ মনে করছেন? প্রশ্ন আরো ওঠে,— কবিতার কোনো দেশকাল ও ভাষাবৃত্ত শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে কি? সে কি পরিযায়ী পাখি নয়? পাখি হয়তো জন্ম নিয়েছিল দূর দেশে অচিন বৃক্ষশাখায় বোনা গৃহে। অতঃপর সমানে তার উড়াল চলেছে নিজ দেশ থেকে দূর দেশে এবং যুগপৎ অভয়াশ্রম থেকে নিরাশ্রয়ে। কবি সাবদার সিদ্দিকী হয়তো সে-কারণে লিখেছিলেন :—

যে রকম ধর্মের নিজস্ব নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ড নেই
সেরকম ধর্মের কবিতার নেই কবির নেই সৌর সংসারের নেই
পৌর সংসারের নেই।
কবি ও কবিতার নিজস্ব ভূখণ্ড নেই
একজন কবি তাই চতুর্থ বিশ্বের নিঃসঙ্গ নাগরিক।
(কবি ও নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, পা ও অনান্য)

কবি তো সকল কালে এক দেশগামী হয়েও দূরদেশগামী! গৃহী হওয়ার পরেও স্বভাব যাযাবর। নিজবাসভূমে উপচে ওঠা সামগ্রীর সাহায্যে নিজের সময় ও পরিপার্শ্বকে অবলোকন করতে সে যেমন বাধ্য থাকে, এও-তো মিথ্যে নয় পরবাসভূম থেকে ঠিকরানো আলোকরশ্মির কিরণ সমানে তাকে প্রভা দিয়ে যায়! দুইয়ের মিলনে তার ঝুলন সাঙ্গ হয়। সেক্ষেত্রে ‘গতানুগতিক ধারাবাহিকতা’ শব্দবন্ধে নিহিত বক্তব্যের কী অর্থ দাঁড়ায়? একুশ শতকের পাঠপদ্ধতি বিবেচনায় এই শব্দবন্ধের ভাবিক সম্প্রসারণ কি কবিতার প্রতি সুবিচার ঘটাতে সক্ষম? হায়, নিদারুণভাবে হুমায়ুন আজাদকে মনে পড়ে যায়! বাংলা আধুনিক কবিতার সংকলনে নেমে আজাদ রবীন্দ্রনাথকে নিতে পারেননি, কারণ রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমের কাব্যধারায় নাজিল হওয়া সংজ্ঞার চাপে ‘নহে’ আধুনিক। বড়ো পদ্যকার খেতাবে ভূষিত করে নজরুলকে এক কোপে ছাটাই করেন তিনি! ইসলামবাতিক ও প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়ানোর অপরাধে আল মাহমুদ ও মান্নান সৈয়দকে সংকলন থেকে বাদ পড়তে হয়। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ কাটা পড়েন এরশাদশাহির পদলেহনের অভিযোগে। সত্তর ও আশির কবিগণ সেখানে পঙক্তিভোজের যোগ্য বিবেচিত হয় না। আর নব্বই তো কেবল নাবাল কিশোর! তাকে আর কে পোছে! প্রতিমাচূর্ণের মিশনে নেমে আজাদ ত্রিশের প্রতিমায় নিজেকে বলি দিতে অধীর হয়ে ওঠেন এবং উক্ত প্রতিমাছকে ত্রিশ-উত্তর কবিতাকে বিশিষ্টতা দানের বাতিক তাঁকে খাটিয়ে মারে। একমাত্র ত্রিশের দশক বিমানবিকীকরণের (dehumanization) মৌল সুর বঙ্গে ধারণ করেছিল, এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিচারকসুলভ কবিতা পাঠের ইতি টানেন আজাদ!

মানবসমাজের বিচিত্র কাজকারবারে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আমির পরিপার্শ্ব থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং নির্বেদঘন নৈরাশ্য ও বিচ্ছিন্নতাবোধে শামিল কবি আধুনিকতাবাদ নামক হেঁয়ালির জগতে প্রবেশের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলেন। জীবনচর্যার প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুশাসনকে অস্বীকার করায় কবির জীবনবোধ ও নান্দনিক চেতনা সময়-পরিপার্শ্ব থেকে পৃথক স্রোতে নিজের গন্তব্য খুঁজে নিতে বাধ্য হয়। স্পর্শকাতর ও অনুভব সংবেদি এই স্রোতে কল্পনা-প্রতিভার নান্দনিক সৌন্দর্যে লেলিহান হওয়ার সঙ্গে নৈর্ব্যক্তিকও হয়ে থাকে; এবং একইসঙ্গে চরম নিঃসঙ্গতায় কবির ব্যক্তি আমির বিকলন ও নির্বাসনকে সে অমোঘ করে তোলে। বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে জন্ম নেওয়া এ-রকম এক সাহিত্যতত্ত্বের উপাসক আজাদ ত্রিশ ও পরবর্তী কবিদের উক্ত ছকে ফেলে পাঠ যাওয়ার অভ্যাস থেকে জীবনের অন্তিম লগ্নে এসেও বের হতে পারেননি। তত্ত্বের খাঁচা থেকে বেরিয়ে ত্রিশ ও পরবর্তী কবিতার অভিনবত্ব বিচারের ভাবনা তাঁকে বিশেষ আলোড়িত করেনি। প্রতিমাচূর্ণে মত্ত আজাদ বিমানবিক প্রতিমার উপাসনায় নিজেকে বন্দি করে প্রতিমা ভাঙার মিশনে বহাল ছিলেন! তাঁর হয়তো খেয়াল থাকে না ত্রিশের গুণগান গাইতে বসে তিনি স্বয়ং এর ঘাতকে পরিণত হয়েছেন। আজাদের আধুনিকতাবাদী সংজ্ঞায় বাঁধাই ত্রিশের পঞ্চকবিকে বিকল্প পাঠের সম্ভাবনা অগত্যা শূন্যে নির্বাপিত হয়!

আধুনিকতাবাদ নামের লেবেল সেঁটে ত্রিশের কবিতাকে দশকের-পর-দশক পাঠ যাওয়ার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ নব্বইয়ের মধ্যভাগে বাংলা কবিতায় উত্তর-আধুনিকতাবাদের আগমন ঘটে। জীবনানন্দকে ছাড় দিলেও ত্রিশ দশকের শীর্ষ কবিগণ তো বটেই, আল মাহমুদ, মোহাম্মদ রফিক বা এ-রকম দু-চারজন ছাড়া পরবর্তী দুই দশকে আবির্ভূত কাব্যধারাকে ভাগাড়ে নিক্ষেপ করতে উক্ত ভাবধারার উপাসকদের তর সয়নি। হায়, কী নিদারুণ সিনিসিজম! ডায়োজিনিসের পিপে! কালের ঘনঘটায় সৃষ্ট ভাষার স্বভাব উপলব্ধি ও কবিতার স্বকীয়তা অনুসন্ধানের পরিবর্তে মতবাদের খাঁচায় বসে এক দশকের কবি যখন অগ্রজ বা অনুজ দশককে বাতিল করে তখন সে ভুলে যায় পরবর্তী দশকের কবি নতুন মতবাদের ধোয়া তুলে তাকে মুছে দিতে তৎপর হতে পারে! একটি মতবাদ বা আন্দোলন যবে অন্যটিকে খারিজ করে তখন নিজ সময়বৃত্তে অমোঘ হওয়া ভাবাদর্শের বোঝা সে পূর্ববর্তী বা পরবর্তীর ঘাড়ে চাপায়! কাব্যবোধ ও ভাষা-প্রকরণে নিহিত যেসব আলামতের ওপর ভর করে সে এখন কবিতার লক্ষণ পরিমাপ করতে নেমেছে পূর্ববতী বা পরবর্তী যুগপ্রবাহে ওইসব আলামতকে প্রাসঙ্গিক করার সুযোগই হয়তো ছিল না! সুতরাং ত্রিশ থেকে ষাটের কালপর্বে কবিরা কেন জসীম উদদীনের ঘরানা পরিহার করে লিখতে শুরু করেন অথবা আল মাহমুদ, ওমর আলী, মোহাম্মদ রফিক কী কারণে আধুনিকতাবাদী ভাষা-প্রকরণ ও কাব্যাদর্শে বিচরণ করলেও উত্তর-আধুনিকতার বৃত্তে বেশ মানিয়ে যান…এইসব প্রশ্নের উত্তর তাঁদের প্রজন্মে ঘনীভূত ভাষার দ্বান্দ্বিক চরিত্রের মাঝে সন্ধান করতে হবে। নব্বই বা পরবর্তী সময়ে জায়মান ভাবনাকে এর ওপর চাপিয়ে দিয়ে উপসংহারে পৌঁছানো মর্মঘাতী হতেও পারে।

পঞ্চাশ থেকে আশির প্রথমার্ধ জুড়ে বাংলা কবিতার ভাষা নগরজীবী হলেও গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনধারায় বিরাজিত দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি না ঘটায় ব্যক্তিকবির বেড়ে ওঠার মাঝে বিচিত্র প্রভেদ সেখানে ফুটে উঠেছিল। এই প্রভেদের কারণে পঞ্চাশের দশকে আবির্ভূত শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ পরস্পর থেকে পৃথক কাব্যস্বভাবে মোড় নিলেও একই যুগচেতনাকে ভাষা দিয়ে যাচ্ছিলেন। যুগপ্রবাহে সক্রিয় ভাষাবোধ ও সংকেত থেকে পছন্দ অনুসারে নিজেরটি তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন মাত্র! সময়ে বিরাজিত এইসব মাত্রাভেদের কারণে প্রতি দশকে কবিরা ভাষাবৃত্তে পরস্পরের প্রতিনিধি হলেও স্বরযোজনায় ঐক্যের পাশাপাশি ভিন্নতা চোখে পড়ে। কবিতাকে কোনো দশকের কবির পক্ষে বিপথগামী করা সম্ভব নয়। সময়ের গতিধারায় সৃষ্ট ভবিতব্যকে ভুল পথে পরিচালনার ক্ষমতা একজন কবির থাকে না। সময়কে নতুন ভাষায় হাজির করা তার সাধ্যে নেই, যতক্ষণ-না ভাষায় নিহিত সংকেত কবিতায় জুড়তে সময় তাকে অনুমতি দিচ্ছে। অতীত সমাজ-ইতিহাসে বিদ্যমান মতবাদ খারিজ করে নতুন মতবাদের জন্ম স্বাভাবিক ঘটনা হলেও তাকে সম্বল করে কবিতার ভালোমন্দ ও গতানুগতিকতার বিচারে প্রবেশ এ-কারণে একরৈখিক পাঠে নিজেকে নিঃশেষ করতে বাধ্য হয়। হুমায়ুন আজাদ এর নির্মম শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। নব্বইয়ে তীব্র হয়ে ওঠা উত্তর-আধুনিকতাবাদের প্রবক্তারাও তা-ই বটে! ত্রিশ পরবর্তী কবিতায় ভাষাগত পুনরাবৃত্তির মধ্যে সক্রিয় নানাবিধ বৈপরীত্য কিংবা পরিপূরক হয়ে ওঠার কার্যকারণ অনুসন্ধানের দায় আজাদকে ভাবিয়ে তোলেনি। উত্তর-আধুনিকতাবাদের প্রবক্তারাও সে-পথেই হেঁটেছেন। নির্মম নয় কি যখন ত্রিশ-উত্তর ধারাবাহিকতাকে ‘গতানুগতিক’ চিহ্নিত করতে যেয়ে ‘লোক’-র বক্তব্য আজাদীয় ও উত্তর-আধুনিক পন্থায় কবিতার স্বকীয়তাকে নির্ধারণ করে যায়?

এ-কথা অগত্যা আগে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন,— কবিতা রচনার ভাষা ও পন্থার সাহায্যে কবি কোনো যুগ সৃষ্টি করে না, উল্টো যুগ তার ওপর আপতিত হয়ে তাকে সেভাবে ভাষা দিতে বাধ্য করে। যুগধর্ম ও বৈশ্বিক স্বভাব অনুসারে এলিয়টরা ত্রিশ ও পরবর্তী দশকগুলোর ওপর আপতিত হয়েছিলেন। বালিতে ডোবানো শিশ্ন নিয়ে স্লাভয় জিজেক হয়তো একালের কোনো কবির ভাষাবোধ ও কাব্যাদর্শে এখন আপতিত হয়ে চলেছেন। সময়ের হিরণ্যগর্ভে লুকিয়ে থাকা এইসব মেটাফোর পাঠ ও তাকে ভাষা দিয়ে যাওয়া কবির একমাত্র কাজ; এবং সেখানে দশকের-পর-দশক ধরে পরস্পরকে প্রভাবিত করা সত্ত্বেও তারা একে অন্যের পুনরাবৃত্তি নয় বরং পরিপূরক।

জীবনানন্দ দাশের ‘ঝরা পালক’ এভাবে নজরুলের কাব্যভাষার পরিপূরক হয়ে উঠেছিল। ভাষাভঙ্গির কারণে পুনরাবৃত্তি মনে হলেও পাঠক যখন এর অর্থস্তরে প্রবেশ করে তখন এই কবিতারা নিছক রিপিটিশনের বৃত্তে দাঁড়িয়ে থাকে না! সময়-সচেতনার নতুন তরঙ্গ বহানোর কারণে নজরুলে দাঁড়িয়ে থাকা ‘ঝরা পালক’ সেখান থেকে নিজের সফল নিষ্ক্রমণ ঘটায় এবং জীবনানন্দের কালে বিরাজিত যুগচৈতন্যের স্মারক হয়ে ওঠে। এমনকি জীবনানন্দের কাব্যভাষায় যে-রূপান্তর পরে তাঁকে নজরুল তথা ত্রিশের কবিবর্গ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ঘটনায় বিশিষ্টতা দান করে সেখানে প্রবাহিত অর্থস্তর ‘ঝরা পালক’-র সঙ্গে মোটের ওপর বিচ্ছেদ না ঘটিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছিল। এই ভাষা নজরুলের অবশিষ্ট ছেটে ফেলতে তাঁকে বাধ্য করলেও অর্থস্তরটি পরিপূরক বৃত্তের মতো সেখানে বহমান থেকেছে। যে-কারণে ছন্দ, উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প ও শব্দের বিপর্যাস ইত্যাদির ওপর ভর করে কবিতার স্বকীয়তা বিচারের প্রথা সকল ক্ষেত্রে সুবিচার করে বলে মনে হয় না। নব্বইয়ের বিশিষ্টতা বোঝাতে ‘লোক’ যখন ঘোষণা দেন ‘ভাষা, ছন্দ, প্রকরণ ও কাঠামোয় আঘাতের পর আঘাতে উদ্ভাসিত হয় নতুন এক কবিতাধারা।’, তখন এই ঘোষণা কানে একরৈখিক হয়েই বাজে!

দশকি কবিতার স্বকীয়তা অনুসন্ধানে কবিতার কাঠামোয় ভাঙচুর অবশ্যই গুরুত্ব রাখে, তথাপি সময়ের পালাবদলের আভা সেখানে কীভাবে পড়ছে অথবা তাকে যদি দেখা না যায় তবে কবি জ্ঞানদাসের আক্ষেপ সার হয়, — ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বান্ধিনু অনলে পুড়িয়া গেল। / অমিয়া-সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল।।’ কারণটি ক্ষণিক আগে উল্লেখ করেছি, — কবির হাতে ভাষা সৃষ্টি হয় না, বরং সময়স্রোতে বিরাজিত ঘনঘটা থেকে ভাষার নতুন শরীর জন্ম নেয় আর কবি তাকে শিকার করেন। সময় নামক অরণ্যে প্রবেশের পর মোক্ষম শিকার গেঁথে তোলার কাজটি তাকে ভাষার নতুন আবিষ্কারক বলে দাগায়। ‘ঝরা পালক’-র মধ্যে যেমন জীবনানন্দের পরবর্তী ভাষা-প্রকরণের বীজমন্ত্র লুকিয়ে ছিল! নব্বইয়ে ভাষাকাঠামোয় ভাঙচুরের ঘটনাকে এই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে পাঠ করা হয়েছে কি না সে-প্রশ্ন এইবেলা ওঠে।

দশকি প্রবণতার হাত ধরে কাব্যবিচারের বড়ো বিপদ হলো মন তখন বাক্যের মধ্যস্থলে বিরাজিত শূন্যস্থান পাঠে তাড়িত হয় না। কী ভালোই না হতো যদি ‘লোক’ থেকে এই আহ্বান শোনা যেত, ‘আসুন, নব্বইয়ের কবিতায় বাঁকবদলের ঘটনাকে বিগত দশকগুলোয় সংঘটিত বাঁকবদলের নিরিখে পাঠ যাই। আসুন, যাচাই করে দেখি প্রতিটি দশকে এমন কোনো শূন্যস্থান রয়ে গেল কি না যার পাঠ আজো হয়নি। এইসব শূন্যস্থানই কেবল পারে প্রতিটি দশককে আমরা এখন যেভাবে নির্ধারণ করে চলেছি সেখানে নতুন পাঠবিবেচনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে উপনীত হওয়ার সুযোগ এনে দিতে।’ কোনো দশকের কবি অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে না যখন পাঠক তার কবিতার সেইসব ফোকরে ঢোকার চেষ্টা করে যেগুলো দশকি মতবাদ ও ভাবাদর্শের হৈ-হুল্লোড়ের কারণে এতকাল চোখে পড়েনি। এই পন্থা অবলম্বন ছাড়া পশ্চিমের পাউন্ড-এলিয়ট থেকে শুরু করে বঙ্গের ত্রিশ, পঞ্চাশ অথবা ষাট-সত্তুরের কবিগণের কাব্যভাষা থেকে সাম্প্রতিক সময়ের উপযোগী সংকেত উদ্ধার ও তাকে একালের জন্য প্রাসঙ্গিক করা দুরূহ। এ-কারণে মাপামাপির গৎবাঁধা তরিকা নিয়ে বোধহয় নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে বঙ্গের।


গানপার ম্যাগাজিনরিভিয়্যু
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি
নব্বইয়ের কবি, নব্বইয়ের কবিতা
আশির দশকের কবি, আশির দশকের কবিতা

COMMENTS

error: