মজার সিনেমা না সিরিয়াস সিনেমা || ইলিয়াস কমল

মজার সিনেমা না সিরিয়াস সিনেমা || ইলিয়াস কমল

ডাঙ্কি  দেখলাম। মূলত মানুষের মুগ্ধতামোহিত রিভিউ পড়েই হলপ্রিন্ট দেখা হইলো। যেহেতু হলে গিয়ে দেখার সময় মিলে না তাই। রাজকুমার হিরানির সিনেমা বলেই আমার আগ্রহ বেশি ছিলো। যেমন শাহরুখের সিনেমা বলে উল্টা আগ্রহ কম ছিলো। অথচ এর উল্টো ঘটনা ঘটেছিলো পাঠান  ও জাওয়ান-এর ক্ষেত্রে। ওইগুলো কমার্শিয়াল সিনেমা টিজার দেখেই বুঝা যায় বলে, তাতে আগ্রহটাও ছিলো সেই রকম। কিন্তু না, রাজকুমার হিরানি তো আসলে অন্যকিছু। তার কাছ থেকে ব্যতিক্রমের মশলা পেতে পেতে আমরা অভ্যস্ত। সুতরাং সে মন্দ সিনেমা বানাবেই না এমন ধারণা নিয়ে বসে ছিলাম। এবং বিভিন্ন সময় চারপাশের বিভিন্নজনকে বলেওছি যে, শাহরুখের ডাঙ্কি  ফ্লপ করবে। কিন্তু সিনেমা কেমন হবে আমি জানি না। সিনেমা ফ্লপ না এখনও। কিন্তু শাহরুখের অন্য সিনেমার চেয়েও তুলনামূলক বললে ফ্লপই।

এখন ধান বানতে শীবের গীত না গেয়ে সিনেমার কথা বলি। সিনেমায় আসলে শাহরুখই শেষ পর্যন্ত নায়ক। হিরানিও না, বিষয়ও না। এইটাই এই সিনেমার সবচেয়ে দুর্বল দিক। অথচ এত দুর্দান্ত একটা বিষয়, বলিউড ছাড়া অন্য যে-কোনও দেশের সিনেমানির্মাতা হইলে এইটারে ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক বানায়ে ফেলার ক্ষমতা রাখতো। কিন্তু বলিউড তো, নিজেদের ধর্মের বাইরে তারা যেতেই পারে না! যেমন মুন্না ভাই এমবিবিএস  যতই দেখি, বারবার মনে হয় এইটা মজার সিনেমা। সিরিয়াস সিনেমা না। কিন্তু এই ডাঙ্কি  দেখার সময় আপনি আসলে কনফিউজড হয়ে যাবেন। এইটা কি আসলে মজার সিনেমা না সিরিয়াস সিনেমা? মজার হইলে এত কষ্ট এত স্ট্রাগল কেন? আবার যদি ভাবেন এইটা সিরিয়াস সিনেমা তাইলে মনে হইতে পারে এত সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে এই রকম করে বলার মানে কি? হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি?

২.
দুর্দান্ত বিষয় থাকার পরও কেন ‘ডাঙ্কি’ দুর্দান্ত সিনেমা হয়ে উঠতে পারেনি তার অনেকগুলো কারণ হতে পারে। প্রথমত সিনেমা যখন হয়ে ওঠে — একটা নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করেই তার গতিপ্রকৃতিকে তুলে ধরা হয় — তখন সিনেমায় থাকা গল্পটার বিস্তারিত দেখে দর্শকের মনে সিনেমার চরিত্রগুলোর যাতনাটা ছুঁয়ে যায়। সেরা সিনেমার জার্নিটা শুরু হয় ওইখান থেকেই। ভারতের প্রেক্ষাপটেই উদাহরণ দেই। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া মালায়ালাম সিনেমা ‘আদামিন্তে মাকান আবু’ এর একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আদামিন্তে মাকান আবুর বাংলা করলে হয় ‘ঈশ্বরের সন্তান আবু’। সেলিম কুমার অভিনীত ও সেলিম আহমেদ নির্মিত সিনেমাটির প্রেক্ষাপট হলো এমন, একজন দরিদ্র আতরবিক্রেতা প্রতি বছরই হজে যাওয়ার জন্য টাকা জমায়। কিন্তু প্রতিবারই নানা কারণে আর যাওয়া হয় না। এই-যে হজে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, চেষ্টা আর যাতনার গল্পটা সিনেমা শেষে দর্শকের মনে গেঁথে যায়। সিনেমাটা যখন অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে চায় তখন সেই অনুভূতিগুলোর মুখটাও ঠিকঠাক আঁকতে হয়। ডাঙ্কির যে প্রেক্ষাপট, একই ধরনের মাইগ্রেশন প্রেক্ষাপট নিয়ে মেক্সিকান সিনেমা সিন নমব্রের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো একই সীমান্ত শেয়ার করে। সবচেয়ে বড় সীমান্তও এই দুই দেশের। অথচ মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের গল্প নিয়েই যখন সিনেমা হয় তখন ‘সিন নমব্রে’ মনে থাকে দশ-পনেরো বছর পরও। এর মূল কারণ সেখানে চরিত্রের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে গল্প। কিন্তু ডাঙ্কিতে সবচেয়ে বড় আসলে প্রেম ও শাহরুখ খান। এই চরিত্র মোটেও সিনেমার চরিত্র না, তা বাণিজ্য ও প্রভাবের চরিত্র। আদতে এইটাই বলিউড এবং তার ধর্ম, যা অতিক্রম করা রাজকুমার হিরানির জন্য কঠিনই।

৩.
যাউগ্যা, ডাঙ্কি  সিনেমা নিয়ে এক কথায় বলতে গেলে বলতে হবে খুবই চমৎকার বিষয় নিয়ে ‘বলিউডি’ সিনেমা। বাকিটা আপনার মর্জি।

আমার পার্সোনাল রেটিং ২.৫/৫


ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপারে ম্যুভিরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you