প্রারম্ভে লালন দর্শন-এ আগত সকল সাধুগুরু বৈষ্ণবদের রাঙা চরণে আমার বিনম্র ভক্তি ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
খেয়াল করছি যে, বহু পোস্টের শেষে অনেকেই “এই পোস্টটি সবার জন্য নয়” লিখছেন। এর কারণ কি, তা কেউ স্পষ্ট করছেন না।
মূলত পোস্টদাতাগণ যে-বিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র জ্ঞান না থাকায় এ-কথা লিখে পার পেয়ে যাবার ভ্রান্ত চেষ্টা করছেন বলে আমার ধারণা।
আমি আমার মতো করে এর সহজ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করব :
পৃথিবীতে গোপন বা “গোপনীয়” বলে কোনোকিছুই নেই — বিশেষ করে আজকের এই তথ্যযোগাযোগের পৃথিবীতে একেবারেই নেই। তবে ফকিরি বিশ্বাসে কিছু বিষয়ে আছে “সতর্কতা” অবলম্বনের দিকনির্দেশনা বা “গুরুবাক্য”, যা গুরুর “আদেশ” বলে মান্য করা হয় — ও তা অমান্য করা “মহাপাপ”।
আমার গুরুদীক্ষাকালে বারংবার মাথায় একপ্রকার জোর করেই ঢোকানো হয়েছিল :
“যে-পাত্রে যতটুকু ধারণের ক্ষমতা — তুমি ততটুকুই ঢেলো”; অর্থাৎ, পাত্র যদি হয় একটা চায়ের কাপের সমান — তাতে একজগ পানি ঢালা বিপজ্জনক বা বোকামি না, তা মহামূর্খামি। একইভাবে যে-ব্যক্তি লক্ষ্য স্থির করতে ব্যর্থ, তার মুখের কথা, হাতের লেখা সহ শব্দচয়ন, বিষাক্ত তিরের মতো। একবার তা হাত বা মুখ থেকে ফস্কে গেলে তাকে আর ফেরানো যায় না।
সে-অর্থে গুরুবাক্য প্রাচীনতম “গুরুর মুখ হতে শিষ্যের কান অব্দি” সীমিত পরম্পরা, ও তা পবিত্র ও ক্ষেত্রবিশেষে নিষিদ্ধ।
আপনার সাধন ভোজনের কথা
কহিয়ো না যথাতথা
আপনার আপুনিকে করিও সাবধান
এতে নিষেধ মানিবে না
বাড়িবে অহঙ্কার
মূল ধ্যানের শব্দটা হলো ‘নিষেধ’। জ্বলন্ত আগুনের কাছে যেতে আলাদা করে কাউকে ‘নিষেধ’ করতে হয় না, কি ঘটতে পারে তা সবাই জানে।
অপরদিকে গুরু নিজেই নির্ধারণ করেন কোন শিষ্যের পাত্রটা কতটুকু ধারণক্ষমতাসম্পন্ন :
গুরু যদি হয় কায়েমি
শিষ্যতে হয় তার কর্ণদানি
নিজগুণে হয় চক্ষুদানি
নইলে আঁধার দুই নয়ন
থাক রে আমার মন
গুরুর পদে — ডুবে থাক রে আমার মন
সব লুঙ্গির মাপ সমান তাই সবাই তা ‘আরামে’ পরিধান করতে পারবে — ফকিরি অত সস্তা, সহজ ‘বস্ত্র’ নয়। অপবিত্র পাত্রে, দয়ালের পবিত্র বাণী নির্বিচারে ঢালা বেমানান ও ঝুঁকিপূর্ণ।
আন্ডারমেট্রিক ছাত্রকে পিএইচডিধারীর সিলেবাস হজম করতে দিলে বদহজম হয়ে যে বমি হবে, এটাই স্বাভাবিক। এই ফোরামে একটু সময় নিয়ে চক্কর দিলেই তার বহু নমুনা পাওয়া যাবে।
তাই এই অসাধারণ ফোরামের স্বাস্থ্যকে সুন্দর ও নিরাপদ রাখার জন্য অ্যাডমিনদের উপর অনেক দায় বর্তায়। কৃপা আন্ডারমেট্রিক লোকজনকে পিএইচডিধারীদের বিষয়সমূহ নিয়ে যাচ্ছেতাই পোস্ট অ্যাপ্রুভ করার আগে একটু দম নিয়ে নিয়েন। না-হলে আমরা সবাই অনেককিছুই হারাব। লালন সাঁইজির পদ নিছক “গান” না — তা “জ্ঞান”। দিব্যজ্ঞানের চর্চা ও সাধনার আরেক নাম ফকিরি।
আধ্যাত্মিক বিষয়ে মানুষের কৌতূহল যুগ যুগ ধরে ছিল, আছে এবং থাকবে। কিন্তু অধ্যাত্মিকতা বা ফকিরি আলাপেরও স্থান, কাল, পাত্র আছে। সাধুসঙ্গের আলাপ বাজারে হয় না, বাজারের আলাপ সাধুসঙ্গে হয় না। ফেইসবুক বাজারের থেকে আরো বেশিরকম খারাপ — “এসব দেখি কানার হাটবাজার”।
ধৈর্য-সহ্য নাই অথচ নিজেদের “পাক্কা মুসলমান” দাবি করা লেবাসধারী কিছু লোকের অসাধু উচ্চারণ আবার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে উনারা আর যা-ই হোক — মুসলমান না।
লালন সাঁইজিকে গালি দিতেও তাদের আত্মা কাঁপে না! এরা কারা? এরা কি ভুলে গ্যাছে যে সাঁইজিকে গালি দিলে উনার পবিত্র আত্মার কিছুই যায় আসে না?
গালি দিলে যে জিনিস প্রথমেই ধ্বংস হয়, তা হলো নিজের “ঈমান”, সেটাও এসব কুলাঙ্গারের দল জানে না। মুসলিম হওয়ার প্রথম শর্ত “ঈমান”, সেটাই স্বেচ্ছায় ধ্বংস করে এখানে কোন ঈমানের প্রমাণ করতে এসেছেন হে “ব্রাদারানে এসলাম”?
জেনে রাখেন, শতশত বছর ধরে লালন সাঁইজির সাথে বেয়াদবি করে কোনো লোক পার পায়নি। এ-রকম লোকের লিস্টি দিলে সে অনেক দীর্ঘ লিস্টি হবে বৈকি — এটা দয়া করে কেউ ভুলে যাবেন না প্লিজ …
সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, ফকিরি, জ্ঞান, ধৈর্য ও মা’আরেফত-এর জয় হোক।
জয়গুরু আলেক সাঁই।
সিটাডেল বাউলিয়ানা; পল্লবী, মিরপুর; ১৪ই জুন ২০২১
- FOREWORD: The Bangladesh Poet of Impropriety || Syed Manzoorul Islam - October 12, 2025
- শ্রদ্ধাঞ্জলি : বিভুরঞ্জন সরকার || মাকসুদুল হক - August 23, 2025
- Take a break folks and read this book - April 7, 2025
COMMENTS