গ্যুডমর্নিং আমেরিকা || আইয়ুব বাচ্চু

গ্যুডমর্নিং আমেরিকা || আইয়ুব বাচ্চু

এই নিবন্ধটা আইয়ুব বাচ্চু লিখেছেন। অথবা, আন্দাজ করা যায়, বাচ্চুর কথাগ্রহণ ও শ্রুতিলিখন প্রক্রিয়ায় এইটা বানানো হয়েছে। যেখান থেকে এইটা কালেক্ট করে এইখানে এভাবে এরূপে প্রেজেন্ট করা হচ্ছে, সেইখানে দেখা যাচ্ছে লেখারূপটির পরেও রয়েছে একে একে বাচ্চু, টুটুল, রিয়াদ প্রমুখ এলআরবিমেম্বারদের এভারফার্স্ট ইউএসট্যুর থেকে ফেরার পরের প্রতিক্রিয়া। বাহুল্য বলা যে সেসবই মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া, আজি এ প্রভাতে রবির করের মতো সবিস্ময় স্নিগ্ধ উত্তেজনা আর সবিনয় আনন্দ।

মোদ্দা কথা, বাচ্চুর জবানিতে যেই নিবন্ধটা আমরা পড়তে লেগেছি তা আইয়ুব বাচ্চুর অথার্শিপ ছাড়া আর-কারোর হতেই পারে না। তা তিনি নিজে কলমে-কিবোর্ডে লিখুন বা আর-কেউ অডিয়োরেকর্ডারে তার কথা ধারণ করে পরে ট্র্যান্সক্রাইব করুন, এই জবানটা বাচ্চুর এবং এতে একবিন্দু সন্দেহ নাই। জিনিশটা ছাপা হয়েছিল ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে। সেই বছরেরই এপ্রিলে এলআরবি ইউএস সফরে যায় ফার্স্টটাইম। সফল সফর সেরে এলআরবি ফিরে আসে দেশে। এরপরে তো বহুবারই গিয়েছে তারা বিদেশে মিউজিকট্যুরে। স্টেইটসেও অনেক শো করেছে এরপরের দুইদশকে।

সেইবার পয়লা আমেরিকাফেরত এলআরবি নিয়ে তখনকার তুখোড় বিনোদনপত্রিকা ‘আনন্দভুবন’ একটা ইশ্যু পাব্লিশ করে এলআরবি ঘিরে একটি রিপোর্টাজধর্মী ফিচার করার মাধ্যমে। সেইটা ছাপা হয়েছিল মূল পত্রিকার অন্তর্গত প্রশাখা ‘সারেগারে’-র প্রচ্ছদপ্রতিবেদন বা বাংলায় কাভারস্টোরি হিশেবে। স্ট্যাচু অফ লিবার্টি পিছনে রেখে ব্যান্ডের মেম্বারদের দাঁড়ানো পোজের ডিজিট্যালি-এডিটেড প্রচ্ছদছবি। শিরোনাম গ্যুড-গ্যুড হরফে ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’। তারপর যেই অংশটা আছে লেখা আকারে, সেইটাই নিবন্ধের মর্যাদায় আইয়ুব বাচ্চু অথার্শিপে এইখানে প্রেজেন্টেড। পরের যেই অংশটা এই নিবন্ধে নেয়া হয় নাই কিংবা আপাতত বর্জিত হয়েছে, সেই অংশের ভিত্তিতে ‘অ্যামেরিকায় গিটারসেন্টারে এলআরবি’ শিরোনামে বাচ্চুর জীবদ্দশাতেই ২০১৭-র দিকে গানপার পত্রিকায় পৃথক ফিচার হয়েছে। এইটাও উল্লেখ থাকতে পারে যে আইয়ুব বাচ্চু জীবিতাবস্থায় এলআরবিকেন্দ্রী ফিচার গানপারে ছাপা হয়েছে সর্বমোট পাঁচটা। গানপার স্টার্ট হয়েছে এপ্রিলেরই পয়লা হফতায়, ২০১৭-য়। কিছু লেখা আরও সম্ভব হয়েছে ছাপানো, গোটা পঞ্চাশেক হবে, সবই জীবনাবসানের পরে তার। এই সবগুলারে একজায়গায় এনে একটা অ্যান্থোলোজি করার প্ল্যান এবং তৎপরতা গানপার থেকে জোর কদমে চালানো হচ্ছে, রেজাল্ট বা আউটপুট যদিও দূরপরাহত।

প্রথম প্রকাশের কিছু তথ্য সংরক্ষণে রাখা আবশ্যক। এইটা ছাপা হয়েছিল, বলা হয়েছে আগে একবার, আনন্দভুবন পত্রিকায়। পাক্ষিক হিশেবে এইটা ঢাকা থেকে বেরোত। বা, আজও পত্রিকাটা বাইরায় এবং সীমিত পরিসরে সার্কুলেশনও হয় দেশের কোথাও কোথাও, পত্রিকার আগের সেই দুর্ধর্ষ যৌবন-তারুণ্য উধাও যদিও। সংগৃহীত বর্তমান রচনার প্রথম প্রকাশতথ্য হচ্ছে, এইটা ছিল পত্রিকার বর্ষ ৩ সংখ্যা ৪, ১ জুলাই ১৯৯৮, ১৭ আষাঢ় ১৪০৫ অব্দের ছাপা। মূল পত্রিকায় কাভারমডেল হিশেবে সিনেমানায়ক ফেরদৌস ও টিভিনায়িকা ঈশিতা হাজির দেখা যাচ্ছে এবং মূল পত্রিকার কাভারস্টোরি ‘জিন্স’ নিয়া আবর্তিত। প্রত্যেকটা পাক্ষিকে এর ভিতরে আরও দুইটা পার্ট ছাপা হতো, দুইটা আলাদা কাগজই যেন, ‘অঁ ভোগ’ একটা যার বিষয় ফ্যাশন ও লিভিং এবং ‘সারেগারে’ একটা যার বিষয় বিশ্ব ও স্বদেশ-দেশান্তরের মিউজিক। উৎকলিত রচনাটা যেই প্রচ্ছদপ্রতিবেদন থেকে নেয়া হয়েছে সেইটার শেষে দুইটা নাম ছাপা আছে, যথা, আবিদা নাসরীন কলি ও কাজী উচ্ছল, উনারা খাটাখাটনি করে মেহনতি ফিচারটা আমাদের সামনে এনেছিলেন-যে তা বলা বাহুল্য।। উচ্চারিত দুইটা নামই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এবিফ্যানরা ইয়াদ রাখবেন নিশ্চয়।

এই রচনা গানপারে ছাপার সময় ইমতিয়াজ আলম বেগ কর্তৃক উঠানো গোটা-চার আলোকচিত্র রচনাশরীরে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যানারটা অবশ্য কমন সোর্স থেকে মুক্তিমূর্তি ইউএসএ-র শাহরিক ইমেইজ নিয়া বানানো হয়েছে। এবং দ্বিতীয় প্রচ্ছদের ক্ষেত্রেও একই কথা। — গানপার।

এইবার আমরা আসল রচনা পড়ি, নিচে।


গ্যুডমর্নিং আমেরিকা || আইয়ুব বাচ্চু

বেশ অনেকদিন আগে কালার মিউজিক ইনক-এর কর্ণধার দেবু ঘোষ বাংলাদেশে আসেন। কথা হয় আমাদের সঙ্গে। এলআরবি (লাভ রানস ব্লাইড)-কে নিয়ে গানে গানে বিশ্বজয়ের প্রস্তাব রাখেন দেবু ঘোষ। প্রথমেই ভ্যাবাচ্যাকা। ছোট্ট একটা বাংলাদেশি ব্যান্ড আমরা! বিশ্বাসই হয়নি। সুতরাং রাজি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তুবও দেবু ঘোষ জোর করে বারবার অনুরোধ করেন। ঠিক আছে, বিষয়টি নিয়ে ভাববো বলে আপতত ইতি টানি। তবে স্বপ্ন, রিয়াদ আর টুটুলের পীড়াপীড়িতে ভদ্রলোকের সঙ্গে বসার পরিকল্পনা নেই। যেদিন সোনারগাঁ হোটেলে আমাদের শো, দেবু ঘোষ সেদিন চলে যাচ্ছেন। সুতরাং শোর আগে কথা। আমরা সাউন্ড চেক করছি, তখনই ভদ্রলোক এসে হাজির। প্রথমেই আমাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, তোমরা ভেবেছ কিছু? আমাদের কিছু শর্ত ছিল। তিনি সব মেনে নেন। আমরা পেপার সাইন করি। তারপর দীর্ঘ আট মাস। কোনো খবর নেই। অথচ আমাদের জন্য কত বিশাল আয়োজন হচ্ছে আমার ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি।

ইউ আর অ্যা রকব্যান্ড
আমরা ট্যুরে যাব এবং যাচ্ছি যখন কনফার্ম হই তখন হতে একেবারেই সময় নেই। সবকিছু হয় তাড়াহুড়োর মধ্যে। মার্কিন দূতাবাসে যাই। ওরা আমাদের সঙ্গে কথা বলেই ভিসা দিয়ে দেয়। কোনো ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়নি। কারণ আমাদের কাগজপত্র জেনুইন, আমরা কোনো আদম ক্যারি করিনি বা কোনো বিজনেসভিসাও নিতে যাইনি। স্রেফ পার্ফোর্ম্যান্স ভিসা। যে-ভিসার অ্যাগেইন্সটে ওখানকার সরকার ট্যাক্স নেয়। কোম্প্যানি আমাদের চারজনের জন্য ট্যাক্সও দিয়েছে। যাবার আগের দিন দুপুরে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাই।

একুশ এপ্রিল রাত ১১টা। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে আমেরিকার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করি। রাত চারটায় সিঙ্গাপুর পৌঁছি। সেখানে তিনঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর জাপানের উদ্দেশে ফ্লাইট। নারিতা এয়ারপোর্টে একঘণ্টা ব্রেকের পর পরদিন লস-অ্যাঞ্জেলেস। বাইশ সিটের সাদা লিমোজিন নিয়ে অপেক্ষা করছে সেখানকার প্রমোটার মি. তুফান। উচ্ছ্বাসের সঙ্গে আমাদের অভ্যর্থনা জানান। তারপর সরাসরি হোটেলে। এবং দুইদিন বিশ্রাম। এ-ট্যুরে আমরা কারো বাসায় থাকিনি। কারো কোনো গিফট নেইনি। গিফট সিস্টেম আমাদের জন্য বাতিল ঘোষণা ছিল। দুইদিন ঘুরেঘুরে লস-অ্যাঞ্জেলেসের বিশেষ বিশেষ জায়গা দেখে নিই। সেইসঙ্গে ওখানকার সাউন্ড কোম্প্যানি গেগবেট-এর সঙ্গে বসি। ভ্যান হেলেন ডেভিড লি রথ প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যান্ডগুলোর সাউন্ড করে এই ইভান সাউন্ড সিস্টেম। আমেরিকার প্রতিটি সিটিতেই এই কোম্প্যানির শাখা আছে।

তবে সব জায়গাতেই আমাদের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তোমাদের তবলা নেই? আমাদের উত্তর, না নেই। আবারও ওরা প্রশ্ন করে, তোমরা নিশ্চয়ই বেজগিটার ব্যবহার করতে জানো না? আমরা বলেছি, কেন নয়। সাউন্ডচেকের পর ওদের ধারণা বদলে যায়। ওরা বলে – ওয়েল, ইউ আর অ্যা বাংলাদেশি ব্যান্ড অ্যান্ড স্টিল ইউ আর হেভি। আমরা বলেছি, আমাদের মতো এমনি রকব্যান্ড বাংলাদেশে আরও ১০-১২টা আছে। ওরা শুধুই অবাক হয়েছে।

গানে গানে ভালোবাসা বিলিয়ে দেই
পঁচিশ তারিখ থেকে আমাদের শুরু। আমাদের সব-ক’টা শো শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। চারটার সময়ই আমরা হলে পৌঁছে যেতাম। সাউন্ডচেকের পর একঘণ্টা ব্রেক। আলাদা গ্রিনরুমের ব্যবস্থাও ছিল। তবে কথা একটাই, সাউন্ডচেকের সময় হ্যালো-হ্যালো ইত্যাদি বলা যাবে না। অনুরোধ ছিল সবার। আমরা অনুরোধ রাখি। লস-অ্যাঞ্জেলসের স্টেজে উঠেই আমরা বলি, দেশের চৌদ্দ কোটি বাঙালির ভালোবাসা এখানকার বাঙালিদের জন্য নিয়ে এসেছি। আমরা গানে গানে তা বিলিয়ে দিব। সেদিন বত্রিশটা গান করি। এমনি একটা সাক্সেসফ্যুল প্রোগ্র্যাম করার পর আমাদের মনে বিশ্বাস জাগায় যে আমরা পারব।

২৬ তারিখ সকালে হিউস্টনের পথে রওয়ানা দেই। বেলা ১১টায় ওখানে পৌঁছি। আমাদের রিসিভ করেন লোক্যাল প্রমোটার ইকবাল সাহেব। দেখা হওয়া মাত্রই বললেন, কাল তো ওখানে চমৎকার শো হয়েছে! আমাদের নিয়ে গেলেন হোটেলে। সন্ধ্যায়ই শো। এটা আমাদের একটা বড় অভিজ্ঞতা। ওখানকার বাংলাদেশি অনেক শ্রোতার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, ব্যান্ডসংগীত সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা ছিল না। শুনলাম, খুব ভালো লেগেছে।

হিউস্টনে আমরা দুইদিন রেস্ট পাই। ৩০ এপ্রিল সকালে চলে যাই ওয়াশিংটনে। সেখানে আমাদের রিসিভ করেন মি. শাহীন, চমৎকার চটপটে লোক। তার কথা কখনো ভুলব না। দুইদিন পর ওয়াশিংটন শো করে ৩ মে আমরা ডালাসে থেকে ৬ মে ফ্লোরিডা। ৯ মে শো করি। ১০ মে আটলান্টায় এবং ১২ মে নিউইয়র্কে শো করি। এই শোতে বিভিন্ন সিটি থেকে বাংগালিরা আসে। ওক্লাহামা থেকে ১৮-২০জন ছেলে আসে। তাদের সারা গা ও কাপড়ে লেখা ছিল ‘এলআরবি’ আর ‘বাংলাদেশ’। মনে হয়েছিল আমরা বাংলাদেশেই আছি। সেদিন ৩৮টা গান করি। আমরা সব শোর শেষে ‘বাংলাদেশ’ গানটা করেছি। গেয়েছি সব এলআরবির গান। হিউস্টনে একজনের অনুরোধে একটা ইংরেজি নাম্বার জি অ্যান্ড আর এক ডোন্ট ক্রাই করেছি।

প্রবাসী বাঙালিদের ভালোবাসা
ফ্লোরিডার প্রমোটার কামরুল চৌধুরী বিখ্যাত লোক। সেখানকার বাংলা টিভিচ্যানেল ‘রূপসী বাংলা’ আমাদের সাক্ষাৎকার নেয়। বেশ ক-বার প্রচারিত হয়। ভয়েস অফ আমেরিকাও আমাদের সাক্ষাৎকার নেয়। আমরা বলেছি, বাংলা জেগে গেছে। নিউইয়র্কে বাঙালি বেশি। ওখানে আমাদের শেষ শো। আটলান্টায় আসার পর থেকেই ফোন পেতে থাকি। সবার অনুরোধ শো শেষ করেই যেন আমরা নিউইয়র্কে চলে যাই। তাদের সঙ্গেই যেন বেশি সময় কাটাই। ১২ মে নিউইয়র্কে যাই। অদ্ভুত শহর নিউইয়র্ক। এ-শহর কখনো ঘুমায় না। সবাই যেন রিদমের মধ্যে চলছে। বেশকিছু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা হয়। ওখানকার প্রমোটার আলম, বাবু আমাদের নিয়ে যায় জ্যাকসন-হাইটে ‘আলাদিন’ নামের একটা হোটেলে। এস্টোরিয়াতে আমাদের দিয়ে নতুন শাখা আলাদিন ফুডশপ ওপেন করে।

সবচেয়ে মজার বিষয় আমেরিকায় অবস্থানরত বাঙালিরা দেশের সব খবরই রাখে। এখানে আমরা কি গাইছি, কি করছি সবই ওরা অবগত। ওরা আমাদের এখানকার ব্যান্ডের গান শোনে। ওদেরও ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যান্ড আছে। তাদের কাছে ওরা আশা করে। আমাদের শোগুলোতে এমনও অনেক বাঙালি পরিবার ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ওখানে। ছেলেমেয়ে কখনো বাংলাদেশে আসেনি। তাদের উদ্দেশ্য দেশের সংস্কৃতি, দেশের গান, দেশের ব্যান্ড সম্পর্কে ছেলেমেয়েদের ধারণা দেওয়া। কেউ আবার এক সিটি থেকে অন্য সিটিতে গিয়েও আমাদের শো দেখেছে। তবে প্রতি শোতে ‘বাংলাদেশ’ গানটি গাওয়ার সময় আমরা আর আমাদের মধ্যে থাকিনি। পুরো অডিয়েন্স দাঁড়িয়ে গলা মেলায়। ওদের চোখে পানির ঝিলিক। পরিবেশটাই অন্যরকম হয়ে যেত। তখনই ফিল করতে পারি যে যারা দেশের বাইরে দীর্ঘদিন বা আমরাই যে এখন দেশ থেকে কতশত দূরে আমাদের মধ্যেও দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কতটা জমাট-বাঁধা ভালোবাসা গলে পড়ছে।

আমাদের দুঃখ, আমাদের অভিমান
ওয়ার্ল্ডট্যুর পেপারে সাইন করে একটা পত্রিকায় আমরা বলেছিলাম সারাবিশ্বে কন্সার্ট করার জন্য একটা কোম্প্যানির সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। তখন অনেকেই বলেছে এসব ভিত্তিহীন, ভূয়া কথা। অনেকে চুক্তিপত্রও দেখতে চেয়েছেন। এখন গর্ব করেই বলতে হচ্ছে কাগজ দেখানোর কি আর প্রয়োজন আছে? আমরা ঘুরে ঘুরে কন্সার্ট করে সফল হয়ে ফিরে এসেছি। সুতরাং কথা হচ্ছে কাউকে ছোট করার মধ্যে কোনো মহত্ব নেই। একজন সংগীতশিল্পী হিশেবে আমাদের কাজ হচ্ছে বিদেশে যেয়ে নিজের দেশের মানুষের জন্য গান করা এবং ফিরে এসে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করা।

দুঃখ হয় ট্যুর করতে গিয়েও আমরা রটনা-ঘটনা থেকে রক্ষা পাইনি। ওখানে পৌঁছেই আমরা জানতে পাই দেশে দু-একজন মিউজিশিয়্যান রটিয়ে বেড়াচ্ছেন – আমাদের ড্রামার হাওয়া হয়ে গেছে, বিদেশি ড্রামার নিয়ে আমরা প্রোগ্র্যাম করছি। কেউ কেউ বলেছে – স্বপন লিখিত দিয়ে গেছে আর ফিরবে না। কারো মতে আইয়ুব বাচ্চু একা দেশে ফিরবে, অন্য সবাই ওখানে থেকে যাবে ইত্যাদি। যে যা-ই বলেন না কেন এলআরবি ব্যান্ডের সম্মান আছে। সম্মানের সঙ্গে প্রোগ্রাম করে ফিরে এসেছে। আমাদের প্রতিটি শো-ই সফল হয়েছে। আমাদের এই সফলতার দাবি আমাদের একার নয়। এ জয় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি ব্যান্ডের, সর্বোপরি বাংলাদেশের জয়।

আমরা ওখানে জোর গলায় বলেছি আমরা বাংলাদেশি। এটা আমাদের অহঙ্কার। সুতরাং শত অভিমান সত্ত্বেও অন্তর থেকে সব ব্যান্ডের প্রতি অনুরোধ করব, পরস্পরের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। অন্যকে সম্মান না করলে নিজে কখনো সম্মানিত হতে পারব না। কারো সম্পর্কে মন্তব্য করার পূর্বে নিজেকে একবার যাচাই করে দেখবেন। পাগলের প্রলাপ না করে নিজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকাই শ্রেয়। আশা করব আমাদের মতো আর কারো বেলাতে যেন এ-ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো না হয়। এতে আমাদের ইমেজের ক্ষতি হয়। এ কোনো শিল্পীর পরিচয় নয়।

যে-কোনো শিল্পী বিদেশে যেতে পারবে কেউ তাকে বাধা দেবে না। যদি তার মন পরিস্কার থাকে। কাগজপত্র জেনুইন থাকে। নিয়মনীতি মেনে যেতে চায়। আমরা বিদেশে থাকার জন্য যাইনি। গিয়েছি বাংলাদেশের পতাকা পুঁতে দিতে। আমরা যাব, আমরা আসব। আগামী বছর ক্যানাডায়, ইউরোপে আমাদের প্রোগ্র্যাম ফিক্সড হয়ে গেছে। আমাদের আমেরিকা ট্যুরের ব্যাপারে এখানকার যে শিল্পী চমৎকারভাবে সাহায্য করেছেন তিনি শুভ্র দেব। এলআরবির প্রতি তার যেমন ভালোবাসা রয়েছে তার প্রতিও রয়েছে আমাদের সবার ভালোবাসা।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you