আমার অহঙ্কার আমি জন্মেছি এই যুগে
আমার অহঙ্কার আমি জন্মেছি বাংলাদেশে
আমার ব্যক্তিগত কোনো অহঙ্কার নেই, তবে আমার দেশ নিয়ে আছে তীব্র অহঙ্কার। ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাত্রি প্রতিবছর এসে মনে করিয়ে দেয় কতটা ভয় ও আতঙ্কের মাঝে সময়টা কেটেছিল। এখনো শরীর থরথর করে কাঁপে, যেমন আজ ৫০ বছর পরেও সকাল থেকেই মনখারাপ এবং সেই কম্পন অনুভব করছি। ইংরেজি ভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ট্রমা’; আর জীবনে যতদিন বেঁচে আছি, এই দিন এলেই আমার দেহ আর মন সমন্বয়ে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে ‘আজ ২৫ মার্চ’ — এ-বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
নব্য প্রজন্ম যাদের সাথে আমার জীবনে অধিক পথচলা তারা ২৫ মার্চ কেবল কল্পনা করতে পারে — এবং সেই কল্পনা জীবিত রাখার জন্য আছে বিস্তর বই, ছবি, ইতিহাস পাঠ, প্রামাণ্য দলিল সহ আমাদের সাংস্কৃতিক নানান উপকরণ; যেমন — গান, কাব্যগ্রন্থ ইত্যাদি — তবে বাস্তবে আমরা যারা ১৯৭১ প্রত্যক্ষ করেছি তাদের একেকজনের অভিজ্ঞত্যা একেক হলেও সমষ্টিগতভাবে আমরা একটা ‘ট্রম্যাটাইজড জেনেরেশন’। বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দেশ স্বাধীন হবার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ট্রাজেডি আমাদের দুর্বল হয়তো-বা করেছে — তবে অনুভূতিশূন্য একেবারে করেনি। উল্টোটাই করেছে — করেছে শক্তিশালী, করেছে ক্ষিপ্র।
তাহলে ‘ভয়, আতঙ্ক, দেহ থরথর করে কাঁপে’ — এ-কথাগুলো যে বললাম? সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা ধরেই নিয়েছি প্রতিটি বাঙালি ‘বীর, ভয়হীন, আতঙ্কহীন এক অবিস্মরণীয় সত্তা’। বুকে হাত রেখে কী বলতে পারি এটাই সত্য? এ-প্রশ্ন উঠতেই পারে তবে পৃথিবীতে এমন একটি মানুষ নেই যার ভেতরে ভয় আর আতঙ্ক — বিশেষ করে মৃত্যুর ভয় — কাজ করে না।
অবশ্যই আমরা বীর জাতি — ১৯৭১ তারই সাক্ষী রাখে — তবে আমরা ভুলে যাই যে এই বীরত্ব এসেছে কেবল ভয় ও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে আমরা বাস্তবে কী করা উচিত সেটাই করেছি। অসত্যের কাছে মাথা নত করিনি — লড়াই করেছি। পেয়েছি একটা দেশ, একটা পতাকা ও একটা অখণ্ড মানচিত্র।
দুঃখজনক হলেও সত্য — এসবই ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক মুক্তির স্বাক্ষর বহন করে — তবে প্রতিটি নাগরিকের ‘মনের মুক্তি’ যা ছাড়া প্রকৃত মুক্তি অভাবনীয় — তা কি আদৌ এসেছে?
এখনো আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য। এখনো চলছে বিভাজন, এখনো চলছে ধনাঢ্য শ্রেণীর অত্যাচার, এখনো শুনতে হয় হতদরিদ্র মানুষের হাহাকার। এই লড়াই ৫০ বছরে থেমে যায়নি বরং বেড়েছে অনেকগুণ। এই লড়াই চলতেই থাকবে — এটাই স্বাভাবিক।
তবে শেষে একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই — ১৯৭১ সালে শত্রু আমরা চিনতাম — এখন শত্রু আমাদের চতুর্দিকে গ্রাস করছে — বিভিন্ন ছত্রছায়ায়। এখনই সময় প্রস্তুতির — এখনই সময় শত্রুকে চিহ্নিত করা — এখনই সময় জয় বাংলা বলে মাথা নত না করা।
স্বাধীনতা দিবসের লড়াকু অভিবাদন। জয় বাংলা
পল্লবী, মীরপুর ।। ১১ চৈত্র ১৪২৭ ।। ২৫ মার্চ ২০২১
… …
- Are we ready for Khilafa E Bangal? || Mac Haque - September 5, 2024
- সিজনাল মায়াকান্না ও আমাদের প্রতিবাদের ফ্যাশনেবল কালচার || মাকসুদুল হক - October 22, 2021
- স্মর্তব্য ১৭৭১ || মাকসুদুল হক - October 20, 2021
COMMENTS