বশীর আহমেদ : সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মাঝখানে একটা হাইব্রিড স্পেইস || সুমন রহমান

বশীর আহমেদ : সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মাঝখানে একটা হাইব্রিড স্পেইস || সুমন রহমান

জীবনে দুই বছর আমি মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকতা করেছি। স্কুলে পড়তাম, তবু অনেকেই আমারে ‘সাংবাদিক’ বলে ডাকতেন। পত্রিকার নাম ‘পাক্ষিক গ্রামবাংলা’, ভৈরব থেকে বেরোত। সম্পাদক বশীর আহমেদ। তিনি আমাকে সবসময় ‘সুমন রহমান’ নামে ডাকতেন। হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন কিভাবে প্রিসাইজলি প্রতিবেদন লিখতে হয়। নিউজপ্রিন্টের ওপর ইকোনো বলপয়েন্ট কলম দিয়ে লিখতাম। পরে, ‘গ্রামবাংলা’ পত্রিকায় কলাম লিখতে শুরু করি, গল্প-কবিতাও লিখি। বশীরভাই আমার লেখা পছন্দ করতেন। সম্পাদনা করে দিতেন। সাহিত্য হলে বলতেন, — আতাউরভাই দেখবেন, আমি সাহিত্য বুঝি না।

পরে যখন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে পুরোদস্তুর সাহিত্যিক হয়ে গেলাম, বশীরভাই খানিকটা কষ্ট পান। মাঝে মাঝে বলতেন, — কবিতার পাশাপাশি দুয়েকটা রিপোর্ট লিখলে কী এমন ক্ষতি হয়? কবিতা তো সাধারণ লোকে বোঝে না, কিন্তু রিপোর্ট বোঝে। আমি হাসতাম। বলতাম, — লিখব বশীরভাই। কিন্তু আর লেখা হয়নি।

বশীরভাই সে-সময়ের সবচে প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদ-এর সংবাদদাতা ছিলেন। ভৈরব প্রেসক্লাবের সম্পাদক ছিলেন বহুবছর। তারপর একসময় সাংবাদিকতা ও প্রেসক্লাব দুইই ছেড়ে দেন। স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। অসুস্থ হবার পর তাঁর সাথে বারদুয়েক দেখা হয়েছে। আমাকে চিনতে তাঁর সমস্যা হয়নি। কি করছি, জিজ্ঞেস করেছেন। ঢোঁক গিলে মিনমিন করে বললাম, — একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়াই। তিনি খুব খুশি হলেন। বললেন, — আমি জানতাম তুমি সাংবাদিকতায় ফিরে আসবে।

বশীরভাই মারা গেলেন গত রাতে। শোনার পর থেকে ‘পাক্ষিক গ্রামবাংলা’ পত্রিকার নিউজরুমটার কথা মনে পড়ছে। নিউজপ্রিন্টের ওপর বলপয়েন্ট দিয়ে লেখা আর ছিঁড়ে ফেলার দিনগুলো। প্রুফের তাড়া নিয়ে ব্যস্ত বশীরভাই। মোবারকভাই সাহিত্য সম্পাদক। রোমান্টিক কবিতা লিখে বাজার মাত করে দিচ্ছেন। আর আমরা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মাঝখানে নিজেদের জন্য একটা হাইব্রিড স্পেইস রচনা করছি।

চল্লিশ বছর আগের কথা।


COMMENTS

error: