যেখানে বৃষ্টি পড়ে বারো মাস, ছিপ হাতে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া, নদীর পাড়ে ঘর, সকালে উঠে দেখে বিরাট বড় কালবাউশ বড়শিতে আটকা, যেখানে গ্রামের পথে প্রান্তরে ঢুগিশাক, ধইঞ্চা, কলমির ঘন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হলদে ঢোঁড়াসাপ চলে যায়, যে-দেশের পথের ধারে কাঁকড়াভাজা, কাটা পেঁপের সালাদ আর মুরগির স্যুপ মাত্র কয়টা কাঁঠালপাতার বিনিময়ে পাওয়া যায়, যে-দেশে অতি বৃষ্টিতে ক্লান্ত হতে হতে বাচ্চা রবীন্দ্রনাথরা মহাদেশ পাড়ি দিয়ে তাদের নুনেভেজা বালিশে হাজার জিবির রোদ ভরে হাজার বছরের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে, যে-দেশে নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ হয়েও রামায়ণ মহাভারতের চরিত্রের নাম তাদের শিশুদের নামের সাথে জুড়ে দেয়— সেই দেশ ইন্দোনেশিয়া আমার প্রিয় দেশ। একদা এই বাঙ্গাল মুলুকও এমন ছিল। বৃষ্টি দিত বারো মাস। ঘরভরা ধান, মাছভরা পুকুর । শত শত সবজি পথের ধারে হেলায় জন্মাত, সেই ঘন সবুজের নিচ দিয়ে হলুদ ঢোঁড়াসাপ খালের মাছ খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে চলে যেত, মানুষের পায়ের আওয়াজ শুনলে মাথা তুলে দেখবার প্রয়োজনই মনে করত না, একদা এই দেশেও চোইত মাস হলে গ্রামে গ্রামে বান্নি হতো, বৈশাখ মাস এলে আবিয়াতি আর বিয়াতি নিয়ে কপটি খেইল খেলত, একদা এই দেশের কবিরাও নদীর সাথে রমণীর তুলনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে হাতের কলমকে সাইকেলমিস্ত্রির দোকানে স্পোক আটকানোর কাজে বিলিয়ে দিয়েছিল — সেই দেশ এখন রূপকথার মিথ্যা গল্পের মতন হয়ে গেছে। এই দেশে এখন বারোমাসে একবারই বৃষ্টি হয়। মানুষ এখন সবজি টাকার বিনিময়ে কিনে খায়। কোথায় বান্নি আর কোথায় কপটি!! এইসব শুনলে মানুষ ‘নিজের গুয়া মারার সময় পাই না’ বলে মাছি তাড়ানোর মতো হাত শূন্যে উড়ায়।
- টোকন ঠাকুর : ছদ্মনামে সুরাসুর || আহমদ মিনহাজ - May 31, 2023
- টিভিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের মহাপ্রস্থানের শোকাবহ দৃশ্য দেখে যেভাবে বিদায় জানিয়েছিলেন নবনীতা সেন || কাজল দাস - May 31, 2023
- শাজানভাই - May 30, 2023
COMMENTS