অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বাউল আবদুর রহমান : প্রসঙ্গ শাহ আবদুল করিম || আজিমুল রাজা চৌধুরী

অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় বাউল আবদুর রহমান : প্রসঙ্গ শাহ আবদুল করিম || আজিমুল রাজা চৌধুরী

একজন সাদা মনের র্নিলোভ, প্রচারবিমুখ, গুণী শিল্পী — যিনি গানের প্রেমে নিজের পুরো জীবনটাকে বিলিয়ে দিয়েছেন, গুরুসেবায় তৈরি করেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত, বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম সাহেবের গানের মূল কথা ও সুরের অন্যতম ধারক ও বাহক, বাউলসম্রাটের অন্যতম প্রধান শিষ্য, আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় বাউল আবদুর রহমান।

ছোটবেলা থেকেই গানের সাথে জড়িয়ে পড়েন এই গুণী বাউল। দীর্ঘ ৩৬ বছর সরাসরি বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম সাহেবের সান্নিধ্য পেয়ে ধন্য এই গুণী শিল্পী। বাউল শাহ আবদুল করিম সাহেব যখন অসুস্থ, যখন তিনি কাউকে ঠিকমতো চিনতেন না, তখন আবদুর রহমান সাহেবকে ঠিকই চিনতেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর পূর্বেও আশীর্বাদ করেছেন আবদুর রহমান সাহেবকে।

আজ আমি বাউলসম্রাটের ৩৬ বছরের শিষ্য বাউল আবদুর রহমান সাহেবের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করতেছি। এই সাক্ষাৎকার গ্রহণে আমাকে সহযোগিতা করেছেন শাহ আবদুল করিম পরিষদের গোল্ড শাহিন এসডি ভাই। নিম্নে সাক্ষাৎকারটি বিস্তারিত তুলে ধরলাম :

আপনি কেমন আছেন চাচা?
এই তো ভালো আছি।

আপনার একটি সাক্ষাৎকার নিতে চাই
আমি আর কি সাক্ষাৎকার দিব বলো। আমি এক সাধারণ মানুষ। অন্যরা আমাকে ভালোবাসে আমার গুরু শাহ আবদুল করিম সাহেবের উছিলায়।

আপনার ব্যাপারে আমাদের অনেকের জানার খুব আগ্রহ
ঠিক আছে বাবা। বলো কি জানতে চাও।

আপনার জন্ম এবং পরিচয়টা যদি বলতেন
আমার জন্ম ১৯৫৫ সালের ১০ মে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে। পিতার নাম একরাম হোসেন ও মাতার নাম হাজেরা খাতুন।

আপনারা কয় ভাইবোন ছিলেন?
আমার আর কোনো ভাইবোন নেই। পিতামাতার একমাত্র সন্তান আমি। ছোট থাকতেই পিতা মারা যান। মায়ের আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও শাসনের মধ্য দিয়েই আমার বেড়ে ওঠা।

প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া কতটুকু করেছেন?
আমি মেট্রিক পর্যন্ত লেখাপড়া করি। তবে মেট্রিক পরীক্ষা দেইনি। হয়তো লেখাপড়া আরো অধিক করতে পারতাম কিন্তু গানবাজনায় আমাকে এতটাই প্রেমে ফেলে দিলো যে লেখাপড়ার জগৎ থেকে গানের জগতে চলে যাই।

কত বছর বয়স থেকে গান করেন?
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আমার ভালোবাসা। আমার বাবাকে ছোটবেলায় দেখেছি গান নিয়ে আলোচনা করতে, গানের অনুষ্ঠানে যেতে। প্রথমে বাবার সাথে গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতাম বাবার মৃত্যুর পর আমি নিজে আমাদের এলাকার গানের কিংবা যাত্রার আসরগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতাম। কিভাবে ওরা বাজনা বাজায় সেটা দেখে দেখে শেখার চেষ্টা করতাম। আনুমানিক ৭ বছর বয়স থেকে গান গাই। তবে তখন গান গাইতাম শখে শখে। সেই-সময় যেই গান শুনতাম সেই গান গাওয়ার চেষ্টা করতাম। মানুষজন গান শুনে আমার কণ্ঠের বেশ প্রশংসা করত। এইভাবে চলতে থাকে। পরবর্তীকালে আমার উস্তাদ ও মুর্শিদ বাউল শাহ আবদুল করিম সাহেবের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করে গানকেই মূল সঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করি। বাবা শাহ আবদুল করিমের ভাষায়, “আর কিছু চায় না মনে গান ছাড়া” …

ছোটবেলায় নাকি আপনি স্কুল ফাঁকি দিতেন?
এটা সত্য। গানবাজনা আমাকে এতটাই যাদু করেছিল যে স্কুল ফাঁকি দিয়ে গানে চলে যেতাম। আমাদের গ্রামটা ছিল জঙ্গলবেষ্টিত। যখন স্কুলের সময় হতো তখন ব্যাগের মধ্যে বইপত্র ঢুকিয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর জঙ্গলের আড়ালে ব্যাগ রেখে চলে যেতাম ছইদা ফকিরের কাছে। কখনো যাত্রার রিয়ারসেলে (রিহার্সেল) গিয়ে তাদের বাজনা বাজানো দেখতাম। কিন্তু স্কুল ছুটি হওয়ার পর ব্যাগ কাঁধে নিয়ে সকল ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিশে বাড়িতে আসতাম। মা খুব খুশি স্কুল থেকে এসেছি। অথচ আমি তো জানি আমি স্কুলে যাইনি বরং গানের মানুষদের সংস্পর্শে ছিলাম। এইভাবে স্কুল ফাঁকি দিয়ে গানবাজনা করতাম। এখন এগুলো ভাবলে বেশ হাসি পায়। হয়তো তখন স্কুল ফাঁকি না দিলে আজকের আবদুর রহমান হতে পারতাম না। তারপর ধরো যে আমি যখন ইশকুলের বইয়ের কবিতা পড়তাম তখন গানের সুরে পড়তাম। মা একদিন আমাকে বললেন, কিতা বেটা তুই গান গাইরে না কবিতা পড়রে? আমি বললাম, গানের সুরে পড়লে দ্রুত শিখতে পারি। মা বললেন,  শিখবার দরকার সেটা গানের সুরে হোক কিংবা অন্য কোনোভাবে শিখলেই হলো। মোটামোটি মায়ের অনুমতি পেয়ে গেলাম।

শাহ বদু করিম সাহেবকেই কেন উস্তাদ মুর্শিদ হিসাবে ধরলেন?
তিনি প্রায়ই আমাদের এলাকায় গানের আসরে গাইতে আসতেন। আমাদের এলাকায় শাহ আবদুল করিম সাহেবের অনেক মুরিদ ও শিষ্য ছিল আমাদের এলাকায়। ছোটকাল থেকেই আমি শাহ আবদুল করিম সাহেবকে দেখেছি। তিনি যখন আমাদের এলাকায় আসতেন আমি তাঁর গানের অনুষ্ঠানে যেতাম। সেই-সময় বাড়ির উঠানে গান হতো। স্টেইজ কিংবা মাইক ছিল না। আমি ওনাকে যতবার দেখেছি ততবার ওনার প্রেমে পড়েছি। খুব সুন্দর লম্বা টান দিয়ে গান গাইতেন। গলার আওয়াজটা বেশ জোরালো ছিল। তাঁর কণ্ঠের গান মাইক ছাড়াই গভীর রাতে দুই-তিন কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা যেত। গানের কথাগুলো ছিলো মাধুর্যময়। ওনার চালচলন ছিল অতি সাধারণ। চেহারার দিকে তাকালেই ভক্তি আসত। ভক্ত ও মুরিদদের প্রতি তাঁর ছিল গভীর ভালোবাসা। অতি সাধারণ জীবনযাপন করতেন। গুরুর স্বভাবের এই দিকগুলো আমাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। এইজন্য ছোটবেলা থেকেই ওনার প্রেমে পড়ে যাই। পরবর্তীকালে উস্তাদ ও মুর্শিদ হিসাবে ওনাকেই ধরি।

করিমতনয় শাহ নুরজালাল, বাউল শাহ আবদুল করিম ও বাউল আবদুর রহমান

শাহ বদু করিম সাহেবের সাথে প্রথম কবে কথা হয়?
গানবাজনার প্রেমে আমি তখন হাবুডুবু খাচ্ছি। মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হলো না। সেই-সময় আমাদের গ্রামে শাহ আবদুল করিম সাহেবের শিষ্য আজিজুর রহমান করানভাই শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে আসরে বাজনা বাজাতেন এবং গান গাইতেন। তিনি আমার গানের প্রতি ভালোবাসা দেখে বললেন, রহমান তুই গান শিখতে চাইলে করিম সাহেবের কাছ থেকে শিখবি। বর্তমান সময়ের বাউলজগতে তিনি খুব উচ্চ পর্যায়ের সাধক কবি। যেহেতু শাহ আবদুল করিম সাহেবের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসা ছিল তখন আমি করানভাইকে বললাম, ভাই তুমি আমারে সেই ব্যবস্থা করে দাও। করান ভাই বললেন, আজ আমাদের গ্রামে শাহ আবদুল করিম সাহেবের অনুষ্ঠান আছে। তুই সেখানে চলে আসিস। আমি উস্তাদকে তোর ব্যাপারে বলব। আমি ওই অনুষ্ঠানে গেলাম। গান শেষে করানভাই আমাকে শাহ আবদুল করিম সাহেবের কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, গুরু ওর নাম আবদুর রহমান, ও আপনার কাছে গান শিখতে চায়। তখন শাহ আবদুল করিম সাহেব আমাকে বললেন, গান গাইতে পারো? আমি বললাম, কিছু কিছু পারি। তিনি বললেন, গাও দেখি দুইটা। সেইদিনই প্রথম শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে আমার সরাসরি কথা হয়।

সেইদিন শাহ বদু করিম সাহেবকে কোন গান শুনিয়েছিলেন সেটা কি মনে আছে?
মনে আছে। সেইদিন প্রথম আমি দুর্বিন শাহের “কে যাও মদিনার পথে ওহে মুসাফির” গানটি করি। পরে শাহ আবদুল করিম সাহেবের রচিত “সয়ালের দয়াল বন্ধু রে” গানটি করি। দুইটি গান শুনে তিনি আমায় বললেন, গান ঠিক আছে, তবে আমি আগামীবার তোমাদের এলাকায়এলে তখন যোগাযোগ করবে আমার সাথে।

তার মানে এইবার তিনি আপনাকে শিষ্য হিসাবে গ্রহকরলেন না?
এইবার তিনি করেননি, পরেরবার এলে করবেন বলেছেন। হয়তো আমার সম্পর্কে পুরোপুরি জানতেন না বলে এমন করেছেন। পরবর্তীকালে শুনতে পাই তিনি লোকমারফতে আমার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

পরেরবার কিভাবে দেখা বা সাক্ষাৎ হলো?
তিনি যখন পরে আমাদের এলাকায় এলেন তখন করানভাই তাঁর আসার সংবাদটা আমাকে দিলেন। তাঁর সাথে দেখা করার জন্য মন একেবারে পাগল হয়েই ছিল। রাতে কুয়াশায় রাস্তাঘাট দেখা যাচ্ছে না। সেই কুয়াশাঘেরা রাতে তাঁর সাথে দেখা করতে আমি রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় আমি গান ধরলাম, “তুমি ভালোবাসো কি না / আমি তা জানি না / আমার কর্ম আমি করিয়া যাব / আমি তোমায় ভালোবাসিব” … এমন সময় হঠাৎ আমার সামনে দাঁড়ানো অবস্থায় এই অন্ধকার রাতে শাহ আবদুল করিম সাহেবকে দেখলাম। তিনি আমাকে বললেন, কই যাও বেটা? আমি বললাম, আপনার সাথে দেখা করতে। তিনি বললেন, তাইলে চলো বাড়িতে। তিনি যে-বাড়িতে উঠেছেন সেই বাড়িতে যাওয়ার পর তিনি আমাকে বললেন, তোমার তো বাবা নেই, মা আছেন। তা তোমার মা আমার সাথে তোমারে দিবা নি? আমি তখন বললাম, গান ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। মা সেটা জানেন। মাকে আমি রাজি করাব। আপনি শুধু আমাকে আপনার কাছে আশ্রয় দিন। তখন শাহ আবদুল করিম বললেন, তুমি কি কেবল আমার কাছে গান শিখতে চাও নাকি মুর্শিদ হিসাবেও ধরতে চাও? আমি তখন বললাম, আমি আপনাকে উস্তাদ ও গুরু দুই হিসাবেই চাই। তখন তাঁর কাছে বয়াত হয়ে গেলাম। এই থেকেই মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাঁর সঙ্গ করেছি। আমি তাঁকে বাবা ডাকতাম।

আপনার গানের জগতে আসার পেছনে কার কার অবদান ছিল?
প্রথমত আমার মা । তিনি যদি আমাকে অনুমতি না-দিতেন তাহলে হয়তো গানের জগতে এইভাবে যুক্ত হতে পারতাম না। যেহেতু ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আমার টান ছিল অধিক তাই যেখানেই গান হতো সেখানেই যেতাম। সেই-সময় আমাদের এলাকায় বাউল আবদুল করিম সাহেবের শিষ্য আব্দুস শহীদ ওরফে ছইদা ফকিরের কাছ থেকে একতারা বাজানো শিখি। তাছাড়া শাহ আবদুল করিম সাহেবের আরেক প্রিয় শিষ্য আবদুর রহমান ভাইয়ের (আমার নামে নাম) কাছ থেকে দোতারা ও অনান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখি। শাহ আবদুল করিমের শিষ্য আজিজুর রহমান করানভাইয়ের মাধ্যমেই শাহ আবদুল করিম সাহেবের কাছে যাওয়া এবং মুর্শিদ হিসাবে তাঁকে গ্রহণ করা। শাহ আবদুল করিম সাহেবকে মুর্শিদ হিসাবে গ্রহণের পূর্বে গান গাইতাম না-বুঝে; কিন্তু তাঁকে মুর্শিদ হিসাবে মানার পর গান গাইতাম বুঝে। বলতে গেলে আমার জীবনের যেইটুকু শিক্ষা লাভ করেছি তা আমার গুরু শাহ আবদুল করিম সাহেবের মাধ্যমেই। আমার জীবনে তাঁর অবদান সবচাইতে বেশি। তিনি সাধারণ মানুষ ছিলেন না। ভাবের জগতের লোকেরা ঠিকই বুঝত তাঁর মর্যাদা। আমার দেখা পৃথিবীর সবচাইতে ভালো মানুষ আমার গুরু বাবা শাহ আবদুল করিম।

শাহ আবদুল করিম সাহেবের বাড়িতে যখন গেলেন তখনকার সময়ের স্মৃতি কিছু মনে পড়ে?
অনেক স্মৃতিই মনে পড়ে। আমি প্রথম যেদিন শাহ আবদুল করিম সাহেবের বাড়িতে যাই তখন দূর থেকে তিনি আমায় দেখে বললেন, কিতা-বা আইছো নি? আমি তাঁকে ভক্তি দিলাম। তখন তিনি মা সরলা খাতুনকে বললেন, আমাদের মরহুম আবদুর রহমানের নামে এই ছেলেটার নামও রহমান। ও আমার মুরিদ। এখন থেকে সে আমাদের বাড়িতে থাকবে। মা সরলা খাতুন আমার কাছে জানতে চাইলেন, তুমি কি তোমার মায়ের অনুমতি নিয়ে এসেছ? আমি বললাম, জ্বি। তখন থেকেই আমি নিজে গুরুর পরিবারের একজন হয়ে যাই। সেই-সময় শাহ আবদুল করিম সাহেবের একমাত্র পুত্র শাহ নূরজালালভাই ক্লাস টুতে পড়েন। আমি সেই যে ওনার বাড়িতে গিয়ে ওনার সান্নিধ্য পেলাম তা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছিল। দীর্ঘ ৩৬ বছর আমি মুর্শিদের সান্নিধ্যের ছায়ায় ছিলাম।

সেই সময় করিমশিষ্যদের মধ্যে আপনি কাদেরকে পেলেন?
তখন শাহ আবদুল করিম সাহেবের প্রথম জীবনের শিষ্যদের অনেকেই মারা গেছেন। শাহ আবদুল করিম সাহেবের বয়স ৫০-উর্ধ্ব হবে। সেই-সময় আমি তাঁর সাথে সুনন্দদা, আকবরভাই সহ আরো হাতেগোনা কয়েকজনকে পেয়েছি। আমি গুরুর বাড়িতে আসার পর রুহী ঠাকুর গানের উস্তাদ হিসাবে করিম সাহেবের সঙ্গ ধরেন। আমরা প্রায় সমবয়সী ছিলাম। খুব সম্পর্ক ছিল রুহী ঠাকুরের সাথে। করিমশিষ্যদের মধ্যে আমি এবং রুহী ঠাকুর সবচাইতে বেশি আসরে গুরুজির সাথে ছিলাম।

abdul karim

বাউল শাহ আবদুল করিম

রুহী ঠাকুর সম্পর্কে কিছু বলুন
রুহী ঠাকুরের বাড়ি গুরুজির বাড়ির একেবারে পাশেই ছিল। তিনি যাত্রাদলে নায়িকার পার্ট করতেন। পরবর্তীকালে তিনি লিপাই মিয়ার দলে মায়ের পার্ট করতেন। একদিন তিনি গুরুজির বাড়িতে এলেন। গুরুজি তাকে বললেন, কিতা-বা রুহী কোনদিন আইলায়? — আজ্ঞে দুই-তিন দিন অইব। ‘তা এখন কই আছো?’ — লিপাই মিয়ার দলে। ‘কিসের পার্ট করো?’ — মায়ের পার্ট। কিছুক্ষণ পর পুনরায় গুরুজি প্রশ্ন করলেন, ‘এরপর কোন পার্ট?’ — দাদির পার্ট। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘এরপর কোন পার্ট?’ — আজ্ঞে আর নেই। তখন গুরুজি শাহ আবদুল করিম রুহী ঠাকুরকে বললেন, তোমার দুইটি গুণ আছে, প্রথমত তুমি ঠাকুর মানুষ, দ্বিতীয়ত তোমার কণ্ঠ ভালো। লিপাই মিয়ার দলে কাজ করতেছো ভালো, তবে একটা সময় তোমার কাজ আর থাকবে না। দাদির পার্ট করার পরে আর তোমার পার্ট থাকবে না। কিন্তু তুমি যদি বাউলগানের জগতে চলে আসো তাহলে তৃতীয় একটি গুণে গুণী হবে, সেটা হলো যখন তোমার চামড়ায় ভাঁজ পড়ে যাবে সেই বৃদ্ধ বয়সে আর না-হলেও দশ বারোজন শিষ্য তোমার থাকবে। এই যে দেখতেছো আবদুর রহমান, সে হবিগঞ্জ থেকে গান শিখবার জন্য আমার কাছে এসেছে। অথচ তোমরা তো আমার পাশের গ্রামের। … ওইদিনই প্রথম রুহী ঠাকুরের সাথে আমার দেখা এবং কথা। রুহী ঠাকুর বাড়িতে গিয়ে পরদিন এসে গুরুজিকে বললেন, আমি আর লিপাই মিয়ার দলে যাইতেছি না, আমি আপনার সাথে থাকব। সেইদিনই তিনি গানের ওস্তাদ হিসাবে শাহ আবদুল করিম সাহেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। রুহী ঠাকুরের কণ্ঠ সুন্দর হলেও প্রথমদিকে বাউলগানের ব্যাপারে জানাশোনা ছিল কম। সেইদিক দিয়ে আমার জানাশোনা ছিল বেশি। তখন রুহী ঠাকুর অনেক ব্যাপারে আমার কাছ থেকে জেনে নিতেন। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। আমরা একসাথে শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে গানের আসরে যাই। তখন আমরাও দুই একটা গান গাওয়ার সুযোগ পাই। শাহ আবদুল করিম সাহেব গান রচনা করলে বাজনা বাজিয়ে গানকে জুইতজাইত করার পর আমিই প্রথম গাইতাম। তারপর রুহী ঠাকুর আমার কণ্ঠে শুনে নিজ কণ্ঠে গাইতেন। দর্শকরা আমার চাইতে রুহী ঠাকুরের কণ্ঠে গুরুর গানকে বেশি গ্রহণ করত। তাঁর কণ্ঠ ছিল অসাধারণ। শাহ আবদুল করিম সাহেবের সাথে আমরা দুইজন দীর্ঘ সময় একসাথে চলার সুযোগ লাভ করি। রুহী ঠাকুরের মধ্যে মানবতা গুণটি ছিল। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো হিংসা-নিন্দা ছিল না।

আপনি তো ৩৬ বছর একটানা শাহ বদু করিম সাহেবের সান্নিধ্য পেলেন। তা, শাহ বদু করিম সাহেব নিজ শিষ্যদের কি পরিমাণ ভালোবাসতেন?
শাহ আবদুল করিম কেবল একজন বাউল কিংবা গীতিকবিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থেই একজন খাঁটি মানুষ। আমি তো দীর্ঘ ৩ যুগ তাঁর সাথে ছিলাম। কখনো তাঁর কাছ থেকে মানবতাবিরুদ্ধ কোনো আচরণ পাইনি, মানবতাবিরুদ্ধ কোনো কাজ তাঁকে করতে দেখিনি। আমি সহ তাঁর সকল শিষ্যদের তিনি মানবতার পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে থাকার দিকনির্দেশনা দিতেন। শিষ্যদের ভালোবাসতেন আপন সন্তানের মতো। আমি যখন তাঁর বাড়িতে যাই তখন অভাব-অনটন খুব বেশি ছিল তাঁর সংসারে। একবেলা আহারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হতো। শাহ আবদুল করিম সাহেব কখনো শিষ্যদের রেখে খানা খেতেন না। যেইটুকু আহারের ব্যবস্থা হতো তা সকল শিষ্যদের নিয়ে খেতেন। নিজে যা খেতেন তা-ই শিষ্যদের খেতে দিতেন। এমন অনেক সময় গেছে দুই/তিনদিন গুরুজি এবং আমরা অভুক্ত থেকেছি। খাদ্যের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এত অভাব-অনটনের পরও শিষ্যদের তিনি বিতাড়িত করেননি। সবসময় বলতেন ব্যবস্থা অইবনে, চিন্তা কইরো না। মা সরলা খাতুনকে এত অভাব-অনটনের মধ্যেও কোনোদিন উফ শব্দ করতে দেখিনি। গুরুজির শিষ্যদের মধ্যে রহমানভাইকে যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা হত্যা করল তখন শাহ আবদুল করিম ভেঙে পড়েন। এই মৃত্যুর খবর তাকে এতটাই ব্যথিত করেছিল যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পর বলেছিলেন আর গান গাইব না। আমার রহমান নেই এখন আমার গানের মধ্যেও সেই স্বাদ নেই। তাছাড়া গুরুজির আরেক শিষ্য সুনন্দ দাসের জন্য গুরুজির খুব বেশি মায়া ছিল। তিনি বলতেন, সুনন্দ দাস ছিল আমার জন্য নিবেদিতপ্রাণ। সে ছিল মাটির মানুষ। সুনন্দ দাসের কথা স্মরণ হলেই গুরুজির চোখে পানি চলে আসত। শিষ্যদের মন থেকে ভালোবাসতেন শাহ আবদুল করিম।

আপনার গুরু শাহ বদু করিম রচিত গানের সংখ্যা কত হবে?
গানের সঠিক সংখ্যা নির্ধারিত করে বলা যাবে না। আমি তো শাহ আবদুল করিম সাহেবের মধ্যবয়স থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সঙ্গে ছিলাম। ৩৬ বছর কাছ থেকে বাস্তব শাহ আবদুল করিম সাহেবকে দেখেছি। আমার সামনেই শত শত গান রচনা করেছেন আমি সেইগুলো গেয়েছি। শাহ আবদুল করিম সাহেব উপস্থিত গান রচনা করতে পারতেন। মালজোড়ার আসরে অসংখ্যা গান রচনা করতেন যা তিনি বা আমরা কেউ লিখে রাখতাম না। তাছাড়া সেই-সময় তাঁর সাথে যারা ছিল তাদের বেশিরভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম ছিল। সেই কারণে কেউ সংগ্রহ করে রাখেনি। আমার ধারণা ছোট-বড় মিলিয়ে শাহ আবদুল করিম সাহেবের গানের সংখ্যা হবে ৪ থেকে ৫ হাজার। তবে আমাদের সংগ্রহ ও সংকলনের অভাবে আজ এগুলো বিলুপ্ত। তাঁর মতো মেধাবী সাধক বাউলের পক্ষে ৪ থেকে ৫ হাজার গান রচনা তেমন কোনো ব্যাপার ছিল না। আমাদের সামনেই অনেক গান রচনা করতেন যা খাতায় তুলতেন না। এইভাবে অনেক গান হারিয়ে গেছে ।

দুর্বিন শাহের সাথে শাহ বদু করিম সাহেবের সম্পর্ক কি রকম ছিল?
গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তখন সিলেট বিভাগে জীবিত বাউল কবিদের মধ্যে তাঁরা উভয়ই প্রথম সারির ছিলেন। আমাকে নিয়ে বাবা শাহ আব্দুল করিম দরগায় উরসে গেলে আমি প্রথম দুর্বিন শাহের সাথে কথা বলি। এর পূর্বে তিনি আমাদের এলাকায় মালজোড়া গানের আসরে গেলে তাঁকে প্রথম দেখি। দুর্বিন শাহ ছিলেন বাবা শাহ আবদুল করিমের সমবয়সী। একে অপরকে খুব শ্রদ্ধা করতেন। দেখলে মনে হতো তাঁরা একে অন্যের শিষ্য। একবার ফেঞ্চুগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে আমি আর রুহী ঠাকুর শাহ আবদুল করিম সাহেবের সঙ্গে ছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে দুর্বিন শাহও ছিলেন। তিনি আমার গান শুনে বাবা শাহ আবদুল করিম সাহেবকে বলেছিলেন, আপনার এই ছেলেটা খুব গুণী । শাহ আবদুল করিম দুর্বিন শাহকে পিরসাব বলে ডাকতেন আর দুর্বিন শাহ গুরুজিকে ডাকতেন করিমভাই। লন্ডনে যখন বাবা শাহ আবদুল করিম গিয়েছিলেন তখন সেই যাত্রায় দুর্বিন শাহও ছিলেন। অত্যধিক ঠান্ডায় দুর্বিন শাহের গলা ভেঙে যায় যার জন্য শাহ আবদুল করিম দুর্বিন শাহের কয়েকটি গান নিজে গেয়ে দেন। তাদের সম্পর্ক থেকে শিক্ষা নেয়ার অনেককিছু আছে।

আপনি নিজে গান রচনা করেন অথচ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনার গান আপনি করেন কম। এর কারকি?
এই যে আপনারা আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন সেটা আমার গুরু শাহ আবদুল করিমের শিষ্য হওয়ার কারণে। শাহ আবদুল করিমের শিষ্য না হলে আমি আবদুর রহমানকে হয়তো অনেকেই চিনত না। গুরুজির সান্নিধ্য ৩৬ বছর পেয়েছি। গুরুজির গানের মূল সূরের বাহক আমরা। তাই আমি যদি আমার গান গাই তাহলে গুরুজির গান কে গাইব? যতদিন জীবিত থাকব গুরুজির গান করেই যাব। গুরুজি আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে।

আপনার রচিত গানের সংখ্যা কত হবে?
এই পর্যন্ত প্রায় পাঁচশত গান রচনা করেছি। সবই গুরুজির আশীর্বাদে।

আপনার গানগুলো কি বইয়ের আকারে প্রকাশিত হয়েছে?
একটি বই প্রকাশ করেছিলাম ‘ভাটির সুর’ নামে। গানের সংখ্যা ছিল ১০২টি। বর্তমানে আরেকটি বইয়ের পাণ্ডুলিপির কাজ চলতেছে। সেই বইয়ে গানের সংখ্যা হবে ১২৫টি। সব গান নিয়ে সমগ্র করার ইচ্ছা আছে। তবে সেই পরিমাণ টাকাপয়সা নাই।

বাউলসম্রাট শাহ আবদু করিম সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?
আমার গুরু শাহ আবদুল করিম সাহেবের ব্যাপারে মন্তব্য করার মতো যোগ্যতা আমার নেই। আমার মনে হয় আমি ৩৬ বছরেও তাঁকে পুরোপুরি চিনতে পারিনি। একমাত্র মা সরলা চিনতে পেরেছিলেন তাঁকে। তাঁকে তিনিই বুঝতেন। শাহ আবদুল করিম অতি উচ্চমানের সাধক ছিলেন। কারো ক্ষতি চাননি বরং সবার ভালো চেয়েছেন। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। কারো কাছে হাত পাতেননি। তাঁর সবচাইতে বড় গুণের একটি গুণ হলো তিনি মানুষকে মানুষ হিসাবে মূল্যায়ন করতেন। ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে ছিল তাঁর চিন্তাধারা। তিনি তাঁর রচনায় বলেছেন, “এসব নিয়ে দ্বন্দ্ব কেন কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান / তুমি মানুষ আমিও মানুষ মোরা একমায়ের সন্তান” … শাহ আবদুল করিম উপকারীর উপকার স্বীকার করতেন। শ্রদ্ধাভক্তি করতেন পূর্বের মরমি সাধকদের। তিনি প্রায়ই আমাদের বলতেন সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়। কারো বিরুদ্ধে কথা বলতেন না আবার কারো অতিরিক্ত গুণকীর্তনও করতেন না।

কখনো কি শাহ আবদু করিম সাহেবেরমক খেয়েছেন?
যেহেতু গুরুর সাথে দীর্ঘদিন ছিলাম তাই তাঁর ধমক অনেকবার খেয়েছি। তিনি সচরাচর রাগ করতেন না। তবে যখন রাগ করতেন তখন তাঁর চোখ দেখেই বোঝা যেত। একবার এক অনুষ্ঠানে আমি গুরুজির সাথে গিয়েছি। মঞ্চে উঠার সময় হঠাৎ আমার প্রস্রাবে ধরল। তখন গুরুজিকে বললাম, আমি প্রস্রাব করে আসি। তিনি চোখ লাল করে ধমক দিয়ে বললেন, অনুষ্ঠান শুরু হবে এখন আর তোর প্রস্রাবে ধরছে। চুপচাপ স্টেজে ওঠ। কোনো প্রস্রাব না। আমি ধমক খেয়ে স্টেজে উঠে তাঁর সাথে গান করি। সারারাতে একবারের জন্যও প্রস্রাব করার কথা মনে পড়েনি। এইরকম ভয় পাইতাম। শাহ আবদুল করিম সাহেব খুব লম্বা টানে গান করতেন। বৃদ্ধ বয়সেও তাঁর সাথে টান মিলাতে গিয়ে হিমশিম খেতাম। যখন আসরে টান দিতেন তখন তাঁর সাথে লম্বা টান দিতে না পারলে তিনি চোখ লাল করে তাকাতেন। ভয়ে আমরা তখন জানপ্রাণ উজাড় করে টান দিতাম। মনে হতো কলিজা ছিঁড়ে আসবে ওইরকম। তিনি যেমন আমাদের ভালোবাসতেন তেমনি শাসনও করতেন ।

আপনার মনে কারো প্রতি কি ক্ষোভ আছে?
অন্য কোনো ব্যাপারে কারো প্রতি আমার ক্ষোভ নেই শুধু একটি ব্যাপার ছাড়া। ব্যাপারটি হলো, আমি যদি জানতে পারি কেউ আমার গুরু সম্পর্কে কটাক্ষ করেছে এবং খবরটির সত্যতা পাই তখন নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। শাহ আবদুল করিম সাহেবের ব্যাপারে কটাক্ষ আমি মেনে নিতে পারি না। যে তাকে নিয়ে কটাক্ষ করে তার প্রতি আমার ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাকে ঘৃণা করি।

শাহ আবদুল করিম সাহেবের একমাত্র সন্তান নূরজালাল সাহেব সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
তিনি আমার গুরুর একমাত্র সন্তান। আমি যখন প্রথম গুরুজির বাড়িতে যাই তখন তিনি ক্লাস টুতে পড়তেন। নূরজালালভাই গুরুজির পদাঙ্ক অনুসরণ করেই চলতেছেন। তিনি নিজেও অনেক জনপ্রিয় গানের রচয়িতা। তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক আপন মায়ের পেটের ভাইয়ের মতো। ওনার জন্য আমার ভালোবাসা ও দোয়া সবসময় থাকবে।

আপনার শরীরের বর্তমান অবস্থা কেমন?
মাঝে খুব বেশি অসুস্থ ছিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো আর বাঁচব না। কিন্তু সকলের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে সুস্থতা দান করেছেন। এখন মোটামোটি ভালো।

আপনি কি কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করেন?
কারো কাছে প্রত্যাশার কিছু নেই। মানুষ যে আমাকে ভালোবাসে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি। অভাব-অনটন দুঃখ-কষ্ট তো আছেই। আমার গুরুর আদর্শকে গ্রহণ করেছি। তাই তো শত অভাবেও কারো কাছে হাত পাতি না। তবে অনেকেই আমাকে অসুস্থ থাকার সময় অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছেন। তাদের কাছে আমি ঋণী। কষ্টজনক হলেও বাস্তব সত্য কথা হলো আমাদের এই দেশে জীবিত থাকাকালীন গুণীজনদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া হয় না। কিন্তু মৃত্যুর পর শত শত টাকার ফুল দিয়ে কফিন ভরে ফেলা হয়। আমি দায়িত্বশীলদের কাছে আবেদন করি অন্তত বেঁচে থাকাকালীন যেন গুণী শিল্পীদের মূল্যায়ন করা হয়। টাকার অভাবে যেন কোনো শিল্পীকে মরতে না হয়।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি আপনার মূল্যবান সময় আমাদের দিয়েছেন; এবং আপনার জীবনের অনেক অজানা তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি
তোমাদেরও ধন্যবাদ তোমরা আমার খোঁজখবর নিলে এইজন্য।

[metaslider id=”6424″]

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you