শওকত ওসমানের একটা লেখায় আলোকচিত্রী শব্দটির জায়গায় ‘চিত্রধর’ শব্দটি বেশ চমকে দিলো আমাকে। আসলে বাংলায় এসব ইংরেজি টার্মিনোলজির অনুবাদ সবসময় এত শ্রুতিমধুর হয় না। চিত্রধর শব্দটা এতদিন কোথায় ছিল কীভাবে ছিল সেটাই ভাবছিলাম। কেউ এটি আর ব্যবহার করেনি পরে। আমার চোখে পড়েনি অন্তত।
যেমন ‘মুঠোফোন’ শব্দটা এত সুন্দর! যদিও বাংলা-ইংরেজির মিশ্রণে শব্দটি তৈরি তবুও বেশ উপস্থাপনযোগ্য বা ব্যবহারিকভাবে কার্যকর। আমি ব্যক্তিগতভাবে শব্দটি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে একটা আস্ত গান করেছিলাম মেঘদলের দ্বিতীয় অ্যালবামে। শিরোনাম ছিল ‘মুঠোফোন’। যদিও এই শব্দের আর কোনো ব্যবহার আমার চোখে পড়ে না আর। মানে শব্দটির মৃত্যু হয়েছে ‘চিত্রধর’ শব্দটির মতোই। একসময় একটা আন্দোলনের মতো সময় গেছে আমাদের এখানে যখন বাংলায় সাইন্টিফিক টার্মিনোলজির অনুবাদ বা যে-কোনো ইংরেজি শব্দের বাংলা রূপান্তর করার একটা প্রবল চেষ্টা ছিল। সেটা নিয়ে হাসাহাসিও হয়েছে। ‘মক্তব মাদ্রাসার ভাষা’ শীর্ষক লেখাতেও রবীন্দ্রনাথ নিজেও চেয়ারের বিকল্প হিসেবে কেদারা শব্দটি নিয়ে হেসেছেন। যদিও যৌক্তিক একটি কারণ দেখিয়ে। যার সাথে আমি একমত। তবে এই যে ভাষার চোরাস্রোত কখন কিসের ভেতর দিয়ে জন্ম নেবে একটা শব্দ আবার কিভাবে তা গৃহীত হবে মানুষের মুখে মুখে তা বলা মুশকিল।
অ্যাকাডেমির যত ছড়িই ঘোরাই না কেন মানুষের ব্যবহারেই শব্দ অমরতা পায়। এই প্রবাহের ভেতরেই অনেক অমৃত শব্দও হারিয়ে যায় যেমন ‘মুঠোফোন’ বা ‘চিত্রধর’-এর মতো। তবে একমাত্র কবিতাই শেষ ভরসার জায়গা যেখানে এমন শব্দ আজও প্রাসঙ্গিক লাগে, বেখাপ্পা ঠেকে না। যেমন মম তম ইত্যাদি। কবিতায় এমন অনেক আর্কেইক শব্দ মানুষ অকাতরে গ্রহণ করে। পড়তে ভালোবাসে। কবি শহীদ কাদরী বলেছিলেন যে পৃথিবীতে এত যন্ত্রণা আর ধ্বংসের ভেতর মানুষের শেষ আশ্রয় হচ্ছে কবির হৃদয় শিল্পীর হৃদয়। ভাবি, এ-রকম অপস্রিয়মাণ কত শব্দমাধুরী কবি ও কবিতারা হৃদয়ে ধারণ করে রাখছে যুগ যুগ ধরে!
- ছোট ডুবুরি, পাতি সরালি, চড়াই ও না-পাখি || জ্যোতি পোদ্দার - July 30, 2025
- জীবনের ঋতুসমুদয় || শিলামনি - July 20, 2025
- কেইটের কামাই - July 12, 2025
COMMENTS