সিনেমার নতুন প্রেজেন্টেশন ও হাজার বছরের বায়োস্কোপ || হাসান শাহরিয়ার

সিনেমার নতুন প্রেজেন্টেশন ও হাজার বছরের বায়োস্কোপ || হাসান শাহরিয়ার

 

সিনেমায় ক্যারেক্টার প্রেজেন্টেশন, স্টোরি টেলিং, সেট নির্মাণ বা সিনেমা বলতে যা দেখতেছি এতদিন, আগামী কয়েক বছরে মনে হয় এইসবে অনেক চেইঞ্জ আসবে। ড্রামা, গল্প বলা, ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট, বাস্তবের মতো সেট নির্মাণ, ডায়লগ, ফাইট, ইন্টিমেট সিন … এই সবকিছুই মনে হয় ঠিক এখনকার মতো থাকবে না।

আজ একটা মুভি দেখলাম। নাম ‘The Wonderful Stories of Henry Sugar and Three More’। এইরকম স্ক্রিনপ্লে আগে কোনোদিন দেখি নাই। আপনেরা দেখছেন? দেখলে বলবেন। অ্যানিওয়ে, দেখলাম সিনেমার সব ক্যারেক্টার নিজেই দর্শকদের নিজের গল্প বলতেছে যেন সে একটা গল্পের বই পড়তেছে খুব দ্রুত। যেইখানে I said, he said টাইপ কমান্ডও বাদ পড়তেছে না মোটেও। আর সাথে সাথে লাইট, সেট, টুলস, ক্যারেক্টার সব চেইঞ্জ হইতেছে। অনেকটা মঞ্চের মতো। তবে খুব দ্রুত। ক্যামেরা আর অ্যানিমেশনের ব্যপার তো আছেই। যারা Barbie দেখছেন, তারা কিছুটা অনুমান করতে পারেন।

সিনেমায় অনেক জন্রা আছে। জেমেকিসের গল্প বলা একরকম, তারান্তিনোর একরকম। নোলানের Memento বা Tenet বা Inception একরকম। বাচ্চাদের জন্য অ্যানিমেশন বা মার্বেল, ডিজনির স্পেইস দখলের তুলকালাম ফিকশন, থ্রিলার একরকম। স্পিলবার্গের Amistad বা Lincoln-এর মতো হিস্টোরিক্যাল ড্রামা একরকম, আবার তার Jurassic Park বা Indiana Jones-এর মতো থ্রিলার অ্যাডভেঞ্চার একরকম। ক্যামেরনের Avatar একদম নতুম মনে হইছে আমার। তার Terminator series বা ওয়াচোস্কি সিস্টার্সের (এক সময়ের ব্রাদার্স) Matrix, স্টাহেলস্কির John Wick এইসব হইলো একেকটা রিভোলিউশনারি সিগনেচার। অস্ট্রেলিয়ান মায়াবী ফিল্মমেইকার জর্জ মিলারের Mad Max সিরিজও একেকটা স্ক্রিন রিভোলিউশন।

ইরানি বা কোরিয়ানদের খুব মৌলিক স্টাইল আছে গল্প বলায়। কোরিয়ানরা হলিউড কপি করতে গেলে অবশ্য একটু হালকা হইয়া যায় সব। ইরানি শেষ যে-ছবিটা দেখছি, মনে হইলো একটা স্ট্যান্ডের উপর ক্যামেরা রাইখা ডিরেক্টর বলতেছে, লেটস প্লে। একটু ধীর, একটু অকওয়ার্ড কিন্তু পর্দা থেইকা আপনে চোখ সরাইতে পারবেন না।

কিন্তু ‘The Wonderful Stories of Henry Sugar and Three More’ দেখার পর কেমন জানি মনে হইলো। মানে এক্সপেরিমেন্টের তো একটা লিমিট থাকে, নাকি? ড্যাম! কী দুঃসাহস! OTT কী এইখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেছে? It’s like let’s create our own audience and fuck olds hell! পৃথিবীর এইরকম বাস্তবতায় সৃষ্টিশীলতার দরবারে আপনের হাজার বছরের ললিপপ কই আছে, বলেন দেখি?

একটা মুভিতে দেখছিলাম, প্রফেসর এইরকম বলতেছে। দুনিয়ার সব ডিক্টেটরশিপের একটাই অবসেশন থাকে। সবকিছুরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হইবো। প্রাচীন রোমে ডিক্টেটররা পাবলিকের জন্য বিশাল স্টেডিয়ামে সার্কাসের আয়োজন করতো। জন্তুর লগে দাসের, এক দাসের লগে আরেক দাসের ফাইট হইত মাঠে। গ্রেকো-রোমান সম্রাটরা যত বিখ্যাত হইছে, স্পার্টাকাস তত বিখ্যাত হইতে পারে নাই। যেহেতু দুনিয়ার সিন one way or another একরকমই আছে। এখনকার ডিক্টেটররাও সেইম। অন্যভাবে। নতুন স্ট্র‍্যাটেজি। নতুন চিন্তারে আটকাইয়া দাও, জ্ঞানের বিকাশ সীমিত করো। কেমনে? শিক্ষার মান কমাইয়া দাও, শিল্প-সংস্কৃতির মানও। ইনফর্মেশন সেন্সর কইরা, ব্যক্তির চিন্তারে যে-কোনো গ্রাউন্ডে ধসাইয়া দিয়া। আপনের এই হাজার বছরের বায়োস্কোপে কী চমৎকার চলতেছে?

“Control, it’s all about control. Every dictatorship has one obsession and that’s it. In ancient Rome they gave the people bread and circuses. They kept the population busy with entertainment but other dictatorships used other strategies to control ideas, the knowledge… How do they do that? Lower education, they limit culture, censor information, they censor any means of individual expression and it is important to remember this, that this is a pattern that repeats itself throughout history.’’ [Movie: Enemy, 2014]

(জুন ২০২৪)


হাসান শাহরিয়ার রচনারাশি

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you