উপন্যাসে শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও বিপন্নতার বোধ || হারুন আহমেদ

উপন্যাসে শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও বিপন্নতার বোধ || হারুন আহমেদ

শেয়ার করুন:

কোনো বাড়তি প্রত্যাশা নিয়ে পড়তে শুরু করিনি। কিন্তু একটা সময় শেফালি, মুমু, বকুল, তুহিনের গল্প বেশ ভালোই আক্রান্ত করলো আমাকে। আশেপাশে গিজগিজ করা শতসহস্র মানুষ, তাদের শতসহস্র কলরব অথচ ব্যস্ত আধুনিক জীবনে মানুষগুলো কত নিঃসঙ্গ! আর নিঃসঙ্গ এই মহানগরী।

পাপড়ি রহমানের কাহিনিতে কোলাহলক্লান্ত সদাজাগ্রত ঢাকা নিজেই একটা চরিত্র—যে-ঢাকা পরিত্রাণ চায়, শুশ্রূষা চায়, আড়াল চায় কিন্তু বদলে পায় শুধু অসীম শূন্যতা। ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’ বিভিন্ন বয়সী নারীদের গল্প—তাদের যাপিত জীবনের গ্লানি, শূন্যতা আর সংগ্রামের গল্প।

উল্লেখ না থাকলেও আমি এমনিতেই হয়তো বুঝে যেতাম এই উপাখ্যান এক নারীর হাতে রচিত। বয়স বেড়ে যাওয়ার, মা হওয়ার, একাকিত্বের নিরুচ্চার বেদনার এমন সাবলীল স্বাক্ষর একজন নারীই রাখতে পারেন।

চমকে উঠতে হয় শেফালির আর্তনাদ শুনে—“মায়ের দেহের সমস্ত লালিত্য ধীরে ধীরে গ্রাস করে এভাবেই বুঝি জন্ম হয় কোনো মানবশিশুর?” গর্ভবতী থাকা অবস্থায় নিজের দিকে তাকিয়ে “কী বিশ্রী! কী বিশ্রী!” বলে বিলাপ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু এগুলো আমাদের কথাসাহিত্যে আসে না। সবসময় শুধু মা হওয়ার মহত্ত্বের বয়ান পড়ে ও জেনেই আমরা অভ্যস্ত।

পুরো উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ ও উপসংহার নিয়ে অতৃপ্তি রয়ে যায়, কিছু জায়গায় মনে হয় একটু বেশিই প্রথাগত উপায়ে চরিত্ররা আচরণ করছে, মেলোড্রামা যেন বিপজ্জনকভাবে উঁকিঝুঁকি মারছে দোরগোড়ায়। কিন্তু শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও বিপন্নতার বোধ এত জীবন্তভাবে পাপড়ি রহমান ফুটিয়ে তুলেছেন যে শুধু এর জন্যেই লেখাটির কাছে ফেরত আসতে হবে।


গানপার বইরিভিয়্যু
গানপারে পাপড়ি রহমান

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you