দুনিয়ায় আর-কোথাও হয় কি না জানি না, বাংলাদেশে ইলেকশন এলে ক্যাম্পেইনের জন্যে গান বাঁধা হয়। যে-কোনো ধরনের ইলেকশনক্যাম্পেইনে প্রচারণাগীতি সিগ্নিফিক্যান্ট একটা রোল প্লে করিয়া থাকে। এইটা আজকে থেকে নয়, আদিকাল থেকেই। ইন-ফ্যাক্ট গানে গানেই ভিক্ষাবৃত্তি বাংলার ঐতিহ্য। বক্তৃতায় ভিক্ষাথালে একটা আধুলিও জোটে না। আর ভিক্ষার সবচেয়ে বৃহৎ ক্ষেত্র হচ্ছে এক এই ইলেকশন, এবং দুই হচ্ছে প্রেম। বক্তৃতায় প্রেমিকার মন গলানো কদাচিৎ গেলেও অনুনয়-মিনতি মিশাইয়া হাতচোখ কচলাইয়া চাইতে হয় প্রেমদাত্রীর কাছে। এন্তার অনুনয়বিনয়গীতি সত্ত্বেও ভিক্ষা না যদি জোটে, এবং যদি জুটিয়া যায়, প্রেমিকার দুর্গতি দুই দিকেই। নিস্তার নাই প্রেমিকার এবং বেচারি ভোটারের, প্রার্থী জিতুক বা না তাতে হেরফের হয় না পরিস্থিতির, বাছাদিগেরে নিপীড়িত হতেই হয়, ভিক্ষা পাইলেও প্রণয়প্রাপক আনবাড়ি যায়, আঁখি পাল্টায়, না-পাইলে তো কথাই নাই। গাঙ পার হইয়াই গাঁয়ের প্রবাদচিত্রে যেমন খেয়ানিটারে বেয়াড়া সাঁতার-না-জানা নাওযাত্রী বুড়া আঙুল দেখায়।
কিন্তু কথা চালাতে লেগেছি ইলেকশনের গান নিয়া। নানান পদের ইলেকশন হয় বাংলায়। আজকাল তো ইলেকশন ছাড়া পাতাটাও নড়ে না পানিটাও পড়ে না। আগে, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যামলে, পানি পড়ত পাতা নড়ত মোটামুটি ন্যাচারের নিয়ম মেনে। এখন ইলেকশনের নিয়মে লেবেঞ্চুশ থেকে ল্য অ্যান্ড অর্ডার বেবাককিছু চুষতে হয়। ট্যাক্সিক্যাবশ্রমিকের ইলেকশন, নসিমনচালকদের ইলেকশন সহ শতসহস্র পেশাজীবীগোষ্ঠীর ইলেকশন ছাড়াও মসজিদ-মন্দির কমিটির ইলেকশন, ইশকুল কমিটির ইলেকশন, গার্ডিয়ান কমিটির ইলেকশন, সমুচা-আমসত্ব সমিতির ইলেকশন ইত্যাদি সীমাশুমার নাই ইলেকশনের। সর্বত্র দরকার পড়ে গানের। যেখানেই ইলেকশন, সেখানে ক্যাম্পেইন এবং সেখানেই গান। বাংলা ইলেকশনের দেশ। তথা, বাংলা গানের দেশ।
যথা, আপনি হয়তো বলবেন, উদাহরণ প্রদান করো মিয়া, এক্সাম্পল উত্তোলন করো টেবিলে। এই তো মুসিবতে ফেলাইলেন। উদাহরণ চয়নে এ-মুহূর্তে অক্ষমতা জানাই। কিন্তু গবেষণাফান্ড একটা বাগাইতে পারলে এক্সাম্পলের ফ্ল্যাশ ফ্লাড আপনিই বইয়ে দিতে পারবেন। উদাহরণ নয়, কিছু ক্লু উঠাইয়া রাখি, রিসার্চাররা ফান্ড রেইজ্ করতে যেয়ে এই ক্লুগুলো লইয়া প্রোজেক্ট ডিজাইন করতে পারেন এমন কিছু ক্লু।
প্রথমত বলি, স্মৃতি থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত আমরা এই কিসিমের রিসার্চে এক্সেপ্ট করে নিতেই পারি। রিপোর্টার হিশেবে এইটা আমি কবুল করে রাখি শুরুতেই যে ছোটবেলায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এলে ক্যাম্পেইনের যে-একটা সাড়া ও উদ্দীপনা জাগত লোকালয়ে একদম স্বতঃস্ফূর্তভাবে, এখন এইটা পার-ডে পেমেন্টে পরিচালিত হয়। আগে নির্বাচিত হয়ে একজন চেয়ারম্যান বা মেম্বার কয়েক মেট্রিক টন ট্রাকভর্তি রিলিফের গম-চাল-ঢেউটিন পাঁচবছরে জেবের ভিতরে নিতে পারত, বড়জোর কাবিখা বা কাবিটা কর্মসূচি থেকে কয়েক লক্ষাধিক আরও, বর্তমানে এই ইনকাম এই আয়উপার্জন লুটব্যবস্থা স্ট্রেংদেন হওয়ায় একেকজনের একাধিক কোটিতে যেয়ে রিচ করেছে। কাজেই ইলেকশনে ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে, একসময় যা কিনা পাড়ার পোলাপানেরা চান্দা তুলে খেলাচ্ছলে ব্যয় নির্বাহ করে নিত।
স্বৈরাচারী হিশেবে খ্যাত হুমু এরশাদ, অলরেডি স্বৈরাচারক্রিয়াকলাপে রেকর্ডটাও তার দখলছাড়া হয়ে গেছে, অ্যাট-লিস্ট জবর্দস্তিপূর্বক উয়িদাউট অ্যানি ইলেকশন অথবা টালবাহানার নির্বাচনী বেহায়াপনায় এরশাদের শাসনামলের দৈর্ঘ্য পিছনে পড়ে গেছে এই ইলেকশনপ্রকৌশলী লীগের টোয়েন্টিফোর্টি ভিশনের ক্রীড়ানৈপুণ্যে। এরশাদী নিরাশার অন্ধকারে যেমন নির্বাচনে একটা সাড়া জাগত জনপদে, সেইটা মানুষের নায়্যিভিটি হোক বা অন্য কারণে, এখন উল্টা মানুষ নির্বাচন এলে স্রেফ ভোটটা ছাড়া বাকি সবকিছু থেকেই নিজের গা বাঁচায়া চলে। এখন নির্বাচনের গান নিয়া বাচ্চারাও উৎসুক হয় না।
নানান পর্যায়ে এই নির্বাচনী গীতিমালা আমরা বাছাই করতে পারি। একটা সাধারণ লেভেলের গানমালা পাওয়া যায়, এই কিসিমের গীতিকা সংখ্যায় বেশি নিশ্চয়, যেখানে অ্যাডজিঙ্গেলের মতো দুই/আড়াইলাইনে ক্যান্ডিডেটের নাম ও মার্কাটা জানিয়ে ভোট চাওয়া হয় মা-বোন-ভাবী-ভাইদের কাছে। এই কিসিমের গানসম্ভার হয় প্যারোডি ফর্মের এবং প্রায়শ কৌতুককণ্ঠী। লোকালয়ে টিস্টলে তামাশা আর হাসির মাধ্যমে ক্যান্ডিডেটের ব্যাপারে একটা জাজমেন্টে যায় ভোটাররা। আশির দশকের শেষদিকে এই ধারার ক্যাম্পেইনে একটা জোয়ার এসেছিল, যখন ব্যাটারিচালিত মাইকে রিকশাযোগে ব্যাপক প্রচারণাগান শোনা যেত মহল্লায় ইউনিয়নরাস্তায়। এর আগে ব্যাটারিছাড়া চোঙ্গা মাইক দিয়া গান গেয়ে বেড়ানো হতো অবশ্য। পরে রেকর্ডপ্লেয়ারে অডিয়োভোয়েস দিয়া ক্যাম্পেইনস্যং চালানো শুরু হয়েছে। এখনও লাইভ গানের কদর সবচেয়ে বেশি। বিচিত্র কণ্ঠে ক্যাম্পেইনস্যং লাইভ রিকশায় বা গ্যাসচালিত অটোট্যাক্সি দিয়া গাইয়া যায় এলাকার যুবক ভাড়ায়-খাটা ক্যাম্পেইনশিল্পী স্ট্রিট মুখরিত করে।
বেশকিছু স্যং প্রত্যেকটা ইলেকশনে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং সেই স্যং যার ক্যাম্পেইনে গাওয়া হয় তিনি জিতুন বা হারুন তার নাম ছড়িয়ে পড়ে গানে গানে এবং বহুদিন অমর রহে। এমন কয়েকটা নাম এই মুহূর্তে ইয়াদ করছি রিসার্চফেলোদিগের জন্যে, যেন তারা বাদবাকি বিস্তর নামগুলো ও মজার মজার গানগুলো হদিস করতে পারেন। ধরা যাক আব্দুল হাসিম কালার বাপ নামে এক ক্যান্ডিডেটের কথা, গানে গানে যিনি লিজেন্ড হয়েছেন আমাদেরই বেড়ে-ওঠাকালীন চোখের সামনে। এই সিলেটে। ম্যাক্সিম/প্রবাদ হয়ে গেছে তার নামে এন্তার গানের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদীপ্ত কৌতুকী মিউজিক্যাল পঙক্তিগুলো। ছক্কা ছয়ফুর তেমনি আরেক কিংবদন্তি। সিম্পলি স্পিকিং, এই দুইজনে একবাক্যে গ্রেইট দুই পার্সোনা, যারা চারিত্র্য বিবেচনায় ব্যক্তি হিশেবে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলেন বছর-বছর নির্বাচনে হেরে এবং পাশ করে। এদের ক্যাম্পেইনস্যংগুলো রচনার সময় স্যংরাইটার বাড়তি কিছু সুবিধা পেত অবশ্য, সুবিধাটা হচ্ছে যে এরা পাব্লিকলি কিছু দুর্দান্ত ইমেইজ তৈয়ার করে ফেলেছিলেন। ফলে যে-কোনোকিছুই এদের নামে খ্যামটা/আড়খ্যামটা সুরে ফেলে দিলেই হিট।
অপেক্ষাকৃত অল্প পরিচিত প্রার্থী কিংবা আনকোরা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যাচারালি কিছু চ্যালেঞ্জ ফেইস করতে হতো সংগীতরচয়িতাটাকে। কেননা তার ক্লায়েন্টকে একে তো পরিচয় করায়ে দিতে হবে প্যারোডিটার মাধ্যমে, এরপরে লোকমনোরঞ্জনের দিকটাও বজায় রেখে গানটা বাঁধতে হবে। এক্ষেত্রে রিস্কও কম ছিল না। ক্যাম্পেইনস্যং যদি মুরুব্বিদের কোনো কারণে চটিয়ে দিত, গোটা ক্যাম্পেইন তো ময়দানে থুবড়ে পড়তই, সেই প্রার্থীর প্যানেলের অন্যদের উপরেও প্রভাব পড়ত ভুলের। সাধারণত অন্য প্রার্থীকে ঘায়েল করতে যেয়ে ইঙ্গিতের বক্রতা মাত্রা ছাড়ালে, এলাকাকেন্দ্রিক কিছু সোহবৎ অমান্য করলে, এছাড়াও অঞ্চলকেন্দ্রী কিছু সংস্কার-লৌকিকতা, আচার-ব্যবহার বজায় না রেখে স্রেফ ফাইজলামি ইত্যাদি জিনিশে এলাকার ময়মুরুব্বিরা চোখ পাকাতেন। এমন কিছু ঘটনা আমরা অনেকেই ইয়াদ করতে পারব যে একটা ক্যাম্পেইনগানের কারণে এলাকায় দাঙ্গাহাঙ্গামা হয়েছে, পঞ্চায়েত বসে সালিশে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে, এবং ফাইন্যালি ক্যান্ডিডেট ক্ষমা চাহিয়াও ভরাডুবি ঠেকাইতে পারেন নাই।
কিছু ক্যাম্পেইনগান যেমন হয় ইউনিক, অনন্য, অধিকাংশই কিন্তু কপিক্যাট। তবু গলার আর গায়কীর গুণে, রেন্ডিশনের জজবাতিয়ায়, ব্যাপারটা প্রায় নতুনের মতো শোনায়। সাধারণত লোকজ কোনো গানের ধুয়াপদ, পল্লিগীতি বা ছড়াগান, অনেক ক্ষেত্রে হিন্দি কিছু কমন ফিল্মিগানার সুর লতিয়ে ক্যাম্পেইনগানের গতর গড়ে ওঠে। এইসব গান বাঁধার জন্যে এক্সপার্টাইজ আছে এমন লোকেদের কদর নির্বাচনপ্রাক্কালে বেড়ে যায়। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্যাম্পেইনপদকার যেমন আছেন, যারা পরস্পরবিরোধী শিবিরের জন্য পদ বাঁধেন পর্যাপ্ত পার্টিক্যুলার্স জেনে নিয়ে, তেমনি আছেন কোনো কোনো ক্যান্ডিডেটের অফিসিয়্যাল স্যংরাইটার যিনি অন্য কারো জন্য গান না বেঁধে একজনের কাছ থেকেই তার মাসখানেকের গ্রাসাচ্ছাদন জুটিয়ে নেন। শেষোক্ত স্যংরাইটারদের আগে বেশ পসার ছিল, তারা খালি রিকশাক্যাম্পেইনের জন্যই গান বাঁধতেন না, নিত্যদিনের নির্বাচনী পথসভাগুলোতে প্রার্থীর লটবহরের সঙ্গে এখানে-ওখানে যেয়ে সভাশুরুতে এন্টার্টেইন করতেন সমবেত লোকেদেরে।
এইবার আসি ইম্পোর্ট্যান্ট পয়েন্টটায়। নিরুদাহরণ ক্লু রাখব শুধু। আবহমান বাংলা গানে এমন অসংখ্য পদ পাওয়া যাবে যেগুলো ইলেকশনের গান হিশেবে লেখা হয়েছিল। হলেও, প্রচারণাগান হলেও, রচয়িতা গানটা বাঁধবার সময় এমন কিছু কৌশল নিজের অজান্তে বা জান্তে এঁটে দিয়েছেন যে সেই গান বাদ-ইলেকশন মানুষ মুখে রেখেছে এবং নিজের দর্দ ও জখমের উপশম হিশেবে সঙ্গে রেখে দিয়েছে। এই গানগুলোতে ক্যাম্পেইনটাইমের সমাজচিত্র, রাজনীতি, লুটতরাজ ও গণমানুষের দুঃখ উঠে এসেছে ঠিকই, কিন্তু ভোটপ্রার্থীর নামটা ব্যবহৃত হয় নাই; বা নাম ব্যবহৃত হলেও হয়েছে একটা সাংকেতিক কায়দা অ্যাপ্লাই করে। এইটা আন্দাজ করা যায় যে সেইকালে ক্যাসেটপ্লেয়ার না-থাকায় ক্যাম্পেইনমিটিঙে ব্যবহারের জন্য জনজীবনোপজীব্য এই ধারার গানগুলো সদ্য সদ্য বেঁধে গরম গরম গাওয়া হতো। অসংখ্য উন্নত লিরিকের এবং সুরের গান এইভাবে বেরিয়ে এসেছে। এইটা আগের কালে একটা গানবান্ধনের প্রক্রিয়াই ছিল। মোস্টলি বাংলার চারণকবিরা ক্যাম্পেইনস্যঙের ছত্রচ্ছায়ায় এন্তার গান বেঁধেছেন যা তাদের রচনাসমগ্রের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রেখেছে।
শেষোক্ত যে-ধারার ইলেকশনগানের কথা আমরা ভাবছি, নিবন্ধের পরবর্তী ইনস্টলমেন্টে এই নিরিখে একটা আলাপের বিস্তার করা যায় কি না ট্রাই করা যাবে। দেশের যত গ্রেইট স্বভাবকবি ও চারণপদকারের নাম আপনি নেবেন, সকলেই তারা ক্যাম্পেইনগান বেঁধেছেন এবং কয়েক বছর অন্তর অন্তর এরা গান গাইয়া গ্রাসাচ্ছাদনের একটা ব্যবস্থা করে নিতে পেরেছেন। মুকুন্দ দাস, রমেশ শীল, আরকুম শাহ প্রমুখ সকলেরই ইলেকশনগান আছে যা কিনা আজকে একদম বোঝার কুদরৎ নাই যে এইগুলো ইলেকশন উপলক্ষ্যে লেখা হয়েছিল। শাহ আবদুল করিমের বিস্তর ভালো ভালো গান রয়েছে যা নির্বাচনকালে ক্যাম্পেইনমিটিঙে গাইবার নিমিত্তে লেখা হয়েছিল। সিলেট অঞ্চলে এমন অসাধারণ সমস্ত গানের দেখা পাওয়া যাবে যা আমরা জানিই না যে ক্যাম্পেইনপার্পাসে লেখা ও গাওয়া হয়েছিল। আব্দুল গাফফার দত্তচৌধুরীর এমন গান আছে। এমন আছে ক্বারী আমীর উদ্দীনের অনেক গান। আরও অসংখ্য পদকর্তা আছেন এমন যাদের ক্যাম্পেইনগানগুলো পরবর্তীকালে একটা আলগ মর্তবায় গৃহীত হয়েছে। এক করিমের এই বাবতে যে-সাফল্য, সমাজের দুঃখদুর্দশা চিত্রায়িত করে যে-একটা বাউলা গানের আলাদা ভাণ্ডার গড়ে গেছেন, সুনামগঞ্জে-হবিগঞ্জে-সিলেটে এবং ভাসানীর কাগমারীতে, কোথায় না গিয়েছেন তিনি মিটিঙের গান গাইতে! এবং, এইমাত্র মনে পড়ল, গণসংগীতশিল্পীরা আরেক ভুবন গড়ে তুলেছেন ক্যাম্পেইনস্যঙের। রমেশ শীল শুধু নয়, আরও অসংখ্য গণশিল্পী। কিছু প্রাইমারি সোর্স থেকে, এবং সেকন্ডারি সোর্স থেকে ব্যাপক নিয়ে এই জিনিশগুলা অ্যান্থোলোজি আকারে প্রেজেন্ট করা যায় কি না, ভাবতে পারেন যে-কেউ, ভোলান্টিয়ার করতে পারেন।
সংক্ষেপ করি, নিবন্ধ গুটায়ে আনি ধীরে। এখন কেমন ক্যাম্পেইনস্যং হয়? এখনও প্যারোডিনির্ভর ক্যাম্পেইনস্যং প্রধান অবশ্যই, কিন্তু মাধ্যম বদলেছে। এবং শ্রোতাও বদলেছে, বলা বাহুল্য। নির্মল বিনোদনের জায়গায় এখন ক্যাম্পেইনস্যং দিয়া ব্যাপকমাত্রায় ইউটিউবে হ্যাট্রেড স্প্রেড করা হয়। এরপরও হয়, ক্যাম্পেইনস্যং হয়, আমরা হয়তো দুইয়েকটা শুনি কিংবা না। তবে এ-যুগের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পেইনসিঙ্গারটির নাম যদি জিগান, রিপ্লাই দিব কবীর সুমন নাম তার। উনি জীবনভর বিপ্লবের ক্যাম্পেইন করে গেছেন, করেছেন এমন একটা কালে এবং এমন একটা দলের শাসনামলে যে সেইসময় সুমনের দেশ ইন্ডিয়ায় বামমাস্তানদের দৌরাত্ম্য দূরদেশের আমরাও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। সুমন তখন পান নাই। কিন্তু পরে দেখতে পেয়েছেন, যখন সেই দল নিশ্চিত ভরাডুবির কবলে। কবীর সুমন মুহূর্তে ত্যাগ করে এসেছেন তার গানের আদর্শ দল ও রাজনীতি। খিস্তি দিয়া বাংলা ভাষায় একটা ডাস্টবিন পয়দা করেছেন, ওই সময়ের ইউটিউবে সেসব প্রচার হয়েছে, ডাস্টবিন তো নয় খিস্তিবিন। পরে মমতার হয়ে বেজায় ঢোলডপ্কি পিটিয়েছেন, বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা হয়ে মমতার নামে বেঁধেছেন একের পরে এক মধ্যযুগীয় স্তবগীতিকা, তারপরে এমএলএ/এমপি হয়েছেন মমতার প্রত্যুত্তরকরুণায়, তারপরে ফের মমতার পিণ্ডি চটকেছেন ওই গানে গানেই। জীবনে কবীর সুমন কিছু স্মরণীয় গান বেঁধেছেন অকুণ্ঠচিত্তে যে-কেউ স্বীকার যাবেন, তবে সেইসঙ্গে এই জিনিশটাও একদিন কেউ দেখিয়ে দেবেন যে কবীর সুমনের গানবাথানের উল্লেখযোগ্য অংশ আসলে ক্যাম্পেইনস্যং, থার্ডক্লাস অভিসন্ধিমূলক প্রচারণাগান সেগুলো। চব্বিশঘণ্টার মধ্যে যে-মানুষ চব্বিশঘণ্টাই বকবক করে, সেই বকাসুর দিয়া ক্যাম্পেইনস্যং কতটা ক্যাম্পেইনফ্রেন্ডলি হয় সে-জিজ্ঞাসা আমরা আপাতত গ্রহণ করছি না।
যা-হোক। সিলেটে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০১৮ উপলক্ষ্যে ক্যাম্পেইনস্যং শুনে বেলা গেল সন্ধ্যা হলো গত পনেরোদিনের প্রতিদিনই। ইউটিউবে বেশকিছু শুনলাম, বিটকেলেদের বিটলামিই বেশি। কিন্তু মনে হয় না ক্যাম্পেইনস্যং এই নির্বাচনে তেমন ইতরবিশেষ হেরফের ঘটাবে। ইলেকশন তো অল সেট। কই যাই আর, গান তো গাইলাম অনেক, খুশিবাসি রই। ঝিলমিল ঝিলমিল করি …
লেখা : জাহেদ আহমদ ২০১৮
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS