চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ২১ || শেখ লুৎফর

চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ২১ || শেখ লুৎফর

মনের বৈঠা পবনের নাও


খেলার ঘুম আসছে না। ভালো লাগছে না পরীর সঙ্গ। মানুষের কিছু কিছু জিনিস মাঝেমাঝে তাকে খুব কষ্ট দেয়। তখন টানা দুই-তিনদিন সে কোনোকিছুতেই আমোদ পায় না। মন খালি ফাৎ ফাৎ করে। দুনিয়াটাকে অসার লাগে। তাবাদে দুম করে আজব একটা কিছু করে বসে। চারপাশের সকল মানুষকে চমকে দিয়ে সে বুঝাতে চায়, তোমরা অত কুটিল হইয় না। বুঝলাম, সেদিন কাদু-কালুরা মানু মিয়ার অনুমতি না নিয়ে একটু আগেভাগে কাম থেকে উঠে গেছিল। দল বেঁধে চলে গেছিল ছাত্রদের মিটিং-এ। দুনিয়ার মানুষ যেখানে গেছে সেইখানে কাদু-কালুরা গেলে ক্ষতি কী?

কাদু-কালুরা ত রাজনীতি বোঝে না। দশের সাথে হুজুগে পড়ে গিয়েছে। মানু মিয়া ঘাটুদলের কর্তা। কাদু-কালুরা দলের অধীন। এবং গরিব বলে দলকর্তার জমিনের ভাগেদারও। তারপর চৈত-কাতি মাসে আকালের সময় বছর বছর তার কাছ থেকে কয়েক মণ ধান কিংবা বিশ-কুড়ি টাকা দেনাও করে। সব সত্যি। কামের সিজনে মানু মিয়ার বাড়িতে কামলা খেটে সেই দেনা তারা ফি বছর শোধও করে দেয়। তাহলে হিসাবে কী কয়?

হিসাবে কয় কয়েক মণ ধান কর্জ দেওয়ার সুবাদে মানু মিয়া কাদু-কালুদের আস্তা জীবনটাই খরিদ করে ফেলেছে?

খেলার পক্ষে আর বিছানায় শুয়ে থাকা সম্ভব হয় না। পরী ঘুমাচ্ছে বেঘোরে। শীতের দাপটে আজ বুঝি ঝিঁঝি পোকারাও জবানে তালা দিয়েছে! সে নিঃশব্দে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ায়। মানুষের একজীবনে কত দস্তি দস্তি পরত! সরলতার বিপরীতে কুটিলতা। মালিকের বিপরীতে গোলাম। মানু মিয়া কাদু-কালু সহ দলের সবাইকে গলায় শিকল পরানো গোলাম ভাবে?

খেলা একাদশীর চাঁদটাকে এক-নজর দেখে। বাড়িটাও ঘুমিয়ে আছে কনকনে শীতের খেতার নিচে। ফনফনা জোছনার মাখামাখা আবছায়াতে দাঁড়িয়ে খেলা একটা বিড়ি ধরায়। কান পেতে দূরের কিছু শুনতে চেষ্টা করে। কিছুই মালুম করতে না পেরে বারান্দার জলচৌকিতে গিয়ে বসে। পুবের আমগাছের ছায়াটা তাদের উঠানের অর্ধেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। খেলা অস্থির মনে বিড়ি টানতে টানতে আবার উঠানে নেমে পড়ে। তারপর আমগাছের ছায়ায় খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে।

দুনিয়ার সবাই জানে, খেলার স্বভাবটা কালাই পাথারের বাতাসের মতো। কোনোদিন কোনো কাজ ভেবেটেবে করে না। এই-যে সে ঘাটুছেরা রাখে — কে না জানে এই জিনিস সমাজের দশজন ঘিন্নার চোখে দেখে! আবার মনে মনে ঘাটুরাখনেওয়ালা লোকটাকে সমীহও করে। লোকটা সামনে পড়লে চরম শত্রুও তার পৌরুষের দিকে হিংসার চোখে তাকিয়ে থাকে। এই দেখে খেলা খুব আমোদ পায়। আরামে শরীর-মন ভিজে ওঠে। খেলার হাউসে ভরা আমুদি মন চিরকাল তাকে ঝাঁকের কই হতে দেয়নি। সে বরাবরই চেয়েছে দশজন তাকে চেয়ে দেখুক। নিজেকে জাহির করার এই চেতনা থেকেই তো সে মাত্র নয় বছর বয়সে একডুবে ভরা সুতিয়া নদী পেরিয়ে যাবে বলে বাজি ধরেছিল। সতেরো বছর বয়সে আড়াই সের রসগোল্লা খাওয়ার বাজিতে দশ টাকা জিতে সারা গ্রামে‘রব’ ফেলে দিয়েছিল।

খেলা যাকে বুক দেয়, কোনোদিন তাকে পিঠ দেখায় না। সে ঘাটুদলকে ভালোবাসে। সেই সুবাদে কাদু-কালুরা তার ভাই। ঘাটুদলের অলিখিত বিধিই এই বিধানের কথা বলে। তাবাদে দ্যাখো মানু মিয়া তার এই বিশ্বাসের বুকে লাথি মারল!

হঠাৎ খেলার হাঁটার গতি বেড়ে যায়। মস্তবড় উঠানটার এ-মাথা সে-মাথা বরাবর হাঁটতে থাকে। আমাগাছের ছায়াটা পিছিয়ে যেতে যেতে অনেক দূরে সরে গেলে সে হঠাৎ একটাকিছু পাওয়ার মতো থপ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। নিজের অজান্তে ডানহাত উঁচিয়ে, ঘন ঘন তর্জনী নাচিয়ে, ক্রুদ্ধ গলায় ফিসফিস করে বলতে থাকে, — “কাশিদ, তুমি এই মুহূর্তে ছুটে যাও কুখাবনগরের অর্বাচীন রাজা মানু মিয়ার কাছে, তাকে জানিয়ে দাও, বিনা যুদ্ধে চেমননগরের একমুষ্ঠি মাটিও তাকে স্পর্শ করতে দিব না আমি।

পরের দিন ফজরের নামাজের পর খেলার বাপ এসে বারান্দায় হুঁক্কা আর আগুনের মালসার পাশে বসে। আজ বুড়ার মনটা ভালো। এই কয়দিন সে ঠাহর করে দেখেছে খেলার মতিগতি দশআনা বদলে গেছে। বুড়া হুঁক্কা সাজাতে সাজাতে হাসে।  —  “ব্যাডামাইনশের এক জিনিসে কয়দিন রুচি থাহে?”

এখন খেলা তার বাল্যবন্ধু ছাত্রদের সাথে ভিড়েছে। দেশের কামে দিনরাত সারা গফরগাঁও জুড়ে মিটিংফিটিং করছে। ভালো-মন্দ দশজনের সাথে চিনপরিচয় হচ্ছে। বুড়া হুঁক্কায় লম্বা করে দম দেয়। গোয়ালে গরু ডাকছে। একটা ঘুঘু উঠানের উপর দিয়ে মাটিতে কীসব খুঁটতে খুঁটতে গতর ঝাড়ে। তারপর ফচাৎ করে উড়াল মারে। বুড়া পাখিটার উড়াউড়ি দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে হুঁক্কা টানতে থাকে। বুড়ার হুঁক্কার ডাক শুনে বুড়ি কুঁচকানো চামড়ার ছোটখাটো দেহটা শাড়ির আঁচলে ঠিকঠাকমতো ঢেকে, পায়ে কাঠের পয়ডার শব্দ তুলে বেরিয়ে আসে। নামাজ-কোরান পাঠ শেষে সে আজ দুইরাকাত নফল নামাজ আদায় করে খোদাকে শুকরিয়া জানিয়েছে, — “আল্লা, আল্লা রে তুমি আমার নিগাবান। তোমার কুদরতের কোনো সীমা নাই।”

মায়ের চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি ঝরে, — “আমার পুত অহন ঘাডু থুইয়া ছাত্রগর লগে চলে। আমার কৈবার কেউ নাই, এই সুখ খোদা তোমার কাছে আমি কৈলাম।”

বুড়া হুঁক্কা থেকে মুখ তুলে বুড়িকে এক-নজর দেখে। বুড়ি আবার ঘরে ঢুকে যায়। একটু পরে এক-সানকি মুড়ির উপর বড় একচাক্কা গুড় নিয়ে এসে বুড়ার সামনে রাখে। পাশে দুইটা পাকা সবরি কলা। বুড়ি পায়ের পয়ডায় খুটখুট শব্দ তুলে একটু পরেই আবার বারান্দায় ফিরে আসে। একহাতে ঝকঝকা পিতলের গ্লাসে পানি আরেক হাতে পানের বাটা নিয়ে বুড়ার পাশে বসে। এই সময় খেলা পশ্চিমের ঘর থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। চোখে-মুখে অঘুমার ছাপ। খেলা বারান্দায় বসা তার বাপকে দেখে সরে যেতে চাইলে বুড়া গলা খাকারি দিয়ে বুড়িকে আস্তে আস্তে বলে, —“খেলারে ক যাইত না।”

বুড়া ঘরে গিয়ে কাঠের সিন্দুকের ডালা খুলে কীসব খুডুর খুডুর করে বেরিয়ে আসে। তাবাদে খেলাকে অবাক করে বলে, — “সারাদিন ছাত্রগর লগে উফাস পেটে ঘুরার দরকার কি?”

পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বুড়ির হাতে দিয়ে বলে, — “যেহানেই যাউক সময় সময় একটা কিছু খায়-যে।”

বুড়া আর দাঁড়ায় না, গামছা কাঁধে গোয়ালঘরের দিকে সরে যায়।

সুরুজ উঠার একটু পরেই খেলার পঁচিশহাত লম্বা ডিঙিটা নদীর ঘাট থেকে কাদু-কালুদের কাঁধে চড়ে বেনেভিটার সেই আমতলে চলে এসেছে। দেখা যায় পালপাড়ার দিক থেকে বিশ-ত্রিশজন তরুণ হৈ-হুল্লা করতে করতে ঠেলে ঠেলে নিয়ে আসছে গরুর গাড়ির দুইজোড়া চাকা। গুড়ের চাক্কার সাথে উড়ে উড়ে আসা মাছির মতো একদঙ্গল শিশুকিশোরও তাদের পেছন পেছন চলে এসেছে বেনেভিটায়। উত্তরপাড়ার নুরুদ্দি গেছিল পুবের মাঠে তার আলুক্ষেতে। পথে পুবপাড়ার এহুর সাথে দেখা হতেই সে বলে, — “জানস, খেলা তার ডিঙ্গিত চাক্কা লাগাইতাছে। নৌকা লইয়া মিছিল করতে করতে বিষুদবার দিন ছাত্রগর মিটিং-এ যাইব।”

বিষুদবারের মিটিং-এর কথা সবাই জানে। ছাত্ররা বাড়ি বাড়ি এসে মিটিং-এ যাওয়ার জন্য সকলকে দাওয়াত দিয়ে গেছে। ফাল-নষ্ট লাঙলটা মেরামত করতে এহু গেছিল সাহাপাড়ার গোপাল মেস্তরির কাছে। গোপাল বাড়ি নাই। সে নাকি খেলার বাড়ি গ্যাছে। এহু আবার লাঙল কাঁধে ফিরতি পথ ধরে। যাওয়াআসার পথে যতজনের সাথে তার দেখা হয়েছে, প্রত্যেকেরে বলেছে, — “হুনছস্, খেলা বিরাট এক নাও বানাইতাছে; চাক্কাওয়ালা হেই নাও লইয়া বিষুদবারে বঙ্গবন্ধুর মিটিং এ যাইব।”

খেলা মানে সত্যিই খেলা। পোকজোঁক,অভাব-অনটনভরা নিথর গ্রামে মাঝে মাঝে সে হুলুস্থুল ফেলে দেয়। তাই খেলা কিছু করছে শুনলে দুনিয়াদারিতে আকণ্ঠ ডুবে থাকা মানুষটাও সচেতন হয়ে ওঠে। আজকেও এইভাবে খেলার আচান্নক আয়োজনের কথা মুহূর্তে সারা এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ে।

এই শুনে আঙ্কুর তার হারমুনিয়ামটা একজনের মাথায় চাপিয়ে দিয়ে ত্রিপদী প্রাণির মতো লাঠি ঠুকতে ঠুকতে চলে এসেছে। বিরাট এই খবর শুনে দক্ষিণপাড়ার ফালুডাকাত তার কাঁচাপাকা বাবরি দুলাতে দুলাতে বেনেভিটার পথ ধরে। রূপবান গানের ‘একাব্বর বাদশা’-র মতো নিঃসন্তান ফালুডাকাতের আধবুড়ি একটা বউ ছাড়া ত্রিসংসারে কোনো বাঁধন নাই। একদিন খেলার মতো তারও একটা জীবন ছিল। গরম রক্তের সেই দিনগুলা এখন তার কাছে শুধু স্মৃতি। শুধু দীর্ঘশ্বাস।

বর্তমানে ফালুডাকাতের ফসলের সামান্য কিছু জমি আছে। বিরাট বাড়িটার চারপাশে অড়ং জংলার মতো বড় একটা সুপারিবাগ আছে। অসুখবিসুখহীন জীবনটা এখন চৈতমাসের সুতিয়া নদীর মতো একদম থবির। বঙ্গবন্ধুর নৌকা বানানোর খবরে ফালু ডাকাতের কাঁচাপাকা বাবরিটার সাথে কালো চকচকে ছোট্ট ভুঁড়িটাও কেঁপে উঠেছিল। বিশ বছর আগে ডাকাতি করে আনা থ্রি-ব্যান্ড রেডিয়োটা চালিয়ে সে খাটের কোনায় বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাতাকাগজের বিড়ি টানে। গান শোনে, খবর শোনে। পেটের দুই-চার অক্ষর বিদ্যা, ভালো-মন্দ মানুষের সঙ্গ সহ বিচিত্র জীবনের নানান অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি রেডিয়ো মারফত বিবিসির কল্যাণে দেশের বিষয়ে সে এখন অনেককিছু জানে। তাই খেলার কাণ্ডটা না-দেখেও ফালুডাকাত বুঝতে পারে বিষুদবার দিন কী ঘটবে। আর এইভাবেই সুরুজটা মাথার উপরে আসার আগেই বেনেভিটার আমতলায় শ-দেড়েক মানুষ জমা হয়ে যায়।

দিন-কয়েক আগে ধান মাড়াই শেষে গ্রামের মানুষের হাতে এখন বিশেষ কোনো কাম নাই। ধনী-গরিব সকলের ঘরে কম-বেশি ভাতও আছে। তাই তারা বেনেভিটায় খেলার এই আজগুবি আয়োজন ঘিরে মেলা জমিয়ে বসেছে।

উত্তরের কোনার দিকে পরীকে নিয়ে আঙ্কুর হারমোনিয়ামে সুর তুলছে। সেইদিকেই ভিড় বেশি। ফালুডাকাত চেংড়াফেংড়াদের কাছ থেকে একটু দূরে কাঁঠালতলায় বসে শোনে আঙ্কুর তার নিজের লেখা গানের তালিম দিচ্ছে পরীকে :

ভাষার জন্য রক্ত দিলো রফিক-জব্বার,
আমার মায়ের পেটের ভাইধন
রক্ত দিল সালাম-বরকত,
বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বুকের ভাষা পাককালাম।

পরী গানে টান দিয়ে মাখনের মতো নরম আর পাতলা শরীরটাতে কষ্টের ভঙ্গি তোলে :

শোনো শোনো বাঙালিরা
বঙ্গবন্ধুর ছয়দাফাতে আছে মন্ত্র বাঁচার,
ভোটের দিনে ভোট দিয়ো ভাই
নৌকা মার্কা আশার।

ফালুডাকাত আর শোনে না। তার ভালো লাগছে। সে একটা বিড়ি ধরিয়ে আস্তে আস্তে পুবদিকে সরে যায়। সেদিকের ভিড় থেকে ভেসে আসছে মঞ্চরাজ কাদুর গলা, কুখাবনগরের রাক্ষস, — “অনেক রক্ত তুই খেয়েছিস। এবার তুকে আমি হত্যা করবো নিষ্ঠুর ইয়াহিয়া শয়তান!”

ফালুডাকাত কাঁচা-পাকা দাড়িগোঁফের আড়ালে একটু হাসে, — ইয়াহিয়া এইবার তোমার নিস্তার নাই!

ফালুডাকাত ভিড়ের কাছে এসে চমকে যায়, তিরধনুক দিয়ে দুইজন যুদ্ধ করছে। একজন যোদ্ধার পরনে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির উপর কালো ওয়াইজকোট আর একজন পরেছে ছেঁড়া প্যান্টকোট। টাইয়ের অভাবে গলায় দড়ির মতো কী-একটা বেঁধেছে। তিরধনুক নিয়ে তারা মুখোমুখি উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে, লাফিয়ে লাফিয়ে যুদ্ধ করছে। যুদ্ধের ফাঁকে ডায়ালগও দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে ফালুডাকাতের মন খুশিতে ভরে ওঠে। সে স্বাধীনটাধীন বিষয়টা কম বোঝে। সে শুধু মুজিবভাইকে বোঝে। মুজিবের গলার আওয়াজ, কথা বলার ঢং সব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু একটা সিংহপুরুষ। ফালুডাকাতের মতে যার গতরে মানুষের রক্ত আছে, মন আছে, সে শেখ মুজিবরের ভক্ত না হয়ে পারে?

বোঝা গেল দেশের বর্তামান হালচাল নিয়ে বিকাশ একটা পালা রেডি করছে। ফালুডাকাত এবার খেলার দিকে যায়। আমতলে খেলার ডিঙিটা ঘিরে চলছে এক আজগুবি আয়োজন। খেলার সাথে দশ-পনেরোজন মানুষ কলস-কলস পানি আর খড়ের বোন্দা দিয়ে ঘষে ঘষে সাফ করছে তার ডিঙিটা। ফালুডাকাতকে দেখেই খেলা খড়ের ভেজা বোন্দা হাতেই তার কাছে চলে আসে, — “আইয়োন ভাইসাব, আফনের কতাই মনে করতাছিলাম।”

ফালুডাকাত পিরপির করে হাসে। খেলা বোন্দা ফেলে গামছায় ভেজা হাত মুছে ফালুডাকাতের দিকে ম্যাচ আর বিড়ির বান্ডিল এগিয়ে দেয়, — “আফনের কিন্তুক থাকতে অইব।”

ফালুডাকাত এইবার হেসে বলে, — “তোমার এই কিত্তি শুনে অনেক মানুষ আইতাছে, আরো অনেক আইব।”

খেলার চোখ চকচক করে, মানু মিয়া না আসলেও তার চেলা-চামুণ্ডারা অবশ্যই গোয়েন্দাগিরি করতে আসবে। খেলার হিম্মত দেখে গিয়ে কুখাবনগরের রাজা মানু মিয়ার কাছে চেমননগরের আয়োজন-ঐশ্বর্যের বিবরণ দিবে।

ফালু ডাকাত পিডিপিডি হাসে, — একটা কাম কল্লে অয় না?
— কি ?
— এক ডেক খিচুরি পাকাইলে কিমুন অয়?
— ক্যামনে ?
— যেমনে শবেবরাত, শবেকদরের দিন জুম্মাঘরের সামনে পাকাই।

জোশে খেলার দীঘল-তরুণ শরীরটা তুলার মতো পাতলা লাগে। বাড়ি বাড়ি চান্দা তোলা চাল-ডাল দিয়ে বড় এক ডেক খিচুড়ি রান্না করলে দেড়-দুইশ মানুষকে ভরপেট খাওয়ানো যাবে। বঙ্গবন্ধুর নামে বাংলার ছেলেরা এখন দেশের জন্য পথে-ঘাটে জীবন দেয়। মানুষটারে পাকিস্তানিরা জেলে ঢোকালেই দেশের বুড়াবুড়িরা তার মুক্তি কামনায় রোজা রাখে। আজ বঙ্গবন্ধুর নৌকা বানাচ্ছে খেলারা। আগামীকাল নৌকা মার্কার মিটিং। এইবার নৌকা পাশ করলে শেখ মুজিব রাজা হবে। গরিবের ভাতকাপড়ের কষ্ট দূর হবে। তাই এই মিটিং বাবদ কোন গিরস্ত না দিবে একবাটি চাল, একমুষ্ঠি ডাল, শিশি দিয়ে দুইআঙুল তেল? এই ভালোবাসার দান দিয়ে সে সকলকে সাথে নিয়ে মিটিং-এ যাবে।

আমুদে খেলার একটা লাফ দিবার ইচ্ছা করছে। তাবাদে সে ‘কিন্তুক…’ বলে থেমে যায়। সে ইচ্ছা করলে বাপের আড়ালে মাকে কাকুতিমিনতি করে কিংবা মায়ের মুটকি থেকে চুরি করে একমণ চাল-ডাল দিয়ে দিতে পারে। কিন্তুক সেই খিচুড়ির স্বাদ চান্দার খিচুড়ির মতো লাগবে?

খেলার মুখে ‘কিন্তু’ শুনে ফালুডাকাত থুতু মেরে মুখ থেকে পানের ছাবা ফেলে। তাবাদে বাঁ হাতের চেটু দিয়ে ঠোঁট মুছে নিয়ে বলে, — “কিন্তুর কিছু নাই, নৌকা মার্কার নৌকা রেডি করার উছিলা কৈর‌্যা মরা গেরামডাত একটা ঈদ লাগায়া দেই। কী কও?”
— ঠিক আছে।

ফালুডাকাতকে ‘ঠিক আছে’ বলে খেলা মনে মনে হাসে। তার মা খালি কয়, খেলা নাকি যা করে সব আকাম করে। এখন তার মা ফালু ডাকাতের কথাটা শুনলে বুঝত, দুনিয়াতে খালি খেলা না আরও আকামের মানুষ আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে আমুদে আত্মহারা খেলা একটা ডায়ালগ দিয়ে বসে, — “কোথায় আমার উজির-নাজির, কোথাই আমার সৈন্যসামন্ত, তোমরা সকলে নগরে নগরে ডঙ্কা পিটিয়ে বলে দাও, চেমননগরে আজ সারাদিন উৎসব চলিবে। উৎসব, উৎসব…”

কাদুর বজ্রগম্ভীর গলাটা বিকাশের আসরের দিক থেকে ভেসে আসছে, — জু হুকুম তু কাজ জাহাঁপনা, আপনার ফরমান এই মুহূর্তে আমি চেমননগরের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিব খোদাবন্দ।

ফালুডাকাত খেলাদের বাড়ির দিকে চলে যায়। যুবক বয়স থেকেই হৈ-হুল্লা,আমোদ-ফুর্তি তার পছন্দের জিনিস। কামকাজে কোনোদিন মন বসেনি। সকাল-বিকাল ভৈরবের ফেরিঘাটে এসে ইয়ারদোস্তদের সাথে আড্ডা মারত। আড্ডা,আতলামি-মাতলামি করতে হলে টাকা চাই। তার বাপের টাকা নাই। ডাশ মাছির মতো টাকার অভাবের কামড়ানি সহ্য করতে না-পেরে শেষমেশ সে ভিড়ে যায় একটা দুর্ধর্ষ ডাকাতদলের সাথে।

তলোয়ারের মতো ছিপছিপে একটা ছিপডিঙিতে ছয়জন। হাতের বৈঠাই লাঠি আর একটা মাত্র নলকাটা বন্দুক। তা-ও মাঝে মাঝে গুলি ফোটে না। তখন লঞ্চ কিংবা কার্গো থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। নিচে পাগলা রাক্ষসের মতো শাঁ শাঁ করছে ভরাবর্ষার টইটুম্বুর মেঘনা। শেষবার তারা একটা লঞ্চে ডাকাতি করতে গেছিল। একজন গোঁয়ার কিসিমের প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে একটা ঘড়ি ছিনিয়ে আনতে গেলে লোকটা তাকে লাথি মারে। ফালুডাকাত সরে গিয়ে ধাঁ করে লোকটার পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয়। চিরিঙ্গি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত দেখে যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় হুড়মুড় ছোটাছুটি। টালমাটাল লঞ্চটা একমিনিটের মাঝে ঝপ করে উলটে যায়। সে ছিল জানালার পাশে। তার সামনের বউটার গলায় অন্তত পাঁচভরি ওজনের একটা হারছড়া। লঞ্চে পানি ঢুকছে গপগপ করে। সামনের বউটার হারছড়াটা একটানে ছিঁড়ে নিয়ে সে লঞ্চের ছোট জানালা দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। তাবাদে জীবন-মরণের এক ডুবে সে তিরিশ-চল্লিশহাত দূরে গিয়ে ভাসে। মানুষ সাপের মুখের ব্যাঙের মতো দুই-একটা চিৎকার দিয়ে দিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে। তার নেংটিকাছা লুঙ্গির কোঁচড়ে সাত-আট জোড়া সোনার চুড়ি, বালা। ডানহাতে গলদা চিংড়ির মতো মোটা সেই হারছড়া। একটুও আফালতাফাল না করে কড়কড় করে ছুটে-চলা পানির মাঝে দেহটা ছেড়ে দিয়ে সে ভেসে থাকে।

লাফ দেওয়ার সময় সে দেখেছে, তার সাঙ্গপাঙ্গরা তখনো লঞ্চের ভিতরে লুটতরাজে মত্ত। নদীপাড়ের মানুষ সে। নদীতে ডাকাতি করেই তার হাত-দাঁত পেকেছে। তাই সে লাফ দেওয়ার সময়েই বুঝতে পেরেছিল তার সঙ্গীরা আর কেউই লঞ্চের ডেকের ভেতর থেকে জীবন্ত ফিরতে পারবে না। ভাগ্যগুণে পাশ দিয়ে ভেসে চলা একটা কলাগাছ ধরে ফেলে সে। দূরে পাটকলের বাতিগুলা তাকে পিটপিট করে ডাকতে থাকে। সে নিশ্চিত বুঝতে পারে এই দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যাবে। ছুরির ঘা-খাওয়া লোকটার লাশ দেখেই পুলিশ ডাকাতির মামলা করবে। কঠিন মামলা। ছাঁকনি দিয়ে পাতাল থেকে হলেও পুলিশ তাকে ধরে আনবে। তার সাথে লুট-করে-আনা প্রচুর সোনা ও নগদ অর্থ।

সেইদিন শেষরাতের ট্রেনেই সে নিরুদ্দেশ হয়। এই এলাকায় তার পূর্বপরিচিত একজন পাটকলশ্রমিক ছিল। প্রথমে সে তার বাড়িতেই ওঠে। নগদ টাকা হলে যা হয়। ফালুডাকাতের বিয়ে কিংবা বাড়ি করার জন্য জায়গাজমিন কোনোটাই পেতে দেরি হয় না। বিয়ের সুবাদে সে এখানকার জামাই। ছোট-বড় সবার সাথেই সেইমতো আদবকায়দায় তুখোড় ফালুডাকাত খুব অল্পদিনের মধ্যেই নিজেকে আমূল পাল্টে ফেলে। সে-ও এখানকার পৌখপাখালি, মশা-মাছি, সাপখোপ সহ সকল মানুষের একজন হয়ে যায়। তার রক্তবর্ণ ছোট ছোট গোল চোখ। এত বছর পর আজ তার কাঁচা-পাকা বাবরির সাথে কালো চকচকে ছোট্ট ভুঁড়িটাও সহজেই সকলের কাছে কিছুটা সমীহ পায়। গত বিশবছরের ইতিহাসে নাই ফালুডাকাত কারো সাথে বিবাদ করেছে। তাবাদে বিবাহসূত্রে সে মামু, চাচা, খালা, ফুপু এইসব সম্বোধন দিয়ে যখন কথা বলা শুরু করে, তখন সে কারো কোনো আত্মীয় না হয়েও ভাগ্নি কিংবা ভাতিজি জামাই হয়ে যায়। তার আন্তরিকতায় কারো কারো ফুপা কিংবা খালু হয়ে উঠতেও দেরি হয় না।

ফালুডাকাতের গলার ডাক শুনে খেলার মা চালঝাড়া রেখে মাথায় শাড়ির আঁচলটা তুলে দেয়। মঙ্গল গ্রহের মতো দূরসম্পর্কের এই ভাগ্নিজামাইয়ের দিকে নিশব্দে একটা পিঁড়ি এগিয়ে দেয়। ফালুডাকাত বলে, — “না মামিজি বইতাম আইছি না। খেলা ত বিরাট জিনিস করতাছে। সাতগেরাম থাইক্যা মানুষজন আইতাছে আর দ্যাইখ্যা দ্যাইখ্যা যাইতাছে।”

খেলার মায়ের ফুকলা মুখে শিশুর হাসি, — পাগলডা কহন কী করে ঠিক বুঝি না বাবা।

আগরতলা মামলার অজুহাতে শেখ মুজিবকে পাকিস্তানিরা জেলে বন্দি করলে বুড়ি শুক্কুরে শুক্কুরে আটদিন বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য রোজা রেখেছিল। সেই মুজিবরের জন্য তার পেটের ধন খেলা এখন নৌকা বানাচ্ছে। তার বিচারে ঘাটুছেরা রাখারচে এই কাম অনেক ভালো। না যায়, খরচ কিছু গেলে যাক। তবু তো ছেলে ভালো জিনিস নিয়ে মেতেছে। তাই নৌকায় চাকা লাগানোর সংবাদে বুড়ি সকাল থেকেই মনে মনে খুশি ছিল। এখন ফালুডাকাতের কথায় তার বুকটা সুখে উথলে ওঠে। তাড়াতাড়ি বুড়ি উঠে গিয়ে এইমাত্র জ্বাল দেওয়া গরম গরম একগ্লাস দুধ আর বাটায় করে পানসুপারি  নিয়ে আসে, — অহন কী করতাম বাছাব (বাজান)?

ফালুডাকাত ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে আগে দুধের ওপরের হালকা সরটা খেয়ে নেয়। তারপর ছোট ছোট তিন-চারটা চুমুকে সবটুকুন দুধ শুষে নিয়ে শূন্য গ্লাসটা নামিয়ে রাখে, — মামিজির কিচ্ছু করার দরকার নাই। আগে আমারে একটা বস্তা আর কয়টা পাঁথি (বাঁশের টুকরি) দ্যাইন।

একটু পরেই ফালুডাকাত মাগীকুদ্দুর সাথে সাত-আটজন ছেলেফেলে সহ বস্তা আর পাঁথি নিয়ে উত্তরপাড়ার দিকে চলে যায়। ঘণ্টাদুই পরে উত্তর-দক্ষিণ-পুবপাড়া আর পালপাড়া ঘুরে সে যখন বেনেভিটার আমতলে ফিরে আসে তখন দেখা যায় তার পেছন চলমান বাহিনীটার মাথায় মাথায় চাল-ডালের কয়েকটা বস্তা সহ সাত-আটটা মোরগ-মুরগি। ফি বছর শবেবরাত-শবেকদরের রাতে মসজিদের শিন্নিটাও তো এই ছেলেফেলেদেরকে নিয়ে ফালুডাকাতকেই করতে হয়। গ্রামের পোলাপানরা নৌকা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মিটিং-এ যাবে — এই কথা শুনে বাড়ির কর্ত্রীরা চাল-ডাল দিয়েছে দরাজ হাতে। শেখ মুজিব যেন তার মায়ের পেটের ভাই এইরকম দরদে কেউ কেউ ঘরের ডিমওয়ালা মুরগিও দিয়ে দিয়েছে। সবাই তেলও দিয়েছে এই এতটুকুন ছোট একটা শিশির অর্ধেকটা করে।

আমাগাছের গোড়ায় পড়ে সাত-আটটা মুরগি মরণতালে কঁক কঁক করছে। চটের ওপর ঢেলে রাখা আতপ চালের ঢিবিটা থেকে ভম ভম করে সুগন্ধ বেরোচ্ছে। মার মার, কাট কাট করে চুলা বানানো শেষ হলে দা হাতে দশ-বারোজন লাকড়ির সন্ধানে গাঙপারের জঙ্গলের দিকে ছুটে যায়।

মঞ্চরাজ কাদু বিরাট গলায় গমগম করে হুকুম দেয়, — ‘হেই আল্লা আল্লা বলো…’

গোপাল মেস্তরির নির্দেশমতো চল্লিশ-পঞ্চাশজন মানুষ খেলার পঁচিশহাত লম্বা ডিঙিটা গরুর গাড়ির চাকার উপর ফিট-করা ডলনায় খাপে খাপ বসিয়ে দেয়।

ফালুডাকাত নিজেই বাবুর্চির ওস্তাদের ওস্তাদ। আশপাশের গ্রামগুলায় তার হাতের রান্নার সুখ্যাতি আছে। তাই ঘণ্টাদেড়েক পরেই খিচুড়ির সুবাসে বেনেভিটার দেড়-দুইশ মানুষের মন চলে যায় পিতলের বড় ডেকটার দিকে। কলাপাতা কেটে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। যার যার বুঝমতো নিয়ে সবাই লাইনে বসে।

‘এই লবণ দে। পানির গেলাস দিছস না রে…’ এইসব হাঁকডাকে মানুষের মাথা মানুষে খায়। তাবাদে ঢেঁকুর তুলে যাওয়ার সময় আরেকবার সবাই বড় তৃপ্তির চোখে বঙ্গবন্ধুর নৌকাটা দেখে। উত্তরপাড়ার শামসুল তার সঙ্গীকে বলে, — এক্কেবারে মনপবনের নাও হইছে।
আরেকজন বলে, — এক্কেবারে পঙ্খিরাজ নাও হইছে।
সাথের জন বলে, — নাও পঙ্খিরাজ অয় না, পবনের অয়। তহন বাতাসের বেগে ছুটতে পারে।

ঢলে-পড়া সুরুজের মিঠা মিঠা আলোতে জব্বরের মায়ের সাথে সলিমের বউও এসেছে খেলার চাকাওয়ালা নাও দেখতে। কড়ই গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে নাওয়ের বদলে অপলক নজরে খেলার দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে, — মরদের মতন মরদ একটা।

দক্ষিণপাড়ার অফিরদ্দিবুড়া চিরকাল পেশাবের রোগী। মাঝে মাঝে পেশাব আটকে গেলে বিকাশের বাড়ির দিকে দৌড়ায়। বিকাশ দুইফোঁটা হোমিও অষুধ জিব্বায় ছেড়ে দেয়। তাবাদে পেশাবের বেগ হয়। এইসব জটিলতাবশত সে দুনিয়াবি চিন্তাতে খুব-একটা নাই। তাই বিয়েও করেনি। হাড়গিলা বুড়াটা খিচুড়ির গন্ধ পেয়ে সানকি হাতে সকাল সকাল হাজির। বুড়া এখন না তখন টপ করে মরে যায়। ফালুডাকাত তাকে আজ ইচ্ছামতো খাইয়েছে। যাবার সময় নুয়ে নুয়ে এসে লোকটা নৌকার কাছে উপস্থিত হয়। কতদিন সে পেট ভরে খায় না। পেটভরা সুখাদ্যের আবেশে এখনো তার মনটা টলছে। তাই বুক-উপচানো খুশিতে সে নাওয়ের বাতায় হাত দিয়ে বলে, — শেখ মুজিবরের নাও এইবার বাতাসের আগে যাইব।
এইকথা শুনে খেলার বুক ভরে যায়। সে এগিয়ে এসে বুড়ার হাত ধরে, — দাদা খাইছ?
— হ খাইছি। এই-যে দ্যাহ আতে (হাতে) অহনও মজার ঘেরান লাইগ্যা রইছে। অনেকদিন পরে আইজ পেট ভৈরা খাইছি রে দাদা। আল্লায় তোমারে একশ বছরের হায়াত দ্যাউক, মজিবররে বাংলার রাজা বানাউক।

বুড়ার খুশি দেখে খেলার যেমন ভালো লাগে তেমনি আক্ষেপে তার মুখটা কালো হয়ে ওঠে, — ভাতের জন্য এই দেশের মানুষের কত কষ্ট…

চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ : আগের পর্ব
শেখ লুৎফর রচনারাশি

COMMENTS

error: