বলিভিয়ার একটা স্কুলঘরে বন্দি চে গুয়েভারা। পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বন্দুক তাক করে আছে মারিও তেরান। একজন সিআইএ অ্যাজেন্ট। হাত কাঁপছিল তাও প্রথম গুলিটি চালালেন। ঠিকঠাক লাগে নাই, মিসফায়ার। গুলি লাগে চে গুয়েভারার হাতে। মাটিতে ছিটকে পড়লেন গুলিবিদ্ধ উনচল্লিশ বছর বয়সী বিপ্লবী।
আহত চে তেরানের চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন : “নিজেকে শান্ত করো। আর ভালোভাবে লক্ষ্য ঠিক করো। ছেলেখেলা নয়, তুমি একটা মানুষকে মারতে যাচ্ছো।” তবে চে গুয়েভারাকে খুঁজে আটক করার পেছনের মূল নায়ক ছিলেন আরেক সিআইএ অ্যাজেন্ট রদ্রিগেজ। আটকের পর রদ্রিগেজকেই দায়িত্ব দেয়া হয় চে-র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে। রদ্রিগেজ নিজের হাতে কাজটি না করে মারিও তেরানের কাঁধে সেই দায়িত্ব দিলেন৷ তবে স্কুলঘরে নিজের কমরেডদের মৃতদেহের পাশে মৃত্যুমুখে অসহায় চে গুয়েভারার মৃত্যুদণ্ডের খবরটা কিন্তু রদ্রিগেজই দিয়েছিলেন প্রথম।
রদ্রিগেজ চে-র কাছে জানতে চেয়েছিলেন পরিবারকে বলার জন্য তার কোনো শেষ কথা আছে কি না? চে ভেবেছিলেন, রদ্রিগেজই হয়তো তাকে হত্যা করবে সেখানে। কিন্তু সেটা না করে রদ্রিগেজ তাকে জড়িয়ে ধরলেন। উত্তরে চে বললেন, “তুমি পারলে আমার স্ত্রীকে বলো আবার বিয়ে করে নিতে।” এরপর রদ্রিগেজ গুডবাই বলে বেরিয়ে গেলেন। পরে তেরান তাকে গুলি করলেন এলোপাতাড়ি।
আজ, অক্টোবর নয়, বিপ্লবী চে-র মৃত্যুদিন…
আজকের দিনে সেই স্কুলঘরটা থেকে বিশ্বরাজনীতির গতিপথ বদলে গিয়েছিল। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থায় এই হত্যাকারীরাই রাজ করছে৷ যে-হত্যা, সন্ত্রাস আর অস্ত্রের রাজনীতির ঢেউ ফিলিস্তিন থেকে বঙ্গ জনপদে এসে ঢুকেছে৷ যার খেসারত গোটা বিশ্বকে দিতে হচ্ছে৷ মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অস্ত্রের রাজনীতির বিজয়কেতন উড়ছে। ইতিহাস লিখছে তারাই যারা সেই হন্তারকদের অনুগত দাস৷ তারাই সন্ত্রাসী বানায়, বানায় সন্ত্রাসের সর্দার কিংবা সরকার৷ বাদ বাকি সবাই অনুসরণ করে চলেছে সেই পথ…
বিপরীতে দাঁড়িয়ে কিছু মানুষ এখনো চে-র সেই বিপ্লবের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের মুক্তির মিছিলে শামিল হচ্ছে৷ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার সত্যনিষ্ঠ পথে সমাধান খুঁজছে দাসত্ব থেকে মুক্তির। সেই বিশ্বাস করি, এই মুক্তির মিছিল যত বড় হবে এই হত্যার রাজনীতি, অস্ত্রের ঝনঝনানি সংকুচিত হবে…
তুহিন কান্তি দাস রচনারাশি
সিমিলার গানপার অন্যান্য রচনার
- অক্টোবর নয় || তুহিন কান্তি দাস - October 9, 2025
- মায়ের চরণে মেমোয়ার - October 7, 2025
- সাধুসঙ্গ ও সাধনসংগীত || বিমান তালুকদার - October 3, 2025
COMMENTS