দুর্গার চোখ আঁকা হয়ে গেল কালকে। আর তাতেই ঢাকের ঢ্যাং-কুর-কুর আওয়াজ উঠে গেল ঋষিপাড়ায়। এসবের খবর না রেখে উপায় কী!
ঋষিপাড়া আমার কাছে একটা আনন্দআশ্রম। এ-পথে ঢুকলেই গলির মুখে কিশোরী বধুদের কানাকানি আর নিজস্ব হাসিঠাট্টার দৃশ্য ফটোগ্রাফের মতো মনে হয়। সাথে মুড়কি-মুড়ি, চকলেট, চিপস হাতে শিশুদের সরব ছুটোছুটি। প্রবীণেরা গরমের সময় খালি গায়ে বসে থাকে মন্দিরের উঠানে, বারান্দায়। তাদের প্রায়-বুজে-আসা চোখে শান্তির আলস্য। কোন বাড়িতে কি রান্না হচ্ছে তার সুবাস নাকে এসে সুড়সুড়ি দেবে আর ক্রেভিং তৈরি করবে। এখানেই খেলাধুলা, এখানেই আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের উল্লাস। অনেক ভোরে বুড়িমাদের নগর সংকীর্তন এক অপার্থিব যাত্রা। এই পথেই বিজয়া দশমীর রাতে চন্ডালের নৃত্যসম ডিজেসংগীত। কখনও কখনও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ফটোগ্রাফগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠে বসে, বলে, — “ওই কড়া কইরা একটা চা দে আরেকটা গোল্লিফ।”
মৃত মানুষেরা যে গোল্ডলিফ খায় সেটাও এই পথে হেঁটে হেঁটেই একদিন জেনেছি। এখানকার এক পরিচিত তেমাথায় এমন অনেক সন্ধ্যায় দেখেছি থালা ভরতি নানাবিধ খাবার বেড়ে রেখেছে কেউ। সেখানে একটা মোমবাতি টিমটিম জ্বলছে সর্বদা। আর খাবারের থালায় রাখা আছে একটি জ্বলন্ত সিগারেট। মৃতের উদ্দেশ্যে এই আয়োজন এক নৈমিত্তিক নিয়ম।
এই পথটা ছোট ছোট গল্পের সংকলন আমার কাছে। এখানেই কোমরে আঁচল বেঁধে কলতলায় কোলাহল, কখনো-বা মাতালের ফোরহান্ড্রেড ব্লোজ, কখনো মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা নিথর শরীরের যুবক। এখানেই গ্রীন দাস, হরিদাস, পি কে দাসের তুলির শেষ চিহ্ন পড়ে আছে।
এই পথেই বছর ঘুরে আবার দুর্গার আগমন। ভাদ্র মাসের ইলিশের সুঘ্রাণ ঘরে ঘরে। খই, মুড়ি, মন্ডা, মিঠাই, নতুন জামাই, বিধবা-সধবার গায়ে গায়ে উপস্থিতি। আবার মায়ের পায়ের জবা হয়ে ফুটে ওঠার অপেক্ষায় তার সন্তানেরা।
- লোককবি তাজউদ্দিন ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 25, 2025
- শাহজালাল শাহপরান গ্রামবাঙলায় গাজির গান || তুহিন কান্তি দাস - November 22, 2025
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025

COMMENTS