সর্বজনীন, সার্বজনীন, শুভ শারদীয়া || আহমদ মিনহাজ

সর্বজনীন, সার্বজনীন, শুভ শারদীয়া || আহমদ মিনহাজ

ঋতুচক্র বিবেচনায় দুর্গা মায়ের আগমনী এই বছরটায় বেশ ঠিকঠাক লাগছে দেখে। শরৎ যাই-যাই আর হেমন্ত আসি-আসির মোক্ষম ক্ষণেই তো প্রতি বছর বাপের বাড়ি নাইওর নিতে আসেন। মহালয়া শুরু হয়েছে শরতের প্রান্ত ভাগে আর মা বাটিতে পা রেখেছেন হেমন্তের গোড়ায়। শরৎ ও হেমন্ত হচ্ছে আগেপিছে বিদ্যমান ঋতুগুলোর সংযোগসূত্র। মোহনা বা মিলনস্থলও বলা যাইতে পারে। বৈকুণ্ঠ ও কৈলাসনিবাসী উমা আসছেন বাপের বাড়ি। ঠাণ্ডি পাহাড় থেকে গরমি হাওয়ার দেশে প্রবেশ করবেন মা। তাঁর যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য গ্রীষ্ম ও বর্ষাকে আল বিদা জানানো দরকার। শরৎ সে-কাজটাই করে। গরম কাটে না। ভ্যাপসা ভাবখানা শত টালবাহানা করে যেতে। যাচ্ছি-যাবো করেও বিদায় নিতে চায় না। বৃষ্টিবাদলা ছাই থামে না পুরাপুরি। ঝিরিঝিরি হুটহাট আসে যায়। আর্দ্রতা কমানোর নাম করে অস্বস্তি আরেক দফা বাড়িয়ে তোলে সে। এইসব হুজ্জোতের মধ্যে কাশফুলটা ফোটে। শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলিতে রাঙা আসমানকে পলকা লাগে তখন। বর্ষার ভারী মেঘ ঝরিয়ে সে হালকা হয়েছে। শরতে তাকে বেশ ঝকঝকে দেখায়। তার মাঝে হুটহাট মেঘ আসে যায়। আলো-মেঘের লুকোচুরির ক্ষণে মায়ের আগমনী ধ্বনি টের পেয়ে ঢাকি বাজায় ঢাক। উৎসবের রং একটু-একটু করে গাঢ় হয়ে মিশে শারদপ্রাতের মোহনায়।

বৃষ্টিবাদলায় কমতি ঘটার মওসুমে দেবী যাত্রা করেন বাপের বাড়ি। বাপের ঘরে কৈলাস থেকে নাইওর নিতে আসা মায়ের বাহন সংবৎসর একরকম থাকে না। এক বছর হাতিতে চড়ে আসেন তো অন্য বছর ঘোড়া বা অন্য বাহন বেছে নেন। নাইওরির পাট সেরে কৈলাসে ফেরার পথে আবার ভিন্ন বাহনে চড়েন। পরিস্থিতি এবার আলাদা। মাকে ওয়েলকাম জানাতে হেমন্ত সুন্দর করে সাজলেও তাঁর বাহন বদলাচ্ছে না। এসেছেন ঘোড়ায়। ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফেরত যাবেন কৈলাস। পাঁজিকারদের মতে একই বাহনে মায়ের আগমন ও বিদায় শুভ কিছু নয়। অশ্ব টগবগ ছুটতে পারে ঠিক আছে কিন্তু হাতির মতো গজগামিনী নয় সেই চলন। দুলকি চালে আয়েশ করে ছোটা তার পোষায় না। সে হলো করিৎকর্মা জানোয়ার। লড়াইয়ের ময়দানে শত্রুবধে তার পিঠে চাপার ফায়দা কাউকে বলে বোঝাতে হয় না। মা এবার অশ্বযানে করে বাপের বাটি আসলেন দেখে পাঁজিকার অনেকের মন কুডাক গাইছে। সমাজে অস্থিরতা-মারপিট ও অজানা বিপদ-বালাইয়ের শঙ্কায় তাদের মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। ভোটরঙ্গ প্রায় ঘনিয়ে আসছে। দেশের ইতিহাস মনে রাখলে এরচেয়ে অশুভ কিছু নেই, কাজেই খারাপ কিছু ঘটা বিচিত্র নয়। বড়ো ভালো হতো, অশ্বযানে চেপে বাপের বাড়ি আসা দশভুজা যদি রণরঙ্গিনী বেশটা ধরতেন আরেকবার। মানুষকে অবিরাম তাদের পায়ের তলে পিষতে থাকা মহিষাসুরগুলোকে বধ করা ছাড়া সমাজে শান্তি ফিরবে না।

সে যাকগে, শরতে ছিলাম, ভোটফোট বাদ দিয়ে শরতেই থাকি। ঋতুটার অন্য নাম আগমনী আর অগমনী মানেই পুজোর গন্ধ। ছেলেবেলায় শোনা গানের সুখস্মৃতি সে ফেরত আনে প্রতিটা বছর : ‘…আয় রে ছুটে আয়/ পুজোর গন্ধ এসেছে।/ …ঢ্যাম্ কুড়কুড়, ঢ্যাম্ কুড়াকুড়/ বাদ্যি বেজেছে।/ গাছে শিউলি ফুটেছে/ কালো ভোমরা জুটেছে।/ …আজ পাল্লা দিয়ে আকাশে/ মেঘেরা ছুটেছে।’ আহা! সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে তাঁর মেয়ে অন্তরা বড়ো ভালো গাইতেন গানটি! শুধু কি গান! ঈদসংখ্যার মতো শারদীয় সংখ্যার জন্য সকাতর অপেক্ষা কেবল? খাদ্যরসিকের কাছে শরৎ নারকেলের তৈরি মোয়া আর তালপিঠায় রসনা পুরা করার মোক্ষম ঋতু। দেশটা অবশ্য আফ্রিকা নয়। তালমদিরামাতাল হওয়ার চান্স তাই শূন্য। তাল থেকে মদিরা তৈরির চল এদেশে কস্মিনকালে ছিল কি? ঠিক জানা নেই। সে না থাকুক, তালপিঠার চল বিলক্ষণ ছিল একসময়। অদ্য যদিও তালের পিঠা তৈরিতে ভাটা পড়েছে।

তাল বাজারে এখনো ওঠে। পাকা-পাকা তাল। গামছায় লটকিয়ে রস নিংড়ানোর হুজ্জোত সামাল দিতে পারলে তালের পিঠা ও তালমিছরি বনতে কতক্ষণ! সমস্যা একটাই, গাছপাকা তাল আগের মতো সুলভ-সস্তা নয়। তালের বড়া তৈরির অবসর খতম হওয়ার পথে। আক্রার বাজারে রকমারি পিঠাপুলি তৈরির খর্চা অনেক। দিনখর্চার হিসাব মিলাতেই মানুষের এখন জান কাবার! পিঠাপুলির মচ্ছব তো বিলাসিতার নামান্তর। পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠাপুলির যে-বৈচিত্র্য ও স্বাদ ছেলেবেলায় চেখেছি সেটা তার মর্যাদা হারাচ্ছে। সংক্রান্তির দিনে ঘুড়ি উড়ানো ও রকমারি পিঠার স্বাদ সংকুচিত হয়েছে ব্যাপক। খর্চা এখানে বড়ো ফ্যাক্টর। অবসর নেই মানুষের হাতে। যৌথ পরিবারে মিলেমিশে থাকার পাট চুকিয়ে একলার সংসারে ঘানি টানার দায়টিও বড়ো কারণ সেখানে। তালপিঠার উৎস যে তাল গাছ, বেচারা নিজেই তো বিপন্ন! কোনোমতে টিকে আছে। গাছের সংখ্যা কমে আসায় বাবুই পাখিরা বিপদে পড়েছে। তাল গাছ নেই, বাসাটা ওরা বাঁধবে কোন চুলায়! পরের ধনে পোদ্দারি করে বেড়ানো চড়ুই পাখির থোঁতা মুখ ভোঁতা করতে কোন মুখে বলবে : ‘…কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়;/ পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’

বাবুই পাখি দারুণ স্থপতি। পিঁপড়ে-বিবর আর দর্জি নামে পরিচিত গায়কপাখি টুনটুনির মতোই জবরদস্ত শিল্পী। এনারা আসলে মরহুম স্থপতি ফজলুর রহমান খানের চেয়ে কোনো অংশে কম না। সে যাকগে, গরমি হাওয়ার মওসুম ইদানীং পিলে চমকানো বাজের হাঁকডাক দিয়ে শুরু হতে দেখছি। বাজ যদি মাটিতে পড়তে চায় তাকে ঠেকানোর মোক্ষম অস্ত্র তাল গাছ। তাল সাবাড় হওয়ায় বাজের এইবেলা পোয়াবারো। ফি বছর কিছু লোকের জান আরামসে কবজ করে। কাজেই বাপের বাড়ি নাইওর নিতে আসা মায়ের যদি ইচ্ছে হয়, আগমনীকে উপলক্ষ্য বানিয়ে লোকজন নারকেলপিঠার সাথে তালের বড়াটা তৃপ্তি করে খাবে আর সেটা দেখে চোখ জুড়াবেন তিনি;—মাকে ওয়েলকাম জানাতে আকুল ভক্তরা উপায়খানার গোড়ায় নিজে কুড়াল মারছে প্রতিদিন। দুর্গা মাইজির আগমনীর সাথে তালের যোগ কতটা সেটা অবশ্য আমার জানা নেই। যোগ থাকুক বা না থাকুক, নাইওর নিতে আসা মাকে আদর-আপ্যায়নের ছলে হিন্দু ঘরে পিঠাপুলির যে-মচ্ছব বাল্যকালে দেখেছি সেটা তার জৌলুস হারিয়েছে। ষষ্ঠীর দিন থেকে মহা নবমীতে ভোগ তৈরির ছুতোয় যেসব অন্নব্যঞ্জন পাক হতো সেখানে পিঠাপুলির ভাগ মনে হচ্ছে ম্রিয়মান হতে চলেছে।

এ তো গেল মহালয়া-বোধন অবধি মায়ের আগমনীবার্তা কীভাবে রঙিন করা যায় তার জল্পনায় হিন্দু ভাইবোনদের চাঙ্গা হওয়ার একটা দিক। আরো কত শত দিক যে আছে সেটা লেখায় ধরা কঠিন। শরৎ ঋতুটা কেবল কাশফুল আর গরমি হাওয়া কমতে থাকার সংকেত নিয়ে হাজির হওয়া আসমানি ছটায় সীমিত নয়। দুর্গা মায়ের বাপের বাড়ি নাইওরযাত্রার কারণে সে বিশিষ্ট। প্রতিমায় তুলির শেষ আঁচড়, মণ্ডপ-প্যান্ডেল তৈরির যাগযজ্ঞ, পূজায় কাপড় কেনাকাটার ধুম…সবটাই মহালয়া ঘনিয়ে আসার সাথে তীব্র হতে থাকা ঢাকের বাদ্যিমাঝে পূর্ণতা খোঁজে।

শরৎ যতই শেষের দিকে যাইতে থাকে মন চাতক পাখির মতো শীতের অপেক্ষায় কাতর হয়। গরমি হাওয়ায় ঘাটতি পড়ে। হাওয়া অস্তেধীরে সহনীয় হওয়ার কারণে শীত অসিতেছেন ফিলটা মনে চওড়া হয় বেশ। হেমন্তের অন্তভাগটি বোধ করি সবচেয়ে মনকাড়া! রাত যত গভীর হয় হালকা শিশির পতনের আওয়াজ কানে এসে লাগে। আওয়াজ পাইতে হলে সেরকম জায়গায় কাউকে থাকতে হবে যেখানে কংক্রিটের দালানকোঠা চারপাশের খোলা পরিসরকে পুরোটা শ্বাসরোধ করে মারেনি। গাছপালার গা হইতে এই সময় এক প্রকারের আঠালো গন্ধ বাহির হয়। গন্ধটা উৎকট নয় বরং সুবাসিত। আতরের মতো ঝাঁঝ থাকলেও বাসটা নাকে টানতে বেশ লাগে। দুর্গা মাই অবশ্য ততদিনে বাপের বাড়ি নাইওরির পালা চুকিয়ে শ্বশুরবাড়ির পথ ধরেন। যাওয়ার পথে তার নামধাম ও স্বরূপ বদলায়। দুর্গা থেকে উমা-পাবর্তী এবং আরো কত কী হইতে থাকেন কে জানে! ওসব দৈবরহস্যে আপাতত না যাই।

মা বিদায় নিতে-না-নিতে তাঁর ছেলেমেয়ে নিয়ে পার্বণে মাতে ভক্তকুল। লক্ষ্মী আসেন মায়ের পিছে-পিছে। তার পিছনে একে-একে লাইন দিয়ে আসেন কার্তিক, সরস্বতী, গণেশ। জামাইষষ্ঠী, শিবরাত্রি, দীপাবলি, দোল, রথযাত্রা…বারো মাসে তেরো পার্বণের স্রোত হিন্দু ঘরগুলোয় সংবৎসর দেখা যায়। পূজাঅর্চনা মুখ্য ব্যাপার হলেও উৎসবে মেতে ওঠার উপলক্ষ্যে খামতি ঘটে না। তেরো পার্বণের কথা এখন থাক। আপাতত হেমন্তে থাকি। ঘরের মেয়েকে ওয়েলকাম দিতে পাড়ায়-পাড়ায় পূজামণ্ডপ প্রস্তুত। রোদের তাপ প্রখর তবে হাইঞ্জা ঘনাইতে ঠাণ্ডি হাওয়া গায়ে লাগে দেখে মন বেশ ফুরফুরা হয়। রাবীন্দ্রিক একখানা আবহ তৈরি হইতে থাকে। দুর্গাকে বরণ করতে হেমন্ত মামা ওদিকে আমি প্রস্তুত বলে সাড়ম্বর হাঁক ছাড়েন।

এই বছরটায় হেমন্ত মামার ভাবসাব আর ফুটানি দেখেশুনে পেছনে ফেলে আসা নস্টালজিয়া বেশ টের পাইতেসি। বৈরী আবহাওয়া তার বেতাল আচরণে মৃদু রাশ টেনে ধরছেন। দুইহাজার বাইশের তুলনায় তেইশটা বেশ ভালো আচরণ করছে দেখা যায়! ওই যে দুই হপ্তা আগের টানা বৃষ্টি, লেট-নাইট শোয়ের মতো লেটকামার রেইন, মাথা পাগলা করা বৃষ্টির অন্তবিহীন ঝুমঝুম, সেটা জলবায়ুর পাগলা আচরণের সাক্ষ্য দিলেও আখেরে ফলাফলটা উপকারী মানতেই হচ্ছে। শরৎ বিদায় নিতে-না-নিতে শীতের আমেজ গায়ে লাগছে। উমা এবার নাইওরিটা এনজয় করতে পারবেন। বাপের বাড়িতে তার দিনগুলো ভালোয়-ভালোয় চুকেবুকে গেলেই হয়।


জামানা খারাব! পুলিশি পাহারায় দেবীকে বাপের বাড়ি যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে প্রত্যেক বছর। পৃথিবীর সকল সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে একই চিত্র। সংখ্যালঘু মাত্রই পুলিশি পাহারায় সকল কর্ম সারেন। নিজের চাওয়া-পাওয়া-অনুযোগ-অভিযোগের সবটাই রাষ্ট্রের সাথে সারতে হচ্ছে উনাদের। ধর্ম যার যার উৎসব সবার শ্লোগানটি আদতে মিথ্যা। সেকুলার বদখোয়াব। এর মধ্যে যে-বার্তা দিতে সেকুলার উতলা থাকেন তার কোনো বাস্তবমূল্য নেই। ধর্ম যার, উৎসবটাও তার। ওটা তার একান্ত আপনার। অন্যরা সেখানে শরিক থাকতে পারেন যদি সে এলাউ করে। না করলে কিছু করার নাই। সেকুলার বুলি ঝেড়ে এর কারেকশন কস্মিনকালে হওয়ার নয়। জামানার হালত দেখে নিজেকে মাঝেমধ্যে লাকি ভাবতে মন চায়। আমরা যখন বালেগ হচ্ছি তখন দুর্গা মায়ের নাইওরি নিজ চোখে দেখতে হিন্দু বাড়ির অন্দরমহলে হাজির থাকার ঘটনায় খোঁচা মেরে কথা বা রসিকতা করলেও বড়ো একটা দোষ ধরতেন না কেউ। গার্জেনদের পক্ষ থেকে উদ্দেশ্যমূলক অর্থ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপে বাড়াবাড়ি ছিল না। কমফোর্ট জোনটা তখনো বজায় ছিল। যে যার ধর্মীয় পরিচয় বক্ষে ধরে অন্যেরটা অবলোকনের ভালোমন্দ নিয়ে তাই অযথা বাহাসের ঝড় বয়ে যায়নি। মিলমিশ বা সম্প্রীতি, যে-নাম ধরে তারে ডাকি, চোখ থাকিতে অন্ধ কিছু লোকের খতরনাক কূটকাচালি উপেক্ষা করে সেখানে অটল থাকার ক্ষমতা মানুষের ছিল। তাদের অন্তরে জমাট উত্তাপ ঘটনা ও পরিস্থিতি বুঝে ওঠানামা করেছে কিন্তু তার মধ্যে কোনো খাদ ছিল না। এখন তো ঘৃণা ও উপহাস দিয়ে খোঁড়া গর্ত ছাড়া কিছু চোখে দেখি না!

ধর্ম, তার স্বভাবদোষে নিজের বৃত্তে বসে অন্যকে মাপতে চেষ্টা করে। অন্যের সাথে সম্পর্কের সীমানা এভাবে ঠিক করে নেয়। অন্যকে সে কতটা কী পারমিট করবে সেটা ধর্মভেদে আগে ভিন্ন ছিল, এখনো তাই। ঈদ-পূজা-বৌদ্ধ পূর্ণিমা-বড়োদিনের কোনোটাই সর্বজনীন বা সকলের নয়। তারে হয়তো সার্বজনীন বলা যাইতে পারে। অভিধান মতে যার অর্থ সকলের মধ্যে প্রবীণ বা শ্রেষ্ঠ। প্রতিটি ধর্ম সার্বজনীন হইতে চায়। অন্যের চেয়ে মানগুণভার-এ নিজেকে শ্রেষ্ঠ বা বয়োজ্যেষ্ঠ প্রমাণের বাতিক তার মজ্জাগত। ধর্মীয় উৎসবাদি, তার নিজস্ব কেতাকানুন কিংবা শরিয়তি মারপ্যাঁচের কারণে কদাপি সর্বজনীন ছিল না। সে কেবল সার্বজনীন হইতে চেয়েছে এবং সেটাই হয়ে উঠেছে শেষতক!

নিজের উৎসবে সর্বজনীনকে দাওয়াত করাটা সৌজন্য ও উদারতার পরিচয় বহন করে। ঘটনাটি মোটেও নেতিবাচক নয়, তবে অন্যকে সেখানে শরিক করানো কঠিন। শরিকের অর্থ হচ্ছে আমন্ত্রিতকে তার স্বধর্ম বিসর্জন দিতে বলা। আমাদের বাপমা আদ্যিকালের লোক ছিলেন। অতটা ধর্মজ্ঞ ছিলেন না যে সর্বজনীন ও সার্বজনীন-র ফারাক, এর নেপথ্যে সক্রিয় প্যাঁচগোচ মালুম হবে। ধর্মীয় আত্মপরিচয় নিয়া ফুটানি-হামবড়াই থাকলেও একালের বিচারে উনারা বড়ো একটা ধার্মিক ছিলেন না। সার্বজনীন-র বদবু দেহে নিয়া শহরে-গ্রামে ঘুরতেন এবং নিজের অজান্তে সর্বজনীন-এ ঢুকে পড়তেন। অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী সাজার চেয়ে অজ্ঞতা ভালো। মানুষের জীবনকে প্রতি পদে দুর্বিষহ করে তোলা বিজ্ঞতা ও বুঝদারির চেয়ে খানিক অজ্ঞ ও হাস্যকর থাকা ভালো। এর মধ্যে সুইট সারল্য থাকে। উনারা সেরকম কমেডিক ছিলেন আর আমরা ছিলাম এর উপকারভোগী। নিজের বিশ্বাস-আচারকে সুপিরিয়র ঠাউরে অন্যের ওপর জাহির করার বিষ দেহ থেকে নামাতে কমেডিক থাকাটা এইবেলা বেশ কাজে দিতো।

সময় আগের জায়গায় নেই। যত তর্কই থাক, দেশে গড় জীবনমানে তরক্কি ঘটেছে। বিশ্বায়নের নিয়মে ঘটেছে। গ্রাম কিংবা শহরের কোনোটাই ডাচ সমাজগবেষক ইয়েনেকা অরেন্স ও ইওস ফান ব্যুরদেন দম্পতির দেখা ঝগড়াপুর গ্রামটির জৈববাস্তবতায় দণ্ডিত নয়। বাংলাদেশে গ্রামীণ জীবনধারায় সমাজবিন্যাস ও মনস্তত্ত্ব বুঝবার তাগিদে উনারা সত্তর দশকের গোড়ায় কুষ্টিয়ার ঝগড়াপুর গ্রামে কয়েক বছর ডেরা পেতে থেকেছেন। ধর্মের মামলায় গরিব-ছোটলোকের শরিক থাকাটা তখন ব্যাপক ছিল না। ষোলআনা বিশ্বাস করত কিন্তু বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে যা করা ফরজ, সেগুলোর ব্যাপারে অজ্ঞ ও উদাসীন থেকেছে। বলা ভালো, গা করত না। খেতে পায় না তায় আবার নামাজ-রোজা-পূজা-পার্বণ! দুই বিদেশি হিসাব করে দেখলেন, জুম্মাবারের জামাতে শামিল লোকের সংখ্যা গ্রামে নগণ্য। ভূমিমালিক জোতদার ও মালকড়ি আছে এমন লোক ছাড়া বাকিরা কেউ জুম্মায় বড়ো একটা শামিল থাকে না। ঈদের জামাত খুইয়ে বসে নামাজে যাওয়ার মতো কাপড়চোপড়ের অভাবে। নিয়মমাফিক নামাজ-রোজার বালাই নেই বললে চলে। বেটাছেলেরা আবার এককাঠি সেয়ানা। কোরান শরিফ পাঠের ভার মেয়েলোকের ঘাড়ে চাপিয়ে খেত-নদী-জংলা-জলাশয় নয়তো হাটবাজারে দিন কাবার করে। নামাজ-রোজা যা করার সেটা মেয়েরাই করতে থাকে দিনমান। এই ছিল তখনকার অবস্থা!

সত্তর দশকে বিরাজিত ঝগড়াপুর থেকে আজেকরটা পৃথক। ডাচ দম্পতির তুলে আনা ছবির নিরিখে তাকে দেখা ও মিলানো সম্ভব নয়। শহরের সাথে সংযোগ এখন আগের মতো দুর্গম নেই। ধনী-গরিবে ভাগাভাগি ও আয়বৈষম্য থাকলেও দিনকাল বদলানোর কারণে দুবেলা খেয়েপড়ে বাঁচার মতো রোজগার সকলে করতে পারে। ভোগসুখের সুযোগ তাই অনেক বেড়েছে। হিন্দু বা মুসলমান বলে কথা নেই, সকলে এখন সর্বজনীন ও সার্বজনীন-র মামলা ভালোই বুঝে! নিজ উৎসবে অন্যকে দাওয়াত করার সৌজন্য ও আদর-আপ্যায়নের পরোয়া কেউ করে না। সমাজমনস্তত্ত্ব সময়টানে বিলকুল পালটে গেছে। গ্রামের লোকটাও বাড়তি দুপয়সা কীভাবে ঘরে আসবে, আরেকটু ভালো থাকা যাবে, সেই ধান্ধায় সমাজের ভিতর-বাহিরে চরে খায়। ঘরে দুপয়সা আসার সাথে তাল দিয়ে জলঅচল এক মনোজগৎ গ্রামেও জাঁকিয়ে বসেছে। শহর তাতে ইন্ধন দিচ্ছে ব্যাপক। মানুষের বিশ্বাসের জগতে এসবের ছাপ পড়েছে বৈকি। হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের জ্যামিতি আর সরলরৈখিক নেই। নীরব একটা অবরোধ সেখানে বিরাজ করে। ধর্মীয় উৎসবে শামিল থাকার সহজ সৌজন্যে বিচিত্র সব শরিয়তি মামলা ঢুকে পড়েছে। তার প্রভাব এতটাই যে, গ্রামের চাষা-জেলে-কামার-কুমারের সব্বাই শরিকান সেখানে। একে অন্যের ওপর নীরব নিষেধাজ্ঞা ঠুকে তারা পাশাপাশি বসবাস করে। আজব এই জনমনস্তত্ত্বের কারণে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার কথাটি ইদানীং সেকুলার সান্ত্বনায় লোক হাসায়। বাস্তবতা বেলাইনে চলছে হয়ে গেল কয়েক দশক। কথাটি ইয়াদ রাখা প্রয়োজন।

সর্বজনীন উৎসব নামে কোনো বস্তু যদি সত্যিই থাকে সেক্ষেত্রে পয়লা বৈশাখকে হয়তো সর্বজনীন ভাবা যাইতে পারে। মঙ্গলযাত্রার অংশটা বাদ দিলে ধর্মসমস্যা নিয়া ক্যাচালের মামলা সেখানে নাই। মঙ্গলযাত্রা নিয়া যে-প্রশ্ন মোল্লারা তোলেন সেটা যারা এই উৎসবে শরিক হইতে ভালোবাসেন তারা ইচ্ছে করলে ইগনোর যাইতে পারেন এবং যাওয়া উচিত। মুমিন মুসলমানকে পুলসিরাত পার করানোর ঠেকা আল্লাহ কোনো মোল্লার ঘাড়ে চাপান নাই। ভুল-সঠিকের বিচার স্বয়ং নিজের হাতে রেখেছেন। মঙ্গলযাত্রা যদিও মূল বৈশাখী আনন্দ আয়োজনের অংশ ছিল না, তবে এমনধারা উৎসব অটল কোনো জিনিস নয় যে সেখানে নতুন অনুষঙ্গ যোগ করা যাবে না। ধর্মীয় উৎসবের ক্ষেত্রেও মূল আনুষ্ঠানিকতার বাইরে অনেক কিছু যোগ করা যাইতে পারে।

শবেবরাতের রাত্রিটা আগে যেভাবে দেখা দিতো সেটা মন্দ ছিল না। গভীর রজনীর এবাদতবন্দেগি, রাতভর মাজার ও গোরস্তানে যাতায়াত, মৃত স্বজনকে স্মরণ, তুশা শিন্নি বিতরণ…, সবটা মিলেঝুলে রাত্রিকালীন এবাদতে স্নিগ্ধতা ছিল। মসজিদ-মাজারে রাত্রিভোর বিচরণ আর নামাজ-মোনাজাত-দরুদ শরিফ পাঠের ফাঁকে বন্ধু-স্বজন মিলে হোটেল-রেস্তোরাঁয় চা পান ও ভোজনের সাথে হালকা গফসফ উপভোগ্য ছিল বৈকি। শবেবরাতের যেটা উদ্দেশ্য, নিজের কপালে নজদিক মরণকথা স্মরণ করে খোদার দিদার চাওয়া, দয়াল যেন পাপতাপ ক্ষমা করেন তার জন্য তওবা…, সব মিলিয়ে মরণভীতির যে-চাপ বরাতরজনীতে তৈরি হইতে থাকে তার থেকে নির্ভার হতে না পারলে তো মুশকিল। বন্দেগিতে মশগুল মানুষ এভাবে নিজেকে হালকা করে নিতো খানিক। শরিয়তের বিচারে এটা গোনাহ কিন্তু জীবন-মরণের যিনি রূপকার তিনি আসলে মানুষের এবাদত যাপনের পদ্ধতিকে কীভাবে মাপছেন তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেবে কে? তো যা হোক, শরিয়তি হাজার মারপ্যাঁচে পড়ে বরাতরজনী এখন ম্যাড়ম্যাড়ে। শুষ্ক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কিছু বেঁচে নেই সেখানে। মানুষের জন্য উৎসব দরকার। ওটা নিয়ামত। একে ভালোভাবে উদযাপনে দোষ থাকবে কেন! ঈদটায় যেমন ঈদমেলাসহ এরকম অনুষঙ্গ যোগ করায় ধর্মের হানি ঘটার সম্ভাবনা শূন্য। সকলের সেখানে শরিক থাকতেও বাধা নাই। পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা, গানবাজনা বা প্রসাদ ভোজন দোষের নয় যদি হিন্দু সম্প্রদায় সেটা সাগ্রহে এলাউ করেন। করতে যদি বিমুখ থাকেন সেক্ষেত্রে অন্য ধর্মের লোকজনের ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত হবে না।

ঈশ্বরধারণা মোটের ওপর বিচিত্র ঘোরপ্যাঁচ সত্ত্বেও সকল ধর্মে অদিতে এক। তাঁকে বোঝার তরিকা ভিন্ন হওয়ার কারণে বিশ্বাস ও আনুষ্ঠানিকতা ভিন্ন পথ ধরেছে। একে অতিক্রম করে নিজ ধর্মে অটল এবং অন্য ধর্মের ওপর জবরদস্তি খাটাতে অনিচ্ছুক লোকজন চিরকালের সংখ্যালঘু। আপাতদৃষ্টে প্রভাবহীন কিন্তু তারাই হয়তো সাচ্চা ইমানদার। এই সংখ্যালঘুদের বাদ দিলে বাকিরা সব এক গোয়ালের গরু। আচার-বিশ্বাস ভিন্ন হওয়ার জের ধরে বিবাদ-কোন্দল এড়ানো তাই মুশকিল হয়। সত্যটা নির্মম বিধায় রাষ্ট্র সেখানে ঢোকার সুযোগ পায়। নিজের রাজনৈতিক এজেন্ডা জায়গা বুঝে প্রয়োগ করতে ছাড়ে না। বাংলাদেশে দুর্গা পূজা নিয়ে মাইনরিটি পলিটিক্স হয়, ভারতে রমজান মাসে সরকারি ইফতার পার্টির আয়োজনে একই কারবার দেখতে পাই।

ভোটের বছর নজদিক হলে সংখ্যালঘুকে ট্রামকার্ড বানানোর খেলা সরকার ও বিরোধী দুপক্ষই খেলেন। মাইনরিটি পলিটিক্সটা উপনিবেশ সৃষ্ট পুরাতন সমস্যা। সমাজে যদি ইনসাফ না থাকে এসব এড়ানো সম্ভব নয়। ইনসাফ যদি থাকে সেক্ষেত্রে পুলিশি পাহারায় ঈদ-পূজা আয়োজনের দরকার পড়ে না। সংখ্যালঘুর উৎসব যেন নির্বিঘ্ন হয় তার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ বাদবাকিরা যথেষ্ট হওয়া উচিত। অন্য ধর্মের উৎসব-পার্বণকে তারা বাঁকা চোখে দেখবেন না। আগল তুলবেন না আগ বাড়িয়ে। ওটা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় সেজন্য প্রয়োজনে এগিয়ে আসবেন। পূজা-ক্রিসমাস-পূর্ণিমা, মহররমের তাজিয়া মিছিল (ইংরেজ আমলে হিন্দুরাও এতে শরিক হতেন), আহমদিয়া বা কাদিয়ানিদের অনুষ্ঠানে পুলিশি পাহারা পাইকারি ঘটনায় মোড় নেওয়ার আগে বাংলাদেশের সমাজে মোটের ওপর ভারসাম্যটি বজায় থেকেছে। সম্প্রীতি নামে সকলে একে গুরুত্ব দিতেন। একালে ওটা নিখোঁজ। ভ্যাকুয়ামটি যে-কারণে আগে নজরে আসে।

ধর্ম যার, উৎসব তার হলেও বাকিরা সেখানে শরিক থাকতে পারেন যখন ইনসাফ সমাজে খোলা হাওয়ার মতো বইতে থাকবে। ধর্মীয় কোনো পক্ষের মাঝে সেটা যেহেতু অদৃশ্য অথবা থাকলেও ক্ষীয়মান, এমতাবস্থায় দেবী দুর্গার আগমন ও বিদায়ের পুরোটাই একপাক্ষিক। উপভোগ্য হেমন্তকাল দুয়ারে হাজির হলেও মাকে সাড়ম্বরে বিদায় জানানোর পরিবেশটি অনাবিল নেই। মহালয়া থেকে বিসর্জন অবধি যত আনুষ্ঠানিকতা তার মধ্যে কমন ওই অঞ্জলি, আরতি, কুমারি পূজা, ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা, ঢাকের বোল, ভোগের প্রসাদ কিংবা শোভাযাত্রা ও বিসর্জনকে ক্ষেত্রবিশেষ সীমিত করা হয়েছে। সংবাদে দেখলাম প্রাসাদ বিতরণ ও শোভাযাত্রা এ-বছর হচ্ছে না। আরতিশেষে পূজা মণ্ডপ বন্ধ থাকবে। কেন? প্রশ্নের উত্তর নিষ্প্রয়োজন। উত্তর যদি খুঁজতে হয় হয় তাহলে সেটা উপনিবেশসৃষ্ট খোঁয়ারিমধ্যে খোঁজাটাই উত্তম। খোঁয়ারিটা হিন্দু ও মুসলমান দুই পক্ষকে সংকীর্ণ খাদে নিক্ষেপ করেছে। সেখানে বসে তারা এখন ইনসাফহারা আদমসুরত হতেছেন ক্রমশ!


ফয়েজ আহমেদ ফয়েজকে মনে পড়ছে। উপমহাদেশ জুড়ে বিরচিত বিপুল সাহিত্যসঞ্চিতায় ফয়েজের সুবহ-ই আজাদি (মুক্ত ভোর) নামক কবিতা বা নজমটি পড়তে বেশ। অনতিসংক্ষেপ নজম শত হাজার পৃষ্ঠা খর্চায় লিখিত দেশভাগের পরিণাম ও অভিঘাতকে একসুতোয় গেঁথে দিয়েছিল। দেশ পারাপারের আজব খেলাটি যখন চলছে ফয়েজ সেখানে দর্শক। প্রশ্ন তুলছেন নজমের শুরুর দুই চরণে : ‘ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে সব গাজিদা শেহের/ ও ইন্তেজার থা জিসকা, ইয়ে ও শেহের তো নাহি।’

বনিআদম তার ভিটেমাটি ও চেনা পরিবেশ ছেড়ে নতুন মোকামে পাড়ি জমাচ্ছে। পরিচিত শহর ছেড়ে তারা পা রাখছে অচিন শহর। ঝড়ে দিশেহারা পাখির মতো পাড়ি জমাচ্ছে অজানায়। তাদের চোখমুখ ভোরের আলোয় দিব্য নয়। প্রসন্ন নয় একরতি। দেহের প্রতি পরতে জমেছে অমানিশার কালি। চোখে বিপন্ন বিষাদ। অনিশ্চয় ভোগান্তির শঙ্কা ও ত্রাস। আজাদিটা খুশিতে রঙিন নয়। কোনো হিন্দুত্ব বা ইসলাম, জিন্নাহ কিংবা নেহেরুর ক্ষমতা নাই যে উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে ভোরের মতো প্রসন্ন হতে বলবে। নজমের অন্তভাগে ফয়েজকে মেনে নিতে হচ্ছে : ‘নাজাত ই দিদা ও দিল কা গাড়ি নাহি হ্যায়/ চলে চলো কি ও মনজিল আবি নাহি হ্যায়।’ চোখেমুখ খুশির দ্যুতি ছড়াতে পারে যে-আলো, বুকে অনাবিল খুশির তুফান এনে দিতে পারে এমন কোনো মুক্তির পয়গাম দেখা যাচ্ছে না। মগ্ন দর্শকের ভূমিকায় স্থির কবি জানিয়ে দিচ্ছেন,—সুবহে সাদিকের আলোয় নিকানো শহরে পা রাখার আক্ষেপ ও সেখানে যাত্রা করার বাহন নজদিক নয়। দুর্ভোগ চলছে! সুখভোগ আবি বাকি হ্যায়।

সমাজে ইনসাফ কাজ করলে সম্প্রীতি জন্ম নেয়। উদারতা অনায়াস ঠেকে। না ধর্মের পুরোহিত, না রাষ্ট্রের কাণ্ডারি, না সমাজের মাতবর…, কারো মাঝে ইনসাফের তিল পরিমাণ অবশিষ্ট নেই। যেহেতু নেই, বিউটিফুল লেট অটামে দেবী মায়ের নাইওর সেরে শ্বশুরবাড়ির পথ ধরাটা পুলিশি পাহারায় ঘটতেই থাকবে ফি বছর। আমরা নামে নাগরিক, প্রকৃতপক্ষে পুলিশঘেরা জেলখানার কয়েদি। জেলের বাইরে হেমন্ত দেখা দিয়েছেন। খোলস ছেড়ে গাছগুলো ক্রমশ নাঙ্গা হচ্ছে। শীতের বার্তা দিতে তারা গন্ধ ছাড়বে কিছুদিন। জেলখানায় তার বাস ঢুকছে এটা মনে করিয়ে দিতে,—মোদের কপালে সুখ নেই, সম্প্রীতি নেই, মুক্তি নেই! আক্রা-পীড়ন আর খামোশিটা আছে বড়োজোর। এসব সহ্য করেই দুর্গাকে বাপের বাড়ি নাইওর যাওয়া-আসা করতে হবে। বিসর্জনের দিনে দূরের দর্শক হয়ে আমরা তাঁকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে ঘোড়ায় চাপতে দেখব, আর মনে-মনে অপেক্ষা করব শীত ঋতুর। হেমন্ত শেষে এবার এমন শীত দেখা দিক যেন চিরকালের জন্য আমাদের হিম করে দিতে পারে।


আহমদ মিনহাজ রচনারাশি
গানপারে দুর্গাপূজা

COMMENTS

error: