টেরাটোমার্টা, অর্থাৎ আমাদের মুখ
এন্টি-ভাইরাল চিত্রপ্রদর্শনী
মহসিন রাহুল
এলোমেলো, চরিত্রহীন-প্রায়, গরিমাহীন, এবং কাঙাল এক প্রদর্শনী এটা। আমাদের আঁকা আমাদের নিজেদের মুখ। আঠায় লাগানো বিকট গোল্লাগাল্লার মতো মাংসপিণ্ড প্রদর্শনী।
এই আঁকাগুলো যখন প্রত্যেকে জড়ো করতেছি, ২০২০ সালের এপ্রিল মাস, কভিড-১৯ ভাইরাসে বিধ্বস্ত ও তছনছ সব অঞ্চল পৃথিবীর। দুনিয়ার কোথাও কিছুরই সম্পর্ক-শক্তি-সম্ভাবনার হিসাবনিকাশ আর আগের অবস্থায় নাই। মৃত্যুর যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, জীবনের প্রতিটা অতিরিক্ত আয়োজন সেইখানে তামাশা। এখন দার্শনিকতার দিন নয়। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মৃত্যুর সম্ভাবনার বাইরে আর কোনো তত্ত্বের এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয়তা নাই।
ফলে, বিলয়ের ভয়ের ঝাপটায় এখানে নিজেদের মুখ এঁকেছে সবাই। প্রত্যেকের একখান করে চিহ্ন। সব মুখ, সব চিহ্ন জট পাকায়ে আমরা এখানে রাখতেছি। লিঙ্গ, শ্রেণী, দক্ষতা, মাধ্যম, মূর্খতা, জ্ঞান, গাত্রবর্ণ, কাব্য, অহঙ্কার, ধ্যান, দর্শন, হাসি, বলদামি, গাম্ভীর্য, কাঙালপনা … ইত্যাদি এবং অভিধানের সব কিম্ভুত ক্যাটাগরির সব ধরন একত্র করার সম্ভাবনার কথা আমরা বললাম এইভাবে। আমরা ভালোভাবে বলতে ব্যর্থ হইলাম হয়তো। ধ্বংসের আগে প্রজাতি যেন উদ্বেগে, ভয়ে ও ভালোবাসায় একত্রিত হয় একবার। অপরকে মুখোমুখি ও কেন্দ্রে রেখে যেন ইনসাফের, সহাবস্থানের অনুভূতি জাগে আরো অভিজ্ঞ আমাদের অন্তরে।
এই আঁকাগুলোকে ডাকতে চাই ‘টেরাটোমার্টা’ নামে। টেরাটোমার্টা, নতুন এই শব্দটি প্রস্তাব করছি আপনাদের সমীপে। Teratoma এবং Art শব্দ দুইটি জুড়ে দিয়ে পোর্টমান্টো এই শব্দটি তৈরি। টেরাটোমা একধরনের বিশেষ টিউমার, যা উৎপন্ন হয় শরীরের সবগুলো কোষস্তর থেকে (এন্ডোডার্ম, মেজোডার্ম, এক্টোডার্ম)। ফলে এতে চুল, নখ, মাংস, অক্ষিগোলক, মগজ সব পিণ্ডাকারে বিদঘুটে উপায়ে ও অনুপাতে থাকে/থাকতে বৈধতা প্রাপ্ত।
যে-কোনো ক্ষমতাবান পরিস্থিতির বিরুদ্ধে এটি একটি বিভ্রাট। এক বিশেষ শিল্প-তৎপরতা। সৃষ্টিশীল অস্বাভাবিকের বিভ্রাট, গুঞ্জন, ঘুম-নাই ও গোঙানি — ‘টেরাটোমার্টা’।
কৃতজ্ঞতা-স্বীকার
— শিল্পী রাজীব দত্ত, ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য, এবং ছবিগুলি সংগ্রহে হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য
—গানপারডটকম সাইটের অবদায়ক জাহেদ আহমদ, পুরা আয়োজনের আন্তরিক ও সার্বক্ষণিক ব্যবস্থাপনার জন্য
[করোনা ভাইরাস বাংলাদেশেও সংক্রমণ শুরু করলে, ছড়িয়ে পড়লে, ও মৃত্যু আরম্ভ হলে, অন্যান্য দেশের মতো এখানেও সরকার নানা মাত্রার লকডাউন ঘোষণা করেছে। তা এখনো চলমান। অচলতা, বিচ্ছিন্নতা, রুদ্ধতার নতুন এক অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমাদের। এই অবস্থায়, গত ৫ এপ্রিল ফেসবুকে নিজের মুখ হ্যাশট্যাগে আমরা নিজের মুখ আঁকার আহ্বান করি। একে অন্যে ট্যাগ করে আঁকা চলতে থাকে, এবং ছড়িয়ে যেতে থাকে। এই ট্যাগের বাইরেও আমরা পাই আঁকা। এখানে গুচ্ছকৃত করা হলো ৫ এপ্রিল থেকে অদ্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত (১৫ দিন) প্রাপ্ত আঁকাগুলি।]
ব্যানার ডিজাইন : রাজীব দত্ত
‘টেরাটোমোর্টা/Teratomarta’ লেটারিং : মহসিন রাহুল
উপাদান-বিন্যাস-পরিকল্পনা : জাহেদ আহমদ, শোভন সরকার, আলফ্রেড আমিন
সূচি
প্রদর্শিত ছবির অবদায়ক/শিল্পীদের নামের আদ্যাক্ষর-অনুক্রমে একটি ইন্ডেক্স নিচে দেয়া হলো। সম্পূর্ণ প্রদর্শনী না-ঘুরেও সূচিধৃত শুধু শিল্পীনামের ওপর ক্লিক করে সহজেই নির্দিষ্ট ছবিটি দেখা যাচ্ছে। তেমনি ক্লিক করলেই ছবি বিবর্ধিত হচ্ছে। টেরাটোমার্টায় স্বাগত সবাইকে।
অসীম দাস । অতনু সিংহ । অনিন্দ্য নাহার হাবিব । অসীম নন্দন । আহমেদ নকীব । আহমেদ ইয়াসিন । আবীর সোম । আজমাঈন তূর হক । আলফ্রেড আমিন । আলী দেলওয়ার । ইমরুল হাসান । ইউসুফ বান্না । ইসমাইল গনি হিমন । ইবনে শামস ছবি ১ । ইবনে শামস ছবি ২ । উম্মে ফারহানা । কিল্লম লালবাগী । কাজী মুনতাসির বিল্লাহ মিশু । কাজী শাফায়েত হোসেন । জিহান করিম । জাহেদ আহমদ । জাহিদ জগৎ । তৃত তুর্বস ছবি ১ । তৃত তুর্বস ছবি ২ । তৈমুর মাহমুদ । তানভীর রাসেল । নাসির আলী মামুন ছবি ১ । নাসির আলী মামুন ছবি ২ । নাসির আলী মামুন ছবি ৩ । নাঈম ফিরোজ । নাসরিন জে. রানি । নীহার লিখন । ফাহাদ হাসান কাজমী । ফারজানা রহমান । বিধান সাহা । বিজয় আহমেদ । মহসিন রাহুল ছবি ১ । মহসিন রাহুল ছবি ২ । মঈন উদ্দিন । মোশারফ হোসেন । মনজুরুল আহসান ওলী । মেহেরাব ইফতি । মেসবা আলম অর্ঘ্য । রনি আহম্মেদ । রাদ আহমদ । রাইসুল রাণা । রুহুল মাহফুজ জয় । রাতুল মুহাম্মদ । রাজীব দত্ত ছবি ১ । রাজীব দত্ত ছবি ২ । রাজীব শৈল । রাজীব বাপ্পি । রাজু আলাউদ্দিন । রিয়াদ মাহমুদ । শুভ নীল । শামসেত তাবরেজী । শেখ অসীম ইশতিয়াক ছবি ১ । শেখ অসীম ইশতিয়াক ছবি ২ । সব্যসাচী সান্যাল । সত্যজিৎ রাজন ছবি ১ । সত্যজিৎ রাজন ছবি ২ । সুমন বৈদ্য । সুমনা কবির । সারোয়ার রাফি । সোহাগ আহমদ । সৈকত ধারা । সানিয়া রুশদী । সুস্মিতা দাশ দেওয়ান
টেরাটোমার্টা : আমাদের মুখ প্রদর্শনী
Teratomarta, or our faces
An anti-viral art exhibition
Mohsin Rahul
We have drawn our own faces. This is an untidy, affectionate exhibition of the vile round pieces of our own flesh glued together. It almost has no good shape or big claims.
When we were collecting these drawings, in April 2020, COVID-19 had reached every corner of earth. The world order was no longer the same. Where death ignites, life’s excesses become a joke. Now is not the time to philosophize. No theory, beyond everyone’s personal possibility of death, is necessary.
As a result, every face drawn here bears the gush of the sheer fear of extinction. Each face — a signifier for each one of us. This exhibition is a jumbled pile of all these signs and faces. We are proposing herein the possibility of assimilation of all the hideous categories found in dictionary — gender, class, competence, medium, ignorance, wisdom, skin colour, poetry, pride, resolve, philosophy, laughter, stupidity, gravity, affection… so on and so forth. May the species unite one more time before death — in anxiety, fear and love. May this experience leave us with ‘insaaf’ and a greater meaning of coexistence by placing the ‘other’ at the centre and face-to-face of our human existence.
We want to call this whole — ‘Teratomarta’. Teratomarta is a new word we are proposing to you. It’s a portmanteau of ‘teratoma’ and ‘art’. Teratoma is a special tumour that forms from every cell layer of the body (endoderm, mesoderm, ectoderm). It is a mass containing hair, nail, flesh, eye-socket, brain or anything — all in a grotesque way and proportion. An agitation against any form of power. A unique movement of art. The perplexity of the creative abnormal, the hum, the insomnia and the moan — ‘Teratomarta’.
Translated into English by Mesbah Alam Arghya