লিখতে বসে দেখলুম আমার প্রিয়তম বই সেগুলি — যেগুলি হারিয়ে ফেলেছি।
আদি বনলতা সেন। কবিতা ভবন থেকে প্রকাশিত। এক পয়সায় একটি সিরিজে। ষোলোটি কবিতা। দাম চার আনা। হারিয়ে গেল।
যেমন হারিয়ে গেছে প্রথম পাওয়া জাগরী। কৈশোর-যৌবনের সন্ধিক্ষণে এই একটি বই আমাকে প্রাপ্তবয়স্ক করে তুলেছিল। ছিলুম হিউম্যানিস্ট।
হয়ে গেলুম এক্সিস্টেনশিয়্যালিস্ট।
যিনি উপহার দিয়েছিলেন তাঁর গায়ের রঙ ছিল ‘চাপা’। কিন্তু মুখে একটা ‘আলগা শ্রী’ ছিল। শিলিগুড়িতে তাঁর বিয়ের সম্বন্ধের উপর দিয়ে তখন উড়ছে ওই সব নিপুণ এবং অর্থবহ মেয়েলি বাংলা শব্দ।
মাথাঘষার গন্ধের মতো।
ওই ছিল আমাদের উত্তরবঙ্গীয় শীতসন্ধ্যার এক বয়সের অস্তিত্ববাদ।
***
ছিল বৃষ্টি। অখণ্ড গীতবিতানে। কেয়াতলা রোড। কলকাতায়। তা-ও হারিয়ে গেছে। মলাটছেঁড়া। অর্ধেক সূচিপত্র উড়ে-যাওয়া এই বইতে পড়ার কিছু ছিল না।
গানের বইতে আবার পড়ার কী থাকবে? সে তো গুনগুনানির বই।
***
সেট-কে-সেট বই ছিল আমাদের উকিলবাবুর বাড়িতে। বাংলা এবং ইংরেজি। দেখতে ভালো লাগত। জানলা দিয়ে দেখা সারিবদ্ধ বইয়ের বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ আমি এড়িয়ে যেতে পারতুম না। সে-পরিবারের আজ আর কোনো খবর নেই। বইগুলোরই-বা কী হলো কে জানে।
***
সত্যি কথা বলি, আমার প্রিয় বইয়ের সংখ্যা অনেক। অনেক। কিন্তু অধিকাংশের কথা লিখতে পারব না। সেসব বই কোথায় পাওয়া যেতে পারে বা কীভাবে আমার হাতে এল তা বলতেও আমি নারাজ।
শেষে বাড়িতে পুলিস হানা দিক আর কি!
- নিবন্ধটি রিপ্রিন্টেড। সংগ্রহস্থল : গদ্যসংগ্রহ ১, উৎপলকুমার বসু; নান্দীমুখ সংসদ, কলকাতা, ২০০৫
… …
- শুকিয়ে যাওয়া ফুলেরা || মাহমুদুর রহমান - July 30, 2025
- জীবনের ঋতুসমুদয় || শিলামনি - July 20, 2025
- কেইটের কামাই - July 12, 2025
COMMENTS