আজি হতে চব্বিশবর্ষ আগের এক বঙ্গাব্দ

আজি হতে চব্বিশবর্ষ আগের এক বঙ্গাব্দ

দুইযুগ হয়ে গেছে, দেখতে দেখতে, এখনও তরতাজা যদিও। বলছিলাম একটা অ্যালবামের কথা। গানের অ্যালবাম। সংক্ষেপে ব্যান্ডগানের অ্যালবাম বললে বেশিরভাগ লোকের চিনতে সুবিধা। আমরা বাংলা গানের অ্যালবাম বলতে চেয়েছি, নিশ্চয় একদিন কম্পার্টমেন্টালাইজড পরিচয় জ্ঞাপনের দরকার আর থাকবে না, কিন্তু বর্তমানে যে-ধারায় এবং যেমন কিসিমে জ্যান্ত গানবাজনা হয় তাতে এই অ্যালবামটাকে ব্যান্ডগানের অ্যালবাম বললেই ডিস্টিংক্ট ফিচারটা আন্দাজ করতে সুবিধা হবে। এইটা লারেলাপ্পা ভাবান্দোলক গানের অ্যালবাম নয়, এইটা রাজনৈতিক বীক্ষণ ও বিবেচনাঋদ্ধ সংগীতের সবচেয়ে গোছানো সংকলনের একটা। বাংলায়, বাংলাদেশে এবং অন্যান্য বঙ্গে, এর জুড়ি আগে যেমন ছিল না আজও জুড়ি বিরল। ফলে এই অ্যালবামটা আবহমান বাংলা আধুনিক গানের অ্যালবাম যতটা-না তারচেয়ে বলা সংগত হবে এইটা যেন চোরাগোপ্তা হামলা। আগে এবং পরে এমন উদ্যোগ শুধু একটাই, যেইটা এই অ্যালবামেরই উদ্গাতা ব্যান্ড থেকে বেরিয়ে বছর-আড়াইয়ের মাথায় নিয়েছিলেন। পরে কখনো, অন্যত্র, সবিস্তার বলা যাবে এইসব নিয়া। আপাতত আমরা আলোচ্য অ্যালবামের নামপরিচয় ইয়াদ করব শুধু।

‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ আলোচ্য অ্যালবামের নাম। বোধহয় বাকিটুকু বলা লাগবে না। ব্যান্ডের নাম ফিডব্যাক। নয়া বাংলাদেশের গানের ইতিহাসে এই ব্যান্ড এবং এদের এই অ্যালবামটা মাইলেজের হিসাবে বহু দূরপাল্লার স্পিড নিয়া বাংলায় আবির্ভূত হয়েছিল ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে। সেই খ্রিস্টীয় বছরটা বাংলায় ছিল শতাব্দীর শুরু এবং নবতর আরেকটা বাংলা সহস্রাব্দেরও সূচনালগ্ন। ১৪০০ বঙ্গাব্দের আরম্ভ। বলা বাহুল্য, এর ঠিক ছয় বছর বাদে শুরু হতে যাবে খ্রিস্টীয় সহস্রাব্দ। সব মিলিয়ে অ্যালবামটা ছিল যুগপৎ বঙ্গসহস্রাব্দ ও খ্রিস্টসহস্রাব্দ কোমেমোরেইটিং একটা অ্যালবাম। সংকলনের নামকরণ থেকে শুরু করে এর প্রচ্ছদচিত্রণ, নকশা ও বাহির-ভিতর অলঙ্করণ, কথিকাভাষ্য নির্মিতি ইত্যাদি সব দিক দিয়ে একইসঙ্গে গনগনে এবং গম্ভীর। অভাবিতপূর্ব। চমকে যেমন দিয়েছিল, অস্বস্তিতেও ফেলেছিল; মনে হয়েছিল, ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ আবার কেমন নাম বাবা? গানের অ্যালবামের নাম হবে আমি তোমায় ভালোবাসি কিংবা আমি তোমাকে চাই ইত্যাদি, তা না, এরা দেখি রীতিমতো বস্তায়-বেহদ্দ প্রবন্ধ নামিয়ে ফেলেছে অ্যালবামনাম দিয়া! তারপর যারা একবার অ্যালবামটা হাতে নিয়া নাড়াচাড়া করেছেন, ফিতার ক্যাসেটের সেই ইউটিউবসভ্যতাপূর্ব সময়ে এই অ্যালবাম যারা একবার শুনেছেন, গোটা জিন্দেগি জুড়ে এর জুড়ি খুঁজে চলেছেন তারা বাংলায় তারপর থেকে। এ এমন কাজ, প্রকাশ্যে এর তারিফ করা আর না-করায় কিচ্ছু যায় আসে না। আবহমানতা নাই এমন একটা কাজ। পরে এর একটামাত্র জুড়ি দেখতে পাবো আমরা, ১৯৯৯ দিকটায় বোধহয়, ‘(অ)প্রাপ্ত বয়স্কের নিষিদ্ধ’ সংকলন প্রকাশিত হলে পরে। এইটা ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের অভিষেক নিবেদন ছিল। আরডিএক্স, ডিনামাইট, ব্যালাস্টিক মিসাইল শুধু। বলা ভালো, ধূমকেতু, বিষের বাঁশি। এই ধরনের যুগন্ধর রেবেলিয়াস ইনিশিয়েটিভগুলোর কথা আলাপচক্রে এলে কাজী নজরুল ইসলাম তো পুনঃপুনঃ স্মৃত হবেনই। কিন্তু পরে যেসব ইনিশিয়েটিভ হয়েছে এই ধারায়, একেবারেই হয় নাই তা না, সেগুলি ছিল অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ঝাঁকের কৈয়ের মাঝখানে একেকটা আচমকা লাফমারা ঘাঁই। ফিডব্যাক এবং মাকসুদ-ও-ঢাকা ব্যান্ডদ্বয়ের প্রোক্ত দুই সংকলনই বাংলা ভাষায় রাজনৈতিক প্রজ্ঞাভাষ্যঋদ্ধ পরিকল্পিত দুইটা পূর্ণাঙ্গ কাজের নিশানবাহী।

বঙ্গাব্দ ১৪০০

নিবন্ধের এই বৈঠকে আমরা শুধু ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ সংকলনের ক্যাসেটখাপ থেকে এর ইনলে-কার্ড বা ব্লার্বটুকু সংরক্ষণ করব। বইয়ের যেমন ভূমিকা, বা বইপরিচিতিমূলক ব্লার্ব, ক্যাসেটের খাপের ভিতরে সেই-সময় তেমনি ইনলে-কার্ডে ক্যাসেটের নির্মাণনেপথ্য তথ্যাদি প্রকাশের চল শুরু হয়েছিল। ইন-ফ্যাক্ট, ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ থেকেই জিনিশটা চালু হয়েছিল যদ্দুর ইয়াদ হয়। এরপর তো পোস্টার থেকে শুরু করে রীতিমতো ব্যুকলেট-বই ছাপিয়ে ক্যাসেটের সঙ্গে সেঁটে দেয়াটা ট্রেন্ডি হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ অ্যালবামপ্রচ্ছদের সঙ্গে সেই ইনলে-কার্ডগুলোতে ব্যান্ডের আত্মবিজ্ঞাপক কথাবার্তা, পারিবারিক-ব্যবসায়িক স্বজন ও বউ-প্রণয়িনী কি ইয়ারবখশির নামোচ্চার, আল্লা-ঈশ্বরের নিকট দোয়াখায়ের ও কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি স্বীকার করাই ছিল মুখ্য। ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ অ্যালবামের এই লিট্রেচারে একটা ভাষ্য জুড়ে দেয়া হয়েছিল ভূমিকা হিশেবে, যেইটা পাঠকৃতি হিশেবে উল্লেখযোগ্য। অনুরূপ ফিডব্যাকের পরবর্তী প্রয়াস ‘বাউলিয়ানা’ অ্যালবামেও ভূমিকাভাষ্যটি ছিল অনবদ্য। অথবা ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যান্ডের দু-দুটো সংকলন ‘(অ)প্রাপ্ত বয়স্কের নিষিদ্ধ’ ও ‘ওগো ভালোবাসা …’ অ্যালবামেও ভূমিকাসম্বলিত প্রচ্ছদপোস্টার দুইটিই ছিল সমস্ত বিবেচনায় পাঠযোগ্য ও গুণমানোত্তীর্ণ। বর্তমান নিবন্ধে আমরা শুধু ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ সংকলনের পোস্টারফ্ল্যাপে লেখা বাক্যাবলি প্রিজার্ভ করব।

সংকলনটা হাতে নেয়ার সময় কারো মুখাবয়ব দেখি না আমরা, অ্যাট-লিস্ট সেই সময়টায় ফিতার ক্যাসেট হাতে নিয়া যা বা যেভাবে দেখেছি তার বিবরণ বলছি, প্রায় প্রত্নজীর্ণ পুরানা রাজবাড়িসদৃশ একটা দালানের ইমেইজই দেখি। বিল্ডিং ইমেইজের ঠিক উপরের দিকে বাঁ কোণা ঘেঁষে অ্যালবামের নামলিপিটুকু। হরফ বড়সড়। বঙ্গাব্দ ১৪০০। চোখ নিচের দিকে নেমে এলে দেখতে পাই, ফিডব্যাক, ব্যান্ডের নামটা। ব্বাস, আর কিছু না। খাপ খুলে ফিতা স্টেরিয়োতে দিয়ে কার্ডটা আস্ত হাতে নিয়ে মেলান করে ধরতেই বোঝা গেল চমকপ্রদ ঘটনাটা। মাঝারি সাইজের একটা আস্ত পোস্টারই বলা যায়। একপিঠে প্রচ্ছদ, ভিতরডানে ব্যান্ডমেম্বার পাঁচজনের পূর্ণাবয়ব স্থিরচিত্র, সর্বডানে অ্যালবামভূমিকার রিটেন টেক্সট একটানা চারটা প্যারাগ্র্যাফে। দেখি তো, বঙ্গাব্দ ১৪০০, ভূমিকাভাষ্যটা :

বঙ্গাব্দ ১৪০০

আজ হতে শতবর্ষ আগে কোনও-এক নববসন্তের প্রভাতে বসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতবর্ষ পরের ছবি তাঁর অলোকসুন্দর ছন্দোময় সুরে বাঁধতে চেয়েছিলেন। সেদিনের যৌবনের রাগে রাঙানো পৃথিবী ও পুষ্পরেণুগন্ধমাখা দখিনা বাতাস কবির কল্পনাকে চঞ্চল করে তুলেছিল। সে-কথাই শতবর্ষের পরের এই আমাদের অধীরচিত্তে জানাতে চেয়েছেন কবি। আমরা যেন তাঁকে ক্ষণিকের জন্যে হলেও মনে করি। ধন্য আমরা। সে-১৪০০ সালের হাওয়ায় আমাদের দেহযাত্রা চলছে। সময়ের টানে অনেককিছু হয়তো মলিন হয়ে যেতে পারে। কিন্তু কবির সে-বসন্তবর্ণনা কী করে মলিন হবে? যেমন মলিন হবার নয় আমাদের কিছু কিছু স্মৃতিচিহ্ন। কে বলবে, যে-জরাজীর্ণ দালানের সামনে আমরা ক-জন দাঁড়িয়ে তা রবীন্দ্রনাথের অজেয় আকাঙ্ক্ষার মতোই কোনও স্মৃতিখণ্ডের অংশ হয়ে নেই?

এই এক জীবনে আমরা দেখার সুযোগ পেয়েছি অনেক। ১৪০০ সাল পুরো হতে দেখেছি। আর কী আশ্চর্য! কিছুকাল পর আসছে খ্রিস্টীয় নতুন শতাব্দী। তাও দেখতে পাবো আমরা। যুগলভাগ্য বলতে হয় আমাদের।

আমরা দেখেছি যুদ্ধ, খরা, ঝড়, দুর্ভিক্ষ, মহাপ্লাবন, রক্তক্ষয়, সন্ত্রাস, এমনকি গণতান্ত্রিক আন্দোলনও। একাত্তরের মতো এক উত্তুঙ্গ ইতিহাস রচিত হতে দেখেছি। একইসঙ্গে দেখেছি মনুষ্যধর্মের চরম অবনমন।

কিন্তু আর নয়। আজ আমরা মুছে ফেলতে চাই পুরনো সব গ্লানিবোধ। তুচ্ছ করে দিতে চাই সব হিংসা ও বিরোধ। নতুন স্বপ্ন নতুন আয়োজন আর নতুন মন নিয়ে তাকাতে চাই সামনের দিকে। সে-আশা বুকে করে আমাদের এই নিবেদন — বঙ্গাব্দ ১৪০০।

পুটের দিকটায়, যেমন থাকে আর-দশটা অ্যালবামে তেমনি, ফিতার দুইদিককার গানগুলো শিরোনামক্রমান্বয়ে লেখা। বারোটা গান মোটমাট। ক-পিঠ আর খ-পিঠ। ছয়টা করে প্রতি পিঠে। একডজন বিস্ফোরক। আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিস্ফোরকগুলো।

ক-পিঠ : টেলিফোনে ফিসফিস ।। মামা ।। গীতিকবিতা-১ ।। উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি ।। ভীরু মন ।। পালকি – ২য় পর্ব

খ-পিঠ : বিদ্রোহী ।। আশা ।। গীতিকবিতা-২ ।। সুখী মানুষের ভিড়ে ।। আপন দেশে চলো ।। সামাজিক কোষ্ঠকাঠিন্য

প্রচ্ছদপৃষ্ঠার উল্টা সাইডে অ্যালবামের বারোটা গান গীতিকার ও সুরকারের নামতথ্য সহ গুছিয়ে লেখা। গানগুলোর লিরিক চারাও দুইমাথায় দুইটা কলাম বক্স করে একটায় নেপথ্য কুশলীদের তথ্য ও অন্যটায় ব্যান্ডসদস্যদের ফোটোগ্র্যাফসমেত কার কি ভূমিকা এই ব্যান্ডে এবং এই অ্যালবাম নির্মিতিতে সেইসব তথ্য লভ্য। সর্ববাঁয়ের কলাম থেকে দেখা যাক নিচের অংশটা :

বঙ্গাব্দ ১৪০০

সাউন্ডটেক সংস্থা বাজারজাতকৃত ও অডিও আর্ট স্টুডিয়োতে ধারণকৃত ফিডব্যাকের পঞ্চম প্রয়াস ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’।

শব্দধারণ ও সংমিশ্রণে আজম বাবু ও পান্না আজম, সহায়তায় শামীম।

আবৃত্তি ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।

আলোকচিত্র চঞ্চল মাহমুদ।

প্রচ্ছদ, পোস্টার, গ্র্যাফিক ডিজাইন ও পরিকল্পনা আনীলা হক।

কম্পিউটার গ্র্যাফিক্স আতিকুর রহমান, ডিজিগ্রাফ লিমিটেড।

শিফট বের করে দেয়ার জন্যে রতনভাইয়ের কাছে আমরা সবিশেষ কৃতজ্ঞ।

সাউন্ডটেকের বাবুলভাই অসীম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, সেজন্যে আমরা কৃতার্থ।

ফিডব্যাকের মঞ্চানুষ্ঠানে শব্দ সংমিশ্রণ ও প্রক্ষেপণের সঙ্গে জড়িত মাসুদুল হাসান (শব্দপ্রকৌশলী), অনিন্দ্য কবির অভিক (সহযোগী শব্দপ্রকৌশলী) ও ফিডব্যাকের ব্যবস্থাপক কাজী মাহবুবুল আলম বাচ্চুকে আমাদের সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ। একইসঙ্গে প্রো-সাউন্ডের মোক্তার, সাঈদ, মানিক ও ফিডব্যাকের মঞ্চানুষ্ঠানে আলোকবিন্যাস-প্রকৌশলী দিশা হাসানের কাছে আমরা ঋণস্বীকার করছি।

ফিডব্যাককে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করার জন্যে এলভিস স্টুডিয়ো ও জাহাঙ্গীর কবিরকে ধন্যবাদ।

আমাদের পোশাক পরিকল্পনা ও আয়োজনের জন্যে রুমী, ডোরা, রুশো ও ‘ক্যাটস্ আই’-কে সাধুবাদ।

কোকাকোলা কোম্পানির খালিদ রাজার কাছে ফিডব্যাকের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যে আমরা অশেষ ঋণী।

উৎসর্গ ১ : দেশে ও বিদেশে ফিডব্যাকের অগণিত শ্রোতা ও ভক্ত এবং এদেশের ব্যান্ডসংগীত আন্দোলন ও বাংলাদেশকে যারা অকুণ্ঠচিত্তে আন্তর্জাতিক সম্মান ও স্বীকৃতির আসনে দেখতে চান তাদের

উৎসর্গ ২ : ফিডব্যাক পরিবারকে। নিবু হক, ডিও হক, আরজু আহমেদ, কারিশমা অয়শী আহমেদ, স্মিতা রহমান, আনুশকা অরিত্রি রহমান, দীনা নাসের, পূর্ণা নাসের ও শাহনাজ খান।

ব্যর্থতা : অনেক ভক্তের চিঠির উত্তর দেয়া হয়ে ওঠেনি বলে আমরা ক্ষমা চাইছি; তবে উত্তর দেবার চেষ্টা চলছে।

যোগাযোগের ঠিকানা : ফিডব্যাক, ১৮১ বড় মগবাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ।

সর্বডানের কলামে ব্যান্ডমেম্বারদের ছবি দিয়ে নিচে নামপরিচয় লিপিবদ্ধ :

বঙ্গাব্দ ১৪০০

ফোয়াদ নাসের বাবু; কিবোর্ড, দলনেতা
পিয়ারু খান; রিদম প্রোগ্র্যামিং ও কণ্ঠ
মাকসুদুল হক; প্রধান কণ্ঠ
সিকান্দর আহমেদ খোকা; বাস্-গিটার
লাবু রহমান; গিটার ও কণ্ঠ

কোকাকোলা পানীয় কোম্প্যানির পৃষ্ঠপোষকতায় অ্যালবামটা বার হয়েছিল বোধহয়, যে-কারণে অ্যালবামের গানগুলো লিপিবদ্ধকরণের শেষে ফ্ল্যাপের নিম্নকোণায় এম্বোল্ডেন লোগো রয়েছে বেভারেজ কোম্প্যানিটার; তাতে লেখা ‘সবসময় কোকাকোলা’। আন্দাজ খুব দূরবর্তী হবে না বোধহয় যে, এই সময় থেকেই ব্যান্ডের অ্যালবামগুলোতে দেদার স্পন্সর পাওয়া যাইতে শুরু করে। পেপসি-ইউনিলিভার ইত্যাদি বিগ কর্পোরেটের ক্যাপিট্যাল সংগীতসংকলন থেকে শুরু করে ব্যান্ডকন্সার্টগুলোতেও লগ্নি হতে দেখি এই সময়েই। সিগ্রেটবিড়িওয়ালারাও স্পন্সর হয়। অ্যামেরিক্যান আর ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্প্যানিগুলোকেও নজরে পড়ে। এক-সময় ব্যান্ডতৎপরতা আবারও থুবড়ে পড়ে। সেইটা আলাদা আলাপ। বর্তমান নিবন্ধে আমরা শুধু ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ সংকলনের ইনলে-ফ্ল্যাপটুকু ডক্যুমেন্টেড রাখতে চেয়েছি, ক্রিটিক বা ইভ্যাল্যুয়েইট করা আপাতত অভিপ্রায়ের বাইরে আমাদের।

কিংবদন্তি-হয়ে-ওঠা অ্যালবামটার প্রথম প্রকাশচেহারা কেমন ছিল, আশা করি সেই সিন্যারি কিছুটা হলেও বোঝা গিয়েছে। এখন তো ফিতার ক্যাসেট নাই, এখন সিডিযুগও অবসিত হতে চলেছে যেন। সবাই বিবিধ অনলাইন মিডিয়ায় পাইরেসিকৃপায় বিস্তর গান শোনেন, পণ্ডিতিও করেন অনেকে দেখতে পাই, অডিয়ো ক্যাসেটের যুগেও পাইরেসি ছিল তবু মনে হয় না তা এতটা টেইকেন-ফর-গ্র্যান্টেড মহামারী ছিল। ওই সময়ে একটা অ্যালবামকাভারেও কতটা নান্দনিক শিল্পসৌকর্য উপস্থিত ছিল, কতটা দায়বোধ থেকে একটা অ্যালবামকাভারের নকশা-নামচয়ন করা হতো, হয়তো অল্প পরিচয় এই নিবন্ধে রইল।

অনাগত বঙ্গাব্দগুলোতেও ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ স্মরণ করবে এই বাংলার লোকসকল, প্রজন্মান্তরে এই মিউজিক-লিরিক ইন্সপিরেশন যোগাবে জ্যান্ত সময়ের বাংলা গানরচনায়, যেমন অবিস্মরণীয় একই ব্যান্ডের ‘মেলা’ অ্যালবামটা/গানটা বাংলার বৈশাখবরণ ও অন্যান্য সমস্ত সম্মেলক উৎসবে। সেই জাদুবাস্তবের অভিজ্ঞতা আবারও নিয়া আসবে নয়া জেনারেশনের কোনো সংগীতদল, ঝাঁকুনি দিয়া জাগাবে বেহাত বাংলা গানবাজনার দুনিয়া।

ভাষ্য ও গ্রন্থনা : জা. আ.
অনিয়মিত অবদায়ক, গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you