মেঠোসুর মাঠলিপি || বিমান তালুকদার

মেঠোসুর মাঠলিপি || বিমান তালুকদার

হাওরের এক উঠানে রাতে গানের আড্ডা। পাশের ঘাটে একটু আধটু বাতাসে ঢেউয়ের শব্দ। বিদ্যুৎ নাই। অন্ধকার। তাই তাৎক্ষণিকভাবে সামান্য বিকল্প আলোর ব্যবস্থা। রাত দেড়টা পেরিয়েছে তবুও চলছে গান। গ্রামের অখ্যাত বাউলশিল্পী, যন্ত্রী, বয়স্ক ক-জন মাতৃস্থানীয়াও সময় দিচ্ছেন গভীর আনন্দ-অনুরাগে।

ছোটবেলায় নিজেদের গ্রামে, উঠানে, নৌকাবিলাস, পালা, লাঠিখেলা, কিসসার আয়োজন হতো। এখন আর হয় না।

একসাথে আনন্দ দেয়া-পাওয়ার ছোট্ট আয়োজনে যারা সঙ্গ-অনুষঙ্গ দেন, গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই।

আবার হয়তো ফিরবে মেলামেশার সোনালি সকাল, প্রদোষের আনন্দ — ঘুরি তাই পথে পথে।


২৫ জুন কলমাকান্দা পাইলট স্কুল মিলনায়তনের প্রশিক্ষণ শেষ করে বিকেলে আমরা মটরসাইকেলযোগে পৌঁছে যাই সীমান্তে। আমাদের গারো অধিবাসী ভাইবোনেরা এইখানে বাস করেন।

দেখা গেল অপূর্ব এক নদী নাম মহাদেও। তার পাশে বিশাল মাঠে ওখানকার মেয়েরা নির্বিঘ্নে ফুটবল খেলছেন। বোঝা গেল এটা মাতৃপ্রধান অঞ্চল। মেয়েরা স্বাধীন। তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন নানা বিষয়ে। ছেলেরা নিজেদের মতো আড্ডা দিচ্ছেন। হাঁটাহাঁটি করছেন। আমাদের একদলের সাথে ভাব হলো। গানবাজনা হলো। গান-কথা-কবিতা, সবুজে সুশোভিত হয়ে কাটল অনিন্দ্য সুন্দর বিকেল।

পরদিন ২৬ জুন বিকেলে প্রবীণ শিল্পীদের নিয়ে আসর।

কলমাকান্দা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিকেলে ঢপযাত্রাশিল্পী ননীগোপাল সরকার, যাত্রাশিল্পের বিবেকখ্যাত সংগীতপ্রশিক্ষক গিরীন্দ্র সরকার, কবিয়াল বাবুল চক্রবর্তীর সাক্ষাৎ ছিল এ-যাত্রায় আমাদের দুর্লভ এক প্রাপ্তি। সুযোগ হয় তাদের পরিবেশনা দেখা ও শোনার। এ আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন লেখক, সংস্কৃতিজন হেমেন্দ্র তালুকদার। মেঠোসুরের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেন হাওরবিষয়ক লেখক, গবেষক সজলকান্তি সরকার। চিত্রধারণ করেন কবি, কথাসাহিত্যিক বিমান ধর।

সাংবাদিক অনিল বিশ্বাসের আয়োজনে তার নিজ গ্রাম বটতলায় মধ্যরাতে বসেছিল বাউলগানের আসর। বাউলশিল্পী সমীর জালাল, জহুর মিয়া, খালেদা বেগম, মতি মেম্বার প্রমুখ সংগীত পরিবেশন করেন।

পরদিন সন্ধ্যায় ফিরি নিজগ্রাম কামাউড়ায়। বিরামহীন বৃষ্টিতে যেন কারও আসার সুযোগ নেই। তবুও শিশুদের আটকে থাকা হয়নি। মাছধরা, নদীতে সাঁতার, লাটিমখেলা, কীর্তন, ধামাইল। উপস্থিত ছিলেন মা মিনতী তালুকদার, বড়ভাই, শিক্ষক নরেশ তালুকদার, অগ্রজ লেখক, সাংবাদিক বিনয়ভূষণ তালুকদার সহ গ্রামের অনেকেই।

গানে-আড্ডায়, কথায়-কবিতায়, শিশুসঙ্গের আনন্দযজ্ঞে কেটেছে অনির্বচনীয় সময়।


সমাপ্ত হলো মেঠোসুর কলমাকান্দার হাসিখুশির কর্মশালা।

যাত্রাপথে আনন্দগান মেঠোসুর কলমাকান্দার তিনদিনব্যাপী কার্যক্রম আজ শেষ হয়েছে।

লেখক, সংস্কৃতিজন হেমেন্দ্র তালুকদারের সভাপতিত্বে কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে কবি বকুল মাস্টারের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে কলমাকান্দা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা আক্তার শিমু বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ ঢপযাত্রাশিল্পী ননীগোপাল সরকার, সংগীতপ্রশিক্ষক গিরীন্দ্র সরকার, কবিয়াল বাবুল চক্রবর্তী।

আরও উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিক্ষক নেপাল তালুকদার, আবুল কাশেম, উদীচীকর্মী শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক অনিল বিশ্বাস, কবি আনিসুর রহমান বাবুল, কবি ও কথাসাহিত্যিক বিমান ধর, সংস্কৃতিকর্মী সালমা আক্তার, আব্দুল জব্বার প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক পর্বে ব্রতচারী অভিপ্রদর্শন, কবিতা, গান পরিবেশিত হয়। আলোচনা সমাপনান্তে শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ ও কিছু বই তুলে দেয়া হয়।

কৃতজ্ঞতা জানাই আয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি — বিশেষ করে জনতা কালচারাল একাডেমি ও কলমাকান্দা শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছে এবং যারা কলমাকান্দার বাইরে থেকে এসেও সময় দিলেন।


‘যাত্রাপথে আনন্দগান মেঠোসুর’ গান-গল্প কর্মশালা আজ শুরু। তিনদিনব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধনীপর্ব ও কর্মশালা কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে সম্পন্ন হয়।

লেখক, সংস্কৃতিজন হেমেন্দ্র তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) আফরোজা আক্তার শিমু, সংগীতশিক্ষক গিরীন্দ্র সরকার, সংগীতশিক্ষক নেপাল তালুকদার, কবি ও গীতিকার আনিসুর রহমান বাবুল, কবি ও কথাসাহিত্যিক বিমান ধর, উদীচীকর্মী মো. শহীদুল ইসলাম, সংস্কৃতিকর্মী মো. আবুল কাশেম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন অনিল বিশ্বাস, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী।

কর্মশালা পরিচালনায় ব্রতচারীপ্রশিক্ষক বিমান তালুকদার। কলমাকান্দা ও আশেপাশের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে।


বিমান তালুকদার রচনারাশি

COMMENTS

error: