ওভার দি ইয়ার্স, গানপারের শুভানুধ্যায়ী রিডার রাইটারদের থেকে রেস্পন্স আমরা পাব্লিকলি নগণ্য পেলেও ইনবক্সে বেশ দাগ কাটার মতো মন্তব্য মতামত অবশ্য পেয়েছি। কিছু আছে যেইগুলা গায়ে লাগার মতো। ধরা যাক, কোনো লেখা ছাপা হবার পরে কেউ রুষ্ট হলেন। পজিশনে বেমিল হলো লেখকের লগে পাঠকের। এইটা স্বাভাবিকভাবে লেখক ও পাঠকের মধ্যকার সম্পর্কের স্বাস্থ্যকর শর্ত হবার কথা। এই বেমিল হওয়া। পাজলের মিসিং টুকরাগুলা খুঁজে এনে লেখক পাঠক দুয়ে মিলে মেলানো। হয় না। আমাদের এখানে লেখকেরা/পাঠকেরা খাগের কলমের চেয়ে খড়গের দ্বারস্থ হতে ব্যগ্র রহেন। ইনবক্সে এসে এমনকি সাইটওয়ালাকে চার্জ করে বসেন রীতিমতো। কেউ কেউ। সকলেই তেমন নয়। এ এক মধুর উৎপাত। বিরক্ত হলেও মাথা পেতে দিই, গিলোটিনে।
একটি জিনিশ তো বুঝতে হবে যে লেখাটা, বা গানপারে প্রকাশের জন্যে যেসব লেখা আমরা হামেশা তালাশ করে বেড়াই সেইগুলা, আর-যা-ই-হোক বা না-হোক ইন্ট্রেস্টিং হয়েছে বলেই আমরা পড়েছি/ছেপেছি। ইভেন যদি ‘স্ববিরোধপূর্ণ’-‘অযৌক্তিক’ হয়ও (উদ্ধৃতিচিহ্নিত শব্দগুলা, ধরা যাক, গানপারে প্রকাশিত কোনো-এক রচনা সম্পর্কে আপনার-আমার মতো কোনো-এক পাঠকের মূল্যায়ন থেকে উদ্ভূত) তবু রচনাটা আমাদের বিচারে ইন্ট্রেস্টিং বলে মনে হওয়ায় তা গানপারে গেছে।
এইটা ট্রু যে লেখা ভালোলাগায় মন্দলাগায় এফেক্ট ফেলে। লেখা উদ্বেল করে। লেখা বিমর্ষ করে। লেখা মানুষের লগে মানুষেরে মেলায়ে দেয়। লেখা মানুষে মানুষে বিভেদও তৈরি করে। লেখা তৃপ্ত করে, ক্ষিপ্তও করে। লেখা যদি ক্ষিপ্তও করে, সেক্ষেত্রে লেখার ভিতরে ক্ষেপণবীজ যতটা তারচে বেশি রিডারের অন্তরে কি না তা ক্ষ্যাপামির থেকে তফাতে যেয়ে বোঝাপড়ার ব্যাপার। হুজুগে প্রেইজ বা খারিজ করার ব্যাপার নয়।
এছাড়া আরেক ধরনের পাঠক থাকেন যাদের অগাধ আস্থা শুধু দলিলে। নিজেদের বিবেচনার উপরে বেশি নির্ভর না করে এরা আস্থাবান শুধু রেফারেন্সে। একবার ভেবে দেখতেন যদি, এই কিসিমের পাঠকেরা যে, ‘বে-দলিল’ লেখার বিকল্প নাই যদি আমরা ভাবনাচিন্তার নয়া অভিমুখ আবাহন করতে চাই। দলিলদস্তাবেজ নিয়া আলাপের বৈঠকটা চালু হতে পারে লেখকের হাতছাড়া হয়ে লেখা পাঠকের হাতে গেলে/এলে। আমাদের দায়িত্ব এইখানেই, জিনিশটা পাঠকের হাওলা করে দেয়াতেই গানপার ক্রিয়াশীল সবসময়।
আর গানপার তো শুধু সঞ্চালনায়-ব্যাপৃত কোনো পর্ষদ/ব্যক্তির একলার ব্যাপার নয়, আরও অনেকেরই বিচারবিবেচনা এবং সর্বোপরি বিচিত্র মতৈক্য-মতানৈক্য অন্তর্ভুক্ত করে নেয়ার ব্যাপারটা আমরা কায়মনোবাক্যে চাই। সেই জায়গা থেকে এর সমস্ত কন্টেন্ট সঞ্চালনাপর্ষদের মনঃপূত হতে হবে এইটাও মনে করি না। তারপরও যতটা পারা যায় তারও অধিক দূরে যেয়ে ব্যক্তিগতভাবে আর-সবার মতোই বিরোধ উপভোগ করি আমরা বাচনে/লেখায়, এবং স্ববিরোধও সেলিব্রেইট করি, কিন্তু কোনো রচনা খারিজ করার দরকার হলেও ‘অযৌক্তিক’ বলে সেইটা পারতপক্ষে করতে চাই না। খারিজই করতে চাই না আমরা মানুষের কোনো রচনা। খামাখা আদেখলা তারিফও করি না। মানুষের আন্দাজ আমাদের কাছে যুক্তির চেয়েও মূল্যবান। অনুমান/অনুসিদ্ধান্ত/আপ্তবাক্য ছাড়া ভাবনাবিশ্ব অনেকটা লাফ-দিতে-না-পারা বয়োবৃদ্ধের মতো অসহায়। যেমনটা বাংলাদেশের ‘স-দলিল’ বিদ্যায়তনশাসিত পণ্ডিতদের করতে দেখা যায়।
ব্যক্তির চিন্তার বিকাশের ধারাবাহিকতাটা আমরা ঠাহর করতে যেমন আগ্রহী, ঠিক সমাজেরও। অনগ্রসরতা, থাকে যদি, রিড করতে চাই তা-ও অগ্রসর হতে হতে। ব্যক্তি চিন্তা করতে করতে এমন জায়গায় যাবে যেখানে গেলে সেইটা আর ব্যক্তিকেন্দ্রী চিন্তা থাকবে না। আরেকটু প্রসারিত ভূমির একটা ভাবনা হবে সেইটা। আরেকটা কথা, প্রায়ই জিনিশটা খামাখা ঘাপলা বাঁধায়, লালন-রবি-নজরুল-জীবনের মতো ‘মহা’-আইকনদের মর্যাদাহানিকর কিছু করার ব্যাপারটা বাস্তবে সম্ভব নয় আসলে। এরপরও যদি কেউ সম্ভব করে তুলতে পারে, সেইটা বরং এইসব অজস্র মনীষীতোষণ বিজ্ঞাপনী নিবন্ধপ্রবন্ধের চেয়ে শ্রেয় ও স্বাগতকর।
গানপার থেকে আমরা চাই বিজ্ঞাপনী বিদ্যাচর্চার বাইরে বেরোতে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ওই ধরনের আরও বহু বহু ধরনধারণার রচনা আমরা চাই। আবার খুব দলিলনিষ্ঠ রচনাও আমরা অগ্রাহ্য করি না। দুইটাই দরকার। কখনো পরিপূরক, কখনো সম্পূরক। বস্তুনিষ্ঠ/দলিলনিষ্ঠ থেকে লেখাপত্রগুলো সর্বত্রই তো স্বাগত হতে দেখি। ইন্ট্রেস্টিং অল্পই লাগে সেগুলো। তবে আপনার দ্বিমত/ভিন্নমত আপনি লিখে জানাবেন, এইটা গানপার চায়, কায়মনোবাক্যে চায়, অ্যাপ্রিশিয়েইট করে। সেক্ষেত্রে যেসব সহৃদয় সংবেদী পাঠক সাইটের সোশ্যাল কানেক্টিভিটির স্পেইসগুলোয় পাব্লিকলি কিংবা ইনবক্সে যুক্ত হন, সচেষ্ট থাকা সত্ত্বেও তাদের সবার সঙ্গে অ্যাট ওয়ান্স সংযোগ সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। না-হয়ে-উঠবার পিছনে কারণগুলি, টাইমের রিসোর্সের টানাপোড়েন ইত্যাদি, মোটামুটি জ্ঞাত হেতু অধিক না জানাই।
কিন্তু, সংযোগের সুপরিসর সুযোগের এই যুগে, সম্পাদকের একটা বাউন্ডারি থাকে এডিটোরিয়্যাল এথিক্সের সেন্স থেকে। সম্পাদক যদি তার ব্যক্তি-অবস্থান থেকে এইভাবে প্রকাশিত সবকিছুর ব্যাপারে স্বীয় মতপ্রকাশের দায় কান্ধে নেয়, তাইলে গানপারে লেখা ছাপা হবে কেমন করে? শেয়ার করি আমাদের পাঠোত্তর প্রতিক্রিয়ারাশি ইম্পার্সোনাল টোনে, সেইটা আরও বড় পরিসরের সম্ভাবনা হাজির রাখে বোধহয়।
পাঠকের মনের, শরীরের ও সর্বোপরি তার পাঠের সুস্বাস্থ্য কামনা করি। গানপারে নিয়মিত চোখ রাখবার আহ্বান জানাই। লিপ্ত হতে বলি, রিডার্স ও রাইটার্স উভয়েরেই, গানপারে লেখার পর লেখায়, দেখা না-দেখার হাওয়ায়।
২৫ অগাস্ট ২০২৫
গানপারঘাট
- পুরস্কারপাওয়া ভারতীয়া বাংলা উপন্যাস - October 22, 2025
- শিশুসাহিত্যচর্চায় রায় ফ্যামিলি - October 22, 2025
- একটি ইতিহাসের অটোবায়োগ্রাফি - October 21, 2025

COMMENTS