জনতার কাব্যরুচির প্রতীক || ইলিয়াস কমল

জনতার কাব্যরুচির প্রতীক || ইলিয়াস কমল

 

হেলাল হাফিজ কে ছিলেন? শুধুই কবি কি? না। হেলাল হাফিজ ছিলেন জনতার কবি। কবি হিসেবে একটা আইডেন্টিটিকে তিনি মধ্যবিত্ত সমাজে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। এর কিছু ভালো-মন্দ দিক সমাজে আছে। একেকজন একেক রকম করে এইগুলোকে কাজে লাগায়। সত্তর-পরবর্তী কবিতায় যে-কবি গণমানুষের মনে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন তিনিই হেলাল হাফিজ।

আবার, মধ্যবিত্তের যে নাকউঁচা কালচারাল আইডেন্টিটি বা এথিক্স এইটা জনপ্রিয়তার দিকে যেতে পারে না। কিন্তু চরিত্রে চারিত্রে আরও নিচে নামতে পারে। এই ভেকের এথিক্সের বাইরে ছিলেন এই কবি। আর এই এথিক্স দিয়া বিবেচনা কইরা তারে জাজ করা হয় দুর্বল কবি হিসেবে। আপনার-আমার এই এথিক্সকে টিস্যু পেপার দিয়াও দাম দেন নাই তিনি। নিজের চিন্তা ও চেতনার জগৎ থেকেই নিজের মতো যাপন করছেন। এইটা কয়জন পারে?

মধ্যবিত্ত যে এথিক্সের বাহাদুরি দেখায়, এই এথিক্সওলারাই জীবনযাপনে কেবল অন্যের এথিক্সের ওপর দিয়ে চলে। একটা ফাঁপা বাহাদুরির জীবন। অধিকাংশ মানুষের ফেসবুকজীবন যেমন। এইসব মিথ্যার দুনিয়াকে না দুচে, নিজের দুনিয়াতেই রংবাজি করছেন তিনি। তার যেই কবিতা বা কবিতার প্রভাব নিয়ে যেই জায়গায় আলোচনা হওয়া দরকার, সেইটা নাই এই মধ্যবিত্ত এলিট দেখানো এথিক্সওয়ালাদের। ফলে শুধু একচোখা ভাব নিয়া হেলাল হাফিজকে বিবেচনা না করাই উত্তম।

আমি বলব, সত্তর-পরবর্তী হেলাল হাফিজ যেমন জনতার কাব্যরুচির প্রতীক হইয়া উঠছিলেন, পরবর্তীতে তিনি খুব বেশি না লিখলেও চিন্তার জায়গা থেকে সেই রুচি থেকে বাইর হইতে পারেন নাই। এইটাই কবি হিসেবে তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এইটা মাইন্যাও বলি, বাংলা ভাষায় হেলাল হাফিজ অন্য অনেক কবির চেয়েও বড়। তার মৃত্যুতে শ্রদ্ধা। ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪।

(হেলাল হাফিজের এই ছবি ১৯৭৩ সালের, তুলেছিলেন শামসুল ইসলাম আলমাজী)


ইলিয়াস কমল রচনারাশি
গানপারে হেলাল হাফিজ

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you