দিয়ে জুঁই, বেল, জবা
সাজানো হৃদয় সভা
— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
‘জবাকুসুমসঙ্কাশ’ (অর্থ জবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ) কথাটি বহুল প্রচলিত ও চর্চিত। কিন্তু আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য দেখিয়েছেন, আদিতে শব্দটি আসলে ছিল ‘জপাকুসুমসঙ্কাশ’। ভুলভাবে ‘জপা’ থেকে ‘জবা’ শব্দটি চালু হয়ে গেছে।
এই জপা বা জবা বলতে সাধারণত রক্তজবাকেই বোঝানো হয়। প্রাগার্যকাল থেকেই মাতৃশক্তির উপাসকদের (তান্ত্রিক, কাপালিক, দস্যু, ডাকাত প্রমুখ) কাছে রক্তজবা প্রধান ও একমাত্র পুষ্পার্ঘ্য।
দ্বিপদ নামকরণের জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস জবার নাম দেন Hibiscus rosa-sinensis. গণনাম লাতিন হিবিস্কাস অর্থ a mallow-like plant (ম্যালৌ অর্থ লোমশ কাণ্ড ও পাতা এবং গোলাপি, বেগুনি বা সাদা ফুলবিশিষ্ট বন্য গাছবিশেষ)। আর প্রজাতিক পদ লাতিন ‘রোজা-সাইনেন্সিস্’-এর রোজা অর্থ গোলাপ এবং সাইনেন্সিস্ মানে ‘চীন দেশীয়’। মালভেসি পরিবারের এই গুল্মের সঙ্গে গোলাপের আদতে কোনো সম্পর্কই নেই, তবু কী কারণে তিনি একে ‘রোজা’ বললেন, তা আমার জানা নেই। তাছাড়া জবা যে কেবল চীন দেশেই প্রথমোৎপন্ন (native), তাও নয়।
উপমহাদেশীয় অনেক পণ্ডিত মনে করেন জবা মূলত উৎকল দেশীয় অর্থাৎ ওড়িষ্যার ফুল। তাই এর সংস্কৃত নাম ওড্র। ওড্র মানে ওড়িষ্যা এবং একইসঙ্গে জবাফুল। এই ওড্র শব্দের রূপান্তরিত রূপ ‘ওড়ফুল’। মহাকবি আলাওল লিখেছেন — “ওড়ের কলিকা যিনি নয়ন রাতুল।”
ভৈষজ গুণাগুণে জবা অনন্য। এর যে কতশত প্রজাতি ও সঙ্কর জাত আছে তার হিসাব আমার অজানা। গত পরশু বাসা থেকে বের হয়ে শহরের কয়েকটি জায়গায় গিয়ে বেশ কয়েকটি জবার জাত চোখে পড়ে। আর তাতেই আমার আক্কেলগুড়ুম! কী বিচিত্র তার শোভা! কী বিচিত্র তার বর্ণবৈচিত্র্য!
কল্লোল তালুকদার রচনারাশি
- আরামকেদারা, ভূমি ও বাবার গান || কল্লোল তালুকদার - October 23, 2025
- ভেতরে বাইরে সর্বত্রই সর্বজনীন দুর্গাপূজা || কল্লোল তালুকদার - October 2, 2025
- আমার গ্রামিক মন আমার নাগরিক জীবন || কল্লোল তালুকদার - September 27, 2025

COMMENTS