কাফকা নামটা যতটা জনপ্রিয় ছিল ততটাই অজনপ্রিয় ছিল পঠনের বেলায়, আমার কথা বলছি। কলেজে থাকতে সমিদুল আলমের অনুবাদে ‘রূপান্তর’ পড়েছিলাম, ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তীকালে নৃপেন্দ্র স্যান্নালের অনুবাদে ‘দ্য ক্যাসেল’ বা ‘দুর্গ’ হাতে নিয়েছিলাম, কিন্তু ত্রিশ পাতা পর্যন্ত এগোতে পারিনি। এতটাই জটিল কিংবা দূরবর্তী দ্বীপ ছিল কাফকা আমার জীবনে। কিন্তু মনে হয় এইবার এই জটিল দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান করতে কাঙ্ক্ষিত চাবিটি পেতে চলেছি। সাহিত্যের মজা তো এটাই। খুঁজতে খুঁজতে সন্ধান পেয়ে যাওয়া। গুহার শেষ মাথায় প্রদীপের শিখা — এমন কথা তো সাহিত্যেরই সৃষ্টি, তাই না!
কাফকার গল্পসমগ্র হাতে এসেছে এবার। মাসরুর আরেফিনের অনুবাদে। বইয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ জুড়েই রয়েছে ভূমিকা, কাফকা কেন বিশ্বসাহিত্যে জরুরি, কেন তার প্রভাব এতটা বেশি এখনো, তার সংশয়াতীত জীবন, তার পরিবার, তার যৌনতা — এতটুকুই পড়েছি। পড়বার পর মনে হলো এইসব না পড়লে না জানলে পুরা কাফকাপাঠ বৃথা। মাসরুর আরেফিন লিখেছেন, কাফকার সাহিত্যরচনা মাত্র ৩৫০ পাতার। এর বেশি নয়। চিঠি, ছাপা-না-হওয়া অসমাপ্ত লেখাগুলো বাদ দিলে সংখ্যাটা মাত্র ওটাই। কিন্তু বিশ্বসাহিত্যে তার প্রভাব দেখুন কতখানি — ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত কাফকাকে নিয়ে লেখা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার বই। তার পরে ১৯৯৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত , প্রতি ৫ দিন অন্তর অন্তর সারাবিশ্বে প্রায় ১০ পাতা কাফকাকে নিয়ে লেখা বেরোচ্ছে, তথ্যটা দিচ্ছে কাফকা ইনস্টিটিউট। চিন্তা করা যায়! সাড়ে তিনশো পাতা মাত্র লেখা লিখে এই একটা লোক কী গভীরভাবে আজো বিশ্বসাহিত্য দখল করে আছেন!
ফ্রানৎস কাফকার ‘রূপান্তর’ যেটা অনুবাদ করেছেন মাসরুর আরেফিন, আমি পড়া শেষ করার পর বেদনায় ডুবে আছি। এইটা শুধু পুঁজিবাদী আর ধনতান্ত্রিক বিশ্ব নিয়ে লেখা নয়, তার চাইতেও বিশেষ কিছু। শুধু যে মানুষের অস্তিত্ব নাই হয়ে গেছে বলে তার শূন্যতা পুরণের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাওয়া — না, এটাও নয়, এর চাইতেও বিশেষ কিছু। প্রচলিত কাঠামোর বাহিরে যেয়ে মানুষ কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে — তারই বেদনার ভাষা এইটা! না, এটাও নয়। এইটা এমন বিশেষ কিছু-একটা, যার ব্যাখ্যা একসাথে দেয়া সম্ভব নয়।
- কোকমোসাহেব, ফোকগোবেষক ও কতিপয় ধুন্ধা || মামুন খান - May 13, 2024
- কোকবাজারে কে গায় কার গান || এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান - May 13, 2024
- বাউল গান : অথেনটিসিটি ও মালিকানার প্রশ্ন || সুমন রহমান - May 13, 2024
COMMENTS