ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন

ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন

 

অনেক কষ্টে ভেতরে যাবার অনুমতি পেলাম। গেটে ঢোকার মুহূর্তে গেটম্যান বললেন, “অনুমতি ছাড়া ক্যামেরা বের কইরেন না, নাইলে কিন্তু ক্যামেরা ভাইঙাও ফেলতে পারেন।”

ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ল তাঁর অগণিত ভক্তবৃন্দের দিকে। ভক্তকুল গভীর ভালোবাসায় তাঁর দিকে তাকিয়ে আছেন। সালাম দিয়ে তাঁর সামনে দাঁড়ালাম। তাঁর দিকে তাকাতে কী যে এক অনুভূতি হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। আনন্দেও যে শরীর কেঁপে ওঠে তা আগে আমার জানা ছিল না।

আমাকে তাঁর জিজ্ঞাসা, “আমীরী গান শোনা হয়?”
বললাম, হ্যাঁ।
আবার তাঁর জিজ্ঞাসা, “কেমন লাগে আমার গান?”

মুহূর্তের মধ্যে ভাষাহীন হয়ে গেলাম যেন। অগত্যা চোখ বন্ধ করলাম, আর বললাম — আমাদের বাড়ির পাশে একটা নদী ছিল। মুর্তাখাই নাম ছিল তার। আমাদের শৈশবের খেলার সাথি। এখন আর অস্তিত্ব নেই সে-নদীর। আমার খুব মনখারাপ হয় নদীটির জন্য। যখন আপনার গান শুনি তখন আমাদের হারিয়ে-যাওয়া সেই নদীটাকে দেখতে পাই। আর আপনার সুরের বাতাসে শৈশবের সে মুর্তাখাই নদীর জল এসে ছলকে পড়ে আমার সমস্ত অস্তিত্বে।…

অতঃপর কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা।

তিনি বললেন, “তুমি আমার সামনে এসে বসো।”
তারপর অনেক গল্প। এত এত মানুষের মাঝে আমাকে এতটা সময় দিলেন! এক দারুণ ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল পুরোটা সময় জুড়ে।

তিনি আমাদের সাধক, ফকির, বাউল ক্বারী আমীর উদ্দিন।

যুক্তরাজ্যে বসতি গেঁড়েছেন প্রায় চৌদ্দ বছর হয়। এতদিন পর সম্প্রতি এক ছোট্ট সফরে দেশে এসেছেন। একেবারে নিজের মতো করে জন্মভূমি ও তার ভালোবাসার মানুষদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন। খুব বলিষ্ঠভাবে মিডিয়ার মানুষজনদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। কোনো ইন্টার্ভিউ কিংবা টিভিলাইভের কথা বলতে এলে ভেতরে প্রবেশ নিষেধ! অথচ একটা টিভিলাইভের আশায় কী রকম চোট্টামিই-না করেন আজকের প্রজন্মের বেশিরভাগ শিল্পীরা!

সুনামগঞ্জের সাধক বাউল ক্বারী আমীর উদ্দিন সিলেট অঞ্চলে বাউলগানকে বটতলা থেকে মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। এ-অঞ্চলে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে তাঁর গান মঞ্চস্থ হয়। প্রায় চল্লিশ বছর সিলেটের অডিও মার্কেট ব্যবসা করত তাঁর গাওয়া আসরে-রেকর্ডকৃত গানের মাধ্যমে।

রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। ‘আমার কী সুখে যায় দিনরজনী কেউ জানে না / কুহু সুরে মনের আগুন আর জ্বালাইও না’, ‘লোকে বলে আমার ঘরে নাকি চাঁদ উঠেছে / না গো না চাঁদ নয় আমার বন্ধু এসেছে’, ‘হেলায় খেলায় মনের আনন্দে দিন ফুরাইলো সই’ প্রভৃতি গান জনপ্রিয়তা পেলেও তাঁর গানের এক বিশাল সম্ভার আজও আমাদের জানার বাইরে রয়ে গেছে। রূপকের ব্যবহারে ক্বারী আমীর উদ্দিনের গান বিশেষভাবে সমৃদ্ধ।

অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় Abdul SalekHayder Rubel ভাইদ্বয়কে, সেদিনের সেই শিল্পীসান্নিধ্যে এক অকৃতি অধম আমাকে নিয়ে যাবার জন্য।

মহান সাধক পদকর্তা বাউল ক্বারী আমীর উদ্দিনের সুস্থ ও সুদীর্ঘ জীবন কামনা করি।
২৮ অগাস্ট ২০১৮


তারেক আমিনপেশাদার প্রিন্টমেইকিং আর্টিস্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাপচিত্রে স্নাতকোত্তর, জন্ম সিলেটের ছাতক উপজেলায়, কাজের সূত্রে ঢাকায় নিবাস। উল্লেখ কর্তব্য, পেশাগত চিত্রী পরিচয়ের বাইরে লেখক একজন সংগীতশিল্পী এবং ফোক-রক ফিউশন ধারায় একটা গানদলের সদস্য। গানপার


গানপারে ক্বারী আমীর উদ্দিন
ক্বারী আমীর উদ্দিন গানসংকলন আলোচনা
ক্বারী আমীর উদ্দিন ইউটিউবচ্যানেল

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you