মন চলো ধোপাদীঘির পারে… || রাহাত শাহরিয়ার

মন চলো ধোপাদীঘির পারে… || রাহাত শাহরিয়ার

গল্প বলা ও লিখা — দুটোই স্টোরিটেলিং-এর আওতায় থাকায় নিজেকে মাঝেমাঝে স্টোরিটেলার বলে ভ্রম হয়। অভ্যস্ত নই এমন বন্ধুসভায় আমার মুখ দিয়ে তেমনকিছু বেরোয় না। অবশ্য এটাও ঠিক, যারা বলায় পারদর্শী না, তারা লিখে মনের ভাব বের করে দিতে চায়। আমার ভাবের অভাব, গল্পের অভাব নেই।

গল্প হচ্ছে ধোলাই সংক্রান্ত। বস্ত্রের। দেখতাম, বাসায় কাজের মানুষ ঠিক করার সময় কাপড় ধোয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ এক বারগেইন। বাসার কাজের চার পিলারের অন্যতম। তাই বাসায় কাজের সাহায্যকারী থাকলে কাপড় ধোয়া নিয়ে আমাদের তেমন চিন্তা করতে হয় না। একটা দীর্ঘ সময় বাল্যসখার পারিবারিক লন্ড্রিতে আড্ডা দিয়ে সময় গেছে। তাই বাসা ছাড়ার পরেও ধোয়া নিয়ে ভাবতে হয়নি।

এখন আমি প্রতি সপ্তাহান্তে কাপড় ধোয়ার কাজ করি। আসলে মেশিন আমার হয়ে করে। আমি কাপড় আর মালমশলা দিয়ে দরজা লাগিয়ে বাটন টিপে দেই। ধোয়া হয়ে গেলে বের করে ড্রায়ারে। খতম।!

ক্রমশ যান্ত্রিক হতে থাকা এই সমাজ কীভাবে একটা চক্র ভেঙে দিতে পারে সেটা ভাবছিলাম। মেশিনে সব হয়ে গেলে ধোপার প্রয়োজন নেই৷ ধোপা না থাকলে লন্ড্রিতে কেউ কিজন্যে কাপড় দেবে? তারপর আর লন্ড্রিই-বা কেন থাকবে? লন্ড্রি না থাকলে আড্ডা কোথায় হবে? চার পিলারের একটা নাই হয়ে গেলে কাজের মানুষের বারগেইন কত কমবে?

ধোপারা ব্যবহার করতেন দেখে সিলেটে একটা দীঘির নামই দেয়া হয়েছে ধোপাদীঘি। তার পাশের এলাকা ধোপাদীঘির পার। নতুন নাম কী হবে?

যন্ত্রের থাবায় সম্পর্কের একটা অনেক বড় নেটওয়ার্ক নাই হয়ে যাবে। সম্পর্কগুলোর কী হবে?

মন চলো ধোপাদীঘির পারে …


রাহাত শাহরিয়ার রচনারাশি

COMMENTS

error: