লাইকিং, শেয়ারিং, কেয়ারিং, লাভিং, ফ্রেন্ডিং অ্যান্ড আনফ্রেন্ডিং ডিউরিং ফেসবুকিং

লাইকিং, শেয়ারিং, কেয়ারিং, লাভিং, ফ্রেন্ডিং অ্যান্ড আনফ্রেন্ডিং ডিউরিং ফেসবুকিং

সময়টা হাজারতেরো, দুই, ফর শিউর। মার্চের পনেরো, সো-ফার, মনে করিয়ে দিলো বটে ফেইসবুকের মেমোরিস। কবি সাইদ উজ্জ্বল এই নিবন্ধকারের কোনো-একটা নোটের কমেন্টসেকশনে এসে লেখেন তখনকার সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশনের মিডিয়ায় লাইক-কমেন্ট নিয়া কাড়াকাড়ি-মারামারির মল্লযুদ্ধমঞ্চে একটা আশ্চর্য অশর্ত আনকন্ডিশন্যাল সত্য কথা : আগে লাইক দিলাম এখন পড়তেছি। জীবনের অন্য সকল ক্ষেত্রেও অনুরূপ সদাচরণ আমি অ্যাপ্রিশিয়েইট করি। না-পড়ে লাইক দেয়াটা আমি সবসময় সুনজরেই দেখি, মনে হয় যে, এই ব্যস্ত কুত্তাদৌড়ের কালবেলায় কেউ আমার অস্তিত্বটুকু লক্ষ তো করল অন্তত, মনে হয় একটু হলেও সমর্থন জানাইল, আশ্বস্ত করল চালায়া যাইতে, যেন বরাভয় দিলো যে আছি পাশে, বেঁচে থাকো তুমি! মনে হয় যেন বলল কেউ, ঔকে, ঠিক আছে, চালায়া যাও, নো ওয়ারি। ইত্যাদি। মনে হয়। লাইক দিলাম বলে পড়তে হবে, এমন দাবি আমি করি না, আমি মানিও না, আমি এমন বহু বইপত্র আছে যেগুলো জীবনেও পড়ি নাই কিন্তু সমর্থন জানাই যে বইটা ভালো। এ-ই তো জীবন। লক্ষ করুন, কোনো-এক তুচ্ছাতিতুচ্ছ নোটে রেস্পোন্স-করা আমার সেই কবিবন্ধুর মজার এই কনফেশনের সুবাদে আমিও অটোবায়োগ্র্যাফির একটা প্যারাংশ রচে ফেললাম কেমন করে দেখুন! এইটাই নগদ লাভ। স্মিত হাস্য। লাইক বাটন টেপাটা আমার কাছে এরচেয়ে বেশিকিছু নয়, এই একটুখানি স্মিত হাস্য। দুনিয়ায় যেসব জাতি ম্যানার-এটিকেইট জানে বলিয়া প্রচারিত, অথবা যারা ম্যানার-এটিকেইট রক্তে নিয়াই জন্মেছে বলে মনে হয় দুনিয়ায়, তাদের কারো কারো সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ তো হয়েই যায় আমাদের কাজকর্মের সুবাদে, বেশিরভাগ সময় এদের কাস্টম-কালচার আমরা চাক্ষুষ করি সিনেমায়, এবং দেখি যে এমনকি স্ট্রিটসাইড আননোন লোকের সনে চোখাচোখি হইলেও এরা হাসিমুখে একটা সৌজন্যদৃষ্টি রিপ্লাই/বিনিময় করে। এর মধ্য দিয়ে যেন বলতে চায় তারা যে, এই-যে চোখাচোখি হইল তোমার সঙ্গে, ব্রো, ব্যাপারটা ইন্টেনশন্যাল না-হইলেও, ব্যাপারটা আনএক্সপেক্টেড এক্সিডেন্ট হইলেও, অল রাইট, আই ডিন্ট মাইন্ড। পরস্পর চকিত দৃষ্টি ও হাসি বিনিময় তাদের ত্রস্ত ও পথচলতি গতি স্তিমিত করে না একরত্তিও। উল্টোদিকে ব্যক্তিগতগতভাবে এই নিবন্ধনোটক করে কী দেখুন, এককালের জিগ্রি দোস্ত দেখেও না-দেখার ভান করে সে দিব্যি পথের কিনার দিয়া পারায়া যায়! দিনযাপন করে যাই আমরা, এইভাবেই, রামগরুড়ের ছানা হয়ে জিন্দেগিভর! তবে এইটা ঠিক, আমি নিজে বিশ্বাস করি যে, ফেসবুকের সূচনাযুগে একটু-আধটু হইলেও অধুনা না-সমঝে লাইক করার হুজুগ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে মনে হয়। না-জেনে না-বুঝে সারে-আম লোগো-কে-লিয়ে লাইক ভেজনা তুরন্ত মুশকিল-ও-কা বাত, এইটা এখন আমরা সকলেই জানি। কিন্তু লাইকশিল্পের ভুবনে এখনও গোষ্ঠীতন্ত্রচর্চা বিরাজমান, বোধহয়, এইটা অত আপত্তিরও কিছু নয়। লেকিন লাইকানুশীলকদিগের মধ্যে কিসিম-কিসিম কিছু বদ খোয়াব বা অভিপ্রায় নোটিস করা যায়। যেমন, লাইকোন্মাদ তথা লাইক-পাওয়াদার ও লাইক-দেওয়াদার উভয় তরফে একটা আওয়াজ ওঠে থেকে-থেকে যে যারা নাকি নির্লাইক নিশ্চুপ রহেন তথা লাইক-টাইক বিশেষ দেন-টেন না তাদেরে সেই লাইকলোলুপ লিখুয়া ব্যক্তিটি বঁটি দিয়া কাইট্টা ফালাইবেন অচিরে উনার ভ্যালুয়েবল ফ্রেন্ডলিস্ট হইতে। এমনতর হুমকি থেকে-থেকেই তো শোনা যায় ইথারে। এবং ফেসবুকারদের মধ্যে এমন বিচিত্র বায়নাক্কার লোক আপনি বিস্তর পাইবেন যে, একটা যেমন এইরকম, ধরুন আপনি খুব মমতা বুকে নিয়া কারো মুখপ্রচ্ছদে কি গ্রন্থপোশাকপরিচ্ছদে একটা লাইক দিয়াই দিলেন, তো মরলেন, কুক্ষণে-যে সেই কম্মটা করেছিলেন তা নিয়া আপনি জীবনভর পস্তাইবেন, কারণ সেই লাইকপ্রাপক আব্দার ধরিয়া বসবেন, ওগো, তয় আমারে বিয়া করো অথবা ঘাড় মটকে বাধ্য করবেন আপনারে এইটা মানিয়া নিতে যে, হ্যাঁ, লাইক দিয়াছেন দয়াল আমারে তাই অটোম্যাটিক আপনার একপ্রকার অব্লিগেশন এসে গেছে সেই বইখানা খরিদিবারে!!! ঘেউ ঘেউ অন্যান্য বহু ছুঁতোনাতায় চলতেই থাকে লাইকা ব্যক্তিটির, লাইক না-পেলে ফেসবুকে মাথা ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবিকল রাখতে পারেন এমন সেইন্ট ফেসবুকারের দেখা নাকি ইউরেনাস অথবা মার্স গ্রহে গেলে পাওয়া যায়, এমন খবর কোনো-একটা নিউজপেপারে নিশ্চয় ছেপে রেখেছে বলে আমার আন্দাজ, তা-নইলে এমন কথা আমার মাথায় আইলোই-বা ক্যামনে! অ্যানিওয়ে। এই বিষয়টা ধরে, টেন্ডেন্সি অফ লাইকিং-ডিসলাইকিং ইন ফেসবুকিং অ্যান্ড্ ইন প্র্যাক্টিক্যাল রেগ্যুলার লাইফ, একেকটা জায়গার ও জনপরিসরের মব-সাইকোলোজি বিষয়ক একটা হাইপোথেটিক্যাল অনুসন্ধান চালানো সম্ভব, সেখান থেকে একটা প্যাটার্ন, ইন-ফ্যাক্ট অনেক প্যাটার্ন, অনেক ক্যাটিগোরি ইত্যাদি বের করে আনা যায়, এরপর এসবের ভিত্তিতে একাধিক অ্যাঙ্গেল ও ডাইমেনশন থেকে মজার কিছু কাজকর্মও করে ওঠা যায়। এবং, বলছি নিজেকেই এনার্জাইজ করবার জন্যে যে, বেশ কয়েক মাস আগে একটা হাফডান নোট ড্রাফ্ট করে ফেলে রেখেছি ডিপফ্রিজে দেখতে পাচ্ছি, নোটটার শিরোনাম খুঁজে পেলাম, শিরোনামটা এ-ই : ‘ফেসবুকে লেখালেখি, ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা ও লাইকা’ … কাজটা খতম দিয়ে উঠতে পারলে মন্দ হয় না মনে হচ্ছে। অ্যানিওয়ে। এই চির্কুট কনভার্সেশন সেইদিকে যেতে প্ররোচিত করছে বেশ অনেকদিন পরে। দেখা যাক। মঙ্গলম্!

জাহেদ আহমদ ২০১৩

COMMENTS

error: