খুবই রিডারফ্রেন্ডলি উপভোগ্য একটা বায়োগ্র্যাফি হয়ে উঠেছে ‘ম্যাডোনা : অ্যা রেবেল লাইফ’ বইটা। প্রায় নয়শ পৃষ্ঠার মোটাসোটা হার্ডব্যাক বই। পাব্লিশ করেছে লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্প্যানি। তেইশের অক্টোবর থেকে বইটা মার্কেটে অ্যাভেইল করা যাচ্ছে।
এই জীবনীটি লিখেছেন ম্যারি গ্যাব্রিয়েল, যিনি নিজে একজন অ্যাওয়ার্ড-উইনিং অথার হিশেবে লেখকসমাজে মোটামুটি পরিচিত বলা যায়। সারাটা বইয়ের পাতায় পাতায় এক ধুমকেতুর উদয় এবং তার সুস্থায়ী ইনফ্লুয়েন্স নিয়ে লেখক কথা বলে গেছেন পর্যাপ্ত সাক্ষিসাবুদ সমেত। উদিত ধুমকেতুটা আর কেউ নয়, আধুনিক টাইমের গ্রেইটেস্ট ফিমেইল পপ আইকন ম্যাডোনা।
কাজেই, জীবনীকিতাবের উপজীব্য ব্যক্তিটি যখন ম্যাডোনা, আর সেই তার ও মাইকেলের ও ওয়ার্ল্ড পপ মিউজিকের সূর্য-মধ্যগগনে সময় আশির দশক, বই উপভোগ্য না-হবার আশঙ্কা প্রায় অমূলক।
উনিশ শ আশি দশকের গোড়ায় ম্যাডোনা মিউজিকসিনে অ্যারাইভ করেন। মঞ্চে ম্যাডোনা আবির্ভূত হবার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটে যায়, বিশ্বজোড়া, সেই বিস্ফোরণ এলভিস প্রিস্লি কিংবা বিটলস ব্যান্ডের অভিঘাতে এর আগেকার বিস্ফোরণগুলির সমান মহান, প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সমাহারে এই জিনিশগুলা ম্যারি লিপিবদ্ধ করে গেছেন গোটা বইটায়।
ম্যাডোনার মধ্যে একটা আজন্ম মুক্তিখোঁজা রাজনীতি ও রুদ্ধশ্বাস প্রতিভার বিরল মেলবন্ধ ঘটেছে, মেলবন্ধনের এই ব্যাপারটা তার গোটা জাতিকে এক অভাবিত ঝড়ের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ করেছে। ডেব্যু উনিশ শ তিরাশি ঈসায়িতে। ডেব্যু অ্যালবামের বছর দুইয়েকের ভিতরেই ইউএসএ-র একটা ফ্ল্যাগশিপ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ম্যাডোনা ল্যুক-অ্যালাইক কন্টেস্ট আয়োজন করে বসে, কেবল তা-ই নয়, সেই কন্টেস্টে অ্যান্ডি ওয়ার্হোল বিচারক হয়ে আসেন, আর তার ঠিক সংলগ্ন সময়েই ফ্ল্যাগশিপ কোম্প্যানিটি ম্যাডোনাল্যান্ড নামে একটি ডিপার্টমেন্ট প্রবর্তন করে ম্যানহ্যাটানে। এই নিউজগুলা ম্যাডোনার আর্লি দিনগুলার স্মারক, পরবর্তীকালে যার ব্যাপ্তি ও বিস্তার শুধু বাড়তেই থাকবে। ম্যারি জিনিশগুলা হাজির করেছেন অত্যন্ত মনোজ্ঞ বয়ানে।
কেবল পপস্টার নন, তিনি তারকার চেয়েও অধিক কিছু। সর্বত্র ভক্তদের কাছে তিনি নবযুগের প্রবর্তক হিশেবে বিবেচিত হয়ে এসেছেন। সত্তরের দশকের ফেমিনিজম পর্যন্ত প্রভাবিত হয়েছে ম্যাডোনা-ফেনোমেনায়। এইচআইভি-অ্যাইডস সংক্রান্ত গণসেন্সিটাইজেশন চলাকালে ম্যাডোনা মানবাধিকারের পার্সপেক্টিভ থেকে মেইনস্ট্রিম জনগোষ্ঠীর সামনে এমন এক বিপরীত প্রস্তাবনা হাজির করেন তার সাংগীতিক ও আচরণিক পার্ফোর্ম্যান্সগুলার মধ্য দিয়া, যার মূল কথাটা ভালোবাসাবাসির, শরীরী মিশামিশির, এইটা ব্যক্তির একান্ত অধিকার, সে যেমনই হউক অসুখা ব্যামোভোগা, ভালো সে বাসতে পারে যাকে ইচ্ছা তাকে, প্রেম সে করতে পারে যার সনে ইচ্ছা তার সনে, দেহলগ্ন হতে সে পারে তার মনোনীতজনের সঙ্গে। এহেন প্রস্তাবনার তুমুল বিরুদ্ধ সমালোচনা সত্ত্বেও ম্যাডোনা তার মিউজিক আর পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিজম পৃথক করে দেখেননি। ঠিক তেমনি তিনি, শিল্পী হিশেবে, নিরীক্ষাধর্মী সৃজনে পেছন হটেননি। ম্যাডোনা তার পূর্ববর্তী সৃজনসরহদ্দি সবসময় ঠেলে বেরিয়ে যেতে চেয়েছেন নবতর পরীক্ষানিরীক্ষায়। এভাবেই তিনি সৃষ্টি করে গেছেন একের পরে এক প্রথাধ্বংসী মিউজিক, চলচ্চিত্র, মঞ্চ-পরিবেশনাসমূহ, যা কিনা সারাদুনিয়ায় কালচারাল পরিবর্তনের হাওয়া বইয়েছে।
ম্যাডোনালাইফে সেই মিশিগান অঞ্চলের শিকড় থেকে তারকারাজ্যের শিখরে আরোহণ ও বিরাজনের কাহিনিটি জীবনীনির্মাতা ম্যারি গ্যাব্রিয়েল বয়ন করেছেন অত্যন্ত কুশলী লিখনে। এই কুশলতার গুণে আমরা পেয়েছি মিউজিশিয়্যান ম্যাডোনা তথা আমাদের সময়ের এক অকুতোভয় শিল্পীর ড্রামাটিক জীবনের সচিত্র উপস্থাপনা।
—গানপার বইনিউজ ডেস্ক
গানপারে ম্যাডোনা
গানপার বইরিভিয়্যু
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
- মাসুম পারভেজ : কবি, কাব্যগ্রন্থহীন || সরোজ মোস্তফা - February 7, 2025
- ছত্তার পাগলার সন্ধানে আহমেদ স্বপন মাহমুদ ও সরোজ মোস্তফা - January 28, 2025
COMMENTS