মনরো উবাচ (৩)  

মনরো উবাচ (৩)  

লিউড ছাড়া বাকি শহরগুলোতে কেমন অবস্থা জানি না, কিন্তু হলিউডে হাইসোসাইটি জিনিশটার ধারণা আজব কিসিমের। এইখানে খামাখাই লোকে নিজেরে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং গুরুত্বপূর্ণ মুখাবয়ব নিয়া রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত লোকজন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ লোকের নেমন্তন্নই রক্ষা করে কেবল, অগুরুত্বপূর্ণদের ডাকে এরা সাড়া দেয় না। তারা ওইসব পার্টিগুলোই অ্যাটেন্ড করে যেগুলো মস্ত মস্ত গুরুত্বপূর্ণদের ভিড়ে দমবন্ধ থাকে। সেইসব অনুষ্ঠানগুলোতে গুটিকয় অগুরুত্বপূর্ণ মামুলি কিসিমের মানুষ অবশ্য আলাদাভাবে নেমন্তন্ন করতেই হয়, কেননা গুরুত্বপূর্ণদের কথাবার্তা-খোশগল্প শোনার মতো দুইচাইরজন লোক না-থাকলে ব্যাপারটা কেমন দেখায় না?

ম্মান জিনিশটা হচ্ছে একজন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। সম্মানই যদি না পাওয়া গেল তো দুনিয়াভরা টাকাপয়সার বিত্তবৈভব-বিলাসব্যসন দিয়া আমড়া হবে আমার?

মি সাফসিধা যে-কথাটা বলতে চাই তা হচ্ছে এইটাই যে, এই দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক পাতানো ছাড়া বাঁচার অর্থ হয় না। স্টার-মাস্টার-লেবার-স্যুয়িপার বলুন বা নিগ্রো-ব্যাঘ্র-কালা-ধলা-বাদামী-নীল বলুন বা আরব-অনারব-ইহুদি-খ্রিস্টান যা যা যত প্রকারের মানুষ দুনিয়ায় আছে, সবার সঙ্গে সবার আত্মীয়তা ছাড়া আমি দ্বিতীয় কোনো পরিস্থিতি নিয়া বাঁচার মানে দেখি না।

মি চাই শিল্পী হয়ে উঠতে, সেল্যুলয়েডের দেবীটেবি হয়ে বাঁচবার বাসনা আমার নাই।

মি যেসব পরিবারের আশ্রয়ে বেড়ে উঠেছি, যারা বাচ্চাবয়সী এই মেয়েটিকে পেলেপুষে বড় করেছেন, তারা আমারে বাড়ির বাইরে নিয়ে বেরিয়েছেন মানেই ছিল কোনো-একটা ছায়াছবিগৃহে চেয়ারে রেখে এসেছেন বসিয়ে। একলা আমি বিগস্ক্রিনের দিকে অপলক হা হয়ে তাকিয়ে থেকেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বাচ্চা খুকিটি আমি, বিশাল পর্দার সামনে বসা, শিহরিত হয়েছি রিলের লাইফের ঘনঘটায়। একটা দৃশ্যও চোখ বুজে মিস্ করি নাই। নির্ভয়ে দেখেছি রোমহর্ষ চলচ্চিত্রদৃশ্যগুলোও। পপকর্ন ছাড়াই জীবনের সেই দিনগুলো ছবি দেখে কেটেছে দুর্ধর্ষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

পুরুষদের মধ্যে এমন অনেকেই জীবনে পাওয়া যায় যারা নারী হিশেবে তুমি যেমন আছো তেমনটাই গ্রহণে অসম্মত হয় না। নারীদের মধ্যে একটা আজব প্রবণতা দেখতে পাবে যে তারা তোমায় তাদের মতো না-বানানো পর্যন্ত গ্রহণই করতে পারে না।

কজন নারী কখনোই একা থাকতে পারে না। নারীর দরকার হয় পুরুষের। জরুরি ভিত্তিতে একজন নারীর পুরুষ দরকার হয়। নারী আর পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক এবং একে অন্যের বলবর্ধক ও শক্তিসঞ্চারক। নিজেকে সমর্থন ও শক্তি যোগানোর কাজটা নারী নিজহাতে একা একা করতে পারে না। তার জীবনে পুরুষ একটা আবশ্যকতা।

ফালতু ব্যাপার নিয়া নারীর তুলনায় পুরুষেরা ভাবে কম। পুরুষেরা আজেবাজে ব্যাপার নিয়া মাথা ঘামায় না, নারীরা আজেবাজেতেই নিজেদেরে ব্যস্ত রাখে।

মি চাই না দেশসুদ্ধা সবাই আমার হাঁড়ির খবর রাখুক, চাই না জানুক সবাই আমার শোবার ঘরের হদিস কিংবা আমার আবাসস্থল, আমার ফায়ারপ্লেইস বা আমার সোফা দেখতে কেমন তা বাইরের লোকে কেন জানবে?

ন্ধুরা তোমায় তেমনভাবেই গ্রহণ করবে যেমনভাবে তুমি আছো। ভক্তের জন্য পর্দা থেকে পর্দান্তরে নিজেরে বদলাতে হয়, বন্ধুর জন্য নয়।

মারও তো অনুভূতি আছে, আবেগ আছে। আমিও তো মানুষ। আসমানের তারা আমি চাই না, আমি চাই সিক্ত হতে প্রেমে এবং ভালোবাসায়। চাই প্রিয় হতে আমি যেমন আছি তারই বিনিময়ে এবং আমার প্রতিভার কারণে।

ক্যারিয়ার জিনিশটা ভালোই, কিন্তু কনকনে ঠাণ্ডার রাইতে ক্যারিয়ার তোমায় উষ্ণতা দেবে না এইটাও মনে রেখো।

বেগের দ্বন্দ্বসংঘাতে জেরবার কোনো অজভূত আমি না। আমি মানুষ।

ভিনেত্রী হওয়া অতটা এক্সাইটিং কিছু নয়, এক্সাইটিং বরং অভিনেত্রী হবার বাসনা।

চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ

… …

বিদিতা গোমেজ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you