ফারুকীর আয়েশা ও শহীদুল জহির || শিবু কুমার শীল

ফারুকীর আয়েশা ও শহীদুল জহির || শিবু কুমার শীল

ফারুকীভাইয়ের এই কাজটা — ‘আয়েশা’ — আমি বারবার দেখব।

সময়কে বুঝতে পারা আর তাকে নিজের কাজের ভেতর প্রকাশ করতে পারা বড় হিম্মতের কাজ। এই কাজে ফারুকীভাইয়ের প্রচলিত উইট বা স্ল্যাপেস্টিক ভঙ্গিটা নাই বরং এক বিষণ্ণ উপস্থাপন এটি। খুব মন দিয়ে পাত্রপাত্রীরা অভিনয় করেছেন। ১৯৭৭ সালের প্রেক্ষিত আজও কি করে সময়ের সাথে সাথে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, কি করে ইতিহাস করুণ ব্যালাড হয়ে ওঠে — সেসবর নিশানা এই কাজটি।

ফারুকীভাইয়ের অসাধারণ ক্ষমতা নাগরিক মানুষের প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি। এই শহরের যে-তরুণ স্বপ্ন দেখছে, লড়ছে, আবার ভেঙে পড়ছে তার কথা তিনি বারবার বলেছেন। ‘চড়ুইভাতি’, ‘ব্যাচেলর’ — এসব কাজে সেই চমৎকার দক্ষতা আমরা দেখেছি। নাখালপাড়ার গল্প তিনি আমাদের বারবার শুনিয়েছেন। এর বাইরে শহীদুল জহিরকে নিয়ে তার অনন্য কাজ ‘কোথায় পাবো তারে’ যেন তার আরেক মেধার পরিচয়। প্রয়াত তারেক মাসুদ ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এই কাজটির। সবাই যখন শহীদুল জহিরকে তার গল্প দিয়ে হাজির করছেন তখন তিনি শহীদুল জহিরকেই বিষয়বস্তু করে ফেললেন। সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপ না দিয়ে বরং জহিরের সাহিত্যের নির্যাসকে পর্দায় হাজির করলেন। বানালেন ‘কোথায় পাবো তারে’। আসলেই শহীদুলকে কোথায় পাওয়া যায় সেই অনুসন্ধানই হয়ে উঠেছে তার গল্প। সেখানে রিফাত ভাইয়ের রোবোটিক অ্যাক্টিং এখনো চোখে লেগে আছে। এই কাজটির একটাই সমস্যা, — এত ভালো আইডিয়া কিন্তু টেলিভিশনের কাজ হওয়ায় বাজেট বা প্রাসঙ্গিক কারণেই টেক্নিক্যালি উইক। কিন্তু প্রাণ আছে কাজটার। ভীষণ রকমের অর্গ্যানিক কাজ।

ফারুকীভাইয়ের বড় ছবিগুলো আমার অত প্রিয় নয় ‘ব্যাচেলর’ ছাড়া। সেসব নিয়ে হয়ত একদিন লিখব। আপাতত তাঁকে পঞ্চাশ বছর পূর্তির শুভেচ্ছা জানাই। প্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রতি রইল আমার টুপিখোলা অভিবাদন। শুভ জন্মদিন।


শিবু কুমার শীল রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you