‘পুতুলনাচের ইতিকথা’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস, ছায়াছবিতে রূপ দান করেছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। এই কালজয়ী উপন্যাসটাকে আড়াই ঘণ্টার ছবিতে ধরার চেষ্টা করা সাহসী সিদ্ধান্ত, দুঃসাহসী কাজ। সেই কাজ সমাধা করবার জন্য অভিনন্দন পাবেন পরিচালক।
মনে রাখব, নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রতিস্পর্ধী উপন্যাস ‘হারবার্ট’ চলচ্চিত্রায়িত করেছিলেন এই পরিচালক, দশকেরও অধিক কাল আগে, সফল হয়েছিলেন। অভিনয়েও সুমন নিজের প্রতিভার আখর রেখেছেন ইন্ডিয়ান মঞ্চে এবং ফিল্মে। বেশ লম্বা বিরতি নিয়া আবার পরিচালনায় ফিরলেন সুমন। ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ সুমন মুখুজ্জের নতুন উদ্যমে আগমনবার্তা।
যা হোক। উপন্যাসের সময়রেখার সঙ্গে সিনেমার সময়রেখার একটা ভিন্নতা লক্ষ করব। উপন্যাসের ১৯৩৬ সালের প্রেক্ষাপটটিকে সিনেমার পরিচালক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মন্বন্তরের সময়ে নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন, যাতে এই সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে শশীর মনটিকে আরও গভীরে গিয়ে পড়া যায়। কিন্তু শুধু ঘটনা বা প্রেক্ষাপটই কি শুধু সমস্যা তৈরি করে? চরিত্র করে না? মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস কিন্তু করেছিল। কারণ সেই চরিত্রগুলির কর্মকাণ্ডে যুক্তি ও গভীরতা ছিল।
কিন্তু, পরিতাপের সুরেই বলব, সুমনের এই ছবিতে কুমুদ, মতি, গোপাল ও সেনদিদিরা আসে শুধুই চরিত্র হিশেবে। যেন শশীর মনোজগতে আলোড়ন তোলাই তাদের উদ্দেশ্য, তাদের নিজস্ব কোনো গভীরতা নাই। ফলে, সিনেমায়, টানাপড়েন তৈরি হয় না। তৈরি হয় না সঙ্কট। কিছুই ঠিকঠাক ঘনীভূত হয় না। যার ফলে শশীর সীমাবদ্ধতা আদৌ কোথাও রেশ রেখে যেতে পারে না।
আর, এভাবেই, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ একটি সাধারণ সিনেমা হয়ে থেকে যায়। বাংলা সাহিত্যের এক শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সুমন মুখোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক এফোর্ট সত্ত্বেও চলচ্চিত্রে ব্যর্থ হয়। শ্রেষ্ঠাংশে জয়া আহসান ও আবীর চট্টোপাধ্যায় ভালো করেছেন বলা যায়।
আরেকটা কথা। যারা আগে উপন্যাস পড়েছেন তাদের দেখা আর যারা পড়েন নাই, সিনেমায় ফার্স্ট ইতিকথার সঙ্গে সাক্ষাৎ, কুমুদ আর শশীর সঙ্গে দেখা, তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া আলগ হবে, এতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই। সিনেমা হিশেবে কেমন উপভোগ্য সুমনের এই ইতিকথা, তা বলতে পারবেন অরিজিন্যাল উপন্যাস-না-পড়া দর্শক।
ম্যুভিডেস্ক, গানপার
গানপারে সুমন মুখোপাধ্যায়
- অক্টোবর নয় || তুহিন কান্তি দাস - October 9, 2025
- মায়ের চরণে মেমোয়ার - October 7, 2025
- সাধুসঙ্গ ও সাধনসংগীত || বিমান তালুকদার - October 3, 2025
COMMENTS