আইসো হে প্রাণনাথ আইসো…
আইসো হে প্রাণনাথ আইসো…
ঘুম থেকে জেগেছি এই লাইনটার সুরগুঞ্জর মাথায় নিয়া। গানটা শুনিয়েছিলেন সুমন — কবীর সুমন — কোনো-এক টিভিইন্টার্ভিয়্যুতে কথা বলতে যেয়ে। এইটা ওই চার্চের কয়্যার-স্যং, অথবা ঠিক কয়্যারও নয় ইন-ফ্যাক্ট, কয়্যারের মাঝখানে যে-একাধটা ব্যারিটোন ভয়েসের সলো পার্ফর্মেন্স শুনি আমরা চার্চসংগীতে, এইটা সেই-ধরনের গান। সুমন এই একটা লাইন ঘুরিয়েফিরিয়ে মড্যুলেশন করিয়ে গেয়ে শোনাচ্ছিলেন সুরের ধর্তাইটুকু বোঝাতে। এই গানটা তিনি শুনেছেন বাংলাদেশেরই কোনো-এক গ্রামে বেড়াতে যেয়ে, এবং তার ষাটোত্তীর্ণ বয়সেও সুমন কতটা ভাবেন বাংলা গান নিয়ে, এইসব ভক্তিভাবালু কথাবার্তা মনে উঠছিল-পড়ছিল দর্শক হিশেবে আমাদের। সুমন বলছিলেন, সুর কেমন করে যুগ যুগ ধরে ট্র্যাভেল করে বেড়াচ্ছে, এর উদাহরণগুচ্ছের মধ্যে এই গানও পুরে দিয়েছিলেন। সুরের স্থানিকতা আর একটা কাঁঠালগাছের স্থানিকতা ব্যাপার দুইটা তো এক না, এইটা আস্তিক-নাস্তিক এই দুই মহান গোত্র ছাড়া আর-সবাই বোঝে। তেমনি সুরের আন্তর্জাতিকতা আর ক্ষুদ্রঋণঠাকুর ইউনূসের আন্তর্জাতিকতা এক ও অভিন্ন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ নয়। দুইটা দুই জিনিশ। যদি বলেন আপনে এখন যে, দুইটা তো সর্বদা দুই জিনিশ হবেই! তা সেই দুইটা যেই দুইটাই হোক-না-কেন, ফকিন্নি কিংবা সায়েবসুবো। কথা গ্র্যামার মানলে তা-ই, কিন্তু জনাব, গ্র্যামারের উপরে দিয়াও তো মাইরধইর আছে দুনিয়ায়। সেইক্ষেত্রে দুইটা সর্বদা দুই জিনিশ নয়, অ্যাট-লিস্ট নট নেসেসারিলি দুইটা দুই জিনিশ। যেমন বাংলাদেশের নবডিমোক্রাট গোবরমেন্টের রুলিং পার্টি ও ওপোজিশন। অবশ্য সুরে সুরে ফিউশন তো হইতেই পারে, যেমন মাসতুতো-পিসতুতো ভাইবোন কী পরস্পরের পর, তা তো নয়কো! হোয়াটেভার, গান নিয়া শুরু দিয়া গরিলাতে শেষ দিলে তো হবে না, খতম হো না চাহিয়ে অ্যাট-লিস্ট হরিণে। লেকিন সোনার নয়, যে যা-ই বলেন ভাই ও বোনেরা, গানের হরিণ অভিপ্রেত হেথায়। পিরালি ব্রাহ্মণ রবিজির গান হইলেও হয়, অ্যাগেইন না-হইলে আরও ভালো হয়। এই দিল্ তো বহুকিছুই মাঙ্গে, এট্টুআট্টু সাইকেডেলিক কিংবা হার্ডরক-ক্র্যাশরকও মধ্যিমধ্যি। স্রিফ হাম-তুম কামরে-মে ডোরউইন্ডো-লকড রবীন্দ্র-নজরুল-অতুল-ডিএল সপরিবার কত উম্মর সহা যায়! সেইটাই। ফিরি ফের গানের ঝরনাতলে। যে-গানটার কথা বলতেসিলাম, সেইটার এই একটা লাইনই শুনিয়েছিলেন সুমন। পরের লাইনগুলো শুনতে সাধ হয় খুব। বরিশালের দিকটাতে গেলে এইটা সম্ভব, সামডে নেক্সট, আই বিলিভ। অনুমান করি যে, সেখানকার ক্রিশ্চিয়ান কম্যুনিটির লোকাচারবাহিত এই সুরের গান ইভেন মেইনস্ট্রিমে মেশামেশিও তো সার্প্রাইজিং নয় রেদার ন্যাচারাল। তো, কথা হচ্ছে এখন, সক্কাল সক্কাল এই গান মনে পড়ার কী-এমন কারণ থাকতে পারে। সেইটাই তো এতক্ষণ ভাবছিলাম। উদ্ভটগর্বী ও বিভৎসদর্পী সভ্যতার পঁচাশি ভাগই তো ভরা কার্যকারণজঞ্জালের ভাবনা দিয়া। আধুনিক আইল ও গেল, উত্তরাধুনিক চিন্তাচেৎনাও ফসিল হইল ক্রমে, লেকিন কার্যকারণভূত আজিও মোদেরে দিলো না ছাড়ন। অথবা আমরাই পারিলাম না ছাড়িতে তার পাছা। কার্যকারণের রসগোল্লা দিয়া আমাদের চিন্তাজাগতিক শাসনত্রাসন ভজনভাষণ দেখি ইদানীং অতীব মনোযোগ সহকারে, দেখি আর মনে মনে সেইসবের কার্যকারণ নিয়া ভাবি। মিচকি হাসি। সিম্পল ব্যাপারটা খামাখা প্যাঁচাই। সাতসকালে নিত্যি একটা ব্যারিটোন ভয়েস থাকে, আদিকাল থেকে এইটা আছে এবং ঝড়েজলেমেঘেমাঘে এইটার উদি নাই, ইহার সালাত কাজা হয় না, এই টোন, অন্তিমকাল অব্দি বিরাজিবে ইহা, একেই তো বলে ব্রাহ্মমুহূর্ত। বলে, এই সেই ম্যাজিক মাউন্টেন! অনুনাদী দিনশঙ্খে এই দিয়া যাত্রা হয় শুরু। জবাকুসুম সঙ্কাশং। আইসো হে প্রাণনাথ আইসো … আইসো হে প্রাণনাথ আইসো …
লেখা : জাহেদ আহমদ ২০১৪
ভূমিকার পরিবর্তে একটা পাদটীকার ন্যায় ভাষ্য যুক্ত করিয়া রাখতে চাইছি নিবন্ধপ্রবাহ ‘মুখস্থ মুজরো’ প্রত্যেকটা পার্টের সঙ্গে। বেঁটেখাটো কৈফিয়ত গোছের একটা ভাষ্য। পুনরাবৃত্তাকারে এইটা অ্যাটাচ করা থাকবে এর এপিসোড প্রত্যেকটার লগে। এই নিবন্ধপ্রবাহ সংগীতবিষয়ক কোনো কড়া আলোচনা নয়। আদৌ সংগীতগদ্য নয় এই রচনা। নামের মধ্যে একটা নাচাগানাবাজানার আভাস থাকলেও মোদ্দায় এইটা গালগপ্পো। অনুষঙ্গ-উপানুষঙ্গ-অনুপান হিশেবে এইখানে শ্রবণাভিজ্ঞতাগুলা আসবে এবং চলেও যাবে। সে-অর্থে এইখানে রেফ্রেন্সের খোঁজপাত্তা খামাখা। আদতে এইখানে রেফ্রেন্সেস নাই বিধায় রেফ্রেন্স চেকের পরিশ্রম করতে যাওয়াটাই বৃথা। ধারাবাহিক মুক্তগদ্য ধাঁচের রচনা, ব্যক্তিগতিকতায় ভরা বা আবোলতাবোল, আবার অতটা ধারাফারা মান্য করবার বাঁধিধরা নাই কিছু। অনিয়মিত, সবিরত, কখনও সময়ে-সুযোগে একনাগাড় নিয়মিতও হতে পারে। একেকটা পার্টে একটামাত্র অনুচ্ছেদ, পরিকল্পনা আপাতত অতটুকুই। মিউজিক-লতানো গল্পগুলা, গান গাইবার বা গানের সমুজদারিতার গল্পও নয়, গানশোনার আবছা আলাপচারি। স্মৃতিরই রোমন্থন, মুখস্থ মুজরো, সুরাশ্রিত অটোবায়োগ্র্যাফিকতা। — জা.আ.
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS