মুখস্থ মুজরো ৪

মুখস্থ মুজরো ৪

বিদায় পরিচিতা, এই বিদায়ের সুর
চুপি চুপি ডাকে, দূর বহুদূর …

কবীর সুমনের গানে এই বিদায়বিষণ্ন সুর বেজেছিল বহু বহুকাল আগে। এরপর শীতে-হেমন্তে বেলা আগায়েছে অনেক। অথচ শীতকালে, ভরভরন্ত শীতের মরশুমে, একটা গান বাজে ভেতর্দেশে দীপ্র সকালবেলাকার দিকটায়। সুমনেরই গান। রোদ্দুরচাইছি তোমার বন্ধুতা   অ্যালবামের। “ওই তো অঢেল সবুজের সমারোহ / পাহাড়ের গায়ে হাল্কা নরম রঙ / রোদ্দুরে শুধু চনমনে বিদ্রোহ রোদ্দুরে / শুধু দিগ্বিজয়ীর রঙ রোদ্দুরে। … আছে রোদ্দুর ওঁত-পেতে ওইখানে গাছের আড়ালে / বাঘের মতোই স্থির” … ইত্যাদি লিরিক্স। যদিও পড়ন্ত শীতকাল, যদিও বিদায়বিধুর, তবু তো সুর তার অফুরান, তবু তার রেশ, তবু স্মৃতি তার, প্রতীক্ষা তার লাগি তবু। “তুমি শোনো বা না-শোনো / তবু তোমাকে শোনাই / বিদায় পরিচিতা, আকাশ বিষণ্ন / তার কাছে যাই … জনহীন সৈকতে ওড়ে সিগারেটের ছাই / বিদায় পরিচিতা, তুমি একা, আমিও একাই” …

চলে যেতে লেগেছে শীতকাল, পিক্নিক সিজ্যন, সুপর্ণাযামিনীদিবস। বসন্ত শীতেরই সম্প্রসারিত সংস্করণ মনে হয়। স্প্রিং ইজ অ্যান এক্সটেনশন অফ উইন্টার ইন বেঙ্গল। মুশকিল হচ্ছে, বেহায়া বর্ষাকাল বলদের মতো বপু ঠেলেঠুলে এসে ঢুকতে চাইছে, তার আগে বিদঘুটে গ্রীষ্ম। অনুপ্রবেশকারীকে, ট্রেসপ্যাসারকে, আটকাবার দরকার নাই, নজরদারি জোরদার করা দরকার। বলদের সঙ্গে পেরে-ওঠা তো মুশকিলই। কিছুক্ষণ ঢুঁশঢাঁশ দিয়া বলদেরে হয়রান হইতে দেন। অবশিষ্ট সারাদিন সারারাত টুপটাপ জোছনাজলের, নক্ষত্রবিহঙ্গের, অমিয় বংশীবিস্তারের। চলে যায়, মরি হায়, শীতের অপরাহ্ন চলে যায়! চলে যদি যাবি দূরে, স্বার্থপর! / আমাকে কেন জোছনা দেখালি … এইটা বাংলাদেশেরই কোনো-একটা ব্যান্ডের গান। কোন ব্যান্ড, মনে পড়ছে না শিরোনাম। হায়! নিতাই-হাহাকার বেজে যায় আকাশে-বাতাসে : শীত, এত ছোট ক্যানে! একবার, ফের, আরেকটাবার … আয় শীত ঝেঁপে / পুলিপিঠে দেবো মেপে …

কুলবরইয়ের দিন শেষ হয়ে এল। গাছে গাছে আমের মুকুল। গুনগুন ফাল্গুন। ভোমরাটা গায় গান। বসন্তসমীরণ আর টুইট টুইট বিহঙ্গ ও দুপুরের ধুন। অংশত কুয়াশা আরও কয়েকটি দিন সঙ্গ দেবে সকালবেলায়, সন্ধে এবং সুবেসাদিকের দিকটায়। শীতের গন্ধ মুছে যাবে তারপর। ডানায় ডিমের আভা গুটায়ে নেবে প্রভাতপাখিটি। বিসর্জন হবে শীতের। টিকে গেলে ফের আরেকটা শীত আসবে দোয়েলের-ফড়িঙের নসিবে একটা আস্ত বছর বাদে।


ভূমিকার পরিবর্তে একটা পাদটীকার ন্যায় ভাষ্য যুক্ত করিয়া রাখতে চাইছি নিবন্ধপ্রবাহ ‘মুখস্থ মুজরো’ প্রত্যেকটা পার্টের সঙ্গে। বেঁটেখাটো কৈফিয়ত গোছের একটা ভাষ্য। পুনরাবৃত্তাকারে এইটা অ্যাটাচ করা থাকবে এর এপিসোড প্রত্যেকটার লগে। এই নিবন্ধপ্রবাহ সংগীতবিষয়ক কোনো কড়া আলোচনা নয়। আদৌ সংগীতগদ্য নয় এই রচনা। নামের মধ্যে একটা নাচাগানাবাজানার আভাস থাকলেও মোদ্দায় এইটা গালগপ্পো। অনুষঙ্গ-উপানুষঙ্গ-অনুপান হিশেবে এইখানে শ্রবণাভিজ্ঞতাগুলা আসবে এবং চলেও যাবে। সে-অর্থে এইখানে রেফ্রেন্সের খোঁজপাত্তা খামাখা। আদতে এইখানে রেফ্রেন্সেস নাই বিধায় রেফ্রেন্স চেকের পরিশ্রম করতে যাওয়াটাই বৃথা। ধারাবাহিক মুক্তগদ্য ধাঁচের রচনা, ব্যক্তিগতিকতায় ভরা বা আবোলতাবোল, আবার অতটা ধারাফারা মান্য করবার বাঁধিধরা নাই কিছু। অনিয়মিত, সবিরত, কখনও সময়ে-সুযোগে একনাগাড় নিয়মিতও হতে পারে। একেকটা পার্টে একটামাত্র অনুচ্ছেদ, পরিকল্পনা আপাতত অতটুকুই। মিউজিক-লতানো গল্পগুলা, গান গাইবার বা গানের সমুজদারিতার গল্পও নয়, গানশোনার আবছা আলাপচারি। স্মৃতিরই রোমন্থন, মুখস্থ মুজরো, সুরাশ্রিত অটোবায়োগ্র্যাফিকতা। — জা.আ.


শিল্পী হিরণ মিত্রের চিত্রকর্ম প্রচ্ছদে ব্যবহার করা হয়েছে গ্যুগল ইমেইজেস্ থেকে নিয়ে। লেখা : জাহেদ আহমদ


মুখস্থ মুজরো ১
মুখস্থ মুজরো ২
মুখস্থ মুজরো ৩

জাহেদ আহমদ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you