“আজকে ভোরে ঘুম ভাঙতেই মনে পড়ল—আজকে আমার জন্মদিন! জন্মদিন মনে পড়তেই উপলব্ধি করলাম বাড়িতে নেই—আছি শান্তিনিকেতনে—শ্রীভবনে। মনটা টনটন করে উঠল। চোখ বুজে কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে রইলাম। ছুটি আজকে। শ্রীনিকেতনে আজ ‘হলকর্ষণ’ বলে স্কুল, কলেজ সংগীতভবন, কলাভবন বন্ধ। আজকে ছুটি মনে হতেই তড়াক করে খাট থেকে নেমে পড়লাম। সুন্দর ভোরটা। পুজো পুজো ভাব এসেছে এরই মধ্যে, আকাশে, বাতাসে, সকলের মনে! নীল আকাশে সাদামেঘ ভেসে চলেছে পাখা মেলে দিয়ে…কি একটা কৌতূহল জেগেছে মনে কিছু যেন একটা আশা করছি আজ!” (আমার না বলা কথা, সুচিত্রা মিত্র)
একসময়ে শান্তিনিকেতনে কবির গানের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা নিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে উদ্বেগের অন্ত ছিল না। দিনেন্দ্রনাথের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট এবং দিনেন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ত্যাগে রবীন্দ্রনাথ এতটাই উদ্বিগ্ন ছিলেন যে ১৯২৬ সালের ১৯ মে সন্তোষচন্দ্র মজুমদারকে একটি চিঠি লিখে এই উদ্বেগের কথা জানান। চিঠির শেষ অনুচ্ছেদে সন্তোষচন্দ্রের বোন সেকালের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতগায়িকা রমা বা নুটুর প্রতি কবির নির্ভরতার কথা ব্যক্ত করে লিখেছিলেন, ‘এক একবার নুটুর কথা মনে করে মন উদ্বিগ্ন হয়। সে কোন একদিন বিয়ে করে বসবে আর আমাদের আশ্রম থেকে গানের আলো একেবারে নিবে যাবে। আজ একমাত্র নুটু ছাড়া গানের সঞ্চয় আর কারো কাছেই নেই, আমার নিজের কাছে ত নয়ই। ও যেদিন দূরে কোথাও গৃহস্থালির খাঁচায় বদ্ধ হবে সেদিন আশ্রমের উৎসব হবে নীরব।’
১৯ সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিন গেল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় পক্ষে ইন্ডিয়ান দেশ পত্রিকায় ‘ঋজু দৃঢ় সঙ্গীতব্যক্তিত্ব’ শীর্ষক একটা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, লেখক পীতম সেনগুপ্ত। সেই প্রবন্ধ থেকে একাংশ তথ্য গ্রহণপূর্বক উপরের অনুচ্ছেদটি রিরাইট করা। আর তার আগের অনুচ্ছেদটি শিল্পী সুচিত্রা মিত্রের আত্মজৈবনিক রচনা থেকে উদ্ধৃত, সূত্র যথাস্থানে ব্র্যাকেটে উল্লেখ করা আছে।
এইটা আর বলে দিতে হবে না যে, যে-নুটুর জন্য রবীন্দ্রনাথ উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, সেই নুটু আর কেউ নয়, যিনি স্বীয় কণ্ঠসাধনার মাধ্যমে পরবর্তীকালে সুচিত্রা মিত্র নামে জগজ্জোড়া খ্যাতি লাভ করেন।
জন্মদিনে সুচিত্রা মিত্রের প্রতি গানপারের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
মিউজিকডেস্ক, গানপার
- অক্টোবর নয় || তুহিন কান্তি দাস - October 9, 2025
- মায়ের চরণে মেমোয়ার - October 7, 2025
- সাধুসঙ্গ ও সাধনসংগীত || বিমান তালুকদার - October 3, 2025
COMMENTS